পাঁচ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় গণপিটুনি নিয়ে বিল পাস হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পরেও তা চালু হলো না কেন?
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েকদিনে ১২টি গণপিটুনির ঘটনা সামনে এসেছে।তাতে মারা গেছেন পাঁচজন। সেই বিতর্কের মধ্যে আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোড়ন শুরু হয়েছে। এবার বিতর্কের কেন্দ্রে ওয়েস্ট বেঙ্গলস প্রিভেনশন অফ লিঞ্চিং বিল।
২০১৯ সালের রাজ্য বিধানসভায় এই বিল পাস হয়। তারপর ৪ সেপ্টেম্বর বিলটি পাঠানো হয় রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য। রাজ্যপাল সই না করলে বিল আইনে পরিণত হয় না ও তা চালু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করা যায় না।
সম্প্রতি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলে রাজ্যপাল সই না করায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন।
রাজ্যপালের জবাব
মঙ্গলবার রাজ্যপাল এক্স-এ এই বিষয়ে একটি পোস্ট করেছেন। তাতে প্রশ্নোত্তরের আকারে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
রাজ্যপালের দাবি, বিলটি আসার পর তার কিছু ব্যাখ্য়া রাজ্য সরকারের কাছ থেকে চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। এখনো তার জবাব আসেনি। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে তা বকেয়া পড়ে আছে।
রাজ্যপাল বলেছেন, বিল পাস হওয়ার পর কংগ্রেস ও বামেরা সেসময়ের রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাকে বলেন, বিলটি যে আকারে পেশ করা হয়েছিল এবং যেভাবে পাস করা হয়েছে, তার মধ্যে ফারাক আছে। খসড়া বিলে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ছিল না। সেটা পরে যোগ করা হয়।
একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে
খাস কলকাতা শহরের ছাত্রাবাসে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ একাধিক ব্য়ক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কলকাতায় গণপিটুনির ঘটনা
গণপিটুনির ঘটনা এবার খাস কলকাতায়। মধ্য কলকাতার বৌবাজারের ছাত্রাবাসে গণপিটুনিতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। মোবাইল চোর সন্দেহে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনায় ছাত্রাবাসের ভিতর থেকে ১৫-১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের মধ্যে থেকে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশের বয়ান
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মৃতের নাম ইরশাদ। তার বয়স ৩৭ বছর। চাঁদনি চক এলাকায় একটি টিভি মেরামতির দোকানে কাজ করতেন তিনি। শুক্রবার তাকে বৌবাজারের উদয়ন ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোবাইল ফোন চুরি
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার হস্টেলের এক আবাসিকের মোবাইল ফোন চুরি যায়। থানায় ফোন চুরির অভিযোগ করা হয়েছিল বলে খবর। শুক্রবার সকালে হস্টেলের বিপরীতে এক দোকান মালিক আবাসিকদের ইশারায় বলেন, ইরশাদ এলাকায় ঘুরঘুর করছে’। অভিযোগ, দোকানি বলার পরেই হস্টেলের সামনে ফুটপাথ থেকে ইরশাদকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় ছাত্রেরা। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশের খবর
ইরশাদ আলম চাঁদনি চক এলাকায় একটি টিভি সারাইয়ের দোকানে কাজ করতেন। হস্টেলে আটক থাকা অবস্থায় তিনি দোকানের মালিক মহম্মদ ইমরানকে ফোনে ব্যাপারটি জানান। দোকানের মালিকই পুলিশে খবর দেন বলে জানা যাচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হস্টেলে ঢুকতে বাধা
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বৌবাজার থানার পুলিশ। তারা হস্টেলে ঢুকতে চাইলে জুরিসডিকশনের যুক্তি দেখিয়ে প্রথমে গেট খোলা হয়নি বলে অভিযোগ। তার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মুচিপাড়া থানার পুলিশ। তাদের জন্যও দরজা খোলা হয়নি বলে অভিযোগ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দোতলায় মারধর
অনুমান, দোতলায় মারধর করার পর সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামিয়ে আনা হয় ইরশাদকে। এর পর তাকে উদ্ধার করে পাশেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রাথমিক তদন্ত
মৃতের স্ত্রী থানায় অভিযোগ করতে যান। পুলিশ তদন্তে নেমে হস্টেলে গিয়ে ১৫-১৬ জনকে আটক করে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানায়, মৃতের পায়ে আঘাত লেগেছে। হস্টেলে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক ব্যাট এবং লাঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলি দিয়েই যুবককে মারধর করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আদালতে হাজির
শনিবার তাদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। পুলিশের তরফে ১৪ দিনের হেফাজতের আবেদন করা হয়। আদালত জানিয়েছে, আপাতত আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে থাকতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গ্রেপ্তার ছাত্র
এই ঘটনায় যে ১৪ জনকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে মুচিপাড়া থানার পুলিশ, তারা সকলেই কোনও না কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কিংবা বর্তমান ছাত্র। উদয়ন হস্টেলের আবাসিক তারা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বেশির ভাগের বয়স ২২ থেকে ২৪ বছর। দু’-এক জন ২৭- ২৮ বছরের যুবকও আছেন। তারা কেউ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কেউ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সংস্কৃত কলেজের ছাত্র।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীও গ্রেপ্তার
প্রেসিডেন্সি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীও রয়েছেন ধৃতদের তালিকায়। ধৃতেরা ঝাড়গ্রাম, নদিয়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং কোচবিহারের বাসিন্দা। সকলেই পড়াশোনার সূত্রে কলকাতায় এসেছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
রাজ্যপাল বলেছেন, ব্যাখ্যার জবাব রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আসেনি। তা সত্ত্বেও কেন স্পিকার বললেন, বিলটি রাজ্যপালের কাছে পড়ে আছে।
তিনি আরো বলেছেন, এখন একটা নতুন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। রাজ্যপাল ব্যাখ্যা চাইলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এসে সেই ব্যাখ্যা দিতে পারেন। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বিলে সই করে দেয়া হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারকে তো তার জন্য ব্যাখ্যা দিতে হবে।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ''দুই পক্ষই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এখন আর বিষয়টি নিয়ে কোনো বিতর্ক অনর্থক। রাজ্যে এখন এত গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। রাজ্য সরকার দ্রুত ব্যাখ্যা দিয়ে দিক। রাজ্যপাল তো বলে দিয়েছেন, তার কাছে গিয়ে ব্যাখ্যা দিলে এখন সঙ্গে সঙ্গে তা সই করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।''