স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মেয়াদ বাড়ল পশ্চিমবঙ্গে৷ বন্ধ করা হল সিনেমা হল৷ পিছিয়ে গেল কলকাতা পুরসভার ভোট৷ বন্ধ হতে চলেছে শুটিংও৷
বিজ্ঞাপন
১৮৯৭ সালের মহামারী রোগ প্রতিরোধক একটি আইন ফিরিয়ে আনা হল পশ্চিমবঙ্গে৷ নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে৷ ব্রিটিশ আমলে বম্বে শহরে প্লেগ রোগ ঠেকাতে এই আইন আনা হয়েছিল, যার সুবাদে বিশেষ ক্ষমতা পায় সরকার, বিশেষত জনতার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে, লোককে কার্যত ঘরবন্দি রাখতে৷ সোমবার রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে আরও এক দফা জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ তার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩১ মার্চ নয়, আরও ১৫ দিন, অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাজ্যের সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ এর পাশাপাশি রাজ্যের সমস্ত সিনেমাহল আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আগেই ঠিক হয়েছিল আইপিএল ক্রিকেটসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলা স্থগিত রাখার৷ এদিন ধর্মীয় সমাবেশও না করার অনুরোধ জানাল সরকার৷
রুজি রোজগারের ক্ষেত্রে একটা টান পড়ে: অদিতি রায়
এদিন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল কলকাতা পুরসভার ভোট পিছিয়ে দেওয়ার৷ আগে ঠিক ছিল, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে, রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই পুরভোট সেরে ফেলা হবে৷ কিন্তু এদিন রাজ্যের সরকার এবং সবকটি রাজনৈতিক দল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি আয়ত্বে না আসা পর্যন্ত ভোট পিছিয়ে দেওয়ার৷ তার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোট পূর্ব নির্ধারিত সময়ে হবে না৷ আরও ১৫ দিন পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ভোটের পরবর্তী নির্ঘণ্ট কখন স্থির হবে৷
কলকাতার স্টুডিওপাড়া টালিগঞ্জেও বন্ধ হয়ে যেতে পারে শুটিং৷ মঙ্গলবার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছে শিল্পী ও কলাকুশলীদের সংগঠনগুলি৷ প্রাথমিকভাবে ১৫ দিন, অর্থাৎ চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত সমস্ত সিনেমা, সিরিয়ালের শুটিং বন্ধ রাখা হবে বলে ঠিক হয়েছে৷ কিন্তু এতে অসুবিধে হবে মূলত টেকনিশিয়ানদের, যাঁরা প্রতিদিন কাজ করার ভিত্তিতে পারিশ্রমিক পান৷ এছাড়া যেহেতু সিরিয়ালের কাজ প্রায়শই দিনের দিন স্ক্রিপ্ট লেখা এবং শুটিং করার পদ্ধতি মেনে হয়, খুব বেশি এপিসোড জমা রাখারও সম্ভাবনা নেই৷ সেক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে, হয়ত পুরনো এপিসোড দেখিয়ে কাজ চালাতে হবে৷ ওদিকে সরকার সিনেমা হল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ায়, নতুন ছবি মুক্তির দিনক্ষণও সব জট পাকিয়ে গেল বলে মাথায় হাত প্রযোজক, পরিবেশকদের৷
করোনা রুখতে দিল্লিতে গোমূত্রের আজব পার্টি
একুশ শতকে এসেও প্রচার করা হচ্ছে, গোমূত্র খেলে শরীর শুদ্ধ হয়ে যাবে, হবে না করোনা। এমনই দাবি নিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আয়োজিত হল 'গোমূত্র পার্টি'। আয়োজনে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
গোমূত্র পার্টি
চীনে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে ছিল, তখনই বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠনগুলির কোনও কোনও নেতা বলেছিলেন, গোমূত্র পান করলে করোনা হবে না। ভারতে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করার পরে সেই আশ্চর্য কাজটিই প্রকাশ্যে করে দেখাল গেরুয়া শিবির। আয়োজন হল গোমূত্র পার্টির।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
বাবা চক্রপানি মহারাজ
স্বঘোষিত এই বাবাজির ধর্মীয় গোষ্ঠীর নাম অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির সঙ্গে তাঁর ভালই ঘনিষ্ঠতা। এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। কেরালায় বন্যায় সময় বলেছিলেন, যাঁরা গোমাংস খান, তাঁদের ত্রাণ দেওয়া উচিত নয়।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গোমূত্র ভক্ত
সেই চক্রপানি বাবাই এ বার দিল্লিতে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছিলেন। যেখানে প্রায় ২০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। গোমূত্র, গোবর, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয়েছিল পানীয়। ভক্তরা খেলেনও তা ঢকঢক করে। এতেই না কি প্রতিহত হবে করোনা।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
বিজেপির লাইনেই বাবাজি
চক্রপানি মহারাজ প্রথম নন, এর আগে গোমূত্র খেয়ে করোনা প্রতিহত করার কথা বলেছিলেন আসামের বিজেপি নেত্রী সুমন হরিপ্রিয়। উত্তরপ্রদেশ থেকে জেতা বিজেপির বিতর্কিত সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেছিলেন গোমূত্র খেলে ক্যান্সারও আটকানো যায়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কারা গেলেন পার্টিতে
শনিবার চক্রপানি মহারাজের গোমূত্র পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ২০০ জন। তাঁদের অধিকাংশই মহারাজের ভক্ত। বহু গরিব মানুষ নিছক অন্ধবিশ্বাস থেকে হাজির হয়েছিলেন সেখানে।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
মাথায় হাত চিকিৎসকদের
গোমূত্র পার্টির কথা শুনে মাথায় হাত চিকিৎসকদের। তাঁদের বক্তব্য, স্বঘোষিত বাবাজিরা বলছেন গোমূত্র খেলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়বে শরীরে। কিন্তু বাস্তব ঠিক তার বিপরীত। গোমূত্র এবং গরুর গোবর খেলে শরীর আরও খারাপ হতে পারে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
হতে পারে যক্ষ্মা
দিল্লির এক চিকিৎসকের বক্তব্য, কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডে গোমূত্র খেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। প্রবল শরীর খারাপ নিয়ে কিছুদিন আগে তিনি এসেছিলেন চিকিৎসকের কাছে। তাঁর গোটা শরীরে যক্ষ্মা ছড়িয়ে গিয়েছে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কে বোঝে কার কথা
এক দিকে চিকিৎসকরা যখন বিজ্ঞানের কথা বলছেন, তখন হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের মদতে স্বঘোষিত বাবাজিরা দিকে দিকে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসনও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গ্রেফতার করা হোক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন আমলার বক্তব্য, চাইলে এই বাবাজিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে সে কাজ হচ্ছে না।