1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোট?

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা৬ মে ২০১৬

পশ্চিমবঙ্গে ভোট শেষ, এবার ফল ঘোষণার অপেক্ষা৷বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আত্মবিশ্বাসী, তাঁরাই ফিরছেন৷ ওদিকে বিরোধী জোটের মুখ সূর্যকান্ত মিশ্র জোরগলায় বলছেন, এবার জোটের সরকার৷ কিন্তু ভোটাররা কী ভাবছেন?

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

বেনজিরভাবে সাত দফায় বিধানসভা ভোট হলো পশ্চিমবঙ্গে৷ যে ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গী ছিল প্রবল নিরাপত্তার কড়াকড়ি৷ আর ছিল মানুষের ব্যাপক উৎসাহ৷ প্রায় সব জায়গায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছে৷ তাই দেখে অনেকেই হয়ত ভাবছেন, এটা চিরাচরিত নিয়মে স্থিতি-বিরোধী ভোট৷ তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে এবার সরকার গড়বে বাম-কংগ্রেস জোট৷ কিন্তু সত্যিই কি তাই?

এঁরা সবাই ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোয় খুব সক্রিয়৷ এঁদের কেউ ঘোষিতভাবে বাম-বিরোধী, কেউ খোলাখুলি তৃণমূল কংগ্রেসের সমালোচনায় মুখর, কেউ গোপনে বিজেপি-র সমর্থক, আবার কেউ চেষ্টা করেন নিরপেক্ষ মতামত ধরে রাখতে৷ কী হতে পারে এবারের বিধানসভা ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল – এই প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল এঁদের প্রত্যেকের কাছে৷ ওঁরা কে কী বললেন, তা শোনার আগে একবার চট করে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক রাজ্যের বর্তমান হাল-হকিকতের দিকে৷

পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ভোটারছবি: Reuters/R. De Chowdhuri

তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের গত পাঁচ বছরের শাসনে নজরে পড়ার মতো সাফল্য বিশেষ কিছু নেই৷ হ্যাঁ, রাস্তাঘাট আগের থেকে অনেক পরিস্কার, অনেক ভালো৷ নতুন রঙের প্রলেপ, পথের ধারে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আলো, বছরভর নানা ধরনের উৎসব – এসবও রাজ্যের একটা সুখী, স্বচ্ছল চেহারা তুলে ধরছে বটে৷ কিন্তু নতুন শিল্প আসেনি এই পাঁচ বছরে৷ নতুন কর্মসংস্থান হয়নি৷ এ ব্যাপারে সরকারের যা দাবি, তার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতি, পরিসংখ্যান মিলছে না৷ আর দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাও ধাক্কা খেয়েছে প্রথমে সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি, তার পর ভোটের ঠিক আগে নারদা টিভি-র স্টিং অপারেশনে রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদদের সরাসরি ঘুস নেওয়ার ছবিতে৷

মমতা ব্যানার্জি আত্মবিশ্বাসী, তাঁরাই ফিরছেন...ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images

তা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেসই আগের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ক্ষমতায় ফিরবে বলে মনে করছেন সাংবাদিক-চলচ্চিত্রকার অনিকেত চট্টোপাধ্যায়৷ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট আর জাতীয় কংগ্রেসের যে জোট হয়েছে, তার মধ্যে যে মৌলিক নীতিহীনতা আছে, অনিকেত ঘোষিতভাবেই তার সমালোচক৷ তাঁর ধারণা, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেও এই ভোটে সুবিধে করতে না পারার ফলে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের ভেতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে৷ এর জেরে ভবিষ্যতে বামফ্রন্টে ভাঙনও অবশ্যম্ভাবী৷ আরও একটু দূর এগিয়ে দেখতে চাইছেন অনিকেত যে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে বিজেপি-কে রুখতে জাতীয় কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে জোট হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে অভূতপূর্ব এক রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বে বামফ্রন্ট৷

তিন বছর পর সত্যিই বিজেপিকে ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং জাতীয় কংগ্রেসের জোট গড়ার বাধ্যতা তৈরি হবে কিনা, সেটা অনেকটাই নির্ভর করবে এবার বিধানসভা ভোটে বিজেপি কটা আসন পায়, তার ওপর৷ কিন্তু সেই সম্ভাবনাটা এখনও অস্পষ্ট, মনে করছেন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট পল্লবী ব্যানার্জি৷ নিজে বামপন্থি মনোভাবের এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কট্টর সমালোচক হয়েও পল্লবী মনে করছেন, তৃণমূল কংগ্রেসই ক্ষমতায় ফিরবে, অন্তত ১৬০-১৭০ আসন নিয়ে৷ কারণ গ্রাম-মফস্বল গত পাঁচ বছরে বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে, যা তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট ধরে রেখেছে৷ শহরের নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যেও মমতা ব্যানার্জির এক ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা আছে৷ তাছাড়া, আগের ৩৪ বছরের অপশাসনের জন্য বামফ্রন্টের ওপর থেকে মানুষের রাগ এখনও যায়নি৷

কাজেই পল্লবী মনে করছেন, বিরোধী জোট খুব একটা সুবিধে করতে পারবে না৷ বড় জোর ১২০ থেকে ১৪০ আসন তারা পেতে পারে৷ তেমনটা হলে অবশ্য মমতার নতুন সরকারের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক হবে না৷ কিন্তু পল্লবী বেশি অস্বস্তিতে আছেন, বিজেপি এই হিসেবের মধ্যে কতটা গন্ডগোল পাকাতে পারে, সেই অনিশ্চিত সম্ভাবনা নিয়ে৷ এবং পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রভাব যে বাড়ছে, সেটা কেউই অস্বীকার করতে পারছেন না৷ বিজেপি সমর্থক এবং ভোটার ভিক্টর বাগ যেমন জোর গলায় বলছেন, অন্তত ১০টি আসন এবার বিজেপি পাচ্ছেই৷ ভিক্টর হুগলি জেলার নালিকুলের বাসিন্দা, যেখানে নিশ্চিত একটা রাজনৈতিক-সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ হয়েছে, যেটা ওরা বুঝতে পারছেন৷

তৃণমূল কংগ্রেস খুব সহজে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে, এমনটা মনে করছেন না বর্ষীয়ান সাংবাদিক, চলচ্চিত্র সমালোচক অনিরুদ্ধ ধর৷ কারণ তাঁর মনে হয়, এবারের ভোটে দু-তিন শতাংশের ভোটের এদিক ওদিক ফলাফল যে কোনো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে৷ তবে একটা ব্যাপারে অনিরুদ্ধ নিশ্চিত যে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হবে না৷ জনাদেশ খুব স্পষ্ট বিভাজিত হবে যে কোনো দিকে৷ সেটা কোন দিকে, ১৯ মে ভোটের ফল ঘোষণার আগে পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না৷ তবে সম্ভাবনা প্রবল, তৃণমূল কংগ্রেসই ১৭০ আসনের কাছাকাছি দখল করে সরকার গড়বে৷

খ্রিষ্টান মিশনীরাও ভোট দিয়েছেনছবি: Reuters/R. De Chowdhuri

তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদার লালি বসুও মনে করেন তৃণমূল কংগ্রেসই আবার ক্ষমতায় ফিরবে, এবং সেটা এই কারণে যে প্রশাসনিক ক্ষমতা, লোকবল, অর্থবল, সবই ওদের আছে৷ যে জায়গায় লড়াইটা আগে থেকেই হেরে বসে থাকছে বিরোধীরা৷ সব জায়গায় এজেন্ট পর্যন্ত দিতে না পারাটা সেই সাংগঠনিক দুর্বলতারই লক্ষণ৷ কিন্তু লালি একটা ব্যাপারে নিশ্চিত যে ক্ষমতায় যেই আসুক, এই রাজ্যের পরিস্থিতির কিছুমাত্র উন্নতি হবে না৷ এই একটা ব্যাপারে দেখা গেল বিরুদ্ধমতের লোকেরা সবাই একমত৷ প্রত্যেকেই একবাক্যে বলছেন, কিছু হবে না, কিছু হতে পারে না৷ পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন সম্ভাবনা এখন এতটাই নৈরাশ্যজনক৷

আপনার কি মনে হয়? মমতা কি তাঁর মসনদ ধরে রাখতে পারবেন? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ