1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘কালা-দিবস' পালন

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩

এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর প্রতিবাদে স্কুল-বিল্ডিংয়ে ঢুকে ভাঙচুরের ঘটনার বিরুদ্ধে ১৯শে সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ‘‘কালা দিবস'' পালন করছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এক হাজারেরও বেশি খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুল ও কলেজ৷

Police trying to pacify the agitated mob inside the Christ Church Scool Premises. Foto: Nurunnahar Sattar, September 2013, Indien
ছবি: Nurunnahar Sattar

১১ বছরের এক স্কুলছাত্রীর অকালমৃত্যু নিঃসন্দেহে এক দুঃখজনক ঘটনা৷ কিন্তু তার পর স্কুলে ঢুকে হাঙ্গামা, ভাঙচুরের যে নিন্দনীয় ঘটনা ঘটালেন ছাত্রীর অভিভাবক আর বহিরাগত কিছু লোক, তা হয়ত আরও ন্যক্কারজনক৷ কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি ক্রমশ আরও জটিল হয়ে পড়াতে অনেকের কপালেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ৷ কারণ, বিষয়টা এখন ছাত্রীমৃত্যু এবং স্কুলে ভাঙচুরের মধ্যেই কেবল আবদ্ধ নেই৷ বরং অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ এনেছেন কলকাতা শহরের আর্চবিশপ এবং স্থানীয় রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সমাজের প্রধান৷

কলকাতার আর্চবিশপ অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ বর্তমান রাজ্য সরকার৷ সম্প্রতি ছাত্রী-মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় কলকাতার ক্রাইস্ট চার্চ মিশনারি স্কুলে যে হাঙ্গামা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, পুলিশ তাতে নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল৷ কাজেই উত্তেজিত জনতা নয়, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাই ওই হাঙ্গামার জন্য দায়ী বলে আর্চবিশপের অভিমত৷ ভারতে এই প্রথম কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এত সরাসরি নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার দায়ে অভিযুক্ত করল কোনো সরকারকে, যার জবাব সরকারের তরফ থেকে এখনও দেওয়া যায়নি৷

১১ বছরের এক স্কুলছাত্রীর অকালমৃত্যু নিঃসন্দেহে এক দুঃখজনক ঘটনাছবি: Nurunnahar Sattar

স্কুলে হাঙ্গামার সময় ওই প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় এক হাজার খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুল এবং কলেজ ১৯শে সেপ্টেম্বর এক দিনের প্রতীকী বনধ করবে৷ এমন প্রতিবাদ মিশনারি স্কুলগুলির দিক থেকে সম্ভবত এই প্রথম৷ রাজ্যের কিছু আইসিএসই, অর্থাৎ জাতীয় শিক্ষা পর্ষদের আওতাভুক্ত স্কুলও এই একদিনের প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে৷ ছাত্রী-মৃত্যুর ঘটনার দায়ে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের মহিলা প্রিন্সিপালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, সেই হেলেন সরকার তিন দিন পর আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন৷ প্রতিবাদ কর্মসূচি কিন্তু তাতে থেমে থাকছে না৷ আর্চবিশপ উল্টে অভিযোগ এনেছেন যে, পুলিশ জোর করে ওই প্রিন্সিপালকে দিয়ে ইস্তফা-পত্র লিখিয়ে নিয়েছিল৷

ঘটনা হচ্ছে, আদতেই পুরো ঘটনার দায়, অর্থাৎ এক ছাত্রীর অকালমৃত্যু এবং পরবর্তী জনরোষ ও স্কুল ভাঙচুরের ঘটনার দায় পরোক্ষে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং তার প্রধানের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল পুলিশ৷ কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে এখন পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা সন্দেহের লক্ষ্য করেছেন মৃতা ছাত্রীর পরিবারকে৷ প্রকৃত সত্যি যদি তাই-ই হয়, তা হলে কেন প্রথমেই স্কুলের মহিলা প্রিন্সিপালকে গ্রেপ্তার করার মতো এক অবিবেচক পদক্ষেপ পুলিশ নিল, সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায়ও থেকেই যায়৷

স্কুলে হাঙ্গামার সময় ওই প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় এক হাজার খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুল এবং কলেজ ১৯শে সেপ্টেম্বর এক দিনের প্রতীকী বনধ করবেছবি: Nurunnahar Sattar

কেন পুলিশ এই উল্টোমুখে হাঁটা শুরু করল, তার অবশ্যই কারণ আছে৷ কলকাতার এই ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলটি ১৩১ বছরের পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল৷ এই দীর্ঘ সময়ে স্কুলের বহু ছাত্রী পড়াশোনা শেষ করে আজ জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত৷ স্কুলের বদনাম এবং ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ এই প্রাক্তন ছাত্রীরাই এই দুঃসময়ে ক্রাইস্ট চার্চের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং পত্র-পত্রিকায় নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন৷ অন্যদিকে বেনজিরভাবে কলকাতার রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সমাজের প্রধান রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সরব হয়েছেন প্রশাসনিক অপদার্থতার বিরুদ্ধে৷ এই জোড়া প্রতি আক্রমণের মুখে নিজেদের সাজানো তদন্ত থেকে পিছিয়ে এসে ঠিক রাস্তায় হাঁটতে কার্যত বাধ্য হলো পুলিশ৷

এদিকে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ওই ঘটনা নিয়ে সুযোগসন্ধানী রাজনীতি এবং চাপানউতোর যথারীতি শুরু হয়েছে৷ ঘটনার পর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শ্রম মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু নিহত ছাত্রীর বাড়ি গিয়েছিলেন৷ এর পরেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, সিপিএম-এর সূর্যকান্ত মিশ্র মেয়েটির বাড়ি যান৷ সঙ্গে সঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলতে শুরু করেছেন, স্কুলে যারা হামলা-ভাঙচুর করেছে, তারা সবাই সিপিএমের লোক৷ যদিও তেমন কোনও তথ্য-প্রমাণ এখনও প্রশাসনের হাতে আসেনি৷

কলকাতার ক্রাইস্ট চার্চ মিশনারি স্কুলে যে হাঙ্গামা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছবি: Nurunnahar Sattar

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের স্কুল-কলেজে হাঙ্গামা এবং শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা বেড়ে যাওয়াতে রাজ্যপাল উদ্বেগ প্রকাশ করে, অবাধ্য ছাত্রদের কঠোর হাতে শায়েস্তা করার কথা বলেছিলেন৷ তাতে এক কালের ছাত্রনেতাদের গোঁসা হয়েছিল এবং তাঁদের মনে হয়েছিল, রাজ্যপাল অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করছেন৷ কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য যে এই শাসনের অভাবে আরও চেপে বসছে, সেটা যেন কারও চোখে পড়ছিল না৷ ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে বহিরাগতদের হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা কী অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ