1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৩ মার্চ ২০১৯

সাধারণ নির্বাচনের প্রচার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে৷ তৃণমূলের অভিযোগ, অতি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে আধাসেনা বা আধা সামরিক বাহিনী৷ ওদিকে বিরোধীরা বলছে, বাহিনী দেখে ভয় পেয়েছে শাসক দল৷

Indien Kolkata Paramilitärs
ছবি: DWPayel Samanta

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে এই বাহিনী কাজ করে৷ রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে নির্বাচনি প্রচার ও ভোটগ্রহণ পর্বে এই আধাসেনা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে৷ এই বাহিনী নিয়ে বিতর্ক প্রতি নির্বাচনেই হয়৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরপরই পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ প্রথম দফার ভোটগ্রহণের দিন ১১ এপ্রিলের অনেক আগে৷ এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলের নেতা নির্বেদ রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শান্তি রয়েছে৷ সেখানে ৬০০ রেজিমেন্ট বাহিনী পাঠানো হচ্ছে কেন? উলটে আমাদের ৫০ হাজারের বেশি কর্মী খুন হয়েছেন৷ বামেদের এতজন প্রাণ হারাননি৷ ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর ২০১১ সাল পর্যন্ত বাম আমলে ৫৬ হাজার দলীয় কর্মী নিহত হয়েছেন৷ এই হিসাব ‘ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি'-তেও বেরিয়েছে৷ কিন্তু তৃণমূলের আমলে এমন হিংসার তথ্য কোথাও বেরোয়নি৷'' তৃণমূলনেতার দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খর্ব করা৷ তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে এখানে তারা নির্বাচন পরিচালনা করতে চাইছে৷''

ফুয়াদ হালিম

This browser does not support the audio element.

বিরোধীরা অবশ্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাজ্যে স্বাগত জানাচ্ছে৷ তাদের বক্তব্য, রাজ্যের পুলিশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ সিপিএম নেতা, এবারের নির্বাচনে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী ফুয়াদ হালিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভোটগ্রহণের দিন শুধু ভোট লুট করা হয়, তাই নয়৷ তার অনেক আগে থেকেই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে শাসক দল৷ নির্বাচনে লড়ার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেওয়া হয় না৷ গত পঞ্চায়েত ভোটে ৩৫ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি৷'' কিন্তু এই ধরনের অভিযোগ বামেরা ক্ষমতায় থাকাকালীন তৃণমূল অহরহ তুলে এসেছে৷ তাহলে কি বাম-তৃণমূল একই মুদ্রার দুই পিঠ? ফুয়াদের বক্তব্য, ‘‘বাম আমল সম্পর্কে যা বলা হয়, তার অনেকটাই রচিত৷ পরিধি ও গুণগত ফারাক রয়েছে৷ পরিধি অর্থে ওই বিপুল সংখ্যক আসন বিরোধীশূন্য করে দেওয়ার কথা বলেছি৷ আর গুণগত পার্থক্য এটাই যে, এখন জেলা স্তরে প্রশাসনের দপ্তরে পুলিশ ও দুষ্কৃতীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৃণমূলের স্বার্থে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করছে৷ বাম আমলে এটা ছিল না৷''

অবাধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাম ও তৃণমূল, দুই আমল নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, এমনটাই মত অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস, রাজ্যের প্রাক্তন শীর্ষ পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলামের৷ দুই শিবিরের পার্থক্য সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বামেদের ক্ষেত্রে দলীয় স্তরে অনেক সময় অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো৷ কিন্তু তৃণমূলের রাজত্বে সেটাও হয় না৷ বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল প্রকাশ্যে পুলিশকে বোমা মারার কথা বললেও দলের নেতৃত্ব তাঁর সমালোচনা করেন না৷'' সম্প্রতি একটি ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, উল্টোডাঙা এলাকায় টহলের সময় আধাসেনা এক মহিলার সঙ্গে কথা বলছে৷ তাঁকে বলছে, এলাকায় দাদাগিরি চলবে না৷ কেউ ভয় দেখাতে পারবে না৷ এই ঘটনায় তৃণমূল বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছে৷ যদিও নজরুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আশ্বাসের মধ্যে অতি সক্রিয়তার কী আছে? পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য পুলিশের অধীনে পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ সেখানে বিরোধীরা বহু আসনে প্রার্থী দিতে পারে না৷ বহু মানুষ ভোট দিতে পারেনি৷ সে কারণেই আধাসেনা এসেছে৷ হিংসামুক্ত ভোটের নজির থাকলে বাহিনী আসত না৷''

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে বাম ও তৃণমূলের প্রশাসনকে একই জায়গায় রাখছেন মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র৷ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী কতটা কার্যকর? সুজাত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেখানে সুষ্ঠুভাবে মানুষ ভোট দিতে পারে না, সেখানে আধাসেনা লাগতেই পারে৷ ২০০৯ ও ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তাই মানুষ ভোট দিতে পেরেছে৷ বাহিনীকে অতি সক্রিয় মনে হলে শাসক নালিশ জানাক কমিশনে৷ বিহার, উত্তর প্রদেশ অবাধ নির্বাচন করাতে পারছে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কেন হবে না?'' কমিশনে ইতিমধ্যে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ কমিশনের নির্দেশ, আধাসেনাকে রুটমার্চ করতে হবে প্রোটোকলের মধ্যে থেকে৷ দায়িত্ব পালন করার সময় এটা মাথায় রাখতে হবে৷

কলকাতার সঙ্গে জেলায় জেলায় টহল শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ এ ব্যাপারে ভোটারদের কী বক্তব্য? কলকাতার বাসিন্দা, সফটওয়্যার কর্মী সমীরণ মান্না বলেন, ‘‘ভোটদান আমার অধিকার৷ যদি বুথে গিয়ে দেখি আমার ভোট পড়ে গিয়েছে, তখন কার ভালো লাগে? আধাসেনা থাকায় যদি অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে আপত্তি নেই৷''

মেদিনীপুরের স্কুল শিক্ষিকা বিদিশা মুখোপাধ্যায়ও একই সুরে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিজের ভোট নিজে দিতে চাই৷ রাজনৈতিক দলগুলির কাজ উন্নয়ন৷ তাতে জনতা কতটা খুশি, সেটা বিচারের ভার ভোটারদের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত৷ পুলিশ বা আধাসেনা সেই সুযোগ করে দিতে পারলে ভালো৷ এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকরাও উত্তর প্রদেশ, বিহারের মতো সুষ্ঠুভাবে ভোটদান থেকে বঞ্চিত৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ