সাধারণ নির্বাচনের প্রচার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে৷ তৃণমূলের অভিযোগ, অতি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে আধাসেনা বা আধা সামরিক বাহিনী৷ ওদিকে বিরোধীরা বলছে, বাহিনী দেখে ভয় পেয়েছে শাসক দল৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে এই বাহিনী কাজ করে৷ রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে নির্বাচনি প্রচার ও ভোটগ্রহণ পর্বে এই আধাসেনা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে৷ এই বাহিনী নিয়ে বিতর্ক প্রতি নির্বাচনেই হয়৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরপরই পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ প্রথম দফার ভোটগ্রহণের দিন ১১ এপ্রিলের অনেক আগে৷ এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলের নেতা নির্বেদ রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শান্তি রয়েছে৷ সেখানে ৬০০ রেজিমেন্ট বাহিনী পাঠানো হচ্ছে কেন? উলটে আমাদের ৫০ হাজারের বেশি কর্মী খুন হয়েছেন৷ বামেদের এতজন প্রাণ হারাননি৷ ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর ২০১১ সাল পর্যন্ত বাম আমলে ৫৬ হাজার দলীয় কর্মী নিহত হয়েছেন৷ এই হিসাব ‘ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি'-তেও বেরিয়েছে৷ কিন্তু তৃণমূলের আমলে এমন হিংসার তথ্য কোথাও বেরোয়নি৷'' তৃণমূলনেতার দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খর্ব করা৷ তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে এখানে তারা নির্বাচন পরিচালনা করতে চাইছে৷''
ফুয়াদ হালিম
বিরোধীরা অবশ্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাজ্যে স্বাগত জানাচ্ছে৷ তাদের বক্তব্য, রাজ্যের পুলিশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ সিপিএম নেতা, এবারের নির্বাচনে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী ফুয়াদ হালিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভোটগ্রহণের দিন শুধু ভোট লুট করা হয়, তাই নয়৷ তার অনেক আগে থেকেই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে শাসক দল৷ নির্বাচনে লড়ার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেওয়া হয় না৷ গত পঞ্চায়েত ভোটে ৩৫ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি৷'' কিন্তু এই ধরনের অভিযোগ বামেরা ক্ষমতায় থাকাকালীন তৃণমূল অহরহ তুলে এসেছে৷ তাহলে কি বাম-তৃণমূল একই মুদ্রার দুই পিঠ? ফুয়াদের বক্তব্য, ‘‘বাম আমল সম্পর্কে যা বলা হয়, তার অনেকটাই রচিত৷ পরিধি ও গুণগত ফারাক রয়েছে৷ পরিধি অর্থে ওই বিপুল সংখ্যক আসন বিরোধীশূন্য করে দেওয়ার কথা বলেছি৷ আর গুণগত পার্থক্য এটাই যে, এখন জেলা স্তরে প্রশাসনের দপ্তরে পুলিশ ও দুষ্কৃতীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৃণমূলের স্বার্থে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করছে৷ বাম আমলে এটা ছিল না৷''
কংগ্রেসের একাল-সেকাল
ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ২০১৯-এর নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বর্তমানে কিছুটা পিছিয়ে দলটি৷ ভারতের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে আসার গল্প নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিষ্ঠা
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ অফিসার অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউমের উদ্যোগে ১৮৮৫ সালে বোম্বে, অর্থাৎ আজকের মুম্বই শহরে জন্ম নেয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস৷ তৎকালীন বৃটিশ শাসকের সাথে সাধারণ ভারতীয় জনতার সংলাপের মঞ্চ হয়ে ওঠে কংগ্রেস৷ প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন আইনজীবী উমেশচন্দ্র বনার্জী৷ তখন দলের প্রতীক ছিল চরকা৷
ছবি: DW/Payel Samanta
স্বাধীনতার লড়াইয়ে ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে কংগ্রেস৷ দলটি ছিল নানা মতের মিলনমেলা৷ একদিকে গান্ধী, নেহরু, জিন্নাহ’র মধ্যপন্থা, বিপরীতে ঋষি অরবিন্দ, লালা লাজপত রাই, বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক ও সুভাষচন্দ্র বসু’র চরমপন্থি জাতীয়তাবাদ — দলটি যেন দেশের মানুষের মতোই বিচিত্র, বহুমুখী৷
ছবি: picture alliance/AP Images
মতবিরোধ এবং সুভাষ বসুর দলত্যাগ
গান্ধী ও সুভাষের মধ্যেও মতবিরোধ ছিল৷ গান্ধী মনোনীত প্রার্থী, পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি হন সুভাষ৷নিরস্ত্র আন্দোলন না সশস্ত্র আন্দোলন — কোন পথে লড়বে কংগ্রেস? এই প্রশ্নে উত্তাল দলের অভ্যন্তর৷ মতাদর্শগত টানাপড়েনের মুখে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র দল, ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন সুভাষ৷ কংগ্রেসের সভাপতি হন রাজেন্দ্র প্রসাদ, যিনি পরবর্তীতে স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন৷
ছবি: Public Domain
দাঙ্গা
ব্রিটিশরা সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ বপন করেছিল, তার ফলে শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা৷ ১৯৪৬ সালে জিন্নাহ’র নেতৃত্বে মুসলীম লীগ মুসলমানদের জন্য পৃথক অঞ্চলের দাবিতে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়৷ এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক চাপ বাড়লে কলকাতায় ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়৷ ৪০০০-এরও বেশি লোক প্রাণ হারান ও লক্ষাধিক হন গৃহহীন৷ আস্তে আস্তে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জন্য তৈরি হতে থাকে ভারত৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
কংগ্রেস ও দেশভাগ
দাঙ্গার দগদগে ঘা নিয়েই ১৯৪৭ সালে অর্জিত হয় স্বাধীনতা৷ তবে অখণ্ড ভারত থাকেনি৷ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যায় দেশ, জন্ম নেয় স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান৷ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন গান্ধীবাদী জওহরলাল নেহরু৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আততায়ীর গুলিতে নিহত হলেন গান্ধী
স্বাধীনতার পরপরই ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি চরমপন্থি হিন্দু মহাসভার সদস্য, নাথুরাম গডসের হাতে নিহত হন মহাত্মা গান্ধী৷ গান্ধী বেঁচে থাকাকালীন পাকিস্তান নিজেকে ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করলে হিন্দু মহাসভার মতো কিছু গোষ্ঠী ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার উদ্যোগ নেয়৷ গান্ধীর মৃত্যুকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে নেহরু বিভিন্ন চরমপন্থি হিন্দু গোষ্ঠীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/K. Gandhi
নেহরুর নেতৃত্বে ভারতবর্ষ
জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়৷ ১৯৬৪ পর্যন্ত দল ও দেশের নেতৃত্ব দেন নেহেরু৷ তৃতীয় বিশ্বের প্রথম নেতা হিসেবে পরিচিত নেহরু ‘জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন’ ও ‘সবুজ বিপ্লব’-এর মতো ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বহির্বিশ্বে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন৷
ছবি: AP
ইন্দিরার হাত ধরে পরিবারতন্ত্রের শুরু
নেহরু-কন্যা ইন্দিরা ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ অবধি তাঁর বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করেন৷ ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন ইন্দিরা৷ তবে ১৯৫৯ সালেই কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ নেহরুর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হন লালবাহাদুর শাস্ত্রী৷ ১৯৬৬ সালে তাঁরও মৃত্যু হলে ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী৷
ছবি: picture-alliance/united archives
জরুরি অবস্থায় কংগ্রেস
১৯৭৫ সালের ভোটে কারচুপির অভিযোগে সারা দেশে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা, ওঠে ইন্দিরা-বিরোধী আওয়াজ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯৭৭ সালে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ইন্দিরা৷ জরুরি অবস্থার শেষে পুনর্নিবাচনে কংগ্রেস হেরে যায়৷
ছবি: imago/ZUMA/Keystone
নতুন প্রতীক, নতুন আঙ্গিকের কংগ্রেস
১৯৫১ সাল পর্যন্ত দলের প্রতীক ছিল চরকা৷ ১৯৫২-৭১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রতীক ছিল হাল ও বাছুর৷ ১৯৭৭ সালে পরাজয়ের পর ইন্দিরার নতুন দল কংগ্রেস (আই)-এর প্রতীক হয় হাত৷ পরে তা হয় একত্রিত কংগ্রেসের প্রতীক৷ বর্তমানে কংগ্রেসের প্রতীক ভারতের জাতীয় পতাকার সামনে ডান হাত৷ ১৯৮০ সালে ইন্দিরার নেতৃত্বে আবার ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস৷ পুত্র সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর ইন্দিরা রাজনীতিতে নিয়ে আসেন দ্বিতীয় পুত্র রাজীবকে৷
ছবি: AP
ইন্দিরার প্রয়াণ, রাজীবের আগমন
১৯৮৪ সালে শিখ চরমপন্থিদের ঠেকাতে ইন্দিরা শুরু করেন ‘অপারেশন ব্লু-স্টার’৷ স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন, যা শিখ ধর্মাবলম্বীদের একাংশকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে৷ সে বছরের অক্টোবর মাসের শেষে দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা৷ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী ভারতের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷
ছবি: Imago/Sven Simon
রাজীব গান্ধীর অকালমৃত্যু
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজীব৷ ১৯৮৭ সালে তিনি শ্রীলঙ্কায় শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়ে চরমপন্থি তামিল গোষ্ঠী লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই)-এর রোষের মুখে পড়েন৷ ১৯৯১ সালে নির্বাচনের প্রচার করার সময় এলটিটিই কর্মীদের আত্মঘাতী বোমায় মারা যান রাজীব৷ ফলে আবার নেতৃত্বের সংকটে পড়ে কংগ্রেস৷
ছবি: Getty Images/AFP
পরিবারতন্ত্রে সাময়িক ছেদ
রাজীবের মৃত্যুর পর কংগ্রেস সভাপতি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন পিভি নরসিংহ রাও৷ পাশাপাশি চলতে থাকে রাজীব গান্ধীর ইটালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়াকে রাজনীতিতে আনার প্রস্তুতি৷ বিজেপির নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় আসে এনডিএ জোট সরকার৷ ২০০৪ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Hadebe
ক্ষমতায় আসা যাওয়া
২০০৪ সালে সোনিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস৷ তবে প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি সোনিয়া৷ সেই দায়িত্ব পান মনমোহন সিং৷ কিন্তু ২০০৪ থেকে ২০১৪ অবধি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ইউপিএ জোট সরকারের সাথে জুড়তে থাকে ‘টু-জি মামলা’ বা কয়লা কেলেঙ্কারির মতো দুর্নীতির অভিযোগ৷ ২০১৪ সালে মাত্র ৪৪টি আসন জিতে ধরাশায়ী হয় কংগ্রেস৷ ২০১৭ সালের শেষে সোনিয়া রাজনীতি থেকে অবসর নিলে দলের নেতৃত্ব নেন রাজীব-সোনিয়ার পুত্র রাহুল৷
ছবি: Reuters/B. Mathur
দলের নেতৃত্বে রাহুল গান্ধী
২০১৩ সালে উপ-সভাপতি হওয়ার মাধ্যমে কংগ্রেসের নেতৃত্বে আগমনের পথ ধরেছিলেন রাহুল৷ ২০১৪’র নির্বাচনে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস ভরাডুবি হয়৷ এর জন্য তাঁর নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবকেই দায়ী করেন অনেকে৷ তবে ২০১৯ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই আবার ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস৷
ছবি: IANS
15 ছবি1 | 15
অবাধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাম ও তৃণমূল, দুই আমল নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, এমনটাই মত অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস, রাজ্যের প্রাক্তন শীর্ষ পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলামের৷ দুই শিবিরের পার্থক্য সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বামেদের ক্ষেত্রে দলীয় স্তরে অনেক সময় অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো৷ কিন্তু তৃণমূলের রাজত্বে সেটাও হয় না৷ বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল প্রকাশ্যে পুলিশকে বোমা মারার কথা বললেও দলের নেতৃত্ব তাঁর সমালোচনা করেন না৷'' সম্প্রতি একটি ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, উল্টোডাঙা এলাকায় টহলের সময় আধাসেনা এক মহিলার সঙ্গে কথা বলছে৷ তাঁকে বলছে, এলাকায় দাদাগিরি চলবে না৷ কেউ ভয় দেখাতে পারবে না৷ এই ঘটনায় তৃণমূল বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছে৷ যদিও নজরুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আশ্বাসের মধ্যে অতি সক্রিয়তার কী আছে? পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য পুলিশের অধীনে পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ সেখানে বিরোধীরা বহু আসনে প্রার্থী দিতে পারে না৷ বহু মানুষ ভোট দিতে পারেনি৷ সে কারণেই আধাসেনা এসেছে৷ হিংসামুক্ত ভোটের নজির থাকলে বাহিনী আসত না৷''
এক নজরে ভারতের আঞ্চলিক দল
২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচন৷ ইতিমধ্যে কেন্দ্রে ও রাজ্যে সরকার গড়া এবং টিকিয়ে রাখায় আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে৷ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই দলগুলি নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
মা-মাটি-মানুষের তৃণমূল কংগ্রেস
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে জন্ম৷ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রতীক জোড়া ঘাসফুল ও স্লোগান ‘মা-মাটি-মানুষ’৷ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে এককভাবে ১৮৪টি আসন পেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিধানসভার ২২৭ টি আসন নিয়ে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে৷ ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে ২৯৪টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২১১টি আসন পেয়ে আবার ক্ষমতায়৷
ছবি: UNI
দলিতের দল বহুজন সমাজ পার্টি
উত্তরপ্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পার্টি৷ ভারতীয় সংবিধান রচনার প্রাণপুরুষ, দলিত নেতা ডক্টর বি. আর আম্বেদকরের আদর্শে ১৯৮৪ সালে দলটি গঠন করেন কাঁসিরাম৷ ২০০১ সালে দলের ভার নেন উত্তরপ্রদেশের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী৷ রাজ্যের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী তিনি৷ নির্বাচনী প্রতীক চিহ্ন হাতি৷ বর্তমানে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিএসপির চারজন থাকলেও লোকসভায় একজনও নেই৷
ছবি: Bahujan Samaj Party
ক্ষমতার আশায় সমাজবাদী পার্টি
১৯৯২ সালে মূল জনতা দল ভেঙে গঠিত সমাজবাদী পার্টি (এসপি) উত্তরপ্রদেশে খুবই প্রভাবশালী৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুলায়েম সিং যাদব, তবে বর্তমান দলনেতা অখিলেশ সিং যাদব৷ দলের মতাদর্শ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র৷ নির্বাচনী প্রতীক সাইকেল৷ ২০১২ সালের বিধানসভা ভোটে শাসক দল বহুজন সমাজ পার্টিকে পরাজিত করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার গঠন করে৷ লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বর্তমান আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৭টি এবং ১৩টি৷
ছবি: picture-alliance
দাঁড়িপাল্লায় অকালী দল
পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শিখ ও পাঞ্জাবি জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল শিরোমণি অকালী দল৷ সব থেকে পুরানো এবং প্রভাবশালী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটি ‘অকালী’ নামেই পরিচিত৷ নির্বাচনি প্রতীক দাঁড়িপাল্লা৷ বর্তমান সভাপতি সুখবীর সিং বাদল৷ গুরুদোয়ারার মতো শিখ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণ করে তাঁর দল৷ প্রতিষ্ঠা ১৯২০ সালে৷ বর্তমানে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অকালী দলের সাংসদ চারজন, বিধানসভায় ১১৭ টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৫টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
দক্ষিণ ভারতের এআইএডিএমকে
অখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, বা সংক্ষেপে এআইএডিএমকে, ভারতের তামিল নাডু রাজ্যের রাজনৈতিক দল৷ ১৯৭২ সালে এম.জি. রামচন্দ্রন কর্তৃক এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ দলীয় প্রতীক জোড়া পাতা৷এই দল সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দ্রাবিড় আঞ্চলিক পার্টি৷ ‘আম্মা’ জয়ললিতার নেতৃত্বে ১৯৮৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখে এআইএডিএমকে৷ রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল এআইএডিএমকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sankar
উদীয়মান ডিএমকে?
দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, সংক্ষেপে ডিএমকে তামিলনাড়ু রাজ্যের পুরনো আঞ্চলিক দল৷ প্রতিষ্ঠাতা সি.এন আন্নাদুরাই৷ ‘জাস্টিস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত দ্রাবিড় কড়গম পার্টি ভেঙে গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে৷ ১৯৬৯ সাল থেকে আমৃত্যু দলের নেতৃত্ব দেন করুণানিধি৷ মতাদর্শ সামাজিক গণতন্ত্র ও আঞ্চলিকতাবাদ এবং নির্বাচনি প্রতীক উদীয়মান সূর্য৷ বিরোধীনেত্রী জয়ললিতার মৃত্যুর পর আগামী ভোটে কেমন ফল করে ডিএমকে, এখন তা-ই দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sankar
আম জনতার আম আদমি পার্টি
২০১২ সালে গঠিত আম আদমি পার্টি বর্তমানে দিল্লির শাসক দল৷ ২০১১ সালে জন লোকপাল বিল পাস করানো নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকারী আন্না হাজারে ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়৷ ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে নামে আম আদমি পার্টি ও সরকার গঠন করে৷ অবিলম্বে লোকপাল বিল আনার শর্ত পূরণ হবার সম্ভাবনা না থাকায় ৪৯ দিনের মাথায় ইস্তফা দিলেও ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে ফের ক্ষমতায় আসে৷
ছবি: Reuters/A. Mukherjee
বিজু-র জয়রথ কি বজায় থাকবে?
১৯৯৭ সালে গঠিত বিজু জনতা দল বর্তমানে ওড়িষায় ক্ষমতাসীন৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েকের ছেলে নবীন পট্টনায়েক এখন মুখ্যমন্ত্রী৷ পিতার নামেই দলের নাম৷ দলের প্রতীক চিহ্ন শঙ্খ৷ নবীন পট্টনায়েক ২০০৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে দাঁড়ান এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন৷ ২০০০ সাল থেকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় নবীন পট্টনায়ক এখন মোট চারবারের মুখ্যমন্ত্রী৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
8 ছবি1 | 8
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে বাম ও তৃণমূলের প্রশাসনকে একই জায়গায় রাখছেন মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র৷ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী কতটা কার্যকর? সুজাত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেখানে সুষ্ঠুভাবে মানুষ ভোট দিতে পারে না, সেখানে আধাসেনা লাগতেই পারে৷ ২০০৯ ও ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তাই মানুষ ভোট দিতে পেরেছে৷ বাহিনীকে অতি সক্রিয় মনে হলে শাসক নালিশ জানাক কমিশনে৷ বিহার, উত্তর প্রদেশ অবাধ নির্বাচন করাতে পারছে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কেন হবে না?'' কমিশনে ইতিমধ্যে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ কমিশনের নির্দেশ, আধাসেনাকে রুটমার্চ করতে হবে প্রোটোকলের মধ্যে থেকে৷ দায়িত্ব পালন করার সময় এটা মাথায় রাখতে হবে৷
কলকাতার সঙ্গে জেলায় জেলায় টহল শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ এ ব্যাপারে ভোটারদের কী বক্তব্য? কলকাতার বাসিন্দা, সফটওয়্যার কর্মী সমীরণ মান্না বলেন, ‘‘ভোটদান আমার অধিকার৷ যদি বুথে গিয়ে দেখি আমার ভোট পড়ে গিয়েছে, তখন কার ভালো লাগে? আধাসেনা থাকায় যদি অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে আপত্তি নেই৷''
মেদিনীপুরের স্কুল শিক্ষিকা বিদিশা মুখোপাধ্যায়ও একই সুরে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিজের ভোট নিজে দিতে চাই৷ রাজনৈতিক দলগুলির কাজ উন্নয়ন৷ তাতে জনতা কতটা খুশি, সেটা বিচারের ভার ভোটারদের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত৷ পুলিশ বা আধাসেনা সেই সুযোগ করে দিতে পারলে ভালো৷ এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকরাও উত্তর প্রদেশ, বিহারের মতো সুষ্ঠুভাবে ভোটদান থেকে বঞ্চিত৷''
বিজেপিকে চিনে নিন
ভারতে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি৷ বর্তমানে জাতীয় ও রাজ্যস্তরে সর্বাধিক প্রতিনিধিত্ব রাখা দলটি সদস্য সংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম৷ ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু-জাতীয়তাবাদী অবস্থানের বিজেপির গল্প এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. K. Singh
আদর্শগত উৎস
বিজেপিকে চিনতে হলে ‘সংঘ পরিবার’-এর অন্তর্গত হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির উৎস আরএসএস অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে জানা দরকার৷ বিশ্বের বৃহত্তম এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মারাঠি চিকিৎসক কেশব হেডগেওয়ার৷ ১৯২৫ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি৷ ভি ডি সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণই আরএসএস-এর প্রধান উদ্দেশ্য৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে দূরত্ব
কংগ্রেসের নেতৃত্বে চলা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে ছিল আরএসএস৷ ১৯৪০-এর দশকে সংগঠনের নেতা হিসেবে এম এস গোলওয়ালকর হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে ব্রিটিশ বিরোধিতার বদলে ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষার ডাক দেন৷ উল্লেখ্য, পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া অটলবিহারী বাজপেয়ী ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় সত্যাগ্রহীদের সাথে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ লিখিত মুচলেকা দিয়ে আন্দোলনে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাড়া পান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M.Desfor
দেশভাগ ও আরএসএস
দেশভাগের সময় আরএসএস পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের সাহায্য করে৷ আরএসএস ও বর্তমানের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কর্মীরা মনে করেন, দেশভাগ মুসলিমদের প্রতি নরম আচরণের ফল৷ এজন্য গান্ধী ও নেহরুকে বিশেষভাবে দায়ী মনে করেন তাঁরা৷ স্বাধীনতার পর কংগ্রেসকে ঠেকাতে ১৯৫১ সালে জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ সেই জনসংঘই আসলে বিজেপির উৎস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জরুরি অবস্থা ও জনতা পার্টির জন্ম
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন৷ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে জনসংঘের অসংখ্য সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা শেষে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন৷ কংগ্রেসকে হারাতে অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে যায় জনসংঘ, জন্ম নেয় জনতা পার্টি৷ নির্বাচনে জিতেও যায় জনতা পার্টি৷ প্রধানমন্ত্রী হন মোরারজি দেশাই৷ স্বাধীন ভারতে সূচিত হয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ জয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজেপির জন্ম
১৯৮০’র পর দল ও আরএসএসের দ্বৈত সদস্য হবার বিধান না থাকায় জন্ম নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি৷ নতুন দলে নতুন সদস্য যোগ দিলেও, গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল পুরোনোদের দাপট৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন বাজপেয়ী৷ মূলত, ইন্দিরা হত্যার পর ভোটে খারাপ করার কারণেই নেতৃত্বে এই পরিবর্তন৷ তবে বিজেপির উত্থান শুরু ১৯৮৪ সালে৷ সে বছর দলের সভাপতি হন লালকৃষ্ণ আডবানি৷ রাম জন্মভূমির দাবিকে ঘিরে তাঁর নেতৃত্বেই শক্তিশালী হতে থাকে বিজেপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Raveendran
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও বাবরি মসজিদ
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই বিজেপি সরাসরি ধর্মের রাজনীতিতে নামে৷ বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির গঠনের দাবিতে সারা দেশ থেকে অযোধ্যার পথে রওয়ানা দেয় হাজার হাজার ‘করসেবক’৷ পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে উত্তেজিত জনতা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে৷ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হন দু’ হাজারেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran
সরকার গঠন ও জোটের রাজনীতি
সাম্প্রদায়িক আবেগকে হাতিয়ার করে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি ১৬১টি লোকসভা আসনে জয়ী হয়৷ প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন অটলবিহারী বাজপেয়ী৷ কিন্তু ১৩ দিন পর, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার গঠন করতে পারেনি বিজেপি৷ ১৯৯৬ সালে আঞ্চলিক দলগুলির একটি জোট সরকার গঠন করে৷ কিন্তু সেই সরকারের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয়নি৷ ১৯৯৮ সালে আবার নির্বাচন হয়৷
ছবি: UNI
প্রথম এনডিএ সরকার
নির্বাচনে জিতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকার গড়ে৷ জোটে অংশগ্রহণ করে সমতা পার্টি, অকালী দল, শিব সেনা, নিখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম (এআইএআইডিএমকে), বিজু জনতা দল ও শিব সেনা৷ ১৯৯৯ সালে তাঁরা সংসদে ৩০৩টি আসন জিতলে বাজপেয়ী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন৷ পাঁচ বছরের পূর্ণমেয়াদী এই জোট সরকার প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসের মোকাবিলার পাশাপাশি নব্য-উদার অর্থনীতির ওপর জোর দেয়৷
ছবি: Imago/photothek/T. Koehler
দুর্নীতি ও দাঙ্গায় কোণঠাসা বিজেপি
বিজেপির জয়রথে প্রথম ‘বাধা’ গোধরা দাঙ্গা৷ তীর্থযাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগাকে ঘিরে প্রায় ২০০০ মানুষ মারা যান৷ তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতার নাম এই দাঙ্গার সাথে জড়ায়৷ বিজেপি-প্রধান বঙ্গারু লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ৷ সব মিলিয়ে বিপন্ন বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট ২০০৪ সালে নতুন সরকার গড়ে৷ প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং৷
ছবি: AP
নেতৃত্বে কে? মোদী, না আডবাণী?
২০১৪’র লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে বিজেপি৷ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দলের নেতৃত্বের দায়ভার বর্ষীয়ান নেতা এল কে আডবানির ওপর বর্তানোর কথা উঠলেও, বাস্তবে তা হয়নি৷
ছবি: AP
মোদীর উত্থান
বিজেপির ইতিহাসে ব্যক্তিকেন্দ্রীক নির্বাচনী প্রচার মোদীর ক্ষেত্রেই প্রথম৷ পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে মোদীর ‘গুজরাট মডেল’-কে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হয় প্রচারে৷ সুবক্তা মোদী শীঘ্রই হয়ে ওঠেন তরুণ প্রজন্ম থেকে সংবাদমাধ্যম, সকলের প্রিয়পাত্র৷ নির্বাচনের আগে বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে গেলেও, মোদীর প্রাক-নির্বাচন বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিল ‘হিন্দুত্ব’৷
ছবি: picture alliance/AA/M. Aktas
মোদী থেকে ‘মোদীজি’
২০১৪ সালে বিজেপি ২৮২টি আসন জিতে ক্ষমতায় আসে৷ ভোটারদের কংগ্রেসের প্রতি অনাস্থার পাশাপাশি বিজেপির সাফল্যের আরেকটি কারণ ছিল আরএসএসের নিঃশর্ত সমর্থন৷ নরেন্দ্র মোদীই হন প্রধানমন্ত্রী৷ পিউ গবেষণা কেন্দ্রের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, প্রথম বছরের তুলনায় বর্তমানে মোদীর জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে, যা ২০১৯-র নির্বাচনে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলির জন্যও নিঃসন্দেহে ভাবনার বিষয়৷