1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার আর্জি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৩ মে ২০১৯

নির্বাচন মিটে গেলেও পশ্চিমবঙ্গে হিংসায় বিরাম নেই৷ বিভিন্ন স্থানে শাসক ও বিরোধী পক্ষের সংঘর্ষ হচ্ছে৷ গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভাটপাড়া৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফল প্রকাশের পরও রাজ্যে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী৷

ছবি: DW/P. Samanta

লোকসভা নির্বাচনের সাত দফাতেই হিংসার ছবি দেখা গিয়েছে বাংলায়৷ খুন, মারধর, অগ্নি সংযোগ, লুটপাট, কিছুই বাদ যায়নি৷ নির্বাচন মিটে গেলেও ভোট ঘিরে উত্তেজনা কমেনি৷ মূলত শাসক তৃণমূল ও বিরোধী বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পর পরিস্থিতি আরো ঘোরালো হতে পারে৷ দুই দলের নেতৃত্বের তরফ থেকেই হিংসার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল৷ একদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে এক ভাষণে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা নেওয়ার হঁশিয়ারি দিতে শোনা গেছে৷ অন্যদিকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বারবার আইন হাতে তুলে নেওয়ার ডাক দিয়েছেন৷ এরই ফলশ্রুতিতে উত্তেজনা বহাল জেলায় জেলায়৷

হিংসার খতিয়ানে সব জায়গাকে ছাপিয়ে গিয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভাটপাড়ার পরিস্থিতি৷ কলকাতার অদূরে এই এলাকা বরাবরই উত্তেজনাপ্রবণ৷ ১৯ মে ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ সেদিনই যথেচ্ছ বোমাবাজি হয় ভাটপাড়ার অধীন কাঁকিনাড়া এলাকায়৷ ভোট মিটে যাওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যা অতীতের সব নজিরকে ছাপিয়ে যাচ্ছে৷ সোম ও মঙ্গলবার কাঁকিনাড়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা রেল অবরোধ হয়েছে৷ তার থেকে বড় কথা ট্রেন লক্ষ্য করে বোমা ও পাথর ছোঁড়ে দুষ্কৃতীরা৷ ট্রেনের ভেতর বসে ভয়ে কাঁপতে থাকেন যাত্রীরা৷ একের পর এক বাড়ি ও দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, লাগানো হয়েছে আগুন৷ এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে চাপানউতোর চলছে৷ নির্বাচনি ফলের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী এখানে উত্তেজনার পারদ আরও চড়তে পারে৷

এই রাজ্যে প্রশাসন গত সাত বছর ধরে গুন্ডাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে: বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ও অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল নির্বাচন কমিশনে দরবার করেন৷ তাঁদের দাবি, নির্বাচনি আচরণবিধি যতদিন কার্যকর থাকবে, ততদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দেওয়া হোক৷ নির্বাচন কমিশন তাঁদের দাবি মেনে নিয়ে আপাতত ২৭ মে পর্যন্ত বাহিনী রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এমনকি মঙ্গলবার দিল্লীতে এনডিএর বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাটপাড়ার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ এ বিষয়ে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন পরবর্তী হিংসা ও মারামারি এ রাজ্যে হয়৷ ২০১৪ সালে ভোটের পর ৭ জন সংখ্যালঘু বিজেপির পতাকা হাতে নিয়ে খুন হয়েছিলেন৷ ভারতের অন্য কোনো রাজ্যে এমন নিদর্শন ছিল না৷ এখন রাজ্য পুলিশ যেহেতু আইন-শৃঙ্খলা নিয়ণ্ত্রণ করতে পারছে না, তাই কাঁকিনাড়ায় যে ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ণ্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীই দরকার৷’’  

আমাদের কর্মীরা তৃণমূলের হামলায় ঘরছাড়া: সায়ন্তন বসু

This browser does not support the audio element.

একই বক্তব্য যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের৷ ভোটের পরেও শাসকদলের হাতে আক্রান্ত বামকর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তিনি৷ বাড়ি ও হাসপাতালে গিয়ে তাঁদের খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি৷ বিকাশ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই রাজ্যে প্রশাসন গত সাত বছর ধরে গুন্ডাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে৷ পয়সার লোভ দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে গুন্ডাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন, তেমন আচরণ করছেন৷ আবার কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকায় বিজেপির পয়সা প্রচুর, বিজেপিও সেই কাজ করছে৷ ফলে গুন্ডামি ও পয়সার প্রতিযোগিতা চলছে৷ রাজ্যে পুলিশ যেহেতু স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করে না, তাই সাময়িকভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর ভরসা রাখতে হয়৷ কিন্তু এভাবে তো সম্পূর্ণ রেহাই পাওয়া যায় না৷’’

আগামীতে হিংসায় নয়া মাত্রা যোগ হতে পারে বলেও আশঙ্কা বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভোটের ফলের পর তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলেরই বিরোধ বাড়বে৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১০০ জন খুন হয়েছিলেন৷ তার মধ্যে ৪১ জন তৃণমূলের৷ ৩৮ জনের পরিবার তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজে যেখানে বদলা নেওয়ার কথা বলছেন, সেখানে খুনোখুনি আরো বাড়বে৷ তাই এটা ঠেকাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার৷’’

দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজ্য পুলিশ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্তি পায়নি: সন্ধি মুখোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসুর বক্তব্য, আধা সেনা রাজ্য থেকে সরিয়ে দিলে হিংসা আরো বাড়বে৷ সায়ন্তন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা তৃণমূলের হামলায় ঘরছাড়া৷ রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে আছে৷ এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের দায়িত্ব তার নাগরিককে রক্ষা করা৷ সেই জন্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ মানুষও প্রতিরোধ করছে৷ বাড়িতে ডাকাত পড়লে আগে তাকে রুখতে হবে৷ পরে পুলিশ ডাকতে হয়৷’’

গোড়া থেকেই বিপুল সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ ভোটের পরও কেন রাজ্যে আধাসেনা রাখা হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শাসক দল৷ তাদের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশই শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যথেষ্ট৷ কেন্দ্রীয় সরকার আধাসেনা পাঠিয়ে রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে৷ এই চাপানউতোর নিয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট ২০১০ সালের গাইডলাইনে বলেছিল, রাজ্য পুলিশের কাজ-কর্মের পর্যালোচনা করবে স্টেট সিকিউরিটি কমিশন৷ মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এর সদস্য হবেন৷ কিন্তু রাজ্য একে আইনি স্বীকৃতি দেয়নি৷ এর ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজ্য পুলিশ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্তি পায়নি৷’’ যদিও তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মালা রায়ের দাবি, ‘‘দেশের মধ্যে সবচেয়ে শান্তিতে ভোট হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে৷ ছোটখাটো সংঘর্ষ ঘটে থাকে, বড় ঘটনা ঘটেনি৷ এটা নরেন্দ্র মোদীকে স্বীকার করতে হবে৷ ভাটপাড়ার হিংসার জন্য দায়ী অর্জুন সিং, তৃণমূল নয়৷’’

দেশের মধ্যে সবচেয়ে শান্তিতে ভোট হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে: মালা রায়

This browser does not support the audio element.

এই বিতর্কের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ আঁচ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গণনার আগের দিন রাতেই সব রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছিল৷ রাজ্যকে পাঠানো বার্তায় কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট বলেছে, হিংসা ছড়িয়ে পড়তে পারে ফল ঘোষণার পর৷ তাই সতর্ক থাকতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ