নিবিড় সমীক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বুথ লেভেল অফিসাররা(বিএলও)। এরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের চিহ্নিত করবেন, তাদের দিয়ে ফর্ম পূরণ করাবেন। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী বুথ সংখ্যার অনুপাতে ৮০ হাজারের বেশি এ ধরনের অফিসার প্রয়োজন। এদের অধিকাংশই স্কুল শিক্ষক। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুলে তারা শিক্ষকতা করেন। এছাড়াও রয়েছেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গ্রুপ সি কর্মচারীরা।
নির্বাচন কমিশন নিযুক্তএই অফিসাররা ২০০২-এর ভোটার তালিকার সঙ্গে সর্বশেষ তালিকায় ম্যাচিংয়ের কাজ করছেন। অর্থাৎ দুটি তালিকা মিলিয়ে দেখছেন। ইতিমধ্যে দুটি জেলা বাদ দিয়ে সর্বত্র এই কাজ প্রায় শেষ বলে সূত্রের খবর। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির কাজ বাকি রয়েছে।
মূল সমীক্ষা শুরুর পরে প্রত্যেক ভোটারের বাড়ি গিয়ে ফর্ম দেবেন বিএলও। পূরণ করা ফর্ম সংগ্রহ করবেন ভোটারদের কাছ থেকে। তাদের নথি যাচাই করবেন। একই সঙ্গে তারা চিহ্নিত করবেন, কোনো ভোটার স্থানান্তরিত হয়েছেন কিনা, কারা মারা গিয়েছেন বা কাদের নাম একাধিক জায়গার তালিকায় রয়েছে।
সূত্রের খবর, অনেক জেলায় ২০০২ ও বর্তমান ভোটার তালিকার মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী বিজেপির মধ্যে তুমুল চাপানউতোর চলছে কিছু দিন ধরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, সমীক্ষার ফলে কত সংখ্যক মানুষের নাম বাদ যাবে।
এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যে বিপাকে পড়েছেন বুথ লেভেল অফিসাররা তারা যেহেতু মাঠে নেমে মূল কাজটি করবেন, সেজন্য নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা বোধ করছেন। সম্প্রতি ডেপুটি নির্বাচন কমিশনের জ্ঞানেশ ভারতীর সঙ্গে বৈঠকে বিএলওরা এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন।
দুশ্চিন্তায় বিএলওরা
এ রাজ্যে কবে সমীক্ষার মূল কাজ শুরু হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশিকা জারি করেনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তবে এ নিয়ে দিল্লিতে তৎপরতা তুঙ্গে। সেখানে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। বুধ ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে দুদিনের বৈঠক করেছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ।
ইসি অভিযানে যাওয়া বিরোধী সাংসদদের আটক করলো পুলিশ
ভোট চুরির অভিযোগ তুলে দিল্লিতে বিরোধী সাংসদদের নির্বাচন কমিশন (ইসি) অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার। ব্যারিকেড টপকালেন অখিলেশ। আটক রাহুল, প্রিয়াংকারা। অসুস্থ মহুয়া। ইসিতে গেলেনই না বিরোধী প্রতিনিধিদল।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
সংসদ ভবন থেকে মিছিল
বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ সংসদ ভবন থেকে মিছিল করে বেরোলেন বিরোধী সাংসদরা। কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপসহ প্রায় সব বিরোধী দলের লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদরা মিছিল শুরু করলেন। পুরোভাগে ছিলেন রাহুল গান্ধী, অখিলেশ যাদব, ডেরেক ওব্রায়েন, সঞ্জয় রাউতসহ অন্য নেতারা।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
নানা ভাষায় লেখা পোস্টার
সাংসদদের হাতে ছিল নানা ভাষায় লেখা পোস্টার। বিষয় একই। যেমন বাংলায় লেখা পোস্টারে দাবি করা হয়েছিল, ভোট চুরি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া ছিল ইংরাজি, হিন্দি, তামিল, মালয়ালমসহ অনেকগুলি ভাষায় নানা রংয়ের পোস্টার। ভারতে এখন একাধিক রাজ্যে ভাষা নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিজেপি নেতা অমিত মালবীয় বলেছেন, বাংলা ভাষা বলে কিছু নেই। ডিএমকে সোচ্চার হিন্দি চাপানোর প্রয়াস নিয়ে। বিরোধী সাংসদদের মিছিলে তাই ভাষা গুরুত্ব পেয়েছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
গুরুতর অভিযোগ
বিরোধী সাংসদদের অভিযোগ রীতিমতো গুরুতর। দেশের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা স্বশাসিত সংস্থা ইসি-র বিরুদ্ধে শাসক দলের হয়ে ভোট চুরির অভিযোগ। নির্বাচন কমিশন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা প্রমাণ চেয়েছে।
ছবি: AICC/ANI
কিছুটা এগোতেই ব্যারিকেড
সংসদ ভবন পার হয়ে একটু এগোবার পরেই সাংসদদের থেমে যেতে হলো। কারণ, পুলিশ, দাঙ্গারোধী পুলিশ, সিআরপিএফ ব্যারিকেড করে পথ আটকে দাঁড়িয়ে ছিল। সেখানেই থেমে গেলো মিছিল। অনেকে স্লোগান দিতে শুরু করলেন। অনেকে বসে পড়লেন রাস্তায়। অনেকে প্ল্যাকার্ড দোলাতে শুরু করলেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা
এই চেষ্টাটা প্রথমে করেন মহুয়া মৈত্রসহ কয়েকজন নারী সাংসদ। তারা ব্যারিকেডের উপর চড়লেও তা টপকাতে পারেননি। পরে পুরুষ সাংসদরা ব্যারিকেড টপকাবার চেষ্টা করেন। এদিকে পুলিশ খুব সক্রিয় ছিল।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
টপকালেন অখিলেশ যাদবসহ অন্যরা
কিন্তু ব্যারিকেড টপকানোর কাজটা করে দেখালেন উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। মাথায় সমাজবাদী পার্টির লাল টুপি পরিহিত অখিলেশ অবলীলায় দুইটি ব্যারিকেড টপকে চলে এলেন এপারে। বসে পড়লেন রাস্তায়। শুরু হলো প্রবল হট্টগোল। গুচ্ছের ক্যামেরা ঝাঁপিয়ে পড়লো। পুলিশ তাকে টেনে তুলতে চাইছে। মিডিয়া বাইট চাইছে। অখিলেশ রাস্তায় বসে অকাতরে বাইট দিয়ে যাচ্ছেন। তার পিছনে ব্যারিকেড টপকালেন দলের এক-দুইজন সাংসদ।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
অখিলেশকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত পুলিশ
অখিলেশ রাস্তায় বসে আছেন। পুলিশ চাইছে, তিনি যাতে উঠে যান, সেই ব্যবস্থা করতে। অখিলেশ উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী নেতা, লোকসভায় তার দলের ৩৭ জন সাংসদ আছেন, রাজ্যসভায় আছেন চারজন, ফলে তাকে প্রথমে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তুলতে চাইলো পুলিশ।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
এলেন ডেরেক ওব্রায়েন
এই সময় পুলিশের সাহায্যে অখিলেশের কাছে এলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ওব্রায়েন। তিনি কিছু কথা বললেন অখিলেশের সঙ্গে। অখিলেশ সাংবাদিকদের বলেন, উত্তরপ্রদেশে সরকার ভোট লুট করছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত পুরো বিষয়টা দেখা। সরকার তো আমাদের কথা শুনতেই রাজি নয়।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
অখিলেশের হাতে বাংলায় লেখা পোস্টার
ডেরেক এই সময় অখিলেশের হাতে বাংলায় লেখা পোস্টার ধরিয়ে দেন। ভোট চুরি বন্ধ করার দাবি নিয়ে পোস্টার ধরে অখিলেশ হিন্দিতে বাইট দিতে থাকেন। চিত্রসাংবাদিকরা সেই ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন। তাকে তখনো ঘিরে অসংখ্য টিভি ক্যামেরা। বাংলা পোস্টার নিয়ে অখিলেশের এই ছবি টিভি, ডিজিটাল-বাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতে।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
স্লোগানে মুখরিত
বিরোধী সাংসদরা সমানে স্লোগান দিতে থাকেন। ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বাতিলের দাবি ওঠে, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। দিল্লিতে সোমবার ছিল চড়চড়ে রোদ, সঙ্গে প্রবল গুমোট গরম। তার মধ্যেই সাংসদরা মধ্য দুপুরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
সাংসদদের তোলা হলো বাসে
পুলিশ আগেই গোটা চার-পাঁচ বাস এনে রেখেছিল। এবার সাংসদদের তোলা হলো বাসে। রাহুল, প্রিয়াংকাসহ বেশ কিছু সাংসদকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলো প্রথম বাসটি। প্রিয়াংকা বাস চাপড়ে তখন দাপিয়ে বলে যাচ্ছেন। সাংসদরা পোস্টার দেখাচ্ছেন। টিভি ক্যামেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে,যদি কোনো বাইট পাওয়া যায়, সবমিলিয়ে সবমিলিয়ে একটা হইহই ব্যাপার।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
অসুস্থ মহুয়া মৈত্র, মিতালি বাগ
তৃণমূলের দুই নারী সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও মিতালি বাগ প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মহুয়া তো অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বাসের মধ্যে রাহুল গান্ধী চলে যান তাদের কাছে। মহুয়ার মাথায় জল দেওয়া হয়। মহুয়াকে জল খাইয়ে দেন রাহুল। অসুস্থ মিতালিকে তিনি ধরে রাখেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
অখিলেশকে তোলা হলো পুলিশ ভ্যানে
সাংসদদের আটক করে বাসে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অখিলেশকে পুলিশের ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুটা দূরেই পুলিশ থানা। সেখানেই অখিলেশকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সাংসদদের নিয়ে একের পর এক বাস সেখানে যায়। প্রথম বাস থেকে নামেন রাহুল গান্ধী। তিনি ঢুকে যান সংসদ মার্গ থানার ভিতরে।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
ছিলেন প্রিয়াংকাও
প্রিয়াংকা গান্ধীও বাস থেকে নামেন এবং থানার ভিতরে ঢোকেন। সঙ্গে অন্য সাংসদরাও। তার আগে বাসে নারী সাংসদদের নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন প্রিয়াংকা গান্ধী। তিনি বলেন, সরকার কাপুরুষ। ভয় পেয়ে আছে।
ছবি: Rouf Fida/DW
বিরোধী সাংসদরা থানার ভিতরে
বিভিন্ন দলের শতাধিক বিরোধী সাংসদকে থানার ভিতরে নিয়ে যায় পুলিশ। কিছুক্ষণ আটক করে রাখার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বিরোধীদের বার্তা
বিরোধীরা এখন নির্বাচনের কমিশনের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনকে টার্গেট করেছে। তাদের অভিযোগ, বিহারে প্রচুর ভোটারের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তারা মূলত পরিযায়ী শ্রমিক। রাহুল গান্ধী কর্ণাটকে বেঙ্গালুরু দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রচুর ভুয়া ভোটার থাকা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তারা এখন সরাসরি ইসি-কে আক্রমণ করে বলছেন, ভোট চুরি হচ্ছে বলেই বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যে জিতছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
রাহুল যা বললেন
রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''আজ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের দেখা করতে দেয়া হলো না। আমাদের আটকে দেয়া হলো। ইন্ডিয়া জোটের সব সাংসদকে আটক করে পুলিশ। ভোট চুরির সত্যতা আজ দেশের সামনে। এই লড়াই রাজনৈতিক নয়, বরং সংবিধান এবং এক ব্যক্তি, এক ভোট-এর অধিকার নিশ্চিত করার লড়াই। বিরোধীরা একজোট হয়ে দাবি করছেন, ঠিক ভোটার তালিকা চাই। এটা আমরা আদায় করেই ছাড়ব।''
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
খাড়গের দাবি
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ''কোনো সরকার যদি বিরোধী সাংসদদের নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাতে না দেয়, তাহলে তাদের কীসের ভয় তা আমি জানি না। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, ভিভিআইপিদের বিক্ষোভ। শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তা আমরায় বসেছি। একটা হলঘরে কমিশন দুইশ, তিনশ সাংসদকে বসিয়ে তাদের কথা বলতে পারতেন। আমাদের যাদের যা বলার, তারা বলতেন। কিন্তু কমিশন বলছে, তিনিশজন এস। এটা ঠিক নয়।''
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
তৃণমূল নেতার বক্তব্য
তৃণমূলের সাংসদরা বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর সাকেত গোখলে বলেছেন, বহু এনডিএ সাংসদ এসে তাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, তাদের দলগুলিকেও বিজেপি ভবিষ্যতে একই অস্ত্র প্রয়োগ করে হারিয়ে দেবে। কংগ্রেসের সাংসদ শশী থারুর এদিন বিক্ষোভে যোগ দেন। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধী কিছু গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। ইসি-র উচিত তার জবাব দেওয়া। তাদের নিজেদের জন্যই এই জবাবটা দেওয়া উচিত। জনগণের মধ্যে যেন সংশয় না থাকে।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
সরকারের বক্তব্য
সংসদীয় মন্ত্রী কিরণ রিজিজু বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বিরোধী নেতাদের বলেছিল, প্রতিটি দল থেকে দুইজন করে মোট ৩০ জন নেতা কমিশনে আসুন। কিন্তু তারা সেখানে গেলো না। ওরা যখন ৩০ জন প্রতিনিধি বাছতে পারে না, তখন দেখা করতে চায় কেন? কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের দাবি, আজ স্পষ্ট হয়ে গেলো, বিরোধী সাংসদরা কোনো আলোচনা করতে চান না। কোনো ইতিবাচক ফলে বিশ্বাস করে না। নিজেরা ঠিক করতে পারে না, কারা কমিশনে যাবে।
ছবি: Syanantak Ghosh/DW
20 ছবি1 | 20
ভোটারদের কাছে ফর্ম নিয়ে গেলে অথবা তাদের নথি পেশ করতে বললে কী পরিস্থিতি হবে, সেটা দুর্ভাবনায় রেখেছে বুথ লেভেল অফিসারদের। কমিশন সূত্রের খবর, এই কারণে প্রায় ৬০০ বুথ লেভেল অফিসার তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। কমিশন এজন্য এই অফিসারদের শোকজ করেছে।
কমিশন সূত্রের খবর এই অফিসারদের একটি বিশেষ পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অনেকে সেখানে নিজের নাম নথিভুক্ত করেননি। দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশ কাজেও যোগ দেননি। এর ফলে নিবিড় সমীক্ষা শেষ করতে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো বেশি সংখ্যায় বিএলওরা যাতে একই পথে না হাঁটেন, সে জন্য কমিশন কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠাচ্ছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চাওয়া হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরা কমিশন নির্ধারিত কাজ করতে বাধ্য। নির্দেশ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
ভোটকর্মী ঐক্যমঞ্চের নেতা স্বপন মণ্ডল ডিডাব্লিউকে বলেন, "মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা থেকে বলেছিলেন, যারা বিএলও হিসেবে কাজ করবেন, তারা মনে রাখবেন যে, আপনারা রাজ্য সরকারের কর্মচারী। নির্বাচনের আগেও আপনারা আমাদের কর্মচারী, তার পরেও আমাদের কর্মচারী। এই বার্তা রাজ্যের শিক্ষক সমাজকে চিন্তায় রেখেছে। এর সঙ্গে বিরোধী দলনেতা বিহারের প্রসঙ্গ টেনে যে কথাগুলি বলছেন, যেমন বিহারে ৫০০ জন বিএলওর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, কতজনকে গ্রেপ্তার করেছে, কতজনকে সাসপেন্ড করেছে ইত্যাদি।"
তার অভিযোগ, "শাসক এবং বিরোধী উভয় পক্ষের টানাপড়েনের মধ্যে বিএলওরা পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন। তার ফলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, বিএলওর কাজ করলে বিপদ হতে পারে। যেমন চাকরি চলে যেতে পারে বা অন্য কিছু হতে পারে। মহিলারা এক্ষেত্রে বেশি ভয় পাচ্ছেন। সেজন্য ডিউটি নিতে চাইছেন না। আমরা কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। কমিশনকে জানিয়েছি, বিএলওদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করলে সমীক্ষা করা সম্ভব নয়। শাসক দল এবং বিরোধী দল যদি মুখ বন্ধ রাখতো, তাহলে নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশ দিচ্ছে, সেভাবেই কাজ করা সম্ভব হতো। একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা আছে, এজন্য অনেকে অনীহা প্রকাশ করছেন।"
বিজ্ঞাপন
কেন দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিএলও হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রাইহান মোল্লা। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "শাসক দলের চাপ তো আছেই। তার উপরে প্রান্তিক মানুষদের ডকুমেন্টসের প্রচুর সমস্যা। ওবিসি এবং মুসলমানদের মধ্যে এই সমস্যা আরো বেশি। অনেকেরই জন্ম বা স্কুল পাশের সার্টিফিকেট নেই, জাতিগত শংসাপত্র নেই। অনেকের নামের বানান, জন্মতারিখ বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা। এসব নিয়ে বিএলওদের উপরে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হচ্ছে। তারা এসব কীভাবে সামাল দেবেন? ভোটারের শেষমেশ মনে হবে, তাকে বিএলও বাদ দিয়েছেন। কিন্তু আদতে বিএলওরাই আতঙ্কে আছেন।"
তিনি বলেন, "এই সমস্যা কীভাবে মিটবে, তার নির্দেশ এখনো আসেনি। ইতিমধ্যে বহু মানুষ আমাদের বাড়িতে এসে জানতে চান, সমস্যার কীভাবে সমাধান হবে। আসামের বিভিন্ন ঘটনা মানুষকে আরো আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। এই চাপটা বিএলওদেরই সামলাতে হচ্ছে। পঞ্চায়েতের শংসাপত্র কি বার্থ সার্টিফিকেটের বিকল্প হতে পারে, এরকম অনেক প্রশ্ন সাধারণ মানুষ করছেন, কিন্তু আমাদের কাছে উত্তর নেই। যতক্ষণ না আমাদের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হয়, ততক্ষণ আমরা নিরুপায়।"
স্কুল শিক্ষক রাইহান বলেন, "রাজ্য সরকার যেভাবে বিরোধিতা করছে, তাদের উচিত সেই তৎপরতার সঙ্গে দরকারি নথি মানুষের হাতের দ্রুত পৌঁছে দেওয়া। সে ব্যাপারে রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মুখ থুবড়ে পড়ে। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে কাগজপত্র নেই দুর্যোগের কারণে। এদের ক্ষেত্রে কী হবে, তারা কী কাগজ দেখাবেন, সে উত্তর নেই। রাজ্য সরকারের তরফে তার জন্য কোনো তৎপরতাও নেই।"
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের তরফে বিএলও অনামিকা চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, "শাসক বা বিরোধী দলের সৌজন্যে প্রচারটা এমনভাবে হচ্ছে, যেন নিবিড় সমীক্ষা নিয়ে যা কিছু হবে, তার জন্য দায়ী হবেন বিএলওরা। আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে, শোকজ করার কী কারণ থাকতে পারে। তারা তো কাউকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারবেন না। কাউকে সুবিধা দেয়ার জায়গায় বিএলওরা নেই।"
তার বক্তব্য, "বিএলও-দের কাজ শুধু পিয়নের। তারা নির্দিষ্ট নথি জমা করবেন। এর বেশি তাদের ক্ষমতা নেই। কিন্তু এমন প্রচার করা হচ্ছে, সব যেন বিএলওরা করছেন। এর ফলে আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এখনো আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ শুরু করিনি, শুরু করলে বুঝতে পারব পরিস্থিতি কী দাঁড়াচ্ছে। তবে ফিল্ড ওয়ার্কের সময়ে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে। তবেই সুষ্ঠু ভাবে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।"