1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে কেন এসআইআরের কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন বিএলওরা?

২৪ অক্টোবর ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গে এসআইআরের আগেই এই কাজে অনীহা দেখা যাচ্ছে সমীক্ষকদের একাংশের। শোকজ করছে নির্বাচন কমিশন।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অফিস।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন বিএলওরা। ছবি: Satyajit Shaw/DW

বিহারের মতো এ রাজ্যেও স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা ভোটার তালিকার নিবিড় সমীক্ষা হতে চলেছে। কিন্তু তার আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারির আগেই একেবারে তৃণমূল স্তরে যারা কাজ করবেন, তাদের অনেকে পিছু হঠছেন।

সমীক্ষকদের আপত্তি

নিবিড় সমীক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বুথ লেভেল অফিসাররা(বিএলও)। এরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের চিহ্নিত করবেন, তাদের দিয়ে ফর্ম পূরণ করাবেন। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী বুথ সংখ্যার অনুপাতে ৮০ হাজারের বেশি এ ধরনের অফিসার প্রয়োজন। এদের অধিকাংশই স্কুল শিক্ষক। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুলে তারা শিক্ষকতা করেন। এছাড়াও রয়েছেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গ্রুপ সি কর্মচারীরা।
 
নির্বাচন কমিশন নিযুক্তএই অফিসাররা ২০০২-এর ভোটার তালিকার সঙ্গে সর্বশেষ তালিকায় ম্যাচিংয়ের কাজ করছেন। অর্থাৎ দুটি তালিকা মিলিয়ে দেখছেন। ইতিমধ্যে দুটি জেলা বাদ দিয়ে সর্বত্র এই কাজ প্রায় শেষ বলে সূত্রের খবর। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির কাজ বাকি রয়েছে।

মূল সমীক্ষা শুরুর পরে প্রত্যেক ভোটারের বাড়ি গিয়ে ফর্ম দেবেন বিএলও। পূরণ করা ফর্ম সংগ্রহ করবেন ভোটারদের কাছ থেকে। তাদের নথি যাচাই করবেন। একই সঙ্গে তারা চিহ্নিত করবেন, কোনো ভোটার স্থানান্তরিত হয়েছেন কিনা, কারা মারা গিয়েছেন বা কাদের নাম একাধিক জায়গার তালিকায় রয়েছে।

সূত্রের খবর, অনেক জেলায় ২০০২ ও বর্তমান ভোটার তালিকার মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী বিজেপির মধ্যে তুমুল চাপানউতোর চলছে কিছু দিন ধরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, সমীক্ষার ফলে কত সংখ্যক মানুষের নাম বাদ যাবে।

এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যে বিপাকে পড়েছেন বুথ লেভেল অফিসাররা  তারা যেহেতু মাঠে নেমে মূল কাজটি করবেন, সেজন্য নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা বোধ করছেন। সম্প্রতি ডেপুটি নির্বাচন কমিশনের জ্ঞানেশ ভারতীর সঙ্গে বৈঠকে বিএলওরা এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন।

দুশ্চিন্তায় বিএলওরা

এ রাজ্যে কবে সমীক্ষার মূল কাজ শুরু হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশিকা জারি করেনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তবে এ নিয়ে দিল্লিতে তৎপরতা তুঙ্গে। সেখানে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। বুধ ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে দুদিনের বৈঠক করেছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ।

ভোটারদের কাছে ফর্ম নিয়ে গেলে অথবা তাদের নথি পেশ করতে বললে কী পরিস্থিতি হবে, সেটা দুর্ভাবনায় রেখেছে বুথ লেভেল অফিসারদের। কমিশন সূত্রের খবর, এই কারণে প্রায় ৬০০ বুথ লেভেল অফিসার তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। কমিশন এজন্য এই অফিসারদের শোকজ করেছে।

কমিশন সূত্রের খবর এই অফিসারদের একটি বিশেষ পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অনেকে সেখানে নিজের নাম নথিভুক্ত করেননি। দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশ কাজেও যোগ দেননি। এর ফলে নিবিড় সমীক্ষা শেষ করতে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরো বেশি সংখ্যায় বিএলওরা যাতে একই পথে না হাঁটেন, সে জন্য কমিশন কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠাচ্ছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চাওয়া হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরা কমিশন নির্ধারিত কাজ করতে বাধ্য। নির্দেশ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।

ভোটকর্মী ঐক্যমঞ্চের নেতা স্বপন মণ্ডল ডিডাব্লিউকে বলেন, "মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা থেকে বলেছিলেন, যারা বিএলও হিসেবে কাজ করবেন, তারা মনে রাখবেন যে, আপনারা রাজ্য সরকারের কর্মচারী। নির্বাচনের আগেও আপনারা আমাদের কর্মচারী, তার পরেও আমাদের কর্মচারী। এই বার্তা রাজ্যের শিক্ষক সমাজকে চিন্তায় রেখেছে। এর সঙ্গে বিরোধী দলনেতা বিহারের প্রসঙ্গ টেনে যে কথাগুলি বলছেন, যেমন বিহারে ৫০০ জন বিএলওর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, কতজনকে গ্রেপ্তার করেছে, কতজনকে সাসপেন্ড করেছে ইত্যাদি।" 

তার অভিযোগ, "শাসক এবং বিরোধী উভয় পক্ষের টানাপড়েনের মধ্যে বিএলওরা পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন। তার ফলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, বিএলওর কাজ করলে বিপদ হতে পারে। যেমন চাকরি চলে যেতে পারে বা অন্য কিছু হতে পারে। মহিলারা এক্ষেত্রে বেশি ভয় পাচ্ছেন। সেজন্য ডিউটি নিতে চাইছেন না। আমরা কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। কমিশনকে জানিয়েছি, বিএলওদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করলে সমীক্ষা করা সম্ভব নয়। শাসক দল এবং বিরোধী দল যদি মুখ বন্ধ রাখতো, তাহলে নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশ দিচ্ছে, সেভাবেই কাজ করা সম্ভব হতো। একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা আছে, এজন্য অনেকে অনীহা প্রকাশ করছেন।"

কেন দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিএলও হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রাইহান মোল্লা। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "শাসক দলের চাপ তো আছেই। তার উপরে প্রান্তিক মানুষদের ডকুমেন্টসের প্রচুর সমস্যা। ওবিসি এবং মুসলমানদের মধ্যে এই সমস্যা আরো বেশি। অনেকেরই জন্ম বা স্কুল পাশের সার্টিফিকেট নেই, জাতিগত শংসাপত্র নেই। অনেকের নামের বানান, জন্মতারিখ বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা। এসব নিয়ে বিএলওদের উপরে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হচ্ছে। তারা এসব কীভাবে সামাল দেবেন? ভোটারের শেষমেশ মনে হবে, তাকে বিএলও বাদ দিয়েছেন। কিন্তু আদতে বিএলওরাই আতঙ্কে আছেন।"

তিনি বলেন, "এই সমস্যা কীভাবে মিটবে, তার নির্দেশ এখনো আসেনি। ইতিমধ্যে বহু মানুষ আমাদের বাড়িতে এসে জানতে চান, সমস্যার কীভাবে সমাধান হবে। আসামের বিভিন্ন ঘটনা মানুষকে আরো আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। এই চাপটা বিএলওদেরই সামলাতে হচ্ছে। পঞ্চায়েতের শংসাপত্র কি বার্থ সার্টিফিকেটের বিকল্প হতে পারে, এরকম অনেক প্রশ্ন সাধারণ মানুষ করছেন, কিন্তু আমাদের কাছে উত্তর নেই। যতক্ষণ না আমাদের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হয়, ততক্ষণ আমরা নিরুপায়।"
 
স্কুল শিক্ষক রাইহান বলেন, "রাজ্য সরকার যেভাবে বিরোধিতা করছে, তাদের উচিত সেই তৎপরতার সঙ্গে দরকারি নথি মানুষের হাতের দ্রুত পৌঁছে দেওয়া। সে ব্যাপারে রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মুখ থুবড়ে পড়ে। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে কাগজপত্র নেই দুর্যোগের কারণে। এদের ক্ষেত্রে কী হবে, তারা কী কাগজ দেখাবেন, সে উত্তর নেই। রাজ্য সরকারের তরফে তার জন্য কোনো তৎপরতাও নেই।"

শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের তরফে বিএলও অনামিকা চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, "শাসক বা বিরোধী দলের সৌজন্যে প্রচারটা এমনভাবে হচ্ছে, যেন নিবিড় সমীক্ষা নিয়ে যা কিছু হবে, তার জন্য দায়ী হবেন বিএলওরা। আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে, শোকজ করার কী কারণ থাকতে পারে। তারা তো কাউকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারবেন না। কাউকে সুবিধা দেয়ার জায়গায় বিএলওরা নেই।"

তার বক্তব্য, "বিএলও-দের কাজ শুধু পিয়নের। তারা নির্দিষ্ট নথি জমা করবেন। এর বেশি তাদের ক্ষমতা নেই। কিন্তু এমন প্রচার করা হচ্ছে, সব যেন বিএলওরা করছেন। এর ফলে আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এখনো আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ শুরু করিনি, শুরু করলে বুঝতে পারব পরিস্থিতি কী দাঁড়াচ্ছে। তবে ফিল্ড ওয়ার্কের সময়ে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে। তবেই সুষ্ঠু ভাবে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ