1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে গান গাইতে কাটমানি?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৮ জানুয়ারি ২০২১

বাংলা গানের জগতেও কাটমানির অভিযোগ৷ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিমন্ত্রী তথা শিল্পী ইন্দ্রনীল সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি৷ কী বলছেন সঙ্গীত জগতের সংশ্লিষ্টরা, খোঁজ নিল ডয়চে ভেলে৷

Indien Kolkata | Künstler protestieren gegen bjp-Führer
ছবি: Payel Samanta/DW

"খেয়েছেন যাঁরা কাটমানি, দাদারা অথবা দিদিমণি, এসেছে সময়...ফেরত দিন, আসছে দিন....!” তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাটমানির টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশের পরপরই এই গান ধরেছিলেন শিল্পী নচিকেতা৷ কিন্তু ভোটের মুখে এবার সেই গানের জগতেই কাটমানির অভিযোগ!

কাটমানি বিতর্কে গানের জগতে চাপানউতোর শুরু হয়েছে৷ সূত্রপাত বিজেপিনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য ঘিরে৷ তিনি একটি জনসভায় সম্প্রতি অভিযোগ করেন, তার একদা সতীর্থ, রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন টাকা নিয়ে সঙ্গীতমেলায় শিল্পীদের গান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন৷ এই বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক চলছে৷ রাজনীতির আখড়ায় দেখা যাচ্ছে নবীন থেকে প্রবীণ শিল্পীদের৷

ইন্দ্রনীল সম্পর্কে শুভেন্দুর মন্তব্যের বিরোধিতা করে প্রতিবাদে নেমেছেন বাংলার শিল্পী ও বিদ্বজ্জনদের একাংশ৷ রূপঙ্কর বাগচি, মনোময় ভট্টাচার্য, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাঘব চট্টোপাধ্যায় প্রমুখরা সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্যের গায়ক-মন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ অ্যাকাডেমিতে শুভেন্দুর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান হৈমন্তী শুক্লা, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী সেন, অরুন্ধতী হোম চৌধুরী, সৌমিত্র রায়ের মতো বাংলা গানের একাধিক পরিচিত মুখ৷ হৈমন্তী শুক্লা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এত বছর আমরা সাধনা করছি, শিল্পীদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি৷ সঙ্গীতমেলায় কাটমানির প্রশ্ন নেই৷ টাকা সরাসরি ব্যাঙ্কে চলে যায়৷” অভিযোগ খারিজ করে লোকগানের শিল্পী তপন রায়ের বক্তব্য, "না, না, এরকম কাটমানি কেউ কখনও নেয়নি৷ সঙ্গীতমেলায় আমি ও আমার ছাত্রছাত্রীরা গাই, কেউ কখনও চায়নি৷”

বাম আমল থেকেই প্রতি বছর রাজ্যে সঙ্গীতমেলার আয়োজন করে থাকে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর৷ তবে সঙ্গীতমেলা নিয়ে শিল্পীদের ক্ষোভ এই প্রথম নয়৷ আগেও প্রতিমন্ত্রীর কর্মপদ্ধতি নিয়ে অনেক শিল্পীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন৷ অতীতে মান্না দের ভাইপো তথা সঙ্গীতশিল্পী সুদেব দে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, "কোনো অজ্ঞাত কারণে কয়েক বছর ধরেই এই দপ্তর সব অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো বন্ধ করে দিয়েছে৷” পঞ্চকবির গানের শিল্পী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরব হয়েছিলেন৷ তাঁর অভিযোগ, রবীন্দ্রসদনের মূল মঞ্চে তাঁকে গাইতে দেওয়া হয় না৷  তিনি ডয়চে ভেলেকে খোলাখুলি বলেন, "২০১৬-র পর থেকে রবীন্দ্রসদনের সঙ্গীতমেলায় আমাদের গায়ক-মন্ত্রী পলিটিক্স শুরু করেন৷ ভজনা না করলে কাজ পাওয়া যায় না৷ একজন দাদা-দিদি বা মন্ত্রীকে ধরে কাজ পাওয়া শিল্পের ক্ষেত্রে খুবই অবমাননাকর৷” দুই দশক ধরে গান করছেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য, "পশ্চিমবঙ্গ শুধু ১৫-২০ জন শিল্পীদের নিয়ে নয়৷ সমস্ত মেলা-জেলা-খেলার উৎসবে শুধু এনারাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অনুষ্ঠান পান৷ বিখ্যাত শিল্পীদের কাছ থেকে কেউ কাটমানি চায় না৷ নতুনদের কাছ থেকেই কাটমানি নেওয়া হয়৷ ভূরি ভূরি নিদর্শন আছে৷”        

  

‘‘ভজনা না করলে কাজ পাওয়া যায় না’’: ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

একই সুরে শিল্পী পিলু ভট্টাচার্য বলেন, "সঙ্গীতমেলায় কিছু বৃত্ত আছে, যারা নির্দিষ্ট শিল্পীদেরই কাজ দিয়ে যায় নতুন শিল্পীরা সুযোগ পাচ্ছেন না৷ তুমি যদি পক্ষের লোক হও, তবে সুযোগ পাবে, নইলে পাবে না৷” পশ্চিমবঙ্গে শিল্পীদের মধ্যে যে একটা ভয়ের পরিবেশ আছে, সেটা স্বীকার করে তিনি বলেন, "কিছু শিল্পী প্রশাসনের কতটা কাছের তা প্রমাণ করতে চাইছেন৷ এর সঙ্গে মিশলে নেওয়া হবে না, ওর সঙ্গে মিশলে নেওয়া হবে, এই ভেদাভেদ করা হচ্ছে৷ ফলে আপোস করতে হচ্ছে দিনের পর দিন৷”

‘‘যিনি কাটমানির অভিযোগ তুললেন, তাঁকে ব্যাখ্যা দিতে হবে’’: তপন রায়

This browser does not support the audio element.

কাটমানি নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি কলুষিত করছে বাংলা গানের জগতকে৷ সঙ্গীতশিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার মনে করেন, "পশ্চিমবাংলার মানুষ আগে যা বিষয় নিয়ে আলোচনা করত, সেই আলোচনার মান ভীষণই নিম্নগামী হয়েছে৷ আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিষযবস্তু থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা চলেছে৷” নিরপেক্ষ তদন্তও চাইছেন অনেকে৷ তপন রায় বলেন, "আমার মনে হয়েছে এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়৷ আমরা এসবের সম্মুখীন হই৷ তবে যিনি কাটমানির অভিযোগ তুললেন, তাঁকে ব্যাখ্যা দিতে হবে৷ একইসঙ্গে যাঁকে বলছেন, তাঁরও আইনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ