বিতর্ক তুঙ্গে। তারই মধ্যে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের তদন্তে পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একাধিক দল। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ দাপিয়ে বেড়িয়েছে তারা। কথা বলেছে একাধিক আক্রান্ত বিজেপি কর্মী এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে। তৃণমূল অবশ্য এর মধ্যেও চক্রান্তের গন্ধ পেয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপড়েন চলছিল। বিজেপি অভিযোগ করছিল, তাদের বহু কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে। সিপিএমও বেশ কিছু জায়গায় সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল। কিন্তু শাসকদল তৃণমূল তা অস্বীকার করে। তারই মধ্যে বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত পৌঁছায়। হাইকোর্ট সেখানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্য সরকার রায় বিবেচনার আবেদন জানায়। যার উত্তরে হাইকোর্ট কড়া ভাষায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে। রায় বদল হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়। তারপরেই রাজ্যে আসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একাধিক টিম।
বিজেপি-র নেতা তথাগত রায় দলের তারকা প্রার্থীদের ‘নগরের নটী’ বলেছেন। তা নিয়ে শুরু বিজেপি-তে ঘোর বিতর্ক।
ছবি: Imago Images/Hindustan Times
কী বলেছেন তথাগত
বিজেপি-র এই সাবেক রাজ্যপাল বিতর্কিত কথা বলতে ভালোবাসেন। তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘‘পায়েল, শ্রাবন্তী, পার্নো ইত্যাদি ‘নগরের নটী’ নির্বাচনের টাকা নিয়ে কেলি করে বেড়িয়েছেন আর মদন মিত্রের সঙ্গে নৌকাবিলাসে গিয়ে সেলফি তুলেছেন (এবং হেরে ভূত হয়েছেন) তাঁদেরকে টিকিট দিয়েছিল কে? কেনই বা দিয়েছিল? দিলীপ-কৈলাস-শিবপ্রকাশ-অরবিন্দ প্রভুরা একটু আলোকপাত করবেন কি?’’
ছবি: IANS
বিজেপি তারকাদের জবাব
প্রথমে মুখ খোলেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দলের ভোটের টাকায় কেলি করেছি, তেমন কোনো প্রমাণ তার কাছে আছে কি? রাজনীতিটা কেউ একদিনে শেখে না। উনিও শেখেননি।’’ তনুশ্রী চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘এমন উক্তির মধ্যে দিয়ে বিজেপির প্রবীণ নেতা দেশের সমস্ত নারীকে অপমান করলেন। অথচ, দল কিন্তু নারীশক্তিকে আলাদা সম্মান দেয়৷’’ ক্ষুব্ধ পার্নো মিত্রও৷ উপরের ছবিটি পার্নো মিত্রের৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press
মদন মিত্রর জবাব
তথাগত রায়ের এই কটূক্তির জবাব দিয়েছেন মদন মিত্র। তিনি বলেছেন, পরের বার নৌকাবিহারে ওকেও সঙ্গে নেব।
ছবি: DW/Prabhakar Mani Tewari
চুপ বিজেপি-র নেতৃত্ব
বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা এনিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তারা চুপ করে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করেছেন। এমনকী কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, যারা এমনি সময়ে সব বিষয়ে কথা বলেন, তারাও চুপ। এদের ‘প্রভু’ বলে সম্বোধন করেছেন তথাগত। উপরের ছবিটি দিলীপ ঘোষের।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
তারকাদের প্রতিবাদ
তবে তৃণমূলের তারকা সাংসদ নুসরত, তৃণমূলের তারকা বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক, অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রেরা তথাগত রায়ের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। তাদের অভিযোগ, বিজেপি হলো নারীবিদ্বেষী।
ছবি: imago/Pacific Press Agency/S. Paul
বিজেপি-তে একঝাঁক তারকা
বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের টিভি ও সিনেমা জগতের একঝাঁক তারকাকে দলে নিয়ে আসে। প্রচুর তারকাকে প্রার্থী করে। তবে হিরণ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া কেউ জেতেননি। পায়েল, শ্রাবন্তী, পার্নো ছাড়াও হেরেছেন রুদ্রনীল, যশ দাশগুপ্ত। হেরেছেন বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চট্টোপাধ্যায়রাও। উপরের ছবিতে টিভির তারকাদের বিজেপি-র সদস্যপদ দিচ্ছেন দিলীপ ঘোষ।
ছবি: Imago Images/Hindustan Times
প্রচারে কটূক্তি
বিধানসভা প্রচারের সময়ই কটূক্তির বন্যা বয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু মন্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আবার প্রধানমন্ত্রীর দিদি, দিদি বলে ডাক নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন তৃণমূল নেতারা। এছাড়া তৃণমূল ও বিজেপি-র একাধিক নেতার বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ উঠেছে।
ছবি: Prabhakarmani Tewari/DW
7 ছবি1 | 7
কলকাতায় এসেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্য—ডিএসপি রাজেন্দ্র সিংহ, ডিএসপি মুনিয়া উপ্পল ও ইনস্পেক্টর জিন্টু সাকিয়া। বৃহস্পতিবার তারা উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় গিয়েছিলেন। সর্বত্রই তারা বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে অসুবিধার কথা শোনেন। অন্যদিকে, বসিরহাটের ন্যাজাটেও গিয়েছিল একটি প্রতিনিধি দল।
উত্তরবঙ্গে দুইটি প্রতিনিধি দল ঘুরছে। শিলিগুড়িতে গেছেন তিন প্রতিনিধির একটি দল। অন্য দলটি গিয়েছে কোচবিহার। শুক্রবার তারা আলিপুরদুয়ারও যেতে পারে।
প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে। কারণ, শুধুমাত্র আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের বাড়িতেই তারা যাচ্ছেন। শাসক দল বা অন্য বিরোধী দলগুলির কর্মীদের বাড়ি তারা যাচ্ছেন না। কোচবিহারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''উত্তর প্রদেশে কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের দেখা যায় না। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই একটি বিশেষ দলের কর্মীদের বাড়িতে তাদের দেখা যায়। এর থেকেই স্পষ্ট, তারা কতটা নিরপেক্ষ।'' দিনহাটার সাবেক বিধায়ক এবং উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ নেতা উদয়ন গুহ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''আমিও তো আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমার সঙ্গে তো কেউ কথা বলতে আসেনি?''
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সৌরভ সিকদার অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তার বক্তব্য, যারা আক্রান্ত হয়েছেন, মানবাধিকার কমিশনের দল তাদের বাড়িতেই যাচ্ছে। যারা মেরেছে, তাদের বাড়িতে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।