পশ্চিমবঙ্গে ডিজিটাল ব্যাংকের সংখ্যা নিয়েও রাজনৈতিক ‘বিতর্ক’
৩০ অক্টোবর ২০২২![প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের কাছে এই পরিষেবা মরীচিকাই বটে।](https://static.dw.com/image/63588338_800.webp)
দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে ডিজিটাল লেনদেন। নগদ টাকার পরিবর্তে অনলাইনে টাকা আদানপ্রদানের ক্ষেত্র ধীরে ধীরে অনেকটাই প্রসারিত হয়েছে। বিশেষত কোভিড অতিমারির পর্বে এ ধরনের লেনদেনের প্রবণতা বেড়েছে। দেশের সব ব্যাংক তাদের গ্রাহক পরিষেবা ব্যবস্থাকে অনেকটাই ডিজিটাল পরিকাঠামোর উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। একইসঙ্গে চালু রয়েছে অফলাইনে চিরাচরিত প্রথায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা। অনলাইন পরিষেবাকে আরো উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার দেশ জুড়ে ৭৫টি সম্পূর্ণডিজিটাল ব্যাংক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ধরনের ব্যাংকের কাজকর্ম হবে পুরো ডিজিটাল পদ্ধতিতে। দেশের ৭৫টি জেলায় একটি করে ব্যাংক তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চলতি সপ্তাহে এই সংক্রান্ত ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকের রাজ্যওয়াড়ি হিসেব সামনে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গ দেশের অন্যতম জনবহুল রাজ্য হলেও এখানে দু’টি ডিজিটাল ব্যাংক গঠন করা হবে। একটি উত্তর ২৪ পরগনায়, অন্যটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। প্রশ্ন উঠেছে, এই রাজ্যে কেন মাত্র দু’টি শাখা খোলা হচ্ছে?
পশ্চিমবঙ্গের পড়শি ত্রিপুরা একটি ছোট রাজ্য। এখানেও ডিজিটাল ব্যাংকের দু’টি শাখা খোলা হবে। অসম, ঝাড়খণ্ড, নাগাল্যান্ড, উত্তরাখণ্ডের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট রাজ্যও দু’টি করে শাখা পাচ্ছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের মতো আর এক জনবহুল রাজ্য বিহারেও দু’টিই ডিজিটাল ব্যাংক খোলা হবে। সেখানে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে তিন থেকে চারটি ডিজিটাল ব্যাংক খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে রাজনীতি দেখছেন অনেকে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি অংশ আবার তাতে রাজনীতি দেখতে রাজি নন। নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, “যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশি, সেখানেই ব্যাংক গড়ার আগ্রহ থাকবে। পশ্চিমবঙ্গ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ায় এখানে ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা কম মনে হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো চললে আর্থিক লেনদেনও বেশি হয়।”
স্বচ্ছতার স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকার অতীতে বার বার ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের পক্ষে সওয়াল করেছে। এরই অঙ্গ হিসেবে ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া-র উদ্যোগ ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছে। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি অঙ্কের লেনদেন হয়েছিল। সেই মাসে ইউপিআই-এর মাধ্যমে মোট ডিজিটাল লেনদেনের সংখ্যা ছিল ৩৬০ কোটি। পশ্চিমবঙ্গে এখন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পাশাপাশি মুদি থেকে ফুচকার দোকান, সর্বত্রই এই পদ্ধতিতে ক্রেতার কাছ থেকে বিক্রেতা টাকা নিচ্ছেন। তবে এ ব্যাপারে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন তেলঙ্গানার হকাররা।
এই পদ্ধতির উপর নির্ভর করেডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষতাদের নিত্যদিনের আর্থিক পরিষেবা পাবেন। সবটাই হবে ভার্চুয়ালি। মেয়াদি আমানত থেকে ঋণ নেওয়া, সব কাজই করা যাবে এখানে। দেশি-বিদেশি পুঁজি লগ্নির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে এই ব্যাংক। বণিকসভা ব্যবহার করতে পারে এই পরিষেবা যা ভবিষ্যতে আরো প্রসারিত হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ঠিক কতটা কাজে আসবে পুরোদস্তুর ডিজিটাল ব্যাংক পরিষেবা?
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইন্টারনেট সংযোগ যাদের আয়ত্তে আছে, তাদের একটা বড় অংশ এখনো অনলাইন লেনদেনে ভরসা রাখেন না। সাইবার প্রতারণায় লাগাম টানা যায়নি বলে তারা টাকা খোয়ানোর ভয়ে ভীত। আর প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের কাছে এই পরিষেবা মরীচিকাই বটে। আইআইএম-এর অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ অনুপ সিনহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ডিজিটাল ডিভাইড বা বৈষম্য থাকলে বাড়তি লাভ হবে না। ভাষার একটা প্রতিবন্ধকতাও আছে। তবে এ সব ক্ষেত্রে প্রস্তুতি থাকা দরকার। একসময় বৈষম্য কমে এলে সবাই ডিজিটাল ব্যাংকের সুবিধা পাবেন, এটা আশা করা যেতে পারে।”