ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী বাংলাদেশের মশা৷ এমন মন্তব্য তিনি করলেন কিভাবে, কিসের ভিত্তিতে?
বিজ্ঞাপন
গত বৃহস্পতিবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশের মতো বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গেও দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু৷ কিন্তু বাড়ন্ত রোগের প্রকোপের দায় তিনি চাপিয়ে দিলেন বাংলাদেশের মশার ওপর৷
তিনি বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকায় মশা ওপার থেকে এপারে আসে, আবার এপার থেকে ওপারে যায়৷ দুই পারেই বহু মানুষ যাতায়াত করে৷ এ রাজ্যে ডেঙ্গু ছড়ানোর পেছনে বাংলাদেশের মশার ভূমিকা থাকতে পারে৷''
এডিস মশার প্রজননস্থল
বাংলাদেশজুড়ে এখন এক আতঙ্কের নাম মশা৷ এডিস মশার জীবাণুবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বর ইতিমধ্যেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে৷ পুরো ঢাকা শহরজুড়েই এখনো রয়েছে মশার প্রজননস্থল৷ এডিস মশার বিস্তারে সহায়ক এমন কিছু জায়গা নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
নির্মাণাধীন ভবন
ঢাকা শহরের সব জায়গাতেই চলছে ভবন নির্মাণ৷ নির্মানাধীন এসব ভবনের বিভিন্ন অংশে জমে থাকা পানি এডিস মশা জন্ম নেয়ার উপযুক্ত জায়গা৷ বেশিরবাগ ভবনের মালিকরা এ বিষয়ে এখনো বেশ উদাসীন৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের পানি
তীব্র গরমের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার৷ কিন্তু অনেক ভবনে ব্যবহৃত এসব যন্ত্র থেকে নির্গত পানি সরাসরি খোলা জায়গায় পড়ে৷ ফলে জমে থাকা এসব পরিস্কার পানিতে জন্ম নেয় এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ছাদে জমা বৃষ্টির পানি
বৃষ্টির মৌসুমে ঢাকার অনেক ভবনের ছাদে জমে থাকে বৃষ্টির পানি৷ ভবন মালিকরা এসব পানি পরিস্কার না করায় সেখানে জন্ম নিচ্ছে মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
পানির ট্যাঙ্ক থেকে নির্গত পানি
ছাদে বসানো পানির ট্যাঙ্ক অনেক সময় উপচে পড়ে ছাদে জমে পানি৷ দীর্ঘ সময় এ পানি জমে থেকে জন্ম নিতে পারে এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য
ঢাকা শহরে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হয় যত্রতত্র৷ নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্যে বৃষ্টির পানি জমে সেখানেও জন্ম নিতে পারে মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ডাস্টবিনে জমে থাকা পানি
পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছিল ডাস্টবিন৷ কিন্তু এগুলো তদারকি করে না কেউই৷ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে বসানো এসব ডাস্টবিনের ভেতরে প্রায়ই জমে থাকে বৃষ্টির পানি৷ এ জায়গাগুলো তাই এডিস মশা জন্মানোর উপযুক্ত জায়গা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ডাবের খোসা
ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখা হয় ডাবের খোসা৷ এসব ডাবের খোসায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতেও জন্ম নিতে পারে এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ফুলের টবে জমা পানি
ঢাকা শহরের বেশিরভাগ বাড়ির ছাদ কিংবা বারান্দায় শখের বশে নানা রকম গাছ লাগান বাসিন্দারা৷ এসব গাছের টবে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিয়মিত পরিস্কার না করায় সেখানে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ভবনের পাশের পরিত্যক্ত জায়গা
ঢাকা শহরের সবজাগাতেই বিভিন্ন ভবনের পাশের পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে৷ এসব জায়গা থেকে ভবন থেকে নির্গত পানি ছাড়াও বৃষ্টির পানি জমে থাকা৷ এসব জায়গার পানি নিয়মিত পরিস্কার না করায় সেখানে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
নোংরা হাতিরঝিল
ঢাকার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তৈরি করা হাতিরঝিল এখন মশার অন্যতম প্রজনন কেন্দ্র৷ জায়গাটিতে নিয়মিত মশার ওষুধ না ছিটানোয় ঝিলের বিভিন্ন অংশে জন্ম নিচ্ছে মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
গুলশান লেক
ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের লেকটিও মশা প্রজননের অন্যতম জায়গা৷ এ লেকেও দেয়া হয় না মশার ওষুধ৷ ফলে সেখানেও জন্ম নিচ্ছে মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
11 ছবি1 | 11
সহযোগিতার পথে ফাটল?
ডেঙ্গুর জীবাণু বয়ে আনে এডিস মশা, যা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় জমা জলপ্রবণ এলাকাগুলিতে৷ দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বর্ষাকালে, এই রোগের প্রবণতা বাড়ে মূলত স্থানীয় জল নিষ্কাশনের ব্যর্থতার কারণেই৷ শুধু তাই নয়, দুই বাংলার আবহাওয়ার ধরন ও ভৌগোলিক গঠন নদী ও জলাভূমিকেন্দ্রিক হওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে বেশি৷ অন্যদিকে, এডিস মশার স্থানান্তরের কোনো উপাত্ত এখনও খুঁজে পাননি গবেষকরা৷
ফলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার দায় বর্তায় নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য ও পৌর দপ্তরগুলির ওপরেই৷
উল্লেখ্য, প্রায় প্রতি বছরই পশ্চিমবঙ্গে কমবেশি দেখা দেয় ডেঙ্গু জ্বর৷ চলতি বছরে বাংলাদেশে এই রোগের বিস্তার তুলনামূলকভাবে বেশি৷ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন সীমান্ত-সংলগ্ন হাবড়া জেলার বাসিন্দারা৷ সেখানে স্থানীয় হাসপাতালে ডাক্তারদের গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে, যার ফলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে রোগী-চিকিংসাকর্মী সংঘর্ষের খবরও৷
কিন্তু এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বরং কোনো রকমের তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই মশার সীমান্ত পেরোনোর সম্ভাবনার কথা বলেছেন৷
তাঁর এমন বক্তব্যকে দায় এড়ানোর কৌশল হিসাবে দেখা যেতেই পারে৷