1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে ‘নিঃসঙ্গ’ তৃণমূল?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৪ জানুয়ারি ২০১৯

ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বিজেপিবিরোধী জোট গড়ার লক্ষ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেডে সমাবেশ করলেও রাজ্যে তাঁর দল ‘নিঃসঙ্গ’৷ বাম বা প্রদেশ কংগ্রেস তাঁর পাশে নেই৷ তারা বিজেপির পাশাপাশি মমতার বিরুদ্ধেও সরব৷

ছবি: DW/P. Samanta

আর মাস তিনেকের মধ্যে ভারতে লোকসভা নির্বাচন৷ ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল জোট গড়ছে৷ সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ‘চিরশত্রু’ সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি হাত মিলিয়েছে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে৷ পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ এখানে বিজেপিবিরোধী শক্তি তিন ভাগে বিভক্ত— তৃণমূল কংগ্রেস, বাম ও কংগ্রেস৷ ১৯ জানুয়ারি তৃণমূল ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে যে জাতীয় স্তরের সমাবেশের আয়োজন করেছিল, সেখানেও একই ছবি প্রতিফলিত হয়েছে৷ বাম ও প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে এই সমাবেশে দেখা যায়নি৷ এই সভায় তাঁরা আমন্ত্রিতই ছিলেন না৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্র এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি৷ আমন্ত্রণ না পেলে সেখানে উপস্থিত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘এটা সৌজন্যের ব্যাপার৷ রাজ্যের শাসকদল সৌজন্য জানে না৷’’ ডাক পেলে কি হাজির থাকতেন মঞ্চে? তৃণমূলের কঠোর সমালোচনা করেই সোমেন মিত্র বুঝিয়ে দিলেন, তাঁদের অবস্থান কী হতো, ‘‘এই রাজ্যে নারী নির্যাতন বাড়ছে৷ কৃষক আত্মহত্যা করছে৷ শিল্প না হওয়ায় বেকার যুবকরা চাকরি পাচ্ছে না৷ রাজ্যকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস৷’’

রাজ্যকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস: সোমেন মিত্র

This browser does not support the audio element.

আমন্ত্রণ নিয়ে অসৌজন্যের অভিযোগ খারিজ করে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব৷ দলের যুব নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘সোনিয়া গান্ধীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ তিনি কংগ্রেসের সর্বময় নেত্রী৷ দলের কর্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর অর্থ সবাই সেখানে আমন্ত্রিত৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও আমন্ত্রিত৷ তাহলে আলাদা করে প্রদেশ নেতাদের আমন্ত্রণ করার প্রয়োজনীয়তা কোথায়? তাহলে কি ওঁরা সোনিয়া-রাহুলের নেতৃত্ব স্বীকার করেন না!’’

তৃণমূলের বিজেপি বিরোধিতাকে কেউ বিশ্বাস করে না: সুজন চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

সেদিনের ব্রিগেড সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে৷ ছিলেন কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি৷ কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রতিনিধি হিসাবে তাঁরা হাজির ছিলেন৷ এমনকি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া পশ্চিমবঙ্গের একঝাঁক বিধায়কও ছিলেন সমাবেশে৷ ইতিমধ্যে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী ১৭ জন বিধায়ক তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন৷ তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগবিরোধী আইনে মামলা চলছে৷ এই বিষয়টা কি প্রদেশ কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেনি? সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘অস্বস্তির কোনো ব্যাপার নেই৷ তৃণমূলের লক্ষ্যই হচ্ছে এ রাজ্যে কংগ্রেসকে সাইনবোর্ডে পরিণত করা৷ তাই গত কয়েকবছর ধরে দল ভাঙানো চলছে৷ এটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানে৷ তাই রাহুল গান্ধী শুধু শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন৷ উত্তরপ্রদেশ বা অন্য রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে যাঁরা লড়ছেন, তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন৷’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের এই কৌশল নতুন কিছু নয়৷ ভোটের পর কেন্দ্রে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে সংখ্যার প্রয়োজন হলে তৃণমূলের সাহায্য লাগতে পারে, এটা ভেবেই সোনিয়া-রাহুল ব্রিগেডে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন, কিন্তু নিজেরা আসেননি৷

বামেদের বিরুদ্ধে লড়াইকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা: রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

জাতীয় রাজনীতিতে বামেরা বিজেপির বিরুদ্ধে একটি সোচ্চার পক্ষ৷ সেই বামেদের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য নেতৃত্বকে ব্রিগেডের মঞ্চে দেখা যায়নি৷ যদিও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব তাবড় নেতা সেখানে হাজির ছিলেন — কাশ্মীরের ফারুক আবদুল্লা থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু, মহারাষ্ট্রের শরদ পাওয়ার থেকে বিহারের তেজস্বী যাদব, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল কিংবা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, তথা কর্নাটকের এইচ ডি দেবগৌড়া৷ তাহলে কি জাতীয় স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে এবং একা হয়ে পড়ছে বামেরা? প্রাক্তন সাংসদ ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বামেরা ধারাবাহিকভাবে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির বিরোধিতা করে এসেছে৷ আর তৃণমূল ওদের সঙ্গে কেন্দ্রের জোট সরকারে ছিল৷ তাই তৃণমূলের বিজেপি বিরোধিতাকে কেউ বিশ্বাস করে না৷ তাই ব্রিগেডে কোন দল ছিল বা ছিল না, তাতে কিছু আসে-যায় না৷ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতিটাই হচ্ছে আসল৷’’

বাম ও প্রদেশ কংগ্রসকে বাইরে রাখায় কি এ রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলই একা হয়ে পড়ছে না? রাজ্যের মন্ত্রী, তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা সওয়াল, ‘‘বামেদের বিরুদ্ধে লড়াইকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা৷ এ রাজ্যের মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ সেই বামেদের কীভাবে তৃণমূল কোনো লড়াইয়ের শরিক করতে পারে?’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানো আমাদের লক্ষ্য৷ সব রাজ্যে যাতে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে দলগুলি লড়াই করে, সেটাই তৃণমূল নেত্রী চান৷ তাই এক মঞ্চ থেকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতারা নেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়েছেন৷ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চেয়েছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে আমরা একাই বিজেপিকে টেক্কা দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট, বরং অন্য দলকে সঙ্গে নিলে দুর্বলতা তৈরি হতে পারে৷’’

কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে: ওমপ্রকাশ মিশ্র

This browser does not support the audio element.

তবে তাঁর সঙ্গে একমত নন কংগ্রেস নেতা, অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘মঞ্চে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকে কংগ্রেসেরই শরিক৷ তাঁরা রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান৷ সে কথা স্পষ্টই আঞ্চলিক দলের নেতারা বলেছেন৷ তাই তৃণমূল কাকে ডাকলো বা ডাকলো না, সেটা কোনো ব্যাপারই নয়৷ কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে৷ সেটাই ব্রিগেডের সভা থেকে বোঝা গিয়েছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ