1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে নিরাপত্তা ছাড়াই ভোটার সমীক্ষায় নামছেন শিক্ষকরা

৩ নভেম্বর ২০২৫

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সবে শুরু হয়েছে এসআইআর বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন অর্থাৎ বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা৷ এটি ভোটার তালিকা যাচাই ও হালনাগাদ করার এক বিশেষ প্রক্রিয়া৷ সমীক্ষার শুরুতেই দেখা দিচ্ছে একাধিক সমস্যা৷

নির্বাচনে ভোট দেয়ার পর কালি দেয়া আঙ্গুল তুলে ধরা একটি হাত, পেছনে নারী ভোটারদের একটি অপেক্ষমান লাইন৷
রাজ্যে ৮০ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে৷ প্রতি বুথে ভোটারদের কাছে যেতে হবে বিএলওদের৷ছবি: DIBYANGSHU SARKAR/AFP/Getty Images

সুরক্ষার প্রশ্ন তুলছেন বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও)৷ তারা প্রতিটি ভোটকেন্দ্র বা বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷ বিএলওরা সাধারণত সরকারি স্কুলের শিক্ষক, পঞ্চায়েত কর্মকর্তা বা অন্যান্য নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারী হন৷

পয়লা নভেম্বর শনিবার থেকে শুরু হয়েছে বিএলও-দের প্রশিক্ষণ৷ এসআইআর সমীক্ষায় এরাই মূলত ফিল্ড ওয়ার্ক করবেন, অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য যাচাই করবেন৷ প্রশ্ন উঠছে, তাদের ছাড়া কীভাবে স্কুল চলবে? উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহাওয়ায় তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে?

সুরক্ষার দাবি

প্রশিক্ষণে বিএলওদের বোঝানো হচ্ছে, তারা কীভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার কাজ করবেন৷ কলকাতা থেকে জেলায় অনুষ্ঠিত শিবিরগুলিতে জেলা প্রশাসনের কাছে একঝাঁক প্রশ্ন তুলে ধরেছেন বিএলওরা৷ এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন৷ 

কলকাতার নজরুল মঞ্চে বিএলওদের প্রশিক্ষণ শিবির চলছে৷ শনিবার ফিল্ড কর্মীদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন আলিপুরের মহকুমা শাসক৷ সেখানে তিনি বিএলওদের অজস্র প্রশ্নের মুখে পড়েন৷ শুধু কলকাতা নয়, জেলায় জেলায় বিএলওরা এমনই প্রশ্ন তুলে ধরেছেন প্রশিক্ষকদের কাছে৷ যদিও এসব প্রশ্নের উত্তর ছিল না তাদের কাছে৷ প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, তারা নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানাবেন৷ 

এসআইআর ঘোষণার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সরগরম৷ একের পর এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা উত্তাপ বাড়িয়েছে৷ এসব মৃত্যুর জন্য এসআইআর আতঙ্ক দায়ী বলে দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ সর্বশেষ ঘটনা সামনে এসেছে শনিবার৷

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা বিমান সাঁতরার মারা গিয়েছেন তামিলনাড়ুতে৷ তিনি সেখানে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন৷ ২৬ অক্টোবর ৫১ বছরের বিমান হাসপাতালে ভর্তি হন৷ সেখানেই ৩০ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়৷ ধানজমিতে কাজ করার সময়ে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন৷ পরিবারের দাবি, এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন প্রৌঢ়৷ এ কারণেই অসুস্থ হয়ে পড়েন৷

এরই মধ্যে মঙ্গলবার ভোটাধিকার রক্ষার দাবিতে রাস্তায় নামছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাল্টা তৃণমূলকে আক্রমণ করছে বিজেপি৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, বিএলওরা সমস্যায় পড়লে তিনি পাশে দাঁড়াবেন৷

সমীক্ষা নিয়ে এই চাপানউতোরের ফলে ক্রমশ চাপে পড়ে যাচ্ছেন বিএলওরা৷ তারা নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি তুলছেন৷

রানিচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাম মুর্মু বিএলও হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন৷

তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্যে তো এই সমস্ত সমস্যা হচ্ছে না৷ আমাদের রাজ্যেই শুধু হচ্ছে৷ নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিযুক্ত করতে হবে৷ নইলে নিরাপত্তা কোথায়? বিএলওদের হুমকি দেয়ার রাজনীতি শুরু করেছেন যারা, তারা কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে সতর্ক হবেন৷''

দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুর এলাকায় বিএলও হিসেবে কাজ করছেন স্কুল শিক্ষক রাইহান মোল্লা৷ তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের যেহেতু স্থায়ী কর্মী নেই, তাই এই সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ স্কুল থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে যে শিক্ষকের বাড়ি, তিনি স্কুল থেকে ফিরে আবার ভোটার লিস্টের কাজ করবেন কী ভাবে? মহিলা বিএলওদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরো বেশি৷ আশা করছি কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে সমস্যার সমাধান হবে৷''

ভোটকর্মী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘বিএলওদের সুরক্ষার কথা বলা হলেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি৷ এ নিয়ে লিখিত অর্ডার জারি হয়নি৷ মঙ্গলবার থেকে ফিল্ড ওয়ার্ক শুরু হচ্ছে৷ সুতরাং আগামীকাল, সোমবার বিকেলের মধ্যে নির্দেশিকা জারি করতে হবে৷''

এছাড়াও আরো দুই দফা দাবিতে মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়েছে মঞ্চ৷ তিনি বলেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বিএলও হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, এটা করা যায় না৷ এরা সকলেই চুক্তিভিত্তিক কর্মী৷ কোনো চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে বিএলওর কাজ করানো যাবে না৷ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা কাজ করলে তার সুবিধে পাবে শাসক দল৷ এদের বিএলওর ডিউটি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে৷ এছাড়া যে কর্মীরা নিজেদের কর্মক্ষেত্র ছেড়ে সমীক্ষার কাজ করবেন, তাদের অন ডিউটি দেখাতে হবে৷ সে ব্যাপারে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ এই বিষয়গুলি জানিয়ে আজই আমরা সিইও দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি৷''

‘এতে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই’

This browser does not support the audio element.

স্কুলে শিক্ষা সংকট 

রাজ্যে ৮০ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে৷ প্রতি বুথে ভোটারদের কাছে যেতে হবে বিএলওদের৷ শিক্ষক সংগঠনের দাবি, বিএলও হিসেবে কমিশন যাদের নিযুক্ত করেছে, তাদের ৯০ শতাংশ স্কুলের শিক্ষক৷ অর্থাৎ ৮০ হাজারের বিএলওকে সমীক্ষার জন্য প্রয়োজন হলে, তার ৭০ হাজার স্কুল শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত৷

সোমবারও বিএলওদের প্রশিক্ষণ চলবে৷ তাই স্কুল ছেড়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে থাকতে হবে শিক্ষকদের৷ মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে বাড়ি বাড়ি যাওয়া৷ সেদিন থেকে এনিউমারেশন ফর্ম বিলি করবেন বিএলওরা৷ এই ফর্ম পূরণ করতে হবে ভোটারদের৷ এজন্য সমীক্ষকদের ভোটারের দরজায় দরজায় ঘুরতে হবে৷ 

পুজোর দীর্ঘ বিরতির পরে গত সপ্তাহের শনিবার স্কুল খুলেছিল৷ ছট পুজোর ছুটি পার করে বুধবার থেকে স্কুল খোলে৷ কিন্তু এর মধ্যেই শিক্ষকদের কাঁধে এসে পড়েছে নিবিড় সমীক্ষার দায়িত্ব৷ পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে যখন পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, সব স্কুলে সেই সময়ে নির্বাচনের কাজ পড়ুয়াদের পঠনপাঠনকে আরো অনিশ্চিত করে তুলেছে৷

শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, সমীক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে কোনো স্কুল থেকে তিন কোথাও পাঁচ কোথাও বা সাত-আট জন শিক্ষককেও নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু অনেক স্কুলেই এই সংখ্যক শিক্ষকই নেই৷ কোথাও বিএলওর কাজ করতে যাওয়ার ফলে মাত্র একজন কিংবা দুজন শিক্ষক স্কুলে পড়ে থাকছেন৷ 

উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে বাড়তি সমস্যা বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের নিয়ে৷ কোথাও হয়তো বিজ্ঞান বা দর্শনের শিক্ষককে বিএলওর কাজের জন্য কমিশন নিযুক্ত করেছে৷ এর ফলে ওই বিষয়ে পড়ানোর জন্য স্কুলে আর কেউ থাকছেন না৷ এই পরিস্থিতিতে দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টারের পঠন-পাঠন কীভাবে শেষ হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে৷ 

এই সমস্যার সমাধানে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে পঠনপাঠন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে৷ কিন্তু এটা ক্লাসরুমে পড়াশোনার বিকল্প হতে পারে না বলে মত পড়ুয়া ও অভিভাবকদের বড় অংশের৷

পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক হরিদাস ঘটক ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘পড়াশুনোর দিকে কারো নজর নেই৷ নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে রাজ্য এবং কেন্দ্রের শাসক দল, সকলেই ভোটকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় গুরুত্ব দিচ্ছে৷ কিন্তু সমাজ যে ছাত্রছাত্রীদের হাত ধরে বিকশিত হবে, সেটা নিয়ে ভাবার সময় কারো নেই৷''

রাম বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন প্রথমে বলেছিল, শিক্ষকদের কোনো কাজ করতে হবে না৷ পরে বলেছে শিক্ষকদের স্কুলেও যেতে হবে, আবার বিএলওর কাজ করতে হবে৷ কর্মস্থল থেকে বাড়ির দূরত্ব যাদের বেশি, তাদের পক্ষে স্কুল ছুটির পরে এই কাজ করা কষ্টসাধ্য৷ এতে যে কোনো একটা দিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ যে শিক্ষকের ক্লাস থাকছে, তিনি ক্লাস নিতে না পারলে অন্য কেউ এসে তার অভাব পূরণ করতে পারবেন না৷ তাহলে পড়ুয়াদের কী হবে? তারা পিছিয়ে যাচ্ছে৷ তাদের মধ্যে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷''

হরিদাস বলেন, ‘‘আমি দেখেছি, এমনও প্রাথমিক স্কুল আছে যেখানে প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বিএলও হিসেবে নিযুক্ত করা দেয়া হয়েছে৷ সেই স্কুলে পড়াশোনাটা হবে কী করে? স্কুলটা প্রায় এক মাস বন্ধ৷ এতে শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ভেঙে পড়বে৷ এর বিকল্প ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন বা সরকারকে ভাবতে হবে৷ অন্য অনেক সরকারি কর্মচারী আছেন যারা বসে আছেন, তাদের নেওয়া হোক৷ শিক্ষকদের উদ্বৃত্ত ভাবার কারণ কী, জানি না৷''

শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী ডিডাব্লিউ কে বলেন, ‘‘এ ব্যাপারটা নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই নির্বাচন কমিশনে ডেপুটেশন দিয়েছি বিক্ষোভ দেখিয়েছি৷ রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী শিশুদের শিক্ষার অধিকার রয়েছে৷ একদিকে রাষ্ট্র বলছে শিশুদের শিক্ষার অধিকার আছে, অন্যদিকে সেই রাষ্ট্র বলছে শিক্ষকদের পড়ানো বাদ দিয়ে অন্য কাজ করতে৷ সেজন্যই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি, কেন বিএলওর ডিউটির জন্য শিক্ষকদের তুলে নেয়া হবে৷ এতে যে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ আমরা দাবি জানিয়েছি নির্বাচন কমিশনের কাছে, যাতে শিক্ষকদের নিরাপত্তার লিখিত প্রতিশ্রুতি তারা দেয় এবং ভবিষ্যতে এই কাজের জন্য স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে৷ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যখন-তখন শিক্ষা বহির্ভূত কাজে যেন না লাগানো হয়৷’’

ভারতের যে সরকারি স্কুল সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের শিক্ষায় এগিয়ে

03:14

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ