পশ্চিমবঙ্গে পুরভোটে ব্যাপক অশান্তি, সাংবাদিক নিগ্রহ, বনধ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২![](https://static.dw.com/image/60941680_800.webp)
রোববার ১০৮টি পুরসভার ভোটগ্রহণ হয়। সেখানে বুথদখল, ছাপ্পা ভোট, ইভিএম ভাঙচুর, প্রার্থীদের আক্রমণের প্রচুর ঘটনা ঘটে। বহু জায়গায় সাংবাদিকরা আক্রান্ত হন। তারই প্রতিবাদে সোমবার বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ বনধের ডাক দেয়। সেই বনধের আংশিক প্রভাব পড়েছে। তবে বনধ নিয়েও বিজেপি-তে মতবিরোধ সামনে এসেছে।
ব্যাপক অশান্তি
রোববার পুরভোটে ব্যাপক গোলমালের অভিযোগ ওঠে। বহরমপুরে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মীরা। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থীকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। তুফানগঞ্জে বিজেপি প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। খড়্গপুরে ইভিএম ভাঙার অভিযোগ ওঠে। রাজপুর-সোনারপুরে নির্দল প্রার্থীর শাড়ি খুলে দেয়ার অভিযোগও ওঠে।
কামারহাটিতে বোমাবাজি হয়। ফারাক্কায় এসডিপিও-র গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা মারা হয়। যশোর রোডেও বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও রাজ্যজুড়ে ব্যাপক অশান্তির খবর আসে।
সাংবাদিক আক্রান্ত
রোববার পুরভোটে বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিকরা আক্রান্ত হন। ভোটপর্ব শুরু হতেই অশান্তির অভিযোগ আসে। আর তার খবর করতে গিয়েই আক্রান্ত হন সাংবাদিকরা। তাদের মারধর করা হয়। চিত্রসাংবাদিকদের ক্যামেরা কেড়ে ভেঙে ফেলা হয়। কয়েকজন সাংবাদিককে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে এবিপি আনন্দের সাংবাদিক প্রকাশ সিনহা এবং তার সঙ্গী চিত্রসাংবাদিককে মাটিতে ফেলে মারা হয়। তাদের অপরাধ, তারা কাঁথির রহমানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কেন জমায়েত হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রথমে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর তাদের কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
উত্তর দমদম পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে টিভি৯-এর সাংবাদিক সৌরভ দত্ত ও চিত্রসাংবাদিক দীপঙ্কর জানাকে প্রবল মারধর করা হয়। তাদের একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হালিশহরে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান টিভি৯-এর সাংবাদিক অর্ঘ চট্টোপাধ্যায়। তারপরই তার বুকে, পিঠে ঘুষি মারা হয় বলে অভিযোগ। হালিশহরেই আক্রান্ত হন জি-নিউজের সাংবাদিক। তাকে মারা হয়। ক্যামেরা ভেঙে দেয়া হয়। হুগলির শ্রীরামপুরে এবিপি আনন্দের সাংবাদিক সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রান্ত হন।
বনধের প্রভাব
সহিংসতার প্রতিবাদে সোমবার বনধ ডেকেছিল বিজেপি। বিভিন্ন জেলায় বনধের প্রভাব পড়েছে। বিজেপি কর্মীরা হুগলি, নদিয়ায় রেললাইন অবরোধ করে। বালুরঘাট ও কলকাতায় বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। কোচবিহারে বেসরকারি বাস পথে নামেনি। কিছু এলাকায় দোকান বন্ধ ছিল।
সরকার রোববারই জানিয়ে দিয়েছিল, বনধ সত্ত্বেও সব সরকারি কর্মীকে অফিসে যেতে হবে। নাহলে তাদের বেতন কাটা হবে। কাউকে ছুটি দেয়া হবে না। রাজ্যে বনধের সংস্কৃতি চালু করতে দেয়া হবে না।
বিজেপি-তে মতবিরোধ
বনধ নিয়েও বিজেপি-র রাজ্য নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে বলেন, ''হঠাৎ বনধ ডাকায় অনেকেই অসুবিধায় পড়েছেন। তাই সভাপতিকে অনুরোধ করছি, তিনি যেন বনধ প্রত্যাহার করে নেন।'' কর্মীদের তিনি অবরোধ প্রত্যাহার করতে বলেন।
কিন্তু এরপরেও বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, বনধের ডাক প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। আর শুভেন্দু দলের সভাপতিকে কিছু না বলে প্রকাশ্যে এই ধরনের কথা বলেছেন।
তবে বেলা যত গড়িয়েছে, ততই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, আনন্দবাজার)