পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটের সম্ভাবনা নির্বাচনে কতটা
পায়েল সামন্ত কলকাতা
৭ মার্চ ২০২০
পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে একজোট হয়ে লড়তে চলেছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস৷ তাতে কি কিছুটা বদলাবে এই রাজ্যের জনসমর্থনের সমীকরণ?
বিজ্ঞাপন
গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি কার্যত দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে৷ একদিকে রয়েছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস, অন্যদিকে বিজেপি৷ এর ফলে একসময় রাজ্য শাসন করা বাম ও কংগ্রেস হয়ে পড়েছে প্রান্তিক শক্তি৷ প্রতিটি নির্বাচনে এই দুই শিবিরের শক্তিক্ষয় হচ্ছে, কমছে জনসমর্থন৷ আগামী গ্রীষ্মে পশ্চিমবঙ্গে যে পুর নির্বাচন হতে চলেছে, তাতে দুই পক্ষ হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
বাম ও কংগ্রেসের মতাদর্শগত অবস্থান ভিন্ন মেরুতে হলেও তারা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে কাছাকাছি আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনটাই মত পর্যবেক্ষকদের৷ প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূল ও বিজেপির আগ্রাসনে ক্রমশ কোণঠাসা হতে থাকায় এই দুই শিবিরের এটা কি আত্মরক্ষার কৌশল? নইলে বাম ও দক্ষিণপন্থি দুই শক্তি হাত মেলালো কীভাবে৷
সিপিএম ও কংগ্রেস অবশ্য বলছে, তাদের সিদ্ধান্তে নয়, এই জোট হয়েছে মানুষের দাবিতে৷ সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হাত মিলিয়েছে৷ তারাই এই জোট চায়৷ সে কারণে তৃণমূল ও বিজেপির বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে এটা মানুষের জোট৷’’
তন্ময় ভট্টাচার্য
কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী একই সুরে বলেন, ‘‘মানুষ তৃণমূলের অপশাসন ও বিজেপির মেরুকরণ থেকে মুক্তি চাইছে৷ তাদের দাবি মেনেই দুই দল কাছাকাছি এসেছে৷’’
পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে, মতাদর্শগত অবস্থানকে আজকের পরিস্থিতিতে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না বাম ও কংগ্রেস নেতারা৷ তন্ময় বলেন, ‘‘কংগ্রেস আর্থিক নীতির প্রশ্নে অন্য পথে চললেও দেশের সামনে সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ কংগ্রেসের ইতিহাস সংবিধান রক্ষার ইতিহাস৷’’
এই জোটের সাফল্যের ব্যাপারে প্রত্যাশিতভাবেই আশাবাদী দুই পক্ষ৷ মনোজের বক্তব্য, ‘‘বামেদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া অশুভ শক্তিকে রুখতে৷ দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে বাঁচাতে৷ অন্য ইস্যুতে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই পারে৷ আমরা পারব তৃণমূলকে উৎখাত করতে৷’’
তৃণমূল আর বিজেপি বোঝাপড়া করে চলছে, একই অভিযোগ দুই পক্ষের৷ তারা একমত, পশ্চিমবঙ্গে মূল লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি শক্তি বলে তারা মানছে না? কংগ্রেস বিধায়কের জবাব, ‘‘তৃণমূল দ্বৈত ভূমিকা নিয়েছে৷ মুখে প্রতিবাদ করছে, কিন্তু বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া রেখে চলছে৷ এটাই ক্রমশ প্রকাশ্য আসছে৷'' তন্ময়ের মন্তব্য, ‘‘সারদা, নারদের দুর্নীতির হাত থেকে বাঁচতে হবে তৃণমূলকে৷ তাই কেন্দ্রকে খুশি রাখতেই হবে৷ সবচেয়ে বড় বিপদ, ধর্মীয় মেরুকরণ৷ হিন্দু আর মুসলমানের ভোটকে দুই শিবিরে ভাগ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ এটা রুখতেই হবে৷’’
বিমলশঙ্কর নন্দে
পুরসভা নির্বাচনে জনতা কাকে ভোট দেবে, তা মূলত নির্ভর করে তৃণমূল স্তরে কাজ করা জনপ্রতিনিধিদের উপর৷ এখানে রাজনৈতিক লড়াই কম গুরুত্ব পায়, সামনে থাকে নাগরিক পরিসেবা৷ পর্যবেক্ষক বিমলশঙ্কর নন্দের মতে, ‘‘স্থানীয় ভিত্তিতে জনপ্রিয়তার সাহায্যে বাম ও কংগ্রেসের অনেক প্রার্থী জয়ী হতে পারেন৷ এর সঙ্গে জোটের অঙ্ক বা মতাদর্শের রাজনীতির বিশেষ সম্পর্ক নেই৷'' আসল পরীক্ষা হবে আগামী বছরের বিধানসভা ভোটে৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে লড়াই এখন তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেই৷ তৃণমূলের আছে ৪৫-৪৬ শতাংশ ভোট, বিজেপির ৪৩-৪৪ শতাংশ৷ বাম-কংগ্রেসের ভোট ৭-৮ শতাংশের মতো৷ এই পরিস্থিতি বিধানসভায় বদলে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না৷’’
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখনো তৃণমূলের প্রাধান্য প্রশ্নাতীত৷ সাংগঠনিকভাবেই অনেক এগিয়ে মমতার দল৷ ভোটের ফলে জোট কোনো প্রভাব ফেলবে? অধ্যাপক নন্দ বলেন, ‘‘এই জোট তৃতীয় হবে, তাই নয়৷ অনেক পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকবে৷ মোট প্রাপ্ত ভোটের হার ৫ শতাংশেও নেমে যেতে পারে৷ জোটের সমর্থন বাড়লে বিরোধী ভোটের কাটাকাটিতে সুবিধা হবে তৃণমূলের৷ সেটা বিজেপির পক্ষে চিন্তার কারণ৷’’
২০১৯ সালে মে মাসের ছবিঘরটি দেখুন...
লোকসভা নির্বাচনে তারকা-ঝড়, বিজয়ী কারা?
সম্প্রতি সম্পন্ন হলো ভারতের লোকসভা নির্বাচন৷ এবারের নির্বাচনে ছিল চোখে পড়ার মতো তারকাদের ভিড়৷ বড়-ছোট পর্দার কোন কোন তারকারা নির্বাচনে জয়যুক্ত হলেন, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: AP
১. মিমি চক্রবর্তী
টলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ আসন যাদবপুর থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জনতা পার্টির অনুপম হাজরা ও বামফ্রন্টের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে হারাতে মোট ভোটের প্রায় ৪৮ শতাংশ পান তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মিমি৷
ছবি: Prabhakar Mani Tiwari
২. নুসরাত জাহান
পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী নুসরাত জাহানও অভিনেত্রী৷ বাংলা ছবির এই জনপ্রিয় মুখ এবারের নির্বাচনে পেয়েছেন মোট প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৫৫ শতাংশ৷ ফলে, আটকানো যায়নি এই নায়িকার জয়যাত্রা৷
ছবি: imago/Pacific Press Agency/S. Paul
৩. বাবুল সুপ্রিয়
এককালে বলিউড থেকে টলিউড মাতিয়ে তোলা এই কন্ঠশিল্পী বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, তথা জাতীয় স্তরে ভারতীয় জনতা পার্টির পরিচিত মুখ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের আরেক ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী অভিনেত্রী মুনমুন সেন’কে পরাজিত করতে আসানসোল কেন্দ্র থেকে তিনি পেয়েছেন ৫১ শতাংশ ভোট৷
ছবি: cc-by/www.bollywoodhungama.com
৪. লকেট চট্টোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গে তারকা প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম ছোট থেকে বড়পর্দায় এক সময় সমান দাপটে অভিনয় করা অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ ভারতীয় জনতা পার্টির মহিলা সংগঠনগুলির বিভিন্ন সমাবেশে থাকা এই অভিনেত্রী এখন হুগলি কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ৷ লকেট পেয়েছেন ৪৬ শতাংশ ভোট, যা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সাবেক সাংসদ রত্না দে’র থেকে মাত্র ৫ শতাংশ বেশি৷
ছবি: DW/P. Samanta
৫. সানি দেওল
বলিউডের ক্ষমতাশালী ‘দেওল’ পরিবারের জ্যেষ্ঠ্যপুত্র সানি লোকসভা নির্বাচনের কিছুদিন আগেই রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন৷ পাঞ্জাবের গুরদাসপুর কেন্দ্র থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে ভোটে লড়া এই নবীন রাজনীতিক পেয়েছেন মোট ভোটের ৫১ শতাংশ৷
ছবি: Imago Images/Hindustan Times
৬. রবি কিষাণ
ভোজপুরী সিনেমা জগতের অন্যতম বিখ্যাত অভিনেতা রবি কিষাণ৷ পাশাপাশি, ‘বিগ বস’-এর মতো জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানের কারণে গোটা ভারত জুড়েই তাঁর প্রবল খ্যাতি৷ এবারের নির্বাচনি ফলাফলেও তাই লেগেছে এই খ্যাতির ছোঁয়া৷ উত্তর প্রদেশের গোরখপুর কেন্দ্র থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে মোট ভোটের ৬১ শতাংশ ভোট তাঁর সমর্থনে রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
৭. কিরণ খের
টেলিভিশন পর্দায় প্রায়ই ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষে কথা বলতে দেখা যায় অভিনেত্রী কিরণ খের’কে৷ আগের নির্বাচনের মতো এবারও চণ্ডীগড়ে নিজের আসন ধরে রাখলেন ভারতীয় জনতা পার্টির এই সাংসদ৷ এবার তাঁর ভাগ্যে জুটেছে প্রায় ৫১ শতাংশের কাছাকাছি ভোট৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/A. Khan
৮. হেমা মালিনী
বলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী হেমা মালিনী বেশ কিছু বছর ধরেই রাজনীতির ময়দানে রয়েছেন৷ এর আগে রাজ্যসভার সাংসদ হবার পর সাম্প্রতিক নির্বাচনে মথুরা কেন্দ্র থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে লড়েন ও ৬১ শতাংশ ভোট পান৷
ছবি: AFP/S. Jaiswal
৯. শতাব্দী রায়
তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে এর আগেও নির্বাচনি ময়দানে নামেন টলিউড অভিনেত্রী শতাব্দী রায়৷ ভোটের সময় তাঁর কিছু মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হলেও তাঁর প্রভাব শতাব্দীর নির্বাচনি ফলাফলে পড়েনি৷ বীরভূম কেন্দ্রের ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীকে হারাতে শতাব্দী পান ৪৫ শতাংশ ভোট৷ বিপরীতে, বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৩৮ শতাংশ ভোট৷
ছবি: imago/ZUMA Press
১০. দীপক অধিকারী (দেব)
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজনীতির ময়দানে আত্মপ্রকাশ করেন আরেক টলিউড অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেব৷ পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল কেন্দ্রের এই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি’র ভারতী ঘোষ’কে এক লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাজিত করে লোকসভায় নিজের আসন নিশ্চিত করেছেন দেব৷
ছবি: Creative Commons
১১. স্মৃতি ইরানি
উত্তর প্রদেশের কেন্দ্র আমেঠি বরাবরই পরিচিত গান্ধী পরিবারের ঘাঁটি হিসাবে৷ কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে এই হিসাবে বদল আনলেন টেলিভিশনন জগতের একদা জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানি, যিনি বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টির উচ্চপদের নেত্রীও৷ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধীকে ৫৫,০০০ ভোটে হারিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পান স্মৃতি৷ বদলে, প্রধানমন্ত্রীত্বের উদ্দেশ্যে লড়া রাহুলের কপালে জোটে ৪৪ শতাংশ৷