পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের নির্বাচনি জোট শেষ পর্যন্ত হলো৷ ১৯৩ আসনে সমঝোতার সিদ্ধান্তও৷ তবু কিছু ‘কিন্তু’ রয়ে গেছে দুই পক্ষের বোঝাপড়ায়৷
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গের মোট ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৯৩ আসনে আপাতত সমঝোতা হয়েছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের৷ তার মধ্যে সিংহভাগ, ১০১টি আসনে প্রার্থী দেবে বামেরা৷ রাজ্য বামফ্রন্টের সম্পাদক বিমান বসুকে পাশে নিয়ে ঘোষণা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরি৷ এই ১৯৩ আসনের মধ্যে ২০১৬ সালে ৪৪টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস এবং ৩৩টি আসনে বামেরা৷ সেই ৭৭টি আসন ছাড়াও কংগ্রেস আরো ৪৮ আসনে এবং বামেরা আরো ৬৮টি আসনে প্রার্থী দেবে বলে অধীর রঞ্জন চৌধুরি সেদিনই জানিয়ে দেন৷ কিন্তু রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো, কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ এই সমঝোতায় খুশি নয়৷ ফলে জোটের সাফল্য কিছু জায়গায় অবশ্যই বাধা পাবে, যার ফায়দা লুটবে বিজেপি৷
অনেকেই চায় না, জোটটা হোক: প্রদীপ ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা
বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য সরাসরি বলেই দিলেন, ‘‘অনেকেই চায় না, জোটটা হোক৷ তাদের একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে বিজেপির সঙ্গে৷ (কংগ্রেস) একা ফাইট করলে বিজেপি ‘সুইপ’ করবে৷ এই সব অনেক কিছুর বিরুদ্ধে ফাইট করতে হচ্ছে৷’’ যদিও প্রদীপবাবু বলছেন, এখনো পর্যন্ত আসন সমঝোতা যা হয়েছে, তা চূড়ান্তই৷ বিশেষত আগেরবার জেতা ৭৭টি আসন কোনো সমস্যাই নয়৷ বাকি আসনগুলো নিয়ে এর পর আলোচনা চলবে৷ ফেব্রুয়ারির শেষে বাম–কংগ্রেসের যৌথ ব্রিগেড সমাবেশ৷ তার আগেই কি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে? প্রদীপ ভট্টাচার্য আশাবাদী যে, তার অনেক আগেই সমঝোতা পাকাপোক্ত হবে৷
এক সময়ের প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের সঙ্গে এই সহযোগিতা, সমঝোতা বামেরা কিভাবে দেখছে? সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, কেন্দ্রে যেমন বিজেপি, রাজ্যে তেমনই তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের শত্রু৷ এদের দুজনের বিরুদ্ধেই লড়াইটা জরুরি৷ এবং পশ্চিমবঙ্গে লোকে তৃণমূলের অপশাসনের থেকে রেহাই পেতেই এখন বিজেপি–কে চাইছে৷ তা ছাড়াও, সুজনবাবুর কথায়, ‘‘ভারতবর্ষের বিবেচনায় বিজেপি আরো বড় বিপদ৷ কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতা না করে বিজেপির বিরোধিতা করা যাবে না৷ কারণ, তৃণমূলের ওপর রাগ করেই তো বিজেপিতে যাচ্ছে৷ ফলে এই দুটো শক্তির বিরুদ্ধে সবাই একজোট হোক, এটা হচ্ছে আমাদের মূল কথা৷ এটা কংগ্রেস আর সিপিএম-এর জোটের ব্যাপার না৷’’
বিজেপি আরও বড় বিপদ: সুজন চক্রবর্তী, সিপিআইএম নেতা
আরো একটা ব্যাপারেও কংগ্রেস এবং বামেরা এই সময়ে দাঁড়িয়ে একমত৷ বিজেপি যেভাবে জাতপাতের রাজনীতি নিয়ে এসেছে বাংলায়, যেভাবে ভূমিপুত্র-বহিরাগত, সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু, ব্রাহ্মণ-দলিত, অথবা সরাসরি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু হয়েছে, তা আটকানো দরকার৷ সেই জায়গা থেকেই নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করছেন তারা, যা তৃণমূল নেত্রীর ক্ষোভের কারণ হয়েছে৷ বাম-কংগ্রেসের জোটের খবরে মমতা বলেছেন, এতে তাদের কিছু আসে যায় না৷ অর্থাৎ, তার ধারণা বিজেপিবিরোধী ভোট তিনিই পাবেন৷
২০১৮ সালের অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
এক নজরে ভারতের আঞ্চলিক দল
২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচন৷ ইতিমধ্যে কেন্দ্রে ও রাজ্যে সরকার গড়া এবং টিকিয়ে রাখায় আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে৷ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই দলগুলি নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
মা-মাটি-মানুষের তৃণমূল কংগ্রেস
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে জন্ম৷ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রতীক জোড়া ঘাসফুল ও স্লোগান ‘মা-মাটি-মানুষ’৷ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে এককভাবে ১৮৪টি আসন পেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিধানসভার ২২৭ টি আসন নিয়ে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে৷ ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে ২৯৪টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২১১টি আসন পেয়ে আবার ক্ষমতায়৷
ছবি: UNI
দলিতের দল বহুজন সমাজ পার্টি
উত্তরপ্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পার্টি৷ ভারতীয় সংবিধান রচনার প্রাণপুরুষ, দলিত নেতা ডক্টর বি. আর আম্বেদকরের আদর্শে ১৯৮৪ সালে দলটি গঠন করেন কাঁসিরাম৷ ২০০১ সালে দলের ভার নেন উত্তরপ্রদেশের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী৷ রাজ্যের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী তিনি৷ নির্বাচনী প্রতীক চিহ্ন হাতি৷ বর্তমানে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিএসপির চারজন থাকলেও লোকসভায় একজনও নেই৷
ছবি: Bahujan Samaj Party
ক্ষমতার আশায় সমাজবাদী পার্টি
১৯৯২ সালে মূল জনতা দল ভেঙে গঠিত সমাজবাদী পার্টি (এসপি) উত্তরপ্রদেশে খুবই প্রভাবশালী৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুলায়েম সিং যাদব, তবে বর্তমান দলনেতা অখিলেশ সিং যাদব৷ দলের মতাদর্শ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র৷ নির্বাচনী প্রতীক সাইকেল৷ ২০১২ সালের বিধানসভা ভোটে শাসক দল বহুজন সমাজ পার্টিকে পরাজিত করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার গঠন করে৷ লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বর্তমান আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৭টি এবং ১৩টি৷
ছবি: picture-alliance
দাঁড়িপাল্লায় অকালী দল
পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শিখ ও পাঞ্জাবি জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল শিরোমণি অকালী দল৷ সব থেকে পুরানো এবং প্রভাবশালী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটি ‘অকালী’ নামেই পরিচিত৷ নির্বাচনি প্রতীক দাঁড়িপাল্লা৷ বর্তমান সভাপতি সুখবীর সিং বাদল৷ গুরুদোয়ারার মতো শিখ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণ করে তাঁর দল৷ প্রতিষ্ঠা ১৯২০ সালে৷ বর্তমানে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অকালী দলের সাংসদ চারজন, বিধানসভায় ১১৭ টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৫টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky
দক্ষিণ ভারতের এআইএডিএমকে
অখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, বা সংক্ষেপে এআইএডিএমকে, ভারতের তামিল নাডু রাজ্যের রাজনৈতিক দল৷ ১৯৭২ সালে এম.জি. রামচন্দ্রন কর্তৃক এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ দলীয় প্রতীক জোড়া পাতা৷এই দল সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দ্রাবিড় আঞ্চলিক পার্টি৷ ‘আম্মা’ জয়ললিতার নেতৃত্বে ১৯৮৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখে এআইএডিএমকে৷ রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল এআইএডিএমকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sankar
উদীয়মান ডিএমকে?
দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম, সংক্ষেপে ডিএমকে তামিলনাড়ু রাজ্যের পুরনো আঞ্চলিক দল৷ প্রতিষ্ঠাতা সি.এন আন্নাদুরাই৷ ‘জাস্টিস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত দ্রাবিড় কড়গম পার্টি ভেঙে গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে৷ ১৯৬৯ সাল থেকে আমৃত্যু দলের নেতৃত্ব দেন করুণানিধি৷ মতাদর্শ সামাজিক গণতন্ত্র ও আঞ্চলিকতাবাদ এবং নির্বাচনি প্রতীক উদীয়মান সূর্য৷ বিরোধীনেত্রী জয়ললিতার মৃত্যুর পর আগামী ভোটে কেমন ফল করে ডিএমকে, এখন তা-ই দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sankar
আম জনতার আম আদমি পার্টি
২০১২ সালে গঠিত আম আদমি পার্টি বর্তমানে দিল্লির শাসক দল৷ ২০১১ সালে জন লোকপাল বিল পাস করানো নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকারী আন্না হাজারে ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়৷ ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে নামে আম আদমি পার্টি ও সরকার গঠন করে৷ অবিলম্বে লোকপাল বিল আনার শর্ত পূরণ হবার সম্ভাবনা না থাকায় ৪৯ দিনের মাথায় ইস্তফা দিলেও ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে ফের ক্ষমতায় আসে৷
ছবি: Reuters/A. Mukherjee
বিজু-র জয়রথ কি বজায় থাকবে?
১৯৯৭ সালে গঠিত বিজু জনতা দল বর্তমানে ওড়িষায় ক্ষমতাসীন৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েকের ছেলে নবীন পট্টনায়েক এখন মুখ্যমন্ত্রী৷ পিতার নামেই দলের নাম৷ দলের প্রতীক চিহ্ন শঙ্খ৷ নবীন পট্টনায়েক ২০০৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে দাঁড়ান এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন৷ ২০০০ সাল থেকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় নবীন পট্টনায়ক এখন মোট চারবারের মুখ্যমন্ত্রী৷