1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের সংঘাত শেষ?

১০ ডিসেম্বর ২০২৪

কয়েক মাসের বিরতির পর সোমবার রাজভবনে যান মুখ্যমন্ত্রী। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজ্যপালের সঙ্গে তার কথা হয়।

মানুষের অভিয়োগ শুনতে রাস্তায় নেমেছেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। ২০২৩ সালের ছবি।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সংঘাত কি আপাতত শেষ হলো?ছবি: Subrata Goswami/DW

সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক মধুর ছিল না। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তিক্ততা চরমে পৌঁছেছিল। বোসের পূর্বসূরি, বর্তমানে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও রাজ্যের সংঘাত লেগেই ছিল। গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। 

দুজনে দেখা হলো

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে গিয়েছিলেন। রাজ্যপালের সঙ্গে তার আধ ঘণ্টা কথা হয়। সাত মাস পর রাজভবনে গেলেন মমতা। শেষবার গিয়েছিলেন গত আগস্টে, স্বাধীনতা দিবসে। সেটা ছিল একেবারেই প্রথা মেনে রাজভবন যাত্রা। তারপর থেকে দুজনের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বেড়েছিল।

রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বোসের কথা হয়েছে বলে রাজভবন সূত্রের খবর। এছাড়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দুজনের আলাপচারিতায় উঠে আসে।

রাজভবনের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাতের আবহ যে কিছুটা উন্নত হয়েছে, সেটা গত মাস থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। নভেম্বরে রাজ্যের ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন সিভি আনন্দ বোস। এ জন্য তিনি বিধানসভায় গিয়েছিলেন। অতীতের মতো সদস্যদের শপথ ঘিরে টানাপড়েন এবার দেখা যায়নি।

উপাচার্য নিয়োগ নিয়েও রাজ্য ও রাজভবনের মধ্যে দড়ি টানাটানি কম হয়নি। রাজ্যের পছন্দের প্রার্থীকে বারবার নাকচ করেছে রাজভবন। কিন্তু হঠাৎই দেখা যাচ্ছে, উপাচার্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ মিলে যাচ্ছে। এতেও স্পষ্ট ইঙ্গিত, দুজনের মধ্যে সুসম্পর্কের বাতাস বইছে। 

সংঘাতের নজির

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে সিভি আনন্দ বোস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কখনো তার সঙ্গে তেমন সদ্ভাব দেখা যায়নি রাজ্যের। উপাচার্য নিয়োগ থেকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা কিংবা নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথ, অনেক ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব বিরোধ দেখা গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী যেমন সাত মাস পর রাজভবনে গেলেন, তেমনি এ মাসে রাজ্যপাল বিধানসভায় এসেছিলেন প্রায় দুবছর পর। উপনির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। এমনকী চলতি বছরের বাজেট অধিবেশনেও যোগ দেননি বোস। 

এর আগের উপনির্বাচনে জয়ী দুই তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রায়াত হোসেন সরকারের শপথ ঘিরে সংঘাত চরমে উঠেছিল। রাজ্যপাল চেয়েছিলেন নতুন সদস্যরা রাজভবনে এসে শপথ নিন। কিন্তু সেই সময় বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছিলেন রাজভবনেরই এক মহিলা কর্মী। এই কারণ দেখিয়ে সায়ন্তিকা রাজভবনে শপথ নিতে যেতে চাননি। শেষমেশ বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দুই সদস্যকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন বোস। নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ে সমালোচনা করেছেন রাজ্যের। রিপোর্ট পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তুমুল বাকবিতণ্ডা চলেছে দিনের পর দিন। এই ছবিতে বদলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক তাৎপর্য 

ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি। কেন্দ্রই ঠিক করে, কোন রাজ্যে কে রাজ্যপাল হবেন। সেই অর্থে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাতের অর্থ কার্যত কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি। চলতি পরিস্থিতিতে সংঘাতের বদলে কিছুটা মিত্রতার আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। তাহলে কি বরফ গলেছে? 

‘কেন্দ্র চায় না রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সংঘাত চলুক’

This browser does not support the audio element.

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তার দুবছর পূর্ণ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর দিকে যে অলিভ ব্রাঞ্চ এগিয়ে দিয়েছিলেন, সেটা মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্য করেছেন। এবং তারপরই ছয় জন বিধায়ককে শপথ গ্রহণ করাতে রাজ্যপাল বিধানসভায় চলে যান। মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে রাজভবনে গেলেন। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ম প্রায় দেড় বছর ধরে যে জটিলতা ছিল সেটা এবার কাটতে চলেছে। ইতিমধ্যে রাজ্যপাল ছয় জনের নিয়োগ অনুমোদন করেছেন। আরো পাঁচ জনের নিয়োগ আজকালের মধ্যে অনুমোদন করবেন। আপাতত মনে হয় যে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান চলবে।"

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেন, "বোঝা যাচ্ছে যে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এখন ভালো জায়গায় আছে। দুই তরফের মধ্যে বোঝাপড়া ঠিকঠাক রয়েছে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির জায়গাটায় ভারসাম্য আছে। সেই কারণে কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যপাল ক্রমশ রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের আবহ পরিবর্তন করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন।"

সংসদেও দেখা গেছে, কংগ্রেস আদানি প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করলেও তৃণমূল সেই রাস্তায় যায়নি।  তারা বরং রাজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি তুলতে চেয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপড়েনের ফলেও কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। 

সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় গিয়ে বৈঠক করেছেন। এই প্রসঙ্গে সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "আমাদের বর্তমান রাজ্যপাল সম্পর্কে শোনা যায় যে তিনি যতটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ, ততটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ। কেন্দ্র চায় না যে রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যে সংঘাত চলছিল, সেটা চলুক। তার বড় কারণ হতে পারে যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বা সামাজিক টালমাটাল পরিস্থিতি। যেহেতু বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া একটি দেশ, সেহেতু পশ্চিমবঙ্গে যদি কেন্দ্র- রাজ্য সংঘাত চলতে থাকে, বা পশ্চিমবঙ্গে যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, তাহলে হয়তো বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত রূপায়ণে অসুবিধা হবে।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ