বদলে ফেলা হলো রবীন্দ্রনাথের গান৷ কবিগুরুর লেখা বাণী বদলে গাওয়া হলো পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সংগীত হিসেবে৷ আর তাতেই তৈরি হয়েছে ক্ষোভ, উঠেছে প্রশ্ন৷
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণী বদলে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল' গানটি গাওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সংগীত হিসেবে, আর তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা৷ছবি: akg-images/picture-alliance
বিজ্ঞাপন
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন তার কালজয়ী গান৷ সেই রবীন্দ্রসংগীত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান৷' এই গানকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়েছে কয়েকটি শব্দ বদলে৷
রবি গানে বদল
গানের বাণীতে আছে বাঙালি৷ রাজ্য সংগীতে সেটা হল বাংলা৷ মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে গাওয়া হয়
গান গাইবার আগে দর্শকদের উঠে দাঁড়াতে বলা হয়৷ তারপর যে গান বিশিষ্ট শিল্পীরা পরিবেশন করেন, তা সুরে-কথায় একেবারে সেই চেনা রবীন্দ্রসংগীত৷ কিন্তু বদল শুধু শেষ স্তবকে৷
মূল গানে থাকা ‘বাঙালির পণ, বাঙালির আশা' এবং ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন' অংশটিকে ‘বাংলার পণ, বাংলার আশা', ‘বাংলার প্রাণ, বাংলার মন' করে গাওয়া হয়েছে বলে রেকর্ডিংয়ে শোনা যাচ্ছে৷ এই পরিবর্তন উৎসবের জমাটি আবহে সেভাবে নজর কাড়েনি৷ পরে তা নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা৷
গানটির পরিবেশনায় ছিলেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং গায়ক ইন্দ্রনীল সেন, শ্রীরাধা বন্দোপাধ্যায়, রূপঙ্কর বাগচী, ইমন চক্রবর্তী, মনোময় ভট্টাচার্য, অদিতি মুন্সীরা৷ মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে৷
বদলের প্রস্তাব
কয়েকমাস আগে এ ধরনের পরিবর্তনের একটি প্রস্তাব শোনা গেছে৷বদল করা যায় কি না, সেটা জানতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তবে বিভিন্ন স্তরে এই নিয়ে আপত্তি থাকায় পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়৷ রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, গানটির শব্দে পরিবর্তন আনা হবে না৷
৭ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় রাজ্য সংগীত সংক্রান্ত বিল পাশ হয়৷ গত সোমবার বিধানসভা মিউজিয়ামে উদ্বোধনের সময় এই গান গাওয়া হয়েছিল৷ চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে এই গান পরিবেশিত হওয়ার পর তা নিয়ে চলছে সমালোচনা৷
মুখ্যমন্ত্রী বলার পরও কীভাবে পরিবর্তিত গানকে রাজ্য সংগীত হিসেবে গাওয়া হল, তা নিয়ে বিস্ময় ও প্রশ্ন জেগেছে৷ গানের শিল্পীরা এ ব্যাপারে স্পষ্ট উত্তর দেননি৷ কেউ বলেছেন কী গেয়েছেন মনে নেই! আবার কারো বক্তব্য, কাগজে যা লেখা ছিল, তাই গেয়েছেন!
কঠোর প্রতিক্রিয়া
ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলার সংগীত ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা৷ রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘এটা অপকর্ম৷ ক্ষমতার অপব্যবহার যে-ই করেছে, তাদের আমি তীব্র ধিক্কার জানাই৷ ইতিহাস নিয়ে আমি মাথা ঘামাচ্ছি না৷ এই গানে রবীন্দ্রনাথ কথা লিখেছেন, সুর দিয়েছেন৷ এটা বদল করা যায় না৷''
ডয়চে ভেলেকে বিশ্বভারতীর আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রবি ঠাকুর গান নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা পছন্দ করতেন না৷ সেটা তিনি নিজেই বলেছেন৷ তার পরও এই পরিবর্তন কাম্য নয়৷''
শিল্পী ও গবেষক শুভেন্দু মাইতি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বদলে গাওয়া এক ধরনের রাষ্ট্রীয় ঔদ্ধত্য৷ সকলের প্রতিবাদ করা উচিত৷ যে শিল্পীরা এই গান গাইলেন, তারা কেন প্রতিবাদ করলেন না? তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিত৷ দেড়শো বছর ধরে বাঙালি রবীন্দ্রনাথের গান শুনছেন, গাইছেন৷ ভোটে জিতেছি বলে সেটা পাল্টে দিতে পারি না৷''
প্যারোডি পরম্পরা
অবশ্য পাল্টা যুক্তিও রয়েছে৷ কেউ কেউ বলছেন, কিন্তু প্যারোডি তৈরি ও বাণীর ইচ্ছেমতো পরিবর্তন কি এক?
কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র স্মৃতি
২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দে জন্মেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তাঁর জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে বাংলাদেশে৷ জমিদারি পরিচালনা করতে এসে রচনা করেছেন মহামূল্য সাহিত্যকর্ম৷ কুমারখালী ও কুষ্টিয়ায় কবিগুরুর স্মৃতিধন্য দু’টি জায়গা৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার পদ্মার দক্ষিণ তীরে শিলাইদহ গ্রামে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি৷ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার৷ আগে এ এলাকার নাম ছিল খোরশেদপুর৷
ছবি: DW/M. Mamun
শেলীদহ থেকে শিলাইদহ
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার গ্রামটি কিনে নেওয়ার সময় এখানে একটি নীলকুঠি ছিল৷ শেলি নামের একজন নীলকর এটি নির্মাণ করেছিলেন৷ পদ্মা এবং গড়াই নদীর মিলিত প্রবাহের ফলে এই এলাকায় একটি ভয়াবহ ‘দহ’ বা ঘূর্ণিস্রোত সৃষ্টি হতো৷ সেখান থেকে এই এলাকা শেলীদহ নামে পরিচিতি পায়৷ কালক্রমে শেলীদহ রূপ নেয় শিলাইদহে৷
ছবি: DW/M. Mamun
দ্বারকানাথ ঠাকুরের জমিদারি
১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এই এলাকার জমিদারির মালিকানা পান৷ জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে সর্বপ্রথম তিনি শিলাইদহে আসেন ১৮৮৯ সালে৷ কৈশোর এবং যৌবনে প্রায়ই তিনি জমিদারি দেখভাল করতে শিলাইদহ আসতেন, থাকতেন এই কুঠিবাড়িতেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগমন
১৮৯১ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে অল্প বিরতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত কুঠিবাড়িতে অবস্থান করেছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
অমর সৃষ্টির রচনা যেখানে
শিলাইদহ কুঠিবাড়ির ভেতরে কবির ব্যবহৃত খাট৷ জানা যায়, এ বাড়িতে বসেই কবি রচনা করেছেন তাঁর অমর সৃষ্টি সোনারতরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়া কব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতাসহ অনেক উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম৷
ছবি: DW/M. Mamun
দুর্লভ আলোকচিত্র
কুঠিবাড়ির ভেতরে কবিগুরুর দুর্লভ আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M. Mamun
কবিগুরুর পালকি
এই পালকিতে চড়েই জিমিদারি দেখাশোনা করতেন কবিগুরু৷ শিলাইদহ কুঠিবাড়িটি বর্তমানে একটি জাদুঘর৷ এখানে সংরক্ষিত আছে কবির ব্যবহৃত নানান সামগ্রী৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্পিডবোট
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পদ্মা নদীতে ঘুরে বেড়াতেন ‘চপলা’ নামের এই স্পিড বোটে৷ শিলাইদহ কুঠিবাড়ি জাদুঘরের দোতলায় সংরক্ষিত আছে এটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুরোনো’র আদলে নতুন
কুঠিবাড়ির পুকুরে ‘পদ্ম বোট’-এর প্রতিরূপ৷ কবির ব্যবহৃত পদ্ম বোটটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এটি পুনরায় তৈরি করা হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’র রচনা যেখানে
শিলাইদহ কুঠিবাড়ির পুকুরের বকুলতলার ঘাট৷ কথিত আছে কবিগুরু নিজ হাতে এ বকুল গাছটি রোপন করেছিলেন৷ তাছাড়া বকুলতলার ঘাটটিও তাঁর খুবই পছন্দ ছিল৷ ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’ কবির বিখ্যাত এ গানটি তিনি এই বকুলতলার ঘাটে বসেই রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
কবির ব্যবহৃত জিনিস
শিলাইদহ কুঠিবাড়ির ভেতরে কবির ব্যবহৃত টেবিল, চেয়ার ইত্যাদি৷ সপ্তাহের রবি ও সোমবার ছাড়া প্রতিদিন বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ জাদুঘর৷ রবি ও সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে৷ কবির জন্ম ও মৃত্যু দিনে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শিলাইদহে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পদ্মার ঢেউয়ের আদলে দেয়াল
প্রায় ১১ একর জায়গা নিয়ে শিলাইদহ কুঠিবাড়ির চারপাশে আছে ঢেউ আকৃতির দেয়াল৷ কবিগুরু পদ্মার ঢেউয়ের আদলেই তা নির্মাণ করেছিলেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
টেগর লজ
কুষ্টিয়া শহরে কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি টেগর লজ৷ জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ১৮৯০ সালের শেষের দিকে কুষ্টিয়া রেল স্টেশনের কাছে এই বাড়ি নির্মাণ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
কবিগুরুর বিশ্রাম স্থান
টেগর লজের ভেতরে কবিগুরুর প্রতিকৃতি৷ ভুসিমাল ও পাটের ব্যবসার জন্য কবি নিজে এ বাড়িতে ‘টেগর অ্যান্ড কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ কলকাতা থেকে ট্রেনে কুষ্টিয়া এসে টেগর লজে বিশ্রাম নিয়ে শিলাইদহে যেতেন কবি৷ ১৮৯০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় এই বাড়িতে থেকেছেন৷ দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে থাকার পর ২০০৪ সালে বাড়িটি কিনে সংস্কার করে কুষ্টিয়া পৌরসভা৷
ছবি: DW/M. Mamun
14 ছবি1 | 14
সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই পরিবর্তনকে আমি সমর্থন করি না৷ রবীন্দ্রনাথের গান নজরুল ও দ্বিজেন্দ্রলাল পরিবর্তন করে প্যারোডি করেছিলেন৷ কিন্তু সেটা প্যারোডিই ছিল৷ তার মাধ্যমে কখনো বার্তা দেওয়া হত, কখনো বা নিছক ব্যঙ্গ বা হাস্যরস তৈরির চেষ্টা থাকত৷ রবীন্দ্রনাথের গানের শব্দ বদলে দিলে সেটা রবীন্দ্রসংগীত থাকে না৷ তা হলে রাজ্য সংগীতের জন্য নিজেদের গান তৈরি করতে হতো৷''
রবীন্দ্র থেকে নজরুল
সম্প্রতি কাজী নজরুল ইসলামের গানে পরিবর্তন করায় সমালোচনার মুখে পড়েন বিখ্যাত ভারতীয় সুরকার এ আর রহমান৷ একটি ছবিতে ‘কারার ওই লৌহ কপাট' গানটি ভিন্ন সুর সংযোজনায় ব্যবহার করা হয়৷ তীব্র প্রতিবাদ জানান শিল্পীদের একাংশ৷ পরে ভুল স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছে ছবির নির্মাতারা৷
কবিগুরুর সৃষ্টি আর এখন স্বত্বের অধীন নয়৷ তা বলে তার যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে মাঝেমধ্যেই৷ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসংগীত বিষয়ক অধ্যাপক রুমা মিত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে কোনো গান তার গীতিকার বা সুরকারের সম্পদ৷ সৃষ্টিকে বিকৃত করার অধিকার কারো নেই৷ এটা অনধিকার চর্চা৷ স্রষ্টা কী ভেবে গানে ওই কথা লিখেছেন, সেটা যারা পরিবর্তন করছেন, তারা কি জানেন? পরিবর্তন করার ফলে কি খুব ভালো জিনিস তৈরি হলো? এ নিয়ে আরো আলোচনা হলে এমন বিকৃতি এড়ানো যায়৷''
রবীন্দ্র গানের বদল নিয়ে তেমন প্রতিবাদ অবশ্য দেখা যাচ্ছে না৷ আলোচনা পুরোটা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে৷ শুভেন্দু মাইতি বলেন, ‘‘বাঙালি এখন মেরুদণ্ডহীন জাতি৷ তাদের সব প্রতিবাদ ওই ফেসবুক আর সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ প্রতিবাদ করতে বাড়ির বাইরে বেরোতে হয় না, রাস্তায় নামতে হয় না৷''
জোড়াসাঁকোর অন্দরমহলে
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ হিসেবে ব্যবহৃত৷ এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে এই বাড়ির অবদান অনস্বীকার্য৷
ছবি: DW/P. Samanta
যাবার দিনের কথা
বারান্দায় কবির মূর্তির সামনে রয়েছে একটি ট্রেনের অনুকৃতি। শান্তিনিকেতন থেকে যে ট্রেনে কবিকে শেষবারের মতো কলকাতায় আনা হয়, এটি তারই অনুকৃতি। ভারতীয় রেল ঠাকুরবাড়িকে এই উপহার দিয়েছে।
ছবি: DW/P. Samanta
দিনুর ঘর
রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘সকল গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর অধিকাংশ রবি গানের স্বরলিপিকার ছিলেন। কবি নতুন কোনও গান রচনা করার পরপরই দিনেন্দ্রনাথ স্বেচ্ছায় বা কবির নির্দেশে সে গান কণ্ঠে তুলে নিতেন।
ছবি: DW/P. Samanta
নিরাকারের জন্য প্রার্থনাস্থল
বাড়ির পুরনো অংশের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে দালানটি। ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আগে এটি ছিল ঠাকুরদালান। তখন এখানে দুর্গাপুজো হত। ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষার পর এই দালান নিরাকার ব্রহ্মকে উৎসর্গ করা হয়।
ছবি: DW/P. Samanta
প্রাচীন ঠাকুরবাড়ি
১৭৮৪ সালে এই দালান অংশের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর বিপরীতে রয়েছে একটি স্থায়ী মঞ্চ। এখানেই বাল্মিকী প্রতিভা নাটক নিয়ে কবির আত্মপ্রকাশ।
ছবি: DW/P. Samanta
শয়নকক্ষ
কবি ও কবিপত্মী মৃণালিনী দেবীর ব্যবহৃত এই ঘরটিতে রয়েছে অনুচ্চ গদিযুক্ত লম্বা পালঙ্ক, বই রাখার তাক ও বেতের চেয়ার। রয়েছে বেশ কয়েকটি ছবি। তার মধ্যে একটি গুরুদেবের শান্তিনিকেতনে ক্লাস নেওয়ার ছবি।
ছবি: DW/P. Samanta
এসো বস আহারে
দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠেই প্রথমে পড়ে ঠাকুরবাড়ির ভোজন কক্ষ। টেবিল ও হেলান দেওয়া চেয়ারে প্রতিফলিত ঠাকুর পরিবারের আভিজাত্য।
ছবি: DW/P. Samanta
রাজা সাজার ঘর
কবির ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদের ঠাঁই ছিল এখানেই। বিচিত্রা ভবনে যতবার পারিবারিক নাটকের আয়োজন হয়েছে, কবি এই আয়নায় নাটকের সাজ করেছেন। ঘরটিতে সাজানো রয়েছে কবির নানা বয়সের ছবি।
ছবি: DW/P. Samanta
দক্ষিণের বারান্দা
জীবনস্মৃতিতে উল্লিখিত সেই দক্ষিণের বারান্দা এটাই। এখানে কবির জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। এই বারান্দা পেরিয়েই যে ঘর, সেখানে রয়েছে বংশ তালিকা। বারান্দার আবরণীর ওপাশে দেখা যাচ্ছে বাড়ির পুরোনো অংশ।
ছবি: DW/P. Samanta
সঙ্গিনীর শেষের দিনে
জীবনের শেষের দিকে কবি-পত্নী এই ঘরেই কাটিয়েছেন। এমনকী তাঁর শেষশয্যাও এখানেই পাতা হয়েছে। সারা রাত মৃত্যুশয্যায় স্ত্রীকে পাহারা দেওয়ার পর কবি চলে গিয়েছিলেন ছাদে। আজও কাঁচের আলমারিতে তাঁর ব্যবহৃত শাড়িটি পরম যত্নে রাখা।
ছবি: DW/P. Samanta
ওই দেখা যায় হেঁশেল
দোতলার রান্নাঘরটি বেশ ছিমছাম এবং আলোবাতাস পূর্ণ। এখানেই জাপানি অতিথিদের জন্য নাকি প্রথমবার চা খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। আমদানি করা হয়েছিল চায়ের সরঞ্জাম সমূহ। হেঁশেলের আলমারিতে রাখা আছে দেড়শো বছরের পুরনো চিনামাটির পাত্র ও পাথরের বাসনপত্র।
ছবি: DW/P. Samanta
ভোজের উৎসস্থল
ঠাকুরবাড়ির যাবতীয় সৃজনশীল রান্নার উৎসস্থল দোতলার এই মাটির উনুন। প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী বা মৃণালিনী দেবীর নানা রকম অভিনব আয়োজনের শরিক এই উনুনই। চা করার জন্য কয়লার চুল্লিরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
ছবি: DW/P. Samanta
যাত্রী নেই
কবিগুরুর ব্যবহৃত কালো রঙের এই গাড়ি আজ সম্পূর্ণ বিশ্রামে। অনেক আলোকবর্ষ দূরে চলে গিয়েছেন এই গাড়ির যাত্রী। তাঁর স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে জোড়াসাঁকোয়।
ছবি: DW/P. Samanta
ছবির ঘর
প্রবীণ কবির কাছে ক্যানভাসই হয়ে উঠেছিল কবিতা। কবিগুরুর নানা ছবির সম্ভার রয়েছে এই ঘরে।
ছবি: DW/P. Samanta
আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু
দেওয়ালে টাঙানো ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায় এ তাঁর রোগশয্যার চিহ্ন। এই প্রয়াণকক্ষেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এর পিছনের ঘরে পর্দা টেনে তাঁর অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা।