পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্ক তলানিতে
১৭ জুন ২০২৪সোমবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, রাজভবনের নিরাপত্তায় পুলিশের দরকার নেই। আনন্দবাজারের রিপোর্ট বলছে, রাজভবনের ভিতরে পুলিশ থাকলে তিনি নিরাপদ বোধ করছেন না।
এই বিষয়ে নবান্ন অবশ্য কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
রোববার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, ‘‘রাজ্যপাল আমায় বলেছেন, ভোট পরবর্তী সহিংসতায় আক্রান্তদের জন্য সব সময় রাজভবনের দরজা খোলা থাকবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর জন্য তা বন্ধ। তিনি আরো বলেছেন, ভোট পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।''
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের এক নারী কর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ সামনে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ''বাবারে, আমাকে আর রাজভবনে ডাকলে আমি যাচ্ছি না, রাজভবনের দরকার হলে রাস্তায় বসে কথা বলে আসব!" রাজ্যপালের নাম না করে মমতা বলেছিলেন, "আপনার পাশে বসাও পাপ!"
বিচারপতির প্রশ্ন
দিন কয়েক আগে নেতা শুভেন্দু অধিকারী ভোট পরবর্তী সহিংসতায় আক্রান্তদের নিয়ে রাজভবনে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। রাজভবনে যাওয়ার তিনটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তারপর শুভেন্দু হাইকোর্টে যান।
গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন করেছিলেন, ''রাজ্যপালকে কি গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। নাহলে অনুমতি সত্ত্বেও কেন তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না?''
বিচারপতি জানিয়ে দেন, রাজ্যপাল অনুমতি দিলে সহিংসতায় আক্রান্তদের নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী রাজভবনে তার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারবেন। পুলিশকে জানাতে হবে, কতজন যাচ্ছেন, কটা গাড়ি ঢুকবে। আক্রান্তদের শুভেন্দু বা তার তরফের কেউ চিনিয়ে দেবেন। কিন্তু তাদের নাম নথিভুক্ত করা যাবে না।
রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী বিরোধ
সিভি আনন্দ বোস দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পরেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার বিরোধ শুরু হয়। রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগ, সন্দেশখালির মেয়েদের জন্য রাজভবনে ঘর খুলে দেয়া, সহিংসতায় আক্রান্তদের জন্য ও ভোটে সহিংসতা হলে ওয়ার রম করে ফোন নম্বর দিয়ে সেখানে অভিযোগ করা নিয়ে দুই তরফের মধ্যে প্রচুর আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ হয়েছে।
রাজভবনের এক অস্থায়ী নারী কর্মীর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল ও মমতা সোচ্চার হন। এরপর রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টচার্যের রাজভবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।
অতীতের বিরোধ
পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু রাজ্যপালকে নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছিল। ১৯৬৭ সালে রাজ্যপাল ধরমবীরের সঙ্গে রাজ্য সরকার ও স্পিকারের বিরোধ তো প্রবাদপ্রতিম হয়ে গেছে।
তারপর শান্তিস্বরূপ ধাওয়ান সরকার গঠনের দাবি খারিজ করে দিয়ে সরকারকে বরখাস্ত করেন।
জ্যোতি বসু যখন মুখ্যমন্ত্রী তখন রাজ্যপাল এ পি শর্মা, টিভি রাজেশ্বরের সঙ্গে তার বিরোধ হয়। বু্দ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে নন্দীগ্রাম নিয়ে রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর বিরোধ হয়েছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেসরীনাথ ত্রিপাঠী, জগদীপ ধনখড় ও সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে।
মমতা-বোস সম্পর্ক খারাপ হওয়া
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''সংবিধানমতে এটা তো রাজ্যপালের সরকার। কিন্তু তিনি এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার থেকে মনে হতেই পারে, এই সরকারের উপর তার আস্থা নেই। আর মুখ্যমন্ত্রী ভোট পরবর্তী সহিংসা থামাতে পারছেন না, সেটাও সত্যি কথা।''
ঘটনা হলো, এর আগে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে, কেউ বলেননি, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর রাজভবনে ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছেন। কোনো মুখ্যমন্ত্রীও রাজভবনে ঢুকবেন না, এমন কথা জানাননি। এখন সেটাই হচ্ছে। রাজভবন থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়ার কথাও ওঠেনি।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই, আনন্দবাজার)