1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোকসভা ভোটে তুরুপের তাস তারকা প্রার্থী

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ এপ্রিল ২০১৯

চলচ্চিত্র তারকাদের নির্বাচনি রাজনীতির আঙ্গিনায় প্রথম নিয়ে আসে কংগ্রেস৷ পরবর্তীতে অন্য দলও সেই পথ অনুসরণ করে৷ পশ্চিমবঙ্গে এবারও লোকসভা নির্বাচনে নজর কাড়ছেন তারকা প্রার্থীরা৷

ছবি: DW/P. Samanta

উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারত, গত কয়েক দশকে চলচ্চিত্র জগতের অভিনেতা অভিনেত্রীদের রাজনীতিতে আগমন ক্রমশ বেড়েছে৷ অমিতাভ বচ্চন থেকে শত্রুঘ্ন সিনহা কিংবা জয়ললিতা থেকে হেমা মালিনী, জয়া প্রদা, হালের উর্মিলা মাতোণ্ডকর ভারতীয় রাজনীতির মূলধারায় যোগ দিয়েছেন৷ রাজনীতি-সচেতন বাংলায় এই প্রবণতা দীর্ঘদিন দেখা যায়নি৷ যদিও গত এক দশকে এই ছবিটা একেবারেই বদলে গিয়েছে, মূলত পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রসের হাত ধরে৷

‘কোনো মহিলাকেই ট্রোল করার বিরোধী আমি’

This browser does not support the audio element.

বিধানসভা থেকে লোকসভা নির্বাচন - বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলের হয়ে লড়েছেন চলচ্চিত্র জগতের তারকারা৷ কেউ আবার সাংসদ হিসেবে গেছেন রাজ্যসভায়৷ গত লোকসভা নির্বাচনে অভিনেতা দেব ওরফে দীপক অধিকারী, মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায়, শতাব্দী রায়, তাপস পাল ভোটে লড়ে সংসদে গিয়েছেন৷

অতীতের সব নজির ছাপিয়ে এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল টলিউডের এমন দুই নায়িকাকে প্রার্থী করেছে, যারা বর্তমানে কেরিয়ারের তুঙ্গে৷ মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জাহান - বাঙালি দর্শকের হার্টথ্রব এই দুই নায়িকা কখনোই রাজনীতির সঙ্গে আগে জড়িত ছিলেন না৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে যথেচ্ছ ট্রোলিংও হয়েছে৷

আবার গতবারের মতো এই নির্বাচনে ঘাটালের প্রার্থী দেব বা বীরভূমে শতাব্দীর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি৷ রোড শো, সভাতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় প্রমাণ করে যে চলচ্চিত্রের দৌলতে আসানসোলে মুনমুন সেন বা বিজেপির হুগলির প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের তারকাখ্যাতি স্তিমিত হয়নি৷

‘গতবারের তুলনায় দেব এখন অনেকটাই পরিপক্ক’

This browser does not support the audio element.

হুগলির প্রত্যন্ত গ্রামে লকেটের সফরসঙ্গী ছিল ডয়চে ভেলে৷ প্রার্থী কখনো হাঁটলেন, কখনো চাপলেন সাইকেলে, কখনো বসলেন মাটির দাওয়ায়, শুনলেন অভাব-অভিযোগের কথা৷ গ্রামে, গঞ্জে কর্মী সমর্থকদের বাড়িতেই তিনি সেরে নিচ্ছিলেন খাওয়া দাওয়া৷ প্রচারের ফাঁকে ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘মিমি-নুসরতের মুখটা তৃণমূল ব্যবহার করতে চাইছে৷ এটাকে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বলে না৷ ভোটে জেতার জন্য ওদের ব্যবহার করছে তৃণমূল৷ বিভিন্ন এলাকায় গোষ্ঠীকোন্দল চাপা দিতে এটা একটা কৌশল৷ ওঁরা ভোটে জিতলে সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করবেন তৃণমূলের নেতারাই৷'' কিন্তু লকেটও তো চলচ্চিত্র থেকেই রাজনীতিতে এসেছেন? এর উত্তরে এই বিজেপি প্রার্থী বলেন, ‘‘আমি চার বছর আগে এসেছি৷ অনেক লড়াই-আন্দোলনে অংশ নিয়েছি৷ হঠাৎ করে আজকে প্রার্থী হয়ে যাইনি৷'' তবে মিমি-নুসরতের ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল করার নিন্দা করেন লকেট৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘পেশার প্রয়োজনে অভিনেত্রীদের যে ছবি তোলা হয়, তাকে ব্যবহার করা উচিত নয়৷ কোনো মহিলাকেই ট্রোল করার বিরোধী আমি৷''

ডয়চে ভেলের পরের গন্তব্য পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর৷ টলিউডের অন্যতম সেরা নায়ক ‘পাগলু', ‘চ্যালেঞ্জ', ‘চ্যাম্প' খ্যাত দেবের প্রচার সভায় তখন বিপুল ভিড়৷ এই ভিড়ের নেপথ্যে যে তারকার আকর্ষণ, তা অস্বীকার করা যায় না৷ রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ নায়ক-নায়িকাদের হয়ে প্রচার সামলান তৃণমূলের নেতারাই৷

‘রাজনীতিতে যে কেউই আসতে পারে’

This browser does not support the audio element.

দেবের প্রচারের প্রধান কাণ্ডারি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘ওঁরা একেবারে অন্য জগত থেকে আসেন৷ ফলে রাজনীতি সম্পর্কে ধ্যানধারণা বিশেষ থাকে না৷ এই দিকটা আমাদের দেখতে হয়৷ প্রচারের সময় যাতে তাঁরা কথাবার্তা, চালচলনে রাজনীতিকদের মতো হয়ে ওঠেন, সেটা বোঝাতে হয়৷ প্রচারের দিকটাও আমাদেরই সামলাতে হয়৷''

তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাপতি অজিতের দাবি, ‘‘গতবারের তুলনায় দেব এখন অনেকটাই পরিপক্ক৷ আগের নির্বাচনি প্রচারে উনি রাজনৈতিক বক্তব্য রাখতে পারছিলেন না৷ এবার কিন্তু প্রতিটা জনসভাতেই রাজনীতিকদের মতো বক্তব্য রাখছেন৷''

তৃণমূল ও বিজেপি ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বামেরাও অভিনেতাদের প্রার্থী করেছিল৷ অনিল চট্টোপাধ্যায়, অনুপ কুমার, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় বামপ্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েছিলেন৷ সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ' ছবির অভিনেতা বিপ্লবের বক্তব্য, ‘‘রাজনীতিতে যে কেউই আসতে পারে৷ অভিনয় জগতের মানুষেরাও আসতে পারেন৷ তবে বিষয়টা বুঝে জেনেশুনে আসা ভালো৷ তা নাহলে সেটা দেশের কাজে আসে না৷''

‘তারকারা রাজনীতিতে একটা আবরণ হিসেবেই কাজ করেন’

This browser does not support the audio element.

অর্থাৎ মিমি-নুসরতদের যোগদানে রাজনীতির মান নেমে যাচ্ছে কিনা, এই প্রশ্ন উঠছে৷ অনেকের মতে, নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগে রাজনীতি যেভাবে কলুষিত হয়েছে, সেখানে তারকারা একটা অন্য মাত্রা যোগ করছে৷ এটা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ভাষায় ‘মধুর আবরণ'৷

উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আসলে নেতারাই সবটা পরিচালনা করেন৷ ভোটে জেতার জন্য এঁদের খ্যাতি কাজে লাগানো হয়৷ এতে কিছু পরিবর্তন হয় না৷ তারকারা রাজনীতিতে একটা আবরণ হিসেবেই কাজ করেন৷''

জনতারও কি একই অভিমত? অভিযোগ ওঠে, সন্ধ্যা রায়, মুনমুন সেন, তাপস পালেরা নির্বাচিত হয়েও সংসদে যান না, অথবা গেলেও প্রশ্ন করেন না বা বিতর্কে অংশ নেন না৷ সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই এসব নাকি জনগণ ভুলে যায় তারকার মোহে৷

অজিত মাইতির বক্তব্য, ‘‘দেব সংসদে গেল কিনা, সেটা নিয়ে ঘাটালের মানুষের মাথাব্যথা নেই৷ উনি যে সংসদে গিয়ে বাংলায় কথা বলেছেন বা এলাকার বন্যা প্রতিরোধের জন্য সওয়াল করেছেন, এটা জেনেই মানুষ খুশি৷ এর সঙ্গে তারকা খ্যাতি যোগ করলে সব অভিযোগ দূর হয়ে যায়৷'' 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ