পশ্চিমবঙ্গে অষ্টম ও শেষ পর্বের ভোটেও সহিংসতা। প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর। বোমাবাজি।
বিজ্ঞাপন
করোনা অতিমারির ভয়াবহ সংক্রমণের সময়েও পশ্চিমবঙ্গে ভোটের চরিত্রে কোনো বদল হলো না। শেষ পর্বের ভোটেও যথারীতি সহিংসতা হলো।
কলকাতায় এখন ভয়ঙ্করভাবে করোনা ছড়াচ্ছে। মধ্য কলকাতায় রোববার পর্যন্ত বাজারে জরুরি নয়, এমন সব দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজার সমিতি। তবে সেই কলকাতার ভোটে বোমাবাজি হলো। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ও রবীন্দ্র সরণিতে দফায় দফায় বোমাবাজি হয়েছে। বেলেঘাটায় বিজেপি এজেন্টকে মেরে বুথ থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠলো।
তবে বেশি গোলমাল হয়েছে বীরভূমে। ইলমবাজারে বিজেপি প্রার্থীকে লাঠি, বাঁশ নিয়ে তাড়া করা হয়। তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি প্রার্থীকে ঘিরে 'গো ব্যাক' স্লোগানও দেয়া হয়। ঘটনায় কয়েকজন কর্মীর মাথা ফেটেছে বলে বিজেপি-র দাবি। ধরমপুরেও বিজেপি প্রার্থীকে বাঁশ নিয়ে তাড়া করা হয় এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের লড়াই
পশ্চিমবঙ্গে ভোটদাতাদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম। একাধিক জেলায় অনেক আসনে ভোটের ফল প্রভাবিত করেন তারা।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
সব চেয়ে বেশি মুর্শিদাবাদে
পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই কমবেশি মুসলিম ভোটদাতা আছেন। তবে সব চেয়ে বেশি মুর্শিদাবাদে। সেখানে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম। তারপরেই রয়েছে মালদহ। ৫১ শতাংশ। উত্তর দিনাজপুরে ৪৯ শতাংশ। কলকাতায় ২০ শতাংশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩৫ শতাংশ, উত্তর ২৪ পরগনায় ২৬ শতাংশের মতো মুসলিম ভোটদাতা আছেন।
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri
মুসলিম ভোটের দাবিদার
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোটের প্রধান দাবিদার হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামেদের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত মোর্চা। গত নির্বাচনে মুসলিম ভোটের সিংহভাগ পেয়েছিলেন মমতাই। এবার বাম জোটও মুসলিম ভোট ফিরে পেতে চায়। ছবিতে জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন বাম জোটের শরিক দলের নেতা আব্বাস সিদ্দিকি।
ছবি: Naushad Bhai
আব্বাস সিদ্দিকি ভরসা
বামেদের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত মোর্চায় আছে কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির নবগঠিত ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি সম্প্রতি তার দল গঠন করেছেন। বাম ও কংগ্রেসের আশা, সিদ্দিকি মুসলিম ভোটের একটা অংশ জোটের দিকে টানতে পারবেন।
ছবি: Naushad Bhai
ওয়েইসি এখনো প্রার্থী দেননি
এমআইএম(মিম) নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করেছিলেন। তিনি অনেক আসনে আরজেডি-কংগ্রেসের মুসলিম ভোটে ভাগ বসাতে পেরেছিলেন। তাতে অবশ্য নীতীশ কুমার ও বিজেপি-র জয়ের পথ প্রশস্থ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে অনেকদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েও প্রথম দফার নির্বাচনে প্রার্থী দেননি তিনি।
ছবি: Imago/Hindustan Times/S. Mehta
ওয়েইসির দলে ক্ষোভ
পশ্চিমবঙ্গে মিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহিরুল হাসান পদত্যাগ করেছেন। ওয়েইসি প্রার্থী না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের ১৩টি আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা ছিল। সেটাও ঘোষণা করা হয়নি। ওয়েইসির সভাও বাতিল হয়েছে। ফলে ওয়েইসি কী করবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ছবি: Ians
তৃণমূলের আশা
তৃণমূল নেতাদের আশা, গতবারের মতো তারা এবারেও মুসলিম ভোটের সিংহভাগ পাবেন। তবে গতবারের তুলনায় মমতা এবার ১০ জন মুসলিম প্রার্থী কম দিয়েছেন। বিজেপি-র মোকাবিলায় তিনি হিন্দুত্বের তাসও খেলছেন। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গত দশ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিমদের জন্য অনেক কাজ করেছেন এবং করার চেষ্টা করেছেন।
ছবি: Indranil Aditya/NurPhoto/picture alliance
মুসলিম ভোট কোনদিকে
পশ্চিমবঙ্গে একসময় মুসলিম ভোট ভাগ হতো বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে। মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় তৃণমূল করার পর পরিস্থিতির বদলায়। বিজেপি-র দিকে মুসলিম ভোট বিশেষ যায় না। সে কথা মাথায় রাখলে মুসলিম ভোটদাতার কাছে বিকল্প তৃণমূল ও বাম জোট। দুই মুসলিম প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদ ও মালদহ হলো কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। তাদের জয় নির্ভর করছে, মুসলিমরা কতটা পাশে থাকবেন তার উপর। বাকি জেলাতে মুসলিম ভোট পাওয়ার ব্যাপারে তৃণমূল আশাবাদী।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
7 ছবি1 | 7
সিআরপিএফের আইজির পুজো
ভোট চলছে। তার মধ্যেই তারাপীঠে গিয়ে পুজো দিলেন সিআরপিএফ কর্তা। আনন্দবাজারের রিপোর্ট, তার সঙ্গে ছিলেন বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। তারা ঘটনার ভিডিও তুলেছেন। সেই ভিডিও নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রশ্ন হলো, ভোটের কাজে থাকা অবস্থায় তিনি কি এই ভাবে পুজো দিতে পারেন? রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন।
কেষ্টর উপর নজদরদারি
তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডল ওরফে কেষ্ট সারাদিনই নির্বাচন কমিশনের নজরবন্দি অবস্থায় ছিলেন। তিনি দুপুরে এক কর্মীর বাইকে চেপে ভোট দেন। তারপর তৃণমূল দলীয় অফিসে যান। তাকে ভোটপর্ব মেটা না পর্যন্ত বাইরে দেখা যায়নি।
ভোটের হার ভাল
করোনার বাড়বাড়ন্তেও বেলা তিনটে পর্যন্ত চার জেলায় ৩৫ আসনে ভোটের হার ছিল প্রায় ৫৮ শতাংশ। তবে জেলায় ভোট বেশি পড়েছে। কলকাতায় কম। চৌরঙ্গিতে গিয়ে ভোট দিয়েছেন রাজ্যপাল ধনখড়।