1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে ষষ্ঠ দফাতেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ মে ২০২৪

ভারতের অন্য রাজ্যে ভোট শান্তিতে হলো। শুধু পশ্চিমবঙ্গে দিনভর বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটলো।

নন্দীগ্রামে আধা সামরিক বাহিনীর টহল।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে অশান্তি হলো। ছবি: Subrata Goswami/DW

পশ্চিমবঙ্গে সকাল সাতটা থেকে আটটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তমলুক, কাঁথি, মেদিনীপুর, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। সবচেয়ে বেশি ঘটনার ঘনঘটা পূর্ব মেদিনীপুরে। তবে সহিংসতার সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে।

আক্রমণের মুখে প্রার্থী

ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু একটি বুথে যেতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েন। গড়বেতা বিধানসভার একটি গ্রামে তিনি যান। আগে থেকেই বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে তৃণমূল সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন। তারা 'বিজেপি দূর হটো' স্লোগান দিতে থাকেন।

টুডুর অভিযোগ, এলাকার বিজেপি ভোটারদের ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হঠাৎই ইটবৃষ্টি শুরু হয় প্রার্থী ও তার চারপাশে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে লক্ষ করে। ইটের ঘায়ে মাথা ফাটে এক জওয়ানের।

প্রার্থী গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একাধিক সংবাদমাধ্যমের গাড়ির কাচ ভাঙা হয়। আক্রমণের মুখে সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে চেপে এলাকা ছেড়ে পালাতে হয় জওয়ানদের।

প্রার্থীর অভিযোগ তিনি ঘটনাস্থলে আসার পর কুইক রেসপন্স টিমকে খবর দেয়া হলেও তারা এসে পৌঁছায়নি। এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় বাহিনী বড় সংখ্যায় এলাকায় যায়। গড়বেতার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা হয় প্রার্থী ও অন্যান্যদের।

খুন তৃণমূল নেতা

শুক্রবার বিকেলে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে খুন হয়েছেন এক তৃণমূল নেতা। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই এলাকায় কুপিয়ে খুন করা হয় শেখ মইবুলকে। বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের গন্ডগোল বাধে। উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। শুরু হয় সংঘর্ষ। গুরুতর জখম তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের নেতাকে খুন করেছে। যদিও বিজেপি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে এই খুন। এই ঘটনায় একজন মহিলাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এক মহিলা বিজেপি কর্মীর হত্যাকে কেন্দ্র করে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বৃহস্পতিবার থেকেই উত্তপ্ত। নিহতের ছেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হননি। এদিনও নন্দীগ্রামে একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি ও তৃণমূল। তবে এলাকার একাংশে সব বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল।

ময়নায় তৃণমূল ও বিজেপির সংঘর্ষে শাসক দলের এক কর্মী গুরুতর আহত হন। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বাঁশ দিয়ে মারধর করে অনন্ত বিজলীকে। অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাকে তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এমনই অশান্ত আবহের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে ষষ্ঠ দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

'শক্তির ফারাক না থাকলে সংঘর্ষ হবেই'

This browser does not support the audio element.

দিনভর তৎপর অভিজিৎ

বিচারপতির পদ ছেড়ে ভোটের ময়দানে নেমেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ এদিন বারবার তৃণমূল সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন।

তমলুকের ভবানীপুরে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ পেয়ে সেখানে যান বিজেপি প্রার্থী। তিনি আসার পরেই এলাকা ছেড়ে পালায় কয়েকজন দুষ্কৃতী। এরপরই অভিজিতের উদ্দেশে স্লোগান দিতে থাকে তৃণমূল সমর্থকরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে অভিজিৎকে ঘিরে।

পরে তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য এলাকায় আসেন। হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বুথে ঢুকে ভোট প্রভাবিত করছিলেন বলে অভিযোগ জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

নির্বাচন চলাকালীন ময়নার বিজেপি বিধায়ক, ক্রিকেট তারকা অশোক দিন্দার আপ্ত সহায়ক গৌতম গুরুর বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া কেন পুলিশ অভিযান চালাল, এই প্রশ্ন তুলে আপ্ত সহায়কের বাড়ির অদূরে ধর্না অবস্থান করেন অভিজিৎ।

উত্তপ্ত কেশপুর

নির্বাচনের সময় কেশপুর বরাবরই উত্তপ্ত থাকে। এদিন ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঘাটাল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় কেশপুরে গেলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ করে তৃণমূল। আটকে দেয়া হয় হিরণের গাড়ি। রাস্তার মধ্যে আগুন জ্বালানো হয়।

কুইক রেসপন্স টিম এলাকায় পৌঁছলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এলাকা ছেড়ে চলে আসেন বিজেপি প্রার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেব কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় অবাধেই ঘুরেছেন।

কাঁথির বিজেপি প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী একটি বুথে গেলে উত্তেজনা তৈরি হয়। তার উদ্দেশে গো ব্যাক স্লোগান দেয়া হয়। যদিও সেখানে ভোটগ্রহণে কোনো সমস্যা হয়নি।

মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালকে শুনতে হয় গো ব্যাক স্লোগান। পুলিশের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। প্রার্থীর অভিযোগ, বুথের বাইরে দাঁড়িয়ে রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে ভোট দেয়ার কথা বলছেন পুলিশকর্মীরা। 

এই লোকসভার দাঁতনে সংঘর্ষ হয় তৃণমূল ও বিজেপি মধ্যে। বিজেপির ক্যাম্প অফিস ভেঙে দেয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুরুলিয়ায় বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো গো ব্যাক স্লোগানের মুখে পড়েন। 

ভিডিও ঘিরে প্রশ্ন

দেবাংশু ভট্টাচার্য সকালে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে একটি বুথের ছবি দেখা গিয়েছে। ইভিএম ঘিরে কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে। এটি সামনে এনে বিজেপির বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তোলেন তৃণমূল প্রার্থী। তার দাবি, নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় রিগিং করছে বিজেপি।

যদিও পরে নির্বাচন কমিশন জানায়, ওই বুথে ভিভিপ্যাট নিয়ে সমস্যা হয়। সেটির পরীক্ষা চলছিল, সেই সময় সব দলের এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের বুথ এজেন্ট পরে সে কথা স্বীকার করেন। 

নন্দীগ্রামের একটি ভিডিও সামনে আনেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। দাবি করেন, নন্দীগ্রামে তৃণমূল সমর্থকদের ভোট দিতে যেতে নিষেধ করে এলাকায় মাইকিং করেছে বিজেপি। অভিযোগ অস্বীকার করেছে গেরুয়া শিবির।

বাহিনীর ভূমিকা

পঞ্চম দফা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে অশান্তি হলেও তা মাত্রা ছাড়ায়নি। ষষ্ঠ দফায় দেখা গেল সেই চেনা সহিংসতার ছবি। বিজেপি প্রার্থীরাই অভিযোগ করেছেন, ফোন করার পরও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কুইক রেসপন্স টিম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে পৌছয়নি। ফলে এদিন আক্রমণের মুখে পড়েন ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী।

অথচ এই দফায় সবচেয়ে বেশি আধা সেনা মোতায়ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ৯১৯ কোম্পানি বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছে আটটি কেন্দ্রের জন্য। কুইক রেসপন্স টিম ছিল ৮৯২টি। রাজ্যের সাবেক পুলিশকর্তা সলিল ভট্টাচার্য বলেন, "কুইক রেসপন্স টিম আদতে নো রেসপন্স টিম হয়ে উঠেছে। কমিশন যতই বাহিনী পাঠাক, তাকে মোতায়ন করা রাজ্য পুলিশের কাজ। বাহিনীকে যদি জনবহুল স্থানের পরিবর্তে পাঠানো হয় জনবিরল জায়গায়, তাহলে কী কাজে আসবে?"

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "ষষ্ঠ দফায় যে আটটি আসনে নির্বাচন হল, তার মধ্যে পাঁচটি আসনে ২০১৯ সালে বিজেপি জিতেছিল। এই সংখ্যা সাতে নিতে যেতে চায় বিজেপি। তৃণমূল চায় আসন ছিনিয়ে নিতে। যেখানে শক্তির ফারাক খুব বেশি নেই, সেখানে জমিতে সংঘর্ষ হবেই। নির্বাচন কমিশন অনেক কথা বললেও, সেভাবে কিছুই করে উঠতে পারেনি।"

ভারতের অন্যত্র ভোট

লোকসভা নির্বাচনে ষষ্ঠ দফায় পশ্চিমবঙ্গের আটটি নিয়ে ভারতের মোট ৫৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও সাতটি রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এই কেন্দ্র। গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির মনোহরলাল খট্টর, নবীন জিন্দল, ধর্মেন্দ্র প্রধান, কংগ্রেসের রাজ বব্বর, কানহাইয়া কুমার

পিডিপির মেহবুবা মুফতি প্রমুখ।

শনিবার ভোট দেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রমুখ। ভোট দিয়েছেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী দুই সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক কপিল দেব ও মহেন্দ্র সিং ধোনি।

দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটদানের হার ৭৮ শতাংশ। ঝাড়গ্রামে ৮০, ঘাটালে ৭৯, কাঁথি কেন্দ্রে ৭৬, তমলুকে ৮০, মেদিনীপুরে ৭৮, পুরুলিয়ায় ৭৪, বাঁকুড়ায় ৭৭ ও বিষ্ণুপুরে ৮১ শতাংশ ভোট পড়েছে।

বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে উত্তরপ্রদেশে, ৫২ শতাংশ। দিল্লিতে ৫৪, হরিয়ানায় ৫৫, বিহারে ৫২, ঝাড়খন্ডে ৬১, জম্মু কাশ্মীরে ৫১ শতাংশ ভোট পড়েছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ