পশ্চিমবঙ্গে সন্দেশখালি-ঝড় উঠবে, বললেন মোদী
৬ মার্চ ২০২৪আর কয়েকদিন পরেই লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হবে। তার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী একাধিকবার পশ্চিমবঙ্গে সভা করছেন। বুধবার তার জনসভা ছিল কলকাতার কাছে বারাসতে। এটা ছিল একটু অন্যরকম জনসভা। বিজেপি-র নারী মোর্চা এই জনসভার উদ্য়োক্তা। যারা এসেছেন তাদের সিংহভাগ নারী। ছিলেন সন্দেশখালি থেকে আসা নারীরা। পরে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর দুইপাশে নারী নেত্রীরা বসেছিলেন।
সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মুখে বারবার উঠে এলো নারীশক্তির কথা। উঠে এলো সন্দেশখালির কথা। উঠে এলো ভগিনী নিবেদিতা থেকে মাতঙ্গিনী হাজরার নাম। মাঝেমধ্যেই বাংলায় কথা বললেন। বাংলাতেই বললেন, ''মা-বোনেদের উপর অত্যাচার করে তৃণমূল ঘোর পাপ করেছে।''
মোদীর অভিযোগ, ''সন্দেশখালিতে যা হয়েছে, তাতে যে কোনো মানুষের মাথা লজ্জায় ঝুঁকে যাবে। শুধু তৃণমূলেরই কিছু যায় আসে না। তারা নারীর বিরুদ্ধে অপরাধীকে বাঁচাতে পুরো শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে।
প্রথমে হাইকোর্ট, পরে সুপ্রিম কোর্ট তাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। গরিব, আদিবাসী, দলিত নারীদের উপর তৃণমূল নেতা অত্যাচার করেছে।''
মোদীর দাবি, ''নারীদের উপর অত্যাচারে প্রতিবাদ শুধু সন্দেশখালিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। পুরো বাংলা জ্বলে উঠবে। তৃণমূলের মাফিয়া রাজকে শেষ করার জন্য নারীরা একজোট হবেন। সন্দেশখালি শিখিয়েছে, তৃণমূল কখনই মা বোনেদের সুরক্ষা দেবে না। আমরা নারী নিগ্রহকারীদের ফাঁসির ব্যবস্থা করেছি। আমরা মহিলা হেলপলাইন চালু করেছি। তৃণমূল তা পশ্চিমবঙ্গে রূপায়ণ করতে দিচ্ছে না। এমন নারীবিরোধী, সরকার নারীদের ভালো করতে পারে না।''
মোদী বলেন, ''আমি একটা কথা আপনাদের বলতে চাই। যা আগে বিলিনি। ছেলেবেলায় শুধু একটা ঝোলা নিয়ে পরিবার ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলাম। দেশের কোণে কোণে গেছি। পকেটে এক পয়সাও থাকত না। আমি ওখানকার ভাষা জানতাম না। তাও দেখতাম, কোনো না কোনো পরিবার, কোনো না কোনো বাবা, বোন আমায় জিজ্ঞাসা করতেন, ভাই কিছু খেয়েছ তো। একদিনও ভুখা ছিলাম না। এটাই আমার পরিবার।'' এরপর মোদী বলেন, আমরা, সামনে থেকে জবাব আসে, মোদীর পরিবার।
মোদীর বক্তব্য, ''আজ আমি ঋণ শোধ করতে চাইছি। কোটি কোটি মা-বোনের ঋণ শোধ করছি। বাংলা নারীশক্তির প্রেরণাকেন্দ্র। এখানে নারীশক্তি দেশকে দিশা দিয়েছে। এই মাটি মা সারদা, রানি রাসমনী, ভগিনী নিবেদিতা, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রতিলতা, বীনা দাসের মতো অসংখ্য শক্তিস্বরূপাকে দেশকে দিয়েছে। কিন্তু এই মাটিতেই তৃণমূলের রাজত্বে নারীশক্তির উপর অত্যাচার হয়েছে।''
মোদী বলেছেন, ''নমো ড্রোন দিদি যোজনা নেয়া হয়েছে। মেয়েদের ড্রোন পাইলটের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। বিজেপি সরকার ড্রোন দেবে, যা ব্যবহার করে চাষের ক্ষেতে লাভ হবে। বোনেদের অতিরিক্ত রোজগার হবে। তার দাবি, পশ্চিমবঙ্গে বেটি পড়াও বেটি বাঁচাও প্রকল্প তৃণমূল রূপায়ণ করেনি। উজ্জ্বলা যোজনাও রূপায়ণ করেনি।''
তৃণমূল যা বলছে
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ও মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনটি প্রশ্ন আছে। প্রতি ঘণ্টায় সারা দেশে কী করে নারীদের বিরুদ্ধে ৫১টি অপরাধ সংগঠিত হয়? কেন লোকসভায় বিজেপি-র নারী সাংসদসংখ্যা মাত্র ১৩ শতাংশ, কেন তাদের প্রথম তালিকায় মাত্র ১৪ শতাংশ নারী প্রার্থীর নাম আছে? যে বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ছিল, তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি?''
তৃণমূলের সাবেক সাংসদ শান্তনু সেন বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রীর মণিপুরের কথা মনে পড়লো না। সেখানে নারীদের বিবস্ত্র করে প্যারেড করানো হয়েছিল। তার হাথরাসের কথাও মনে পড়লো না। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো বলেছে, উত্তরপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি নারীনিগ্রহ করা হয়, সেটাও তিনি ভুলে গেলেন।''
সন্দেশখালির নারীদের সঙ্গে কথা
ভাষণপর্ব শেষ হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী সন্দেশখালির পাঁচজন নারীর সঙ্গে কথা বলেন। মোদী সাত-আট মিনিট ধরে তাদের কথা শোনেন।
পরে এক নারী জানান, ''আমরা প্রধানমন্ত্রীকে প্রণাম করি। তিনি তখন বলেন, আপনারাই মা দুর্গা। আপনাদের আমার প্রণাম করা উচিত।'' তিনি বলেন, ''আর কোনো অত্যাচার তিনি বরদাস্ত করবেন না। ভোটের সময় প্রচুর পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে।''
আরেক নারী জানিয়েছেন, তাদের দলের অফিসে যেতে বলা হত, সেখানে তাদের উপর অত্যাচার করা হত, সেটাও তারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন।
সন্দেশখালির নারীরা অভিযোগ করেছেন, তারা একটি বাসে করে আসছিলেন। মাঝরাস্তায় বাস আটকে দেয়া হয়। তারা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। প্রশ্ন করেন, কেন তাদের যেতে দেয়া হবে না। পরে বাস ছাড়ে। কিন্তু তারা যখন সভাস্থলে পৌঁছান, ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন।
গঙ্গার নিচ দিয়ে মোট্রো
ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার নদীর নিচ দিয়ে মেট্রো চলাচল করবে। বুধবার কলকাতায় তার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে বয়ে চলা গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো যাতায়াত করবে। মেট্রোর ও কলকাতার মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হলো।
এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশন থেকে গঙ্গার নীচের মেট্রো উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পাশাপাশি কলকাতায় আরও দু'টি মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধনও করলেন তিনি। নিউ গড়িয়া থেকে রুবি পর্যন্ত এবং জোকা-তারাতলা মেট্রোপথের মাঝেরহাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন করা হল। একই সঙ্গে পুণে, কোচি এবং আগ্রা মেট্রো প্রকল্প এবং নমো ভারতের সঙ্গে জড়িত একাধিক প্রকল্প উদ্বোধন করলেন তিনি।
এরপর তিনি স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে মেট্রো সফর করেন। যাত্রাপথে স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে গল্প করেন তিনি। মেট্রো কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই)