ফের সরকারি হাসপাতালে ধর্ষণের অভিযোগ। এবার নিশানায় হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে নিরাপত্তা সংস্থার এক আধিকারিককে।
হাসপাতালের আউটডোর নির্দিষ্ট সময়ের পর বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মহিলা নিরাপত্তা কর্মীরা।ছবি: Barun Ghosh
বিজ্ঞাপন
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। অভিযোগ তুলেছেন খোদ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মী।
নিশানায় নারী নিরাপত্তাকর্মী
সরকারি হাসপাতালের আউটডোর নির্দিষ্ট সময়ের পর বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে হাসপাতালের ভিতরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মহিলা নিরাপত্তা কর্মীরা। এমনই অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিযুক্ত সংস্থার ফেসিলিটি ম্যানেজারের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বেসরকারি এজেন্সির হাতে। পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে একটি বেসরকারি সংস্থা নিরাপত্তার দিকটি দেখাশোনা করে। তাদের মাধ্যমে নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়োগ করা হয়।
সূত্রের খবর, এই হাসপাতালে পাঁচ বছর ধরে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছেন এক নারী। তার অভিযোগ, নিরাপত্তা সংস্থার ফেসিলিটি ম্যানেজার জাহির আব্বাস খানের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত স্থানীয় পীতপুর গ্রামের বাসিন্দা। নির্যাতিতার দাবি, জাহির বিভিন্ন সময় তাকে হাসপাতালে মধ্যেই যৌন নিগ্রহ করেছেন। এসব কথা কাউকে বলা হলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হতো বলে অভিযোগ। তার দাবি, অন্য নারী নিরাপত্তা কর্মীদেরও একইভাবে নিগ্রহ করেছেন জাহির।
দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটলেও অভিযোগ করতে সাহস পাননি নির্যাতিতা। সংবাদ মাধ্যমের কাছে তার বক্তব্য, "রবিবার দুপুরে যখন আমি ডিউটি করছিলাম, সেই সময়ে জাহির আমাকে ডাকে। জোর করে বহির্বিভাগের একটি ঘরে নিয়ে যায় ও ধর্ষণ করে। মাঝে মাঝে এ ধরনের খারাপ আচরণ আমার সঙ্গে করেছে। ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারিনি। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই ভয় কাটিয়ে অভিযোগ করেছি।"
নির্যাতিতা সোমবার ভয় ভেঙে যান পাঁশকুড়া থানায়। অভিযোগ জানান জাহিরের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ফেসিলিটি ম্যানেজারকে।
হাসপাতালে অন্যান্য নারী কর্মীদের সঙ্গে জাহির এ ধরনের আচরণ করেছেন বলে দাবি নির্যাতিতার। সংবাদ মাধ্যমের কাছে হাসপাতালের এক কর্মী সংবাদমাধ্যমে বলেন, "জাহির নিরাপত্তারক্ষীদের কাজের তদারকি করেন, সেই সূত্রে সকলের উপরে প্রভাব খাটান। সামান্য সাত-আট হাজার টাকার মাসিক বেতনে আমরা কাজ করি। তাই অভিযোগ জানাতে চিন্তা হতো, কাজটা না চলে যায়। জাহিরের প্রস্তাবে কেউ রাজি না হলে পরিবারের সদস্যদের খুনের হুমকিও দেয়া হয়।"
আইন কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণ : যা হয়েছে, যা হচ্ছে
আরজি করের ঘটনা দেখিয়েছিল, কলকাতার হাসপাতালে নারী সুরক্ষিত নয়। ল কলেজের ঘটনা দেখালো, পথে-ঘাটে তো বটেই, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নারীরা অসুরক্ষিত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আবার ধর্ষণ
কলকাতা আছে কলকাতাতেই। আরজি কর নিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, অসংখ্য প্রতিশ্রুতি, সমালোচনার পরও কলকাতায় ধর্ষণ কমেনি। বরং সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ছাত্রীকে প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমানে কলেজের অস্থায়ী কর্মী ও তার দুই সঙ্গীর ধর্ষণ দেখিয়ে দিলো, কলকাতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নারীরা সুরক্ষিত নয়। একসময় নারী-সুরক্ষা নিয়ে গর্ব করা এই শহরের পরিস্থিতি এখন কতটা খারাপ, তা একের পর এক ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফর্ম ভরতে এসে
ওই ছাত্রী কলেজে ফর্ম ভরতে এসেছিলেন। অভিযোগ, তারপর তাকে অপেক্ষা করতে বলে ধর্ষক ও তার সঙ্গীরা। অনেকক্ষণ তাকে ইউনিয়ন রুমের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তারপর সন্ধ্যায় তাকে জোর করে গার্ডের ঘরে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। তারপর চলে অকথ্য নির্যাতন। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ভিতরে ধর্ষণ করা হয়। তার ভিডিও তুলে তাকে ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ। মেয়েটি পরে তার বাড়িতে ফোন করলে তারা পুলিশে অভিযোগ করেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের এফআইআর
কসবা থানার পুলিশের কাছে ধর্ষিতা তিনজন অভিযুক্তর নাম নেন। তবে পুলিশ তিন অভিযুক্তের নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে 'এম', 'জি 'ও 'পি'-র বিরুদ্ধে এফআইআর করে। পরে পুলিশ আদালতে জানায় ও আদালতের নথিতে আছে, 'এম' হলো মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, 'পি' হলো প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও 'জি' হলো জাইব আহমেদ। ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। তিন অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন এফআইআরে নাম লেখা হলো না?
পুলিশের এফআইআর-এ কেন তিন অভিযুক্তের পুরো নাম লেখা হলো না? কেন তাদের নামের অদ্যাক্ষর লেখা হলো? তাহলে কি কিছু লুকাতে চাওয়া হচ্ছে,এ ই প্রশ্ন ওঠে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রূপেশ কুমার বলেছেন, ''মেয়েটি পুরো নামই নিয়েছিল। এফআইআর লেখার সময় তা যাচাই করার পর্যায়ে ছিল। অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে পুরো নাম লেখা যায় না। তাই এই সতর্কতা।'' আইনজীবীরা বলছেন, তারা এই ধরনের এফআইআর দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মূল অভিযুক্তর তৃণমূল যোগ
মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ দাস তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত। তৃণমূলের ছোট-বড় নেতার সঙ্গে সে নিয়মিত ছবি পোস্ট করত সামাজিক মাধ্যমে। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে তার খুব প্রতাপ ছিল বলে অভিযোগ। সাবেক ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও তার অবাধ গতিবিধি ছিল। তাকে অস্থায়ী কর্মী হিসাবেও নিয়োগ করা হয়। কলেজে তার নামে এখনো পোস্টার আছে। কলেজে সে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে পরিচিত। ঘটনার পর তাকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ছাত্র থাকার সময়
মনোজিৎ ছাত্র থাকা অবস্থায় কলেজের প্রিন্সিপালকে সারারাত ঘেরাও করে রাখে। সাবেক প্রিন্সিপাল দেবাশিস চট্টোপাধ্য়ায়ের স্ত্রী নবনীতা টিভি৯কে বলেছেন, ''আমার স্বামী বারবার চেষ্টা করেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। মনোজিৎ দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রেখেছিল। রেজিস্টারকে বলেও লাভ হয়নি। পুলিশে বারবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।'' প্রশ্ন উঠেছে, কার আশকারায় মনোজিতের এই বাড়বাড়ন্ত?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একের পর এক প্রতিবাদ
এই ঘটনার পর একের পর এক ছাত্র সংগঠন কসবা থানার সামনে প্রতিবাদ দেখায়। কংগ্রেস, এসএফআই, ডিএসও, ডিওয়াইএফআই-এর তরফে প্রতিবাদ দেখানো হয়.। প্রশ্ন করা হয়, কেন ছাত্রীকে কলেজের ভিতরে ধর্ষণ করা হবে? কী করে এই সাহস পায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা? কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ কিছু বলে না বলেই কি এরকম ঘটনা বারবার ঘটছে।? পুলিশ বলপ্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হাতাহাতিও হয়
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। আরজি করের সময়ও একই ধরনের ছবি দেখা গিয়েছিল। এই ধরনের ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু প্রতিবাদ দেখাতে গেলেই পুলিশের লাঠি জোটে বিক্ষোভকারীদের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মশাল মিছিল
রোববার রাতে কলকাতায় মশাল মিছিলও বের হয়। নারীদের সুরক্ষার দাবি, দোষীাদের শাস্তির দাবি নিয়ে সোচ্চার হন বিক্ষোভকারীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অভয়া মঞ্চের মিছিল
রাস্তায় নেমেছিল অভয়া মঞ্চও। আরজি করের ঘটনার পর কলকাতার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখিয়েছিলেন। তাদের সেই দাবিপূরণ হয়নি। কিন্তু সেই জোরদার আন্দোলন এখন স্তিমিত। ল কলেজের ধর্ষণের পর সেই অভয়া মঞ্চও রাস্তায় নেমেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মামলা দায়েরের অনুমতি সুপ্রিম কোর্টে
সুপ্রিম কোর্টে সত্যম সিং নামে এক আইনজীবী এই ধর্ষণের ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা দায়ের করার অনুমতি চেয়েছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। তিনি মামলা দায়ের করতে পারবেন। তারপর সর্বোচ্চ আদালত ঠিক করবে মামলা খারিজ করা হবে নাকি গ্রহণ করা হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মদন-বচন
তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেছেন, ''ওই মেয়েটি যদি না যেত, তাহলে তো এই ঘটনা ঘটতো না। যাওয়ার সময় মেয়েটি কাউকে বলে গেলে, দুইজন বান্ধবী নিয়ে গেলে এরকম হতো না। আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, যে এই খারাপ কাজ করেছে, সে পরিস্থিতির সুয়োগ নিয়েছে।'' এরপর তৃণমূলের তরফ থেকে মদন মিত্রকে শো কজ ক,রা হয়েছে। বলা হয়েছে, তার মন্তব্য, অপ্রয়োজনীয় ও সংবেদনহীন। তিন দিনের মধ্যে জানাতে হবে, তিনি কেন এই মন্তব্য করেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কল্যাণ বন্দ্যোপাায়ের মন্তব্য
ডানকুনিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "লজ্জা ! এতদিন ধরে দল করছি, এখন এসব জিনিস দেখছি । কেন এই ধরনের বিকৃত মনস্ক মানুষ আমাদের দলে থাকবে? তাদেরকে চিহ্নিত করে বের করে দেওয়া উচিত। কোনো ভুসিমাল দলের মধ্যে রাখবেন না। এমন লোককে বের করে দিলে মানুষ খুশি হবে। কী এমন নেতা সে। পাশ করে চলে গিয়েছে, ওকালতি করে ৷ আবার একটা অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজও করে ? কী করে হয়?" তৃণমূল বলেছে, এটা কল্যাণের নিজস্ব মন্তব্য।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অগ্নিমিত্রা যা বলেছেন
বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন, ''এই মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার দরকার নেই। কারণ, আরজি করের তদন্ত নিয়ে সিবিআই কিছুই করেনি। পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলই তদন্ত করুক।'' এই ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত কলকাতা পুলিশের নয় সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল করছে। বিজেপি বলছে, এটা অগ্নিমিত্রার ব্যক্তিগত মন্তব্য, দলের নয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হাইকোর্টেও মামলা
কলকাতা হাইকোর্টেও কয়েকটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার বিচার দ্রুত করার আবেদনও জানানো হয়েছে। বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মামলাগুলি নিয়ে বিরুদ্ধ পক্ষকে নোটিশ দিতে বলেছেন। দিন কয়েকের মধ্যে শুনানি হতে পারে।
ছবি: DW/P. Tewari
এক ছাত্রীর ভাবনা
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সায়ন্তনী কলাপাত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমাদের দাবি, সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে, বহিরাগতদের ঢুকতে দেয়া যাবে না। ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত ক্লাস করতে হবে।'' তবে রাজ্যের সব কলেজের দাবি এটাই, ছাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। একের পর এক ধর্ষণ, সহিংসতার কাণ্ড হবে, তারপর রাজনীতির খেলায় মূল প্রশ্নটা পিছনে চলে যাবে, এটা হয় না।
পাঁশকুড়া ব্লকের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক কৌশিক ঢল সংবাদমাধ্যমে বলেন, "হাসপাতালে নিরাপত্তা যিনি দেখবেন, তিনি যদি ধর্ষণের শিকার হন, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আউটডোর বন্ধ থাকায় রবিবার ফাঁকা ছিল হাসপাতাল। সেই সুযোগে অভিযুক্ত এ কাজ করছে। আমার কাছে এই অভিযোগ আগে কেউ জানাননি।"
তমলুকের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায় সংবাদমাধ্যমে বলেন, "আগে এই সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। পুলিশকে বলা হয়েছে, তদন্ত ঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে। যে সংস্থার হয়ে অভিযুক্ত কাজ করেন, তাদের শোকজ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।"
এই ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। তৃণমূলের চাপে দীর্ঘদিন ধরে এই ঘটনা সামনে আসেনি বলে বিজেপির অভিযোগ। তারা জাহিরকে শাসক দলের নেতা হিসেবে দাবি করেছে। বিজেপি সোমবার পাঁশকুড়া থানার সামনে অবস্থান করে। তৃণমূলের বক্তব্য, জাহির দলের কোনো পদে নেই। এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার প্রশ্নও নেই। তাই অভিযোগ পেয়েই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আফজাল আবরার সংবাদমাধ্যমে বলেন হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
বিজ্ঞাপন
হাসপাতালে নিরাপত্তা
আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনে সাজা পেয়েছে এক সিভিক ভলান্টিয়ার। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মীর হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন চিকিৎসক। এ নিয়ে আন্দোলন এখনো চলেছে। এ বার খোদ হাসপাতালে নিরাপত্তা কর্মী নিগ্রহের মুখে পড়েছেন, যার অন্যদের সুরক্ষিত রাখার কথা।
পাঁশকুড়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন কঠোর সমালোচনা করেছেন।
নার্সেস ইউনিটির সম্পাদক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় ডিডাবলিউকে বলেন, "পাঁশকুড়ার ঘটনার কথা শুনে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছি। প্রশাসন যতদিন না কঠোর হবে, ততদিন এ ধরনের ঘটনা ঘটবে। যদি আগেই এই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতো, তাহলে কসবা ল কলেজের ঘটনা ঘটত না, পাঁশকুড়ার ঘটনাও ঘটত না। আরজি করের আন্দোলনের পরেও কিছু মানুষ এমন অপরাধ করার সাহস দেখাচ্ছে। প্রশাসন যদি কঠোর হয় তাহলে তারা সাহস পাবে না। আমরা যখন আন্দোলন করি, সবসময় বলি, শুধু নারী চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী নন, রোগী ও নিরাপত্তা কর্মীদেরও সুরক্ষা দিতে হবে।"
এখন সময় বদলেছে, মেয়েরা আর চুপ করে থাকবে না: শাশ্বতী ঘোষ
This browser does not support the audio element.
আর জি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাতো সংবাদমাধ্যমে বলেন, "আমাদের আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে আমরা হাসপাতালে সুরক্ষার কথা বলেছি। সেটার যে কত বেআব্রু অবস্থা, তা পাঁশকুড়ার ঘটনা দেখিয়ে দিল। এ ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি, তার সঙ্গে রাষ্ট্র তথা প্রশাসনকে কঠোর মনোভাব নিতে হবে।"
নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির উপরে জোর দেয়া হচ্ছে। নারী আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ ডিডাবলিউকে বলেন, "হাসপাতালে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই ওঠে চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ানের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ে রোগিনীকে নিগ্রহ করার অভিযোগ। চিকিৎসাকেন্দ্রকে আমরা ভাবি নিরাপদ জায়গা। কিন্তু সেটাকে আমরা নিরাপদ জায়গায় হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। সিসিটিভি ব্যবহার করে কতটাই বা সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়! এছাড়া প্রত্যেকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথাও মাথায় রাখতে হয়। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে কড়া হতে হবে, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন সময় বদলেছে, মেয়েরা আর চুপ করে থাকবে না। তারা এগিয়ে এসে অভিযোগ জানাবে।"
প্রশাসনের দায়িত্বটা বড়, এই মত অনেকেরই। সিনিয়র চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় ডিডাবলিউকে বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স তৈরি করে হাসপাতালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলেছিল। সেই লক্ষ্যে কাজ বিশেষ এগোয়নি। তাই হাসপাতালে সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক তৎপরতা খুবই জরুরি। সেটা না হলে নির্দেশ কার্যকর হবে না।"
হাসপাতালে অন্যান্য নারী কর্মীদের সঙ্গে জাহির এ ধরনের আচরণ করেছেন বলে দাবি নির্যাতিতার। ছবি: Barun Ghosh