1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গ কি পরিচ্ছন্ন হবে?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩ জানুয়ারি ২০১৯

দক্ষিণেশ্বরে রানি রাসমনি স্কাই ওয়াক উদ্বোধনের দুদিনের মধ্যেই এটি পান গুটখার পিকে ভরে গিয়েছিল৷ সারা রাজ্যে এমন নজির অসংখ্য৷ এসবই ভাবিয়ে তুলছে প্রশাসন, রেল এবং স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকেও৷ চলছে নানা পরিকল্পনা৷

ছবি: DW/P. Samanta

পানের পিক ফেলে অমিতাভ বচ্চনের লিপে হিট হয়েছিল ‘খাইকে পান বানারসওয়ালা'৷ পানের পিকের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে এবার হিট এমনই ফিল্মি সংলাপ৷ হাওড়া স্টেশনের চতুর্দিকে ফিল্মি সংলাপে স্টেশন চত্বর পরিষ্কার রাখার কথা বলা হয়েছে৷ সে-ও অনেকদিন হলো৷ ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট'রূপী মিঠুন চক্রবর্তী পিস্তল হাতে বলছেন, ‘‘ময়লা ফেলব সেখানে, ডাস্টবিন যেখানে৷'' কিংবা উত্তম-সুচিত্রার সবার উপরে সিনেমার পোস্টারও ব্যবহার হয়েছে স্বচ্ছতার লক্ষ্যে৷ কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণ কতদূর?   

সারা ভারত ইদানীং অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে৷ পশ্চিমবঙ্গও বাদ নেই৷ কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে অপরিষ্কার ২৫টি শহরের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের ১৯টি শহরের নাম রয়েছে৷ সম্প্রতি দক্ষিণেশ্বরে রানি রাসমণির নামাঙ্কিত স্কাইওয়াক উদ্বোধনের দু'দিনের মধ্যেই পান-গুটখার পিকে ভর্তি হয়েছিল৷ দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, যারা নোংরা করবে, তাদের জরিমানা তো হবেই৷ পাশাপাশি ওই নোংরা জায়গা তাদেরই পরিষ্কার করতে হবে৷ শুধু মন্দিরে এমন হুঁশিয়ারি নয়৷ রেল কর্তৃপক্ষও পানের পিক ফেলার কারণে জরিমানা চালু করেছে৷ রেল স্টেশনের মতো খোলা জায়গায় পান বা গুটখার পিক ফেললেই ১০০ টাকা জরিমানা নেওয়া হচ্ছে৷ এই অপরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটি নিয়ে বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রচার চালানো হবে৷ পাশাপাশি নোংরা করলেও নেওয়া হবে কড়া ব্যবস্থা৷

সরকারের তরফে এটাকে ‘স্বচ্ছ বাংলা কর্মসূচি' বলা হচ্ছে না৷ চারপাশ পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ বলা হচ্ছে৷ অনেকের মতে, ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করে মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছেন অনেকটা মোদীর স্বচ্ছ ভারত প্রচারের মতো করে

পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে প্রশাসনকে অনেক সময়ই নানা পন্থা নিতে হয়৷ কখনো ‘গান্ধিগিরি' করে যত্রতত্র প্রস্রাবকারীকে ফুল দেওয়া হয়েছে, কখনো লঘু শাস্তি৷ কিন্তু কোনোভাবেই পূর্ণ সাফল্য আসেনি৷ প্রশ্ন উঠছে, জরিমানা কিংবা ‘মগজ ধোলাই' করেই কি সাধারণ মানুষের সতেচনতা বাড়বে?

হাওড়া স্টেশনের নিত্যযাত্রী প্রকাশ ভুঁইয়া বললেন, ‘‘রোজ লাখো লাখো মানুষের যাতায়াতের পথে কফ, থুতু, পানের পিক ফেললে তো অসুবিধা সকলেরই৷ জরিমানা বাড়িয়ে দেওয়া হলে সব পাল্টাবে৷ স্কাইওয়াকে যা ঘটল, তাতে জরিমানা করাই উচিত৷ এখন ৫০০০ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে৷ আর পিকের দৌরাত্ম্য পাবেন না৷''

জরিমানা ছাড়াও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে অন্যরকম উপায়ও ভাবা হয়েছে বৈকি! পরিচ্ছন্নতার সমীক্ষায় দেশের শহরগুলির মধ্যে শীর্ষ স্থান পেয়েছে ইন্দোর৷ কিন্তু সে শহরও পান গুটখার পিক আটকাতে পারছে না৷ অভিনব উপায় নিয়েছে এই শহরের পুরসভা৷ পানের পিক আর থুতুতে শহরকে অপরিচ্ছন্ন করলে এবার সংশ্লিষ্টের ছবি ছাপানো হবে সংবাদপত্রে, নাম-পরিচয় ঘোষিত হবে রেডিওতে৷

হাসি দাশগুপ্ত

This browser does not support the audio element.

আবার চোখে পড়বে হাসপাতালের দেওয়ালে কোথাও ঠাকুর-দেবতার ছবি, তো কোথাও মন্দির, মসজিদের ছবি৷ আসলে হাসপাতালের দেওয়াল পান গুটখার পিক থেকে বাঁচাতে এবার এহেন পন্থা নিয়েছে কালনা মহকুমা হাসপাতাল৷ আশা করা হচ্ছে, দেওয়ালে দেবদেবী বা ধর্মীয় স্থানের ছবি দেখে অন্তত শুভবুদ্ধি জাগবে৷ হাসপাতালের দেয়াল গুটখা বা পানের পিক থেকে বাঁচবে৷ হাসপাতালে সচেতনতার পোস্টার বা সিসিটিভি ও নিরাপত্তারক্ষীদের নজরদারি সত্বেও কাজ কিছু হয়নি৷ কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বড়াইয়ের বক্তব্য, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও মানুষের অভ্যেস পাল্টানো যায়নি৷ ডাস্টবিন বসানো হলেও অনেকেই তা ব্যবহার করে না৷ মানুষ ধর্ম মেনে চলেন বলে দেওয়ালে ধর্মীয় ছবি দেওয়া হচ্ছে, তাতে যদি পিক ফেলা বন্ধ হয়৷ জরিমানার কথা এখনো ভাবা হয়নি৷''   

জরিমানার প্রসঙ্গে সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. হাসি দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘দেয়ালে পানের পিক ফেলবেন না, প্রস্রাব করিবেন না লেখা সত্বেও দেখি অনেক হাসপাতালে ওই একই কাজ করা হচ্ছে৷ অনেকে শৌচালয় থাকা সত্ত্বেও সেটা ব্যবহার করে না৷ তখন বকাবকি করতে হয়৷ জরিমানার কথা লেখা আছে দেয়ালে৷ তবে তার জন্য যথেষ্ট লোকবল দরকার৷ আর জরিমানা যিনি দেবেন, তিনি পয়সা না থাকার অজুহাতে জরিমানা দেন না৷''   

অজন্তা পাল

This browser does not support the audio element.

স্বাস্থ্য ও অপরিচ্ছন্নতার সুন্দর সহাবস্থান শহরের বড় বড় সরকারি হাসপাতালগুলিতে৷ পানের পিকে ভরে উঠেছে হাসপাতালের দেওয়াল বা চিকিৎসকদের বসার জায়গার আশপাশ৷ নীলরতন সরকার হাসপাতালের সহকারী সুপার অজন্তা পাল জানিয়েছেন, গত ৩-৪ মাস থেকে সব হাসপাতাল সাফাইয়ের মহা কর্মযজ্ঞ চলছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতাল মানে কিছুদিন আগেও অপরিচ্ছন্ন ভাবা হতো৷ কিন্তু আমরা এখন পরিষ্কার করার জন্য প্রতিদিনই টিম করে উদ্যোগ নিচ্ছি৷ কলকাতা পুরসভার লোকদের সঙ্গে নিয়ে চলছে কাজ৷ ৫০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে৷ সৌন্দর্যায়নও হচ্ছে হাসপাতালের বাইরে৷ বেশ কিছু লোকের স্বভাব শুধরে গেছে৷ অপরিষ্কার করলে বকাঝকাও করা হচ্ছে৷ এখন প্লাস্টিক ব্যবহার, নোংরা ফেললে ২০০ টাকা জরিমানার কথা বলছি৷ তবে কাজ না হলে পরবর্তীতে জরিমানা নিয়ে ভাববো৷''

অতি সম্প্রতি রেলের অধীন বিআর সিং হাসপাতালে পানের পিকে খুবই খারাপ অবস্থা দেখা গেছে৷ হাসপাতালের গ্রিল, দেয়াল সবখানেই পিক-চিত্র বর্তমান৷ রোগীসহ চিকিৎসকেরা এতে বিরক্ত৷ রেল জানিয়েছে, স্বচ্ছতার অভিযান চলছে সর্বতোভাবে৷ তবে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার জন্য বাড়তি সচেতনতা দরকার বলে মনে করেন ডা. হাসি দাশগুপ্ত৷ তাঁর মতে, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য, স্যানিটারি ম্যাপকিনকে ঠিকঠাক জায়গায় ফেলতে হবে৷ তবেই ভেতর পরিষ্কার রাখা সম্ভব৷ আর বাইরেটা পরিষ্কার রাখতে সচেতনতার বিকল্প নেই৷ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে হাসি জানালেন, তুলনামূলকভাবে তাঁর হাসপাতাল অন্য অনেক হাসপাতালের তুলনায় পরিষ্কার৷ চারিদিকেই পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা বলে এখানে উর্দুভাষাতেও লেখা রয়েছে৷ এই নির্দেশের সৌজন্যেই এই পরিচ্ছন্নতা৷ তবে দু-একটা বিপরীত ঘটনা ঘটলে আমরা ধমক দিই৷''

শহরে উড়ালপুল, রেল স্টেশন, চারমাথার মোড়, নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং, বিকাশ ভবন সর্বত্রই জঞ্জালে ঠাসা৷ অথচ মেট্রো রেল পরিষ্কার৷ অনেকেরই মতে, সিসিটিভির কড়া নজরদারি ও জরিমানার ভয়ে এখানে কেউ থুতু ফেলে না৷ সেই ব্যক্তিই অবশ্য মেট্রোর বাইরে গিয়ে থুতু-পিক ফেলে! শহরের অলিগলিতে ময়লা ফেলার ডাস্টবিন থাকলেও অনেকে ময়লা ফেলেন রাস্তায়৷ তবে পুর প্রতিনিধিরা মনে করেন, আগের থেকে অবস্থা অনেক পাল্টেছে৷

বরুণ নট্ট

This browser does not support the audio element.

দমদম পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোজ সকালে পুরসভার ময়লা ফেলার গাড়ি আসে প্রত্যেক বাড়ির দরজায়৷ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হয়েছে৷ মানুষ সচেতন হয়েছে৷ তবে ১০০ জনে এক-আধজন ময়লা ফেলে রাস্তায়৷ সেটাও বন্ধ করার চেষ্টা করছি৷'' সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কী করা হয়? তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পোস্টার, ফ্লেক্স দিয়ে প্রচার চলে জোরকদমে৷ রাস্তায় ময়লা না ফেলার জন্য অনুরোধ করা হয়৷ ব্লিচিং ছড়ানো, মশার তেল ছড়াই নিয়ম করে৷ আমরা জরিমানা করিনি৷ এখন প্রচার চলছে৷ আগামী দিনে জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ