1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপর বিপুল অঙ্কের মহার্ঘ ভাতার চাপ

১৭ মে ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ এর দাবিতে আন্দোলন স্বীকৃতি পেল শীর্ষ আদালতে। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে ২৫ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্যকে।

নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
কয়েক বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথেও আন্দোলন করে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীরাছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo

কয়েক বছর ধরে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি কর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে চলছে আইনি লড়াইও। হাইকোর্ট থেকে সেই লড়াই পৌঁছে গিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে।

সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মেটানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ২০২২ সালের মে মাসে। সেই রায় কার্যকর না করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল রাজ্য সরকার। গত তিন বছর ধরে তীব্র আইনি লড়াই চলেছে সর্বোচ্চ আদালতে।

শুক্রবার শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি সন্দীপ মেহেতার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। শুনানি অসমাপ্ত রেখে বিচারপতিরা অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় থাকা কর্মীদের ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ তিন মাসের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে।

২০০৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার ২৫ শতাংশ দিতে হবে। অর্থাৎ শুধু তৃণমূল আমল নয় সাবেক বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে থাকা বকেয়া মেটাতে হবে এখন। ২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত যে মহার্ঘভাতা বকেয়া রয়েছে, তার ভবিষ্যৎ ঠিক হবে সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী বিভিন্ন শুনানিতে।

সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির বক্তব্য, রাজ্য সরকার দফায় দফায় কিছু শতাংশ বাড়তি ডিএ দিয়ে থাকলেও সেটা যথেষ্ট নয়। ২০২৪ সালে ৩ শতাংশ ও ২০২৫ সালের এপ্রিলে ৪ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে যে হারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তার সঙ্গে এটা সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে দাবি সংগঠনের নেতাদের। রাজ্যের অল্প হারে ডিএ বৃদ্ধির ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে ফারাক ক্রমশ বেড়েছে।

রাজ্যের ঘাড়ে বোঝা

শীর্ষ আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ মানতে হলে রাজ্যকে বিপুল টাকা খরচ করতে হবে। সে কথা বিচারপতিদের জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা। নয় বছরের জন্য রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে খরচ হবে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। রাজ্যের আইনজীবী দাবি করেন, এত টাকা দিতে হলে রাজ্যের সমস্যা হবে। যদিও এই বক্তব্যে কান দেয়নি আদালত।

বিচারপতি সঞ্জয় কারোল বলেন, "আপনারা ৫০ শতাংশ এরিয়ার দিয়ে দিন। আগের দিন বলেছিলাম, এটাই আমাদের প্রস্তাব। কর্মীদের স্বার্থে এ কথা আপনারা নিজেরা বললেই ভালো হতো। আজ আমরা বলছি, মোট বকেয়ার একটা অংশ এখন দিয়ে দিন। আগস্টে শুনানি হবে। অন্তত ২৫ শতাংশ বকেয়া গিয়ে এখন দিতে হবে।"

রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সওয়াল করেন, "এটা রাজ্যের জন্য বিরাট বোঝা হবে। মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে রাজ্যের। ৪১ হাজার কোটি টাকা মোট বকেয়া। এমন নির্দেশ মেনে নেব কী করে? রাজ্য চালাতে পারব না।"

পরের যে সরকার আসবে পশ্চিমবঙ্গে, তারা গভীর আর্থিক সঙ্কটে পড়বে: প্রসূন আচার্য

This browser does not support the audio element.

রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিল করার সময়ে তিনটি যুক্তি মূলত তুলে ধরেছিল। কেন্দ্র ও রাজ্যের ডিএ সমান হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। কেন্দ্রের হারে রাজ্যকে ডিএ দিতে হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর তাৎপর্য ক্ষুণ্ণ হবে। যদিও এসব যুক্তিতে শেষরক্ষা হল না।

সুপ্রিম নির্দেশের ফলে উপকৃত হবেন প্রায় ১২ লক্ষ রাজ্য সরকারি, আধা সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক এবং পেনশনভোগী। এখন সরাসরি রাজ্য সরকারি কর্মীর সংখ্যা ৩ লক্ষের বেশি। রাজ্য সরকার কীভাবে নির্দেশ কার্যকর করবে, তা চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামার আকারে জানাতে হবে আদালতকে।

মৌলিক অধিকার বিতর্ক

রাজ্যে সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা তাদের মৌলিক অধিকার কি না, এ নিয়েও আইনি টানাপড়েন চলেছে বছরের পর বছর। হাইকোর্টের বিচারপতি ট্যান্ডন ও বিচারপতি সামন্তের রায়ে বলা হয়েছিল, এটা কর্মীদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। এর বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ আদালতে সওয়াল করে সিংভি বলেছিলেন, ডিএ কোনোভাবেই মৌলিক অধিকার হতে পারে না।

সুপ্রিম কোর্টেও রাজ্যের এই দাবি স্বীকৃতি পায়নি। বরং বিচারপতিদের বক্তব্যে বোঝা গিয়েছে, এটা সরকারি কর্মীদের মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। এবার বল রাজ্য সরকারের কোর্টে। এ বিষয়ে নবান্ন কী পদক্ষেপ করবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। যেহেতু এই মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে এবং সেখানে চূড়ান্ত রায় এখনো দেয়া হয়নি, তাই এখনই রিভিউ বা মডিফিকেশন আবেদন করা মুশকিল।

কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ এর সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, "ডিএ যে সরকারি কর্মীদের অধিকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা অস্বীকার করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে।"

রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, "কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয়ার জন্য বামফ্রন্ট সরকার পঞ্চম বেতন কমিশন কার্যকর হওয়ার সময়ে রোপা–৯ সংশোধন করে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখনকার রাজ্য সরকার সেটা অস্বীকার করছে। সুপ্রিম কোর্ট তাকে স্বীকৃতি দিল।"

শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ফলে কিছুটা দাবি পূরণ হয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের। সংগঠনের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, "সরকার এতদিন এটাকে আইনি স্বীকৃতি দিতে চায়নি। আদালত বললেও রাজ্য মানতে চায়নি। সুপ্রিম কোর্ট আইনি স্বীকৃতি দিয়ে বকেয়ার ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে বলেছে। এটা গোটা দেশ জুড়ে কার্যকর করার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে এমনভাবে আইনি লড়াই চালাব যাতে ২৫ শতাংশ নয়, রাজ্য সরকার ১০০ শতাংশ টাকা দিতে বাধ্য হয়। টাকা মেটাতে না পারলে রাস্তার আন্দোলন খোলা থাকবে। তিন মাস আমরা অপেক্ষা করব না। এই সরকারকে আর ছেড়ে দেয়া হবে না।"

রাজ্য কি পারবে এই আর্থিক বোঝা সামাল দিতে? সাংবাদিক প্রসূন আচার্য বলেন, "বহু শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় সেই বেতন দিতে হচ্ছে না। এতে কিছুটা টাকা থাকছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার–সহ অন্যান্য প্রকল্পের টাকা বাড়ানোর যে কথা মুখ্যমন্ত্রী ভেবেছিলেন, সেটা ততটা বাড়বে না। পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ কমছে। কেন্দ্রীয় ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। অন্য রাজ্যও এভাবে ঋণ নিচ্ছে। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের বিপুল ঋণ। পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারে তাই বিজেপি কিছু বলছে না। সবাই মিলে সরকারি তহবিল থেকে টাকা নিলে কে আওয়াজ তুলবে! ঋণ দেয়ার নির্ধারিত সীমা কেউ মানছে না। আবার পশ্চিমবঙ্গ ঋণ নেবে, বন্ড ছাপাবে। এ ভাবেই চলবে বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত।"

তার মতে, "পরের যে সরকার আসবে পশ্চিমবঙ্গে, তারা গভীর আর্থিক সঙ্কটে পড়বে। যে ছবি দেখা গিয়েছে কর্নাটক, তেলঙ্গানা, দিল্লিতে। পরের সরকারের উপরে বিশাল চাপ পড়বে। রাজ্যের তহবিলের মূল উৎস জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশন, জিএসটির অংশ, মদ বিক্রি থেকে আবগারি আয়। এতে বিধায়কদের বেতন, রাজ্যের উন্নয়ন থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা চলছে। এই টাকায় টান পড়লে গরিব মানুষের উন্নয়ন ব্যাহত হবে, রাজ্য আরও ঋণের জালে জড়িয়ে পড়বে।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ