1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে দীর্ঘসূত্রতার শঙ্কা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম চাঁই চন্দন মণ্ডল অবশেষে কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতে৷ বাগদার বাসিন্দা চন্দনের নাম মামলায় জড়ায় বহু আগে৷ এতদিন পর তার গ্রেপ্তারিতে উঠছে প্ৰশ্ন৷

Westbengalen Lehrer unterrichtet auf Straße
ছবি: Payel Samanta/DW

স্কুলশিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় এর আগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী থেকে কমিশনের চেয়ারম্যান, পর্ষদের সভাপতিকে পাকড়াও করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা৷ কিন্তু এই মামলায় অপেক্ষাকৃত ‘লো প্রোফাইল' হলেও বাগদার ‘রঞ্জন' ওরফে চন্দনের নাম বার বার উঠে আসছিল৷

শুক্রবার সিবিআই ডেকে পাঠিয়েছিল চন্দনকে৷ দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০২১ সালে তার নাম ‘সৎ রঞ্জন' হিসেবে সামনে এনেছিলেন সিবিআইয়ের সাবেক কর্তা ও তৃণমূলের একসময়ের বিধায়ক উপেন বিশ্বাস৷ তারপর অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে৷ অবশেষে দুর্নীতির অন্যতম কান্ডারি হিসেবে অভিযুক্ত গোয়েন্দাদের জালে৷

উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার মামা-ভাগিনা গ্রামে থাকেন চন্দন৷ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন৷ কিন্তু স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুলের বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তার হাত বেশ ‘লম্বা’৷ গ্রামের স্কুলে পার্শ্বশিক্ষকের কাজ করেন চন্দন৷ কিন্তু প্রভাবে খাটো নন৷

উপেন বিশ্বাস সোশ্যাল মিডিয়া ‘সৎ রঞ্জনের' নাম প্রকাশ্যে আনার পর তাকে ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হয়৷ স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, রঞ্জনের দোতলা বাড়ির সামনে একটা সময় চাকরিপ্রার্থীদের ভিড় লেগে থাকত৷ চাকরি অনুযায়ী প্রার্থীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা নেওয়া হত৷ চন্দনকে টাকা দিলে চাকরি হত৷ আর চাকরি না হলে তিনি নাকি টাকা ফেরতও দিতেন৷

কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, একঝাঁক এজেন্টের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার লেনদেন চলত৷ মিডলম্যানরা সেই টাকা পৌঁছে দিত রাজনীতি ও প্রশাসনের উচ্চস্তরে৷ যেসব প্রার্থী টাকা দিতেন, তাদের তথ্য আসত চন্দনের কাছে৷ তার সঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপদেষ্টাদের যোগাযোগ ছিল বলে সূত্রের খবর৷ তাই সাদা খাতা জমা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর নাম পৌঁছে যেত সর্বোচ্চ স্তরে৷

উপেন বিশ্বাস যখন মন্ত্রী ছিলেন তখনই এই দুর্নীতি সম্পর্কে জানতেন: নজরুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক প্রসন্ন রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল চন্দন মণ্ডলের৷ আবার ইডি-র হাতে আটক হুগলির তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষের সঙ্গে চন্দনের যোগ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি৷ চন্দন, কুন্তলের মতো দুর্নীতির চাঁইদের সঙ্গে ধৃত মানিক ভট্টাচার্য, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহাদের কী যোগ ছিল তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি৷

বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য থেকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘কুন্তল, চন্দনরা দুর্নীতির ছোট অপরাধী৷ বড় মাথাদের ধরতে হবে৷ তাদের নাগাল কি পাবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি- এনিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে খোদ আদালত৷

চন্দনকে গ্রেপ্তার করার পর শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘গ্রেপ্তার হয়েছে জানি৷ কিন্তু কী হবে? কিছুই হবে না৷’’

তা হলে কি সারদা বা নারদ তদন্তের মতো কেটে যাবে বছরের পর বছর? তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করেছেন, ‘‘সিবিআই সম্পর্কে অনাস্থাই বোঝাচ্ছে তারা এই তদন্তে কতটা উপযুক্ত৷’’

তদন্তকারীদের নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন উপেন বিশ্বাসও৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এত দিন পর রঞ্জনের গ্রেপ্তারিতে খুশি নই৷ যেভাবে তদন্ত করা উচিত, সিবিআই করেনি৷’’ উল্লেখ্য উপেন বিশ্বাস পশুখাদ্য মামলার তদন্তের নেতৃত্ব দেন যার পরিণতিতে কারাবাসের সাজা হয় বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের৷

যদিও সাবেক সিবিআই কর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উপেন বিশ্বাস যখন মন্ত্রী ছিলেন তখনই এই দুর্নীতি সম্পর্কে জানতেন বলে মনে হয়েছে তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে৷ তা হলে তিনি সেই সময়ই কেন মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টা জানাননি? পুরো মেয়াদে মন্ত্রী থেকেছেন, পরে রঞ্জনের নাম সামনে এনেছেন৷’’

চন্দন মণ্ডলের আইনজীবী নাম উল্লেখ না করে উপেনের দিকে আঙুল তুলেছেন৷ তার দাবি, এক প্রভাবশালী চক্রান্ত করে চন্দনকে ফাঁসিয়েছে৷ অর্থাৎ এত বড় মাপের দুর্নীতি ও বেআইনি লেনদেনের পর্দা ফাঁস হয়েছে মূলত উপেনের হাত ধরেই৷ কিন্তু সংবাদমাধ্যম থেকে শিক্ষক বা ছাত্র সংগঠন কেন আগে এতে আলোকপাত করেনি?

অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আভাস পাচ্ছিলাম যে টাকার লেনদেন হচ্ছে৷ কিন্তু এর সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন পুরোপুরি যুক্ত৷ পুলিশের গাড়ি এসকর্ট করত অপরাধীদের৷ ফলে ব্যাপারটির তল পাওয়া কঠিন ছিল৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ