২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে যা ছিল ঘোর বাস্তব, ২০২৪-এ এসে সেই মেরুকরণ কি অনেকটাই ফিকে হয়ে যাচ্ছে?
বিজ্ঞাপন
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের গ্রামে বসে রবিন্দর যখন বলেন, ''গতবারও বিজেপি-কে ভোট দিয়েছি, এবার দিচ্ছি না। আমার ভোট যাবে বিএসপি-র কাছে'', তখন একটু অবাক হয়েছিলাম। তারপর মুজফফরনগরে যত ঘুরেছি, ততই অবাক হওয়ার মাত্রা বেড়েছে বই রমেনি। দলিতদের গ্রামে গিয়ে তফসিলি জাতির ভোটদাতাদের একবাক্যে বলতে শুনেছি, এবার তাদের ভোট পড়ছে বিএসপি-তে। অনগ্রসররা কেউ সমাজবাদী পার্টি বা কেউ বিএসপি-কে ভোট দেয়ার কথা বলছেন। বিজেপি-তেও ভোট যাচ্ছে, তবে মেরুকরণের আবহে যেরকম হইহই করে যায়, সেরকম নয়।
এই মুজফফরনগরেই তো ২০১৩ সালে জাঠ ও মুসলিমদের মধ্যে ভয়ংকর দাঙ্গায় শতাধিক মানুষ মারা গেছিলেন। ঘরছাড়া হয়েছিলেন প্রায় ৫০ হাডার মানুষ। তারপর ২০১৪ সালে যে প্রবল মেরুকরণ হয়েছিল, তার জেরে বিজেপি হইহই করে এই অ়ঞ্চলে জিতেছিল। মুসলিমবহুল এই অঞ্চলে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি বা কংগ্রেস বিশেষ সুবিধে করে উঠতে পারেনি।
২০১৯-এ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পুলওয়ামার ঘটনার পর পাকিস্তানে ঢুকে ভারতীয় সেনার জঙ্গিদের আঘাত করার ঘটনা। তারপর আবার এই অঞ্চলে মেরুকরণ সম্পূর্ণ হয়েছিল। জাঠবলয়ের কেন্দ্রে মুজফফরনগরে হারতে হয়েছিল চরণ সিং-পুত্র অজিত সিং-কেও। যে চরণ সিং ও তার পরিবারকে জাঠরা অন্ধের মতো অনুসরণ করে।
সেই মুজফফরনগরে বসে রবিন্দর, হরপাল, রবিদাসরা যখন বলেন, ভোট পড়ছে জাতপাতের হিসাবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই অবাক হওয়ার কথা। যে মেরুকরণের জেরে বিজেপি একের পর এক আসন জিতে যায়, উত্তরপ্রদেশের সেই আঁখবলয়ে অন্য কথা শোনা যাচ্ছে কেন?
লোকসভা নির্বাচন ২০২৪: নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ
পশ্চিমবঙ্গে এসে লোকসভা ভোট নিয়ে দুই দিন ধরে বৈঠক করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কর্তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে
পশ্চিমবঙ্গে স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের স্বার্থে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেয়ার কথা ঘোষণা করলো নির্বাচন কমিশন। দুই দিন ধরে একগুচ্ছ বৈঠকের পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাতেই হবে পুলিশকে। তারা দায়িত্ব পালন না করলে কমিশন তাদের বাধ্য করবে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
দায়ী থাকবেন ডিজি
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার(সিইসি) রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ''পুলিশকেই শান্তি বজায় রাখতে হবে। কোনো গণ্ডগোল হলে তার জন্য দায়ী থাকবেন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল(ডিজি)।'' কাকতালীয় হলেও রাজ্য পুলিশের ডিজির নামও রাজীব কুমার। সিইসি বলেছেন, ডিজিকে পুলিশ সুপার, থানার ওসি-দের এই ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দিতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
'সব রিপোর্ট আছে'
সাংবাদিক সম্মেলনে সিইসি রাজীব কুমার বলেছেন, ''আমাদের কাছে সব রিপোর্ট আছে। পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা ও অর্থশক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।'' তিনি জানিয়েছেন, ''মুখ্যসচিব ও ডিজিদের স্পষ্টভাবে বিষয়টি বলেছি। তারাও বলেছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য তারা বদ্ধপরিকর।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিরোধীদের নালিশ
সিইসি-সহ কমিশনের কর্তারা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, আপ, সিপিএম, ফরোয়ার্ড ব্লক-সহ কয়েকটি দলের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। সিইসি রাজীব কুমার বলেছেন, ''একটি বাদে সব দল বলেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।'' তাদের অভিযোগ, ''আমলাতন্ত্র নিরপেক্ষভাবে কাজ করে না। তারা ভয় দেখানোর অভিযোগও করেছেন।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
'নির্বাচন হলো ১৪ পার্বণ'
সিইসি রাজীব কুমার বলেছেন, ''বাংলায় একটা কথা আছে, বারো মাসে তেরো পার্বণ। নির্বাচন হলো ১৪তম পার্বণ। সেখানে উৎসবের মাজাজ থাকতে হবে। ভয়ের বাতাবরণ সহ্য করা হবে না। মানুষ আসবেন, আনন্দ করে ভোট দেবেন। সহিংসতা ও ভয়মুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন করতে না পারলে আমরা ওদের দিয়ে করাব। গোলমাল হলে পুলিশ দায়ী থাকবে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
অ্যাপ চালু হবে
সিইসি জানিয়েছেন, তারা একটা অ্যাপ চালু করবেন। সেখানে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল, কোনো সংগঠনের তরফ থেকে অভিযোগ জানানো যাবে। ভোটে সহিংসতা, বেনিয়ম দেখলেই যেন সেখানে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হবে। তারপর কমিশনের সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেয়া হবে। নির্বাচন উপলক্ষে তিনটি অ্যাপ চালু করছে নির্বাচন কমিশন।
ছবি: DW/O. Singh Janoti
সীমান্ত এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তিনটি দেশের সীমান্ত আছে। সবচেয়ে বড় সীমান্ত বাংলাদেশের সঙ্গে। এছাড়া নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত আছে। সিইসি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, সীমান্তে কড়া প্রহরা থাকবে। বিএসএফ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ছবি: Dipa Chakraborty/NurPhoto/picture alliance
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে
সিইসি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে।'' কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায়, কীভাবে মোতায়েন করা হবে, সেটাও জানিয়েছেন তিনি। রাজীব কুমার জানিয়েছেন,, ''রাজ্য পুলিশ, নোডাল অফিসার ও সিইও আরিফ আফতাব এবং কমিশনের এক পর্যবেক্ষক মিলে সিদ্ধান্ত নেবে, কোন কোন এলাকা স্পর্শকাতর। জেলায় যখন বাহিনী পৌঁছে যাবে, তখন সিদ্ধান্ত নেবে ডিএম, এসপি ও কমিশনের জেলা পর্যবেক্ষক।''
ছবি: Payel Samanta/DW
মোট ভোটদাতা সাড়ে সাত কোটি
পশ্চিমবঙ্গে মোট ভোটদাতার সংখ্যা ৭ কোটি ৫৮ লাখ। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা, ৩ কোটি ৮৫ লাখ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৩ লাখ।
ছবি: Payel Samanta/DW
9 ছবি1 | 9
কিছুদিন আগেই রামমন্দিরের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর প্রচুর মানুষ রামমন্দির দেখতে গেছেন, এখনো যাচ্ছেন। মিরাটে বিজেপি তাদের বর্তমান সাংসদকে প্রার্থী না করে টিকিট দিয়েছে টেলিভিশনে অত্যন্ত জনপ্রিয় সিরিয়াল রামায়ণে রামের ভূমিকায় অভিনয় করা অরুণ গোভিলকে। তারপরেও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, গোভিল জিতবেনই। হঠাৎ কী এমন হলো, মেরুকরণের বদলে জাতপাতের অঙ্ক প্রবল হলো পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে?
উত্তরপ্রদেশকে হাতের তালুর মতো চেনেন সাংবাদিক শরদ গুপ্তা। দিল্লি আসার আগে দীর্ঘদিন লখনউতে সাংবাদিকতা করেছেন। ডিডাব্লিউকে শরদ বলেছেন, ''রামমন্দির তো হয়ে গেছে। অনেকদিন ধরেই মানুষ জানে, রামমন্দির হচ্ছে, এখন তার উদ্বোধন হয়ে গেছে। ফলে তাদের কাছে সেটা আর আবেগের বিষয় থাকছে না।''
শরদের মতে, ''আবেগের বিষয় না থাকায় জাতপাতের অংক আবার প্রবল হয়েছে। আর বিজেপি-র চান্তা বাড়িয়েছে, ভোটের হার কম হওয়া। আবেগের বিষয় থাকলে, মেরুকরণ হলে মানুষ প্রচুর সংখ্যায় ভোট দেন। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না।''
মনে পড়ে গেল বারাণসীতে কংগ্রেস প্রার্থী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় রাইয়ের কথা। ডিডাব্লিউকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অজয় বলেছেন, ''শ্রীরামের প্রতি আমাদের সকলের আস্থা, বিশ্বাস ও সম্মান আছে। রামমন্দিরে সকলে গিয়ে স্রীরামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন। তার মানে এই নয় যে, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, জীবনযাপনের দুর্দশার কথা ভুলে তারা ভোট দেবেন। এবার রামমন্দির ভোটের বিষয় হতে পারে না।''
রবিদাস বলছিলেন, আমরা তো এবার আমাদের জাতের, সমাজের কথা ভেবে বোট দিচ্ছি। তাই বহুজন সমাজ পার্টির হাতিতে ভোট দিয়েছি। উত্তরপ্রদেশের এটা আরেকটা বিশেষত্ব। মানুষ সোজাসাপটা বলেন, কাকে ভোট দিয়েছেন।
মুজফফরনগরের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বাকি এলাকার অবস্থা সহজেই অনুমান করতে পারবেন। সর্বত্র উঠে আসছে জাতপাতের অংক। সবাই তাদের সমাজের কথা বলছে, তার গোষ্ঠীগত মান-মর্যাদা, তাদের লাভ, সুবিধা-অসুবিধার কথা বলছে।
লোকসভা ২০২৪: প্রচারে কী ধরনের চমক আনলেন নরেন্দ্র মোদী?
লোকসভা নির্বাচনের প্রচার কৌশল বদল করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি এখন মোদী-পরিবার, মোদী-গ্যারান্টির কথা বলছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নতুন কৌশল
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন পুরোদমে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমে পড়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি হয় জনসভা করছেন অথবা সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন মোদী। আর তিনি এবার প্রচারে নিয়ে এসেছেন নতুন বিষয়। নতুন কৌশল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোদীর গ্যারান্টি
কিছুদিন হলো মোদীর গ্যারান্টি নিয়ে ভরপুর প্রচার চলছে। এই গ্যারান্টি কি? গরিবদের আরো পাঁচ বছর বিনা পয়সায় সরকারি রেশন, পাঁচ লাখ পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিমা, কম দামে গ্যাসের সিলিন্ডার, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বিনা পয়সায় বাড়ি, নারী স্বনিযুক্ত গোষ্ঠীকে ১৫ হাজার টাকা, বয়স্কদের পেনশন, লাখপতি দিদির মতো একগুচ্ছ প্রকল্পই হলো মোদীর গ্যারান্টি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সরকারি প্রকল্প
এ সবই সরকারি প্রকল্প। রেডিও, টিভি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, খবরের কাগজ, পত্রিকা, পেট্রোল পাম্প সব জায়গাতে এর ভরপুর প্রচার চলছে। এই বিজ্ঞাপন কৌশল দিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করতে চাইছেন মোদী। আগেরবার বলা হয়েছিল, 'মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়'। এবার বলা হচ্ছে, 'মোদী কা গ্যারান্টি হ্যায়'।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোদী-পরিবার
পশ্চিমবঙ্গে এসে মোদী এই প্রচার শুরু করেছেন। মোদী-পরিবারের প্রচার। বারাসতের সভায় তিনি বলেছেন, তরুণ বয়সে শুধু একটা ঝোলা নিয়ে তিনি গহত্যাগ করেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যান। সেখানকার ভাষা জানতেন না। পকেটে পয়সা নেই। কিন্তু কোনো না কোনো পরিবার তাকে ঠিক খাবার দিয়েছে । মোদীর ঘোষণা, ভারতীয়রা সকলেই মোদীর পরিবার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোদীর স্লোগান
জনসভায় মোদী বলতে থাকেন, 'আমি'। সামনে বসা মানুষ জবাব দেন 'মোদীর পরিবার'। এটাই মোদী তথা বিজেপি-র নতুন স্লোগান। বিজেপি বলছে, এটাই তাদের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে চলেছে। জনতার সঙ্গে মোদীর একাত্মতার মোকাবিলা বিরোধীরা করতে পারবে না বলে বিজেপি নেতাদের দাবি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোদীর নারীশক্তি
আরো বেশি করে নারীদের ভোট পেতে উদ্যোগী হয়েছেন মোদী। সংসদে ও বিধানসভায় নারীদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের বিল পাস হয়েছে। সেই ব্যবস্থা কার্যকর হবে ২০২৯ থেকে। মোদী গরিব মেয়েদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশ্বকর্মা যোজনা, ছোট ব্যবসা করার জন্য স্বনিধি যোজনার কথা বলছেন। লাখপতি দিদি নিয়ে প্রচার চলছে। মেয়েদের বিনা সুদে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা বছরে এক লাখ টাকা রোজগার করতে পারেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নতুন ভোটারদের প্রভাবিত করতে
কিছুদিন আগেই বিজেপি নেতা ও কর্মীদের মোদী নির্দেশ দিয়েছিলেন, এবার ১৮ বছর বয়সি যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের সকলের কাছে পৌঁছাতে হবে। মোদী এবার প্রচারে যুব ও প্রথমবারের ভোটদাতাদের মন পেতে তাদের জন্য তিনি কী করেছেন, তা বিস্তারিতভাবে বলবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ধারণা তৈরির খেলা
এবার মোদীর আরেকটি স্লোগান হলো, আব কি বার, চারশ পার। অর্থাৎ, এবার চারশ পার করে যাবে এনডিএ। বিজেপি পাবে অন্তত ৩৭০টি আসন। এবার এনডিএ-র পরিধি বাড়ানো হয়েছে। চন্দ্রবাবু নাইডু আবার এনডিএ-তে ফিরেছেন। বিজু জনতা দলের নেতা নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করা নিয়ে বিজেপি-র আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। মোদী একটা ধারণা তৈরি করতে চাইছেন, তিনি জিতবেনই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মতুয়াদের সিএএ-উপহার
পশ্চিমবঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদহ ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ আছেন। তারা সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আসা নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ। বনগাঁও-সহ তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে তারাই ভোটের ফল নির্ধারণ করেন। তাদের ভোটাধিকার থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে নাগরিক স্বীকৃতি নেই। সিএএ চালু করে তাদের নাগরিক হওয়ার পথ সুগম করা হলো বলে বিজেপি প্রচারে নেমে গেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন বারবার পশ্চিমবঙ্গে?
পশ্চিমবঙ্গে গত দুই সপ্তাহে তিনবার এসেছেন মোদী। জনসভা করেছেন আরামবাগ, বারাসত, শিলিগুড়িতে। মেট্রো রেল সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে মেট্রো সফর করেছেন। সন্দেশখালির নারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। গতবার ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। এবার সেই সংখ্যা ধরে রেখে একটা হলেও আসন বাড়াতে চায় তারা। তাই এত ঘনঘন মোদীর পশ্চিমবঙ্গ সফর।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নতুন মুখ নিয়ে আসা
মোদীর নির্বাচনী কৌশলের একটা অঙ্গ হলো, নতুনদের প্রার্থী করা। পুরনোদের মধ্যে যাদের জয় নিয়ে তিলমাত্র সন্দেহ আছে, তাদের বাদ দিয়ে দেয়া। এবারো সেই পথে হেঁটেছেন মোদী। দিল্লিতে পাঁচটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। চারটিতে নতুন প্রার্থীকে সুযোগ দেয়া হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
11 ছবি1 | 11
ভোটবিশেষজ্ঞ কপিলের মতে, ''গতবারও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের অনেক কেন্দ্রে চার হাজার, পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি হয়েছে। মেরুকরণ থাকা সত্ত্বেও। এবার তো সেই মেরুকরণ নেই।''
উল্টোদিকের ছবিটাও দেখা যাক। মুজফফরনগরে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী এবার হরেন্দ্র মালিক। তিনি জাঠ। বিপক্ষে বিজেপি-র সঞ্জীব বালিয়ানও জাঠ। একমাত্র বিএসপি-র দারা সিং প্রজাপতি হলেন কুমোর। প্রজাপতিদের ভোট আছে এক লাখের উপরে। মুসলিমপ্রধান গ্রামে গিয়ে সাজিদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কাকে ভোট দিয়েছেন। তিনি ও তার সঙ্গীরা একবাক্যে বলেছেন, তাদের ভোট পড়েছে সমাজবাদী পার্টির সাইকেলে। তার অর্থ ২০১৩ সালের বৈরিতা ভুলে জাঠ প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন মুসলিমরা। ২০১৪-তে তা ভাবাই যেত না। ২০১৯ সালেও প্রায় একই অবস্থা ছিল। সমাজবাদী পার্টি তাই এখানে জাঠ প্রার্থী দিতে পারেনি। এবার দিয়েছে।
সত্যিই মেরুকরণের ছবিটা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সেভাবে চোখে পড়ছে না। শরদের বক্তব্য, ''প্রধানমন্ত্রী মোদী, অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, জে পি নাড্ডারা দিনে তিনটে করে জনসভা করছেন। প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার পর একই কেন্দ্রে অমিত শাহ, রাজনাথরা যাচ্ছেন। প্রচারের ঝড় তুলছেন। সব ধরনের বিষয় সামনে আনছেন। বিরোধীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন। তাও ভোটের হার তাদের প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাচ্ছে না। আবেগের বিষয় থাকলে মানুষ যে উৎসাহ নিয়ে ভোট দেন, তা নেই। তাই ভোটের হার কম হচ্ছে।''
সত্যি কথা, মুজফফরনগরের বুথগুলি অধিকাংশই ছিল খালি। অধিকাংশ জায়গায় লাইন ছিল না বা থাকলেও খুব কম। মুসলিমপ্রধান এলাকায় অবশ্য বুথে ভিড় ছিল। বিকেলের দিকে ভোট দেওয়ার হার কিছুটা বাড়ে।
গত ১৯ এপ্রিল প্রথম পর্বের ভোটে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ভোট পড়েছে ৬০ দশমিক ২৫ শতাংশ। ভারতেআবেগের বিষয় থাকলে, মেরুকরণ হলে এত কম ভোট পড়ে না।