1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিম এশিয়া: বিপন্ন ইতিহাস, বিধ্বস্ত ঐতিহ্য

২ জুলাই ২০২৫

পশ্চিম এশিয়ার ক্রমবর্ধমান সংঘাতে প্রমাদ গুনছেন প্রত্নতাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ ও সংগ্রহশালার অধিকর্তারা৷ কেন?

ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের আল-জাজার মসজিদের ছবি দেখা যাচ্ছে৷
এমন প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র যুদ্ধের সময়ে বাঁচিয়ে চলা প্রায় অসম্ভব৷ সেই আশাই করছেন ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা৷ছবি: Photoshot/picture-alliance

সাধারণ মানুষের জীবনের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, জাদুঘর ও বহু প্রাচীন প্রত্নক্ষেত্র নিয়ে৷ ঘনাচ্ছে আশঙ্কার মেঘ৷

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যে-কোনো দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নিদর্শন, যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয় সেগুলিও৷ অনেক ক্ষেত্রেই তা চোখের আড়ালে রয়ে যায়৷ ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের সূচনাতেই এই ধ্বংসলীলা নিয়ে সতর্ক করেছিল প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজ়িয়ামস (আইকম)৷ দুই দেশের সব কটি সংগ্রহশালা ও সেখানকার কর্মীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তারা৷ ইসরায়েল ও ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত আট হাজার জন বিশেষজ্ঞ যুক্ত রয়েছেন আইকমে৷ তারা জোর গলায় আবেদন করেছিলেন, দুই দেশের শীর্ষকর্তাদের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার দিকে নজর দিতে হবে৷ যুদ্ধে যেন কোনো প্রত্নক্ষেত্র বা সংগ্রহশালার ক্ষতি না হয়! এই প্রসঙ্গেই আইকমের জার্মান জাতীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট ফেলিসিয়া স্টার্নফিল্ড ডিডবলিউকে বলেন, ‘‘স্রেফ সতর্ক করা বা আবেদন জানানো ছাড়া আমাদের আর সত্যিই কিছু করার উপায় নেই৷''

সংঘাতের সময় দেশের ইতিহাসের স্মারক রক্ষা করা সম্ভব?

নেতানিয়াহু সংঘাত শুরু করার পর থেকে নিজেদের দেশে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ করেছে ইরান৷ ফলে ইজসরায়েলি হানায় সংগ্রহশালা ও প্রত্নবস্তুগুলির ঠিক কী কী ক্ষতি হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া মুশকিল৷ ইসরায়েলের সব তথ্যও এই মুহূর্তে সহজলভ্য নয়৷

শুধু ইরানেই প্রায় ২৮টি ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট ও ৮৪০টা জাদুঘর রয়েছে৷ তার মধ্যে ৩০০টা সে দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রকের আওতায়৷ ইতিহাসবিদ এবং জার্মান আর্কিওলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের তেহরান শাখার প্রধান জুডিথ টোমালস্কির কথায়, ‘‘ইরানে ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের যসঙ্গে দেখা হয়৷'' প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে ‘মিউজ়িয়াম অব দ্য এনসিয়েন্ট নিয়ার ইস্ট'-এর প্রধান বারবারা হেলউইং-এর কথাতেও৷ একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইরানের জাতীয় সংগ্রহশালার পরিচিতদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করে তিনি জানতে পেরেছেন সংগ্রহশালা ও সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের কাছে অবস্থিত দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ খালি করা হয়েছে৷ সেই ছবিও দেখেছেন তিনি৷ জরুরি তৎপরতায় কাজ চলছে৷

ইরানের এই প্রাচীন জাতীয় জাদুঘরে প্রাক-ইসলামি যুগ থেকে ইসলামি যুগ পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে৷ জানা গিয়েছে, পাথরের তৈরি ভারি নিদর্শনগুলিকে রক্ষা করতে চারপাশে বালির বস্তা দেওয়া হচ্ছে৷ ইরানে কোনো বাঙ্কার নেই, ফলে বালিই ভরসা৷

যে মৃৎশিল্পে ঐতিহ্যের অনেক গুরুত্ব

04:01

This browser does not support the video element.

তবু ধ্বংসের পদধ্বনি...

কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইরানে সাসানীয় সাম্রাজ্যের সময়ে তৈরি ‘তাক-এ-বোস্তান' নামক প্রত্নক্ষেত্রটি ক্ষতিগ্রস্ত৷ সম্প্রতি সেটির ঠিক দু'কিলোমিটার দূরে ইরানের সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল, যদিও এই বিষয়েও বিশেষ কিছু জানা যাচ্ছে না৷

জুডিথ টোমালস্কি অবশ্য মনে করেন, ইরানের প্রশাসন জানে ঠিক কী পদক্ষেপ করতে হবে৷ তার দাবি, পার্সেপোলিস কমপ্লেক্স, বা তখত-এ-সোলাইমানের মতো খোলা প্রত্মতাত্ত্বিক ক্ষেত্রগুলিকে নিরাপত্তা দেওয়া কার্যত অসম্ভব৷ তিনি এ-ও মনে করেন, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগত সম্পদগুলি এখনো অতটা বিপন্ন নয়৷

প্রসঙ্গত, আগামী ৬ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই প্যারিসে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৭তম সম্মেলন রয়েছে৷ সেখানে সমস্ত হেরিটেজ সাইটের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে৷

অন্য দিকে, ইরান পাল্টা হামলা চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্মতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েল প্রশাসন৷ তেল আবিব মিউজ়িয়াম অব আর্ট তাদের সমস্ত সংগ্রহ মাটির নিচের ঘরগুলিতে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়৷ বন্ধ হয়ে যায় সংগ্রহশালা৷ জানা গেছে, আগামী ৩ জুলাই সর্বসাধারণের জন্য ফের খুলছে সংগ্রহশালার দরজা৷ জেরুসালেমের ইসরায়েল মিউজ়িয়ামে ইতিমধ্যেই জমছে ভিড়৷ পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম এই সংগ্রহশালায় প্রায় প্রায় পাঁচ লক্ষ প্রত্ন-নিদর্শন রয়েছে৷ ইসরায়েলে বর্তমানে ন'টি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে৷ প্রশাসনের দাবি, কোনো সংগ্রহশালা, প্রত্নবস্তু বা প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রের ক্ষতি হয়নি৷

বারবারা হেলউইং অবশ্য মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধে প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন৷ তার কথায়, ‘‘রক্ষা করা কার্যত অসম্ভব৷ ক্ষেপণাস্ত্র এসে আছড়ে পড়বে না, শুধু এই আশাটুকুই করা চলে৷''

আপাতত সেই আশাতেই রয়েছেন সারা বিশ্বের ইতিহাসপ্রেমী ও বিশেষজ্ঞরা৷

স্টেফান ডেগে/এসটি

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ