পশ্চিম এশিয়ার ক্রমবর্ধমান সংঘাতে প্রমাদ গুনছেন প্রত্নতাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ ও সংগ্রহশালার অধিকর্তারা৷ কেন?
এমন প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র যুদ্ধের সময়ে বাঁচিয়ে চলা প্রায় অসম্ভব৷ সেই আশাই করছেন ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা৷ছবি: Photoshot/picture-alliance
বিজ্ঞাপন
সাধারণ মানুষের জীবনের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, জাদুঘর ও বহু প্রাচীন প্রত্নক্ষেত্র নিয়ে৷ ঘনাচ্ছে আশঙ্কার মেঘ৷
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যে-কোনো দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নিদর্শন, যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয় সেগুলিও৷ অনেক ক্ষেত্রেই তা চোখের আড়ালে রয়ে যায়৷ ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের সূচনাতেই এই ধ্বংসলীলা নিয়ে সতর্ক করেছিল প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজ়িয়ামস (আইকম)৷ দুই দেশের সব কটি সংগ্রহশালা ও সেখানকার কর্মীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তারা৷ ইসরায়েল ও ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত আট হাজার জন বিশেষজ্ঞ যুক্ত রয়েছেন আইকমে৷ তারা জোর গলায় আবেদন করেছিলেন, দুই দেশের শীর্ষকর্তাদের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার দিকে নজর দিতে হবে৷ যুদ্ধে যেন কোনো প্রত্নক্ষেত্র বা সংগ্রহশালার ক্ষতি না হয়! এই প্রসঙ্গেই আইকমের জার্মান জাতীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট ফেলিসিয়া স্টার্নফিল্ড ডিডবলিউকে বলেন, ‘‘স্রেফ সতর্ক করা বা আবেদন জানানো ছাড়া আমাদের আর সত্যিই কিছু করার উপায় নেই৷''
সাংস্কৃতিক স্থাপনার প্রতি যত আক্রোশ
বিশ্বের সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো অক্ষত রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে৷ যুদ্ধ, জঙ্গি হামলা, বিদ্বেষ কিংবা পর্যটকদের নিছক খেয়ালের বশেই সেগুলো নষ্ট হচ্ছে৷ সবশেষ এই ইস্যুটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে মাচু পিচুর এক ঘটনাতে৷
ছবি: Imago/Westend61
মাচু পিচুর সূর্য মন্দিরে মলত্যাগ!
পেরুর দক্ষিণ-পশ্চিমে আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত প্রাচীন এই নগরী৷ পঞ্চদশ শতাব্দীর ইনকা সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন এটি৷ সেখানকার সূর্য মন্দিরে পর্যটকদের একটি দল অবৈধভাবে রাত্রি যাপন করেছে বলে অভিযোগ করে কর্তৃপক্ষ৷ এমনকি সেখানে তারা মলত্যাগ করে অপরিচ্ছন্নও করে রাখে৷
ছবি: Imago/Westend61
বিচারের মুখোমুখি
মাচু পিচুর ঘটনায় ছয় পর্যটকের মধ্যে পাঁচজনকে পেরু থেকে বের করে দেয়া হয়৷ সাংস্কৃতিক এই ঐতিহ্য নষ্ট করার দায়ে আর্জেন্টিনার এক নাগরিককে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷ তিনি সেখানকার একটি প্রস্তরখন্ড খুলে নেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে৷ এজন্য তার চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷ এর আগে চিলির দুই নাগরিককে এক লাখ ডলার করে জরিমানা করা হয়েছিল একই কারণে৷
ছবি: Imago/H. von Radebrecht
পর্যটকের ঢল
সাম্প্রতিক সময়ে মাচু পিচুতে পর্যটকের ঢল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে৷ তাদের প্রতিদিনের পদভারেই ইউনেস্কো ঘোষিত এই বিশ্ব ঐতিহ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে৷ দ্য পেরু টেলিগ্রাফের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে সেখানে ১৫ লাখ পর্যটকের পা পড়েছে৷ ১৯৯১ সালে তা ৮০ হাজারেরও কম ছিল৷
হান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসনের রূপকথা অবলম্বনে ১৯১৩ সালে এই মৎস্যকন্যাকে গড়েছেন ভাস্কর এডভার্ড এরিকসন, যা এখন ডেনমার্কের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ৷ ২০১৭ সালে তিমি শিকার বিরোধী আন্দোলনকারীরা ভাস্কর্যটির গায়ে লাল রং মেখে দেন৷ সম্প্রতি ‘হংকং মুক্ত কর’ এমন একটি বার্তাও লাল রঙে লিখে দেয়া হয় এই পাথুরে মূর্তির গায়ে৷
১৯১৩ সালে বসানোর পর থেকে ভাস্কর্যটি কয়েক দফা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ ১৯৬৪ সালে দ্য লিটল মারমেডের মাথা চুরি যায়৷ শেষ পর্যন্ত সেটি আর উদ্ধার করা যায়নি৷ তার বদলে নতুন করে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে৷ চার বছর পর আবারও একই ঘটনা ঘটে৷ এবার ধরা না গেলেও মাথা ফেরত পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Luethke
ইয়েলো ভেস্টের কবলে আর্ক অফ ট্রায়াম্ফ
২০১৮ সালে ফ্রান্সের ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের কবলে পড়ে আর্ক অফ ট্রায়াম্ফ৷ তারা এই ঐতিহ্যের গায়ে স্লোগান লিখে দেয়৷ পরে দীর্ঘদিন পর্যটকদের জন্য স্থাপনাটি বন্ধ ছিল৷ তবে সংস্কারের পর ২০১৯ সালে আবারও খুলে দেয়া হয়েছে ফ্রান্সের অন্যতম এই আকর্ষণ৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
রেহাই পায়নি ভাস্কর্য
আর্ক অফ ট্রায়াম্ফ অভ্যন্তরের জাদুঘরে রাখা ছিল এই ভাস্কর্যটি, যা ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রতীকী চরিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে৷ এই ঘটনার পর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের৷ ১০০ জন আহত ও ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Zihnioglu
পালমিরার ধ্বংসযজ্ঞ
সিরিয়ার প্রাচীন নগরী পালমিরা৷ এই অঞ্চল দখলে নিয়ে ধ্বংসলীলা চালায় ইসলামিক স্টেট৷ উপরে এএফপির ফটোগ্রাফার জোসেফ ইডের তোলা ২০১৪ সালের একটি আলোকচিত্র দেখা যাচ্ছ৷ তখনও সেখানে হানা দেয়নি আইএস৷ পেছনে এখনকার পরিস্থিতি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
রক্ষা পেলো তুমবুকতুর নথি
শুধু পালমিরা নয়, মালির প্রাচীন নগরী তুমবুকতুও রেহাই পায়নি আইএসের হাত থেকে৷ স্থাপনা ধ্বংস করলেও ‘গ্রেট লাইব্রেরি অফ তুমবুকতুতে’ অমূল্য কিছু নথি অক্ষত ছিল৷ স্থানীয় নেতা ও পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত আব্দেল কাদের সেগুলোকে কৌশলে সরিয়ে ফেলেছিলেন৷বর্তমানে প্রাচীন বই আর নথিগুলো সংরক্ষিত আছে হামবুর্গে৷
ছবি: CSMC
তালেবানদের হাতে বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস
পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা গর্তটিতে একসময় গৌতম বুদ্ধের ষষ্ঠ শতকে গড়া দুটি বিশাল মূর্তি ছিল৷ ২০০১ সালে আফগানিস্তানে এমন দুটি ভাস্কর্য গুড়িয়ে দেয় তালেবানরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/Shefayee
পর্যটকদের দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাৎসি হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি বিজড়িত স্থান আউসভিৎজ৷ পর্যটকদের আচরণে বিরক্ত হয়ে গত বছর সেখানকার কর্তৃপক্ষ আহ্বান জানিয়েছিল, যাতে তারা পর্যবেক্ষণের সময় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কথাটি মনে রাখে৷
ছবি: Alex Pantcykov/dpa/Sputnik/picture-alliance
হলোকস্টের স্মৃতিস্থাপনায় খেলাধুলা
আউসভিৎজের মতো সংকটে বার্লিনের হলোকস্ট স্মৃতিচিহ্নও৷ দুই হাজার ৭১১ টি ধূসর রঙের কংক্রিট স্ল্যাব রয়েছে সেখানে৷ ২০০৫ সালে স্থাপন করার পর দুই দফা এটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ ২০১৪ সালে সেখানে আতশবাজি আর মলত্যাগের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Ulrich Baumgarten
ইব্রাহিমোভিচের ভাস্কর্য
গত বছরের অক্টোবরে সুইডেনের মালমোতে ফুটবলার ইব্রাহিমোভিচের একটি ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়৷ এই সুইডিশ তারকার অনবদ্য খেলোয়াড়ী জীবন শরু হয়েছিল এখানকার ক্লাব থেকে৷
ছবি: picture-alliance/TT NEWS AGENCY/J. Nilsson
ইব্রাহিমোভিচের পতন
এক মাস পর নভেম্বরে ইব্রাহিমোভিচ স্টকহোমের একটি ক্লাবের মালিকানার অংশীদার হন৷ সেই ক্লাব মালমো এফএফ-এর প্রধান প্রতিদ্বন্দী৷ এ কারণেই মালমো এফএফ-এর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ইব্রাহিমোভিচের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেন৷
ছবি: Reuters/TT News Agency/J. Nilsson
14 ছবি1 | 14
সংঘাতের সময় দেশের ইতিহাসের স্মারক রক্ষা করা সম্ভব?
নেতানিয়াহু সংঘাত শুরু করার পর থেকে নিজেদের দেশে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ করেছে ইরান৷ ফলে ইজসরায়েলি হানায় সংগ্রহশালা ও প্রত্নবস্তুগুলির ঠিক কী কী ক্ষতি হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া মুশকিল৷ ইসরায়েলের সব তথ্যও এই মুহূর্তে সহজলভ্য নয়৷
শুধু ইরানেই প্রায় ২৮টি ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট ও ৮৪০টা জাদুঘর রয়েছে৷ তার মধ্যে ৩০০টা সে দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রকের আওতায়৷ ইতিহাসবিদ এবং জার্মান আর্কিওলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের তেহরান শাখার প্রধান জুডিথ টোমালস্কির কথায়, ‘‘ইরানে ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের যসঙ্গে দেখা হয়৷'' প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে ‘মিউজ়িয়াম অব দ্য এনসিয়েন্ট নিয়ার ইস্ট'-এর প্রধান বারবারা হেলউইং-এর কথাতেও৷ একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইরানের জাতীয় সংগ্রহশালার পরিচিতদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করে তিনি জানতে পেরেছেন সংগ্রহশালা ও সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের কাছে অবস্থিত দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ খালি করা হয়েছে৷ সেই ছবিও দেখেছেন তিনি৷ জরুরি তৎপরতায় কাজ চলছে৷
ইরানের এই প্রাচীন জাতীয় জাদুঘরে প্রাক-ইসলামি যুগ থেকে ইসলামি যুগ পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে৷ জানা গিয়েছে, পাথরের তৈরি ভারি নিদর্শনগুলিকে রক্ষা করতে চারপাশে বালির বস্তা দেওয়া হচ্ছে৷ ইরানে কোনো বাঙ্কার নেই, ফলে বালিই ভরসা৷
যে মৃৎশিল্পে ঐতিহ্যের অনেক গুরুত্ব
04:01
This browser does not support the video element.
তবু ধ্বংসের পদধ্বনি...
কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইরানে সাসানীয় সাম্রাজ্যের সময়ে তৈরি ‘তাক-এ-বোস্তান' নামক প্রত্নক্ষেত্রটি ক্ষতিগ্রস্ত৷ সম্প্রতি সেটির ঠিক দু'কিলোমিটার দূরে ইরানের সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল, যদিও এই বিষয়েও বিশেষ কিছু জানা যাচ্ছে না৷
জুডিথ টোমালস্কি অবশ্য মনে করেন, ইরানের প্রশাসন জানে ঠিক কী পদক্ষেপ করতে হবে৷ তার দাবি, পার্সেপোলিস কমপ্লেক্স, বা তখত-এ-সোলাইমানের মতো খোলা প্রত্মতাত্ত্বিক ক্ষেত্রগুলিকে নিরাপত্তা দেওয়া কার্যত অসম্ভব৷ তিনি এ-ও মনে করেন, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগত সম্পদগুলি এখনো অতটা বিপন্ন নয়৷
প্রসঙ্গত, আগামী ৬ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই প্যারিসে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৭তম সম্মেলন রয়েছে৷ সেখানে সমস্ত হেরিটেজ সাইটের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে৷
যুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার ইতিহাস
বার্লিনের প্যার্গামন মিউজিয়ামে চলছে সিরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ে অভিনব একটি প্রদর্শনী৷ যুদ্ধের আগে ও পরে কীভাবে বদলেছে দেশটির সাংস্কৃতিক মানচিত্র, তা তুলে ধরছে এই প্রদর্শনী৷
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst/E. Wirth
ধুলোয় মিশেছে ‘আলেপ্পোর দুর্গ’
দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে যার উত্থান, সেই বিখ্যাত ‘আলেপ্পোর দুর্গ’-এর সর্বত্র যুদ্ধের স্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে৷ দুর্গের বিভিন্ন অংশ ধুলোয় মিশে গেলেও শিগগিরই তা পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হবে৷ উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সাল থেকেই এই দুর্গের নাম ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে৷
ছবি: Sultan Kitaz
ইতিহাস
বলা হয়, এই দুর্গের জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে৷ যুদ্ধে এই দুর্গের আশেপাশের অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অক্ষত রয়েছে মূল প্রাঙ্গন৷ দুর্গের সামনে একটি মসজিদ রয়েছে৷
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst/E. Wirth
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উমায়েদ মসজিদ বিশ্বের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি৷ অষ্টম শতাব্দীর গোড়ায় তৈরি এই মসজিদ ১৯৮০ সালে ইউনেস্কো’র ‘বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান’ তালিকায় স্থান পায়৷
ছবি: Issam Hajjar
বিশ্বখ্যাত আলেপ্পো বাজার
সিরিয়ার সবচেয়ে ঘন জনবসতি ছিল আলেপ্পো শহরে৷ সেখানের আলেপ্পো বাজার বা ‘সুক’-এ ছিল হাজারেরও বেশি ছোট ছোট দোকান৷ যুদ্ধে শহরের পুরোনো অংশ নিশ্চিহ্ন হলে তার ছোঁয়া লাগে এই বাজারেও৷ ফলে, হারিয়ে গেছে এই বাজারের বিশাল অংশ৷
ছবি: Issam Hajjar
বেল মন্দির
মেসোপটেমিয়ার আরাধ্য দেবতা ‘বেল’-এর এই মন্দিরের বয়স প্রায় ২,০০০ বছর৷ ২০১৫ সালে ইসলামিক স্টেটের বোমা হামলায় পালমিরা শহরে অবস্থিত এই মন্দিরটির কেন্দ্রীয় ভবনসহ অন্যান্য পবিত্র স্থান ধূলিসাৎ হয়ে যায়৷
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst/E. Wirth
পালমিরার ‘ভ্যালি অফ টুম্বস’
১৯৮০ সালে ইউনেস্কোর তালিকায় আসার পর থেকে এই অঞ্চলে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা৷ উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এই উপত্যকার একটি অংশ, যেখানে জার্মানি ও সিরিয়ার দুটি গবেষণা দল ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত কর্মরত ছিল৷ এই গবেষণা থেকে আঞ্চলিক ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানা যায়৷
ছবি: Sammlung M. Meinecke/A. Schmidt-Colinet
যুদ্ধের আগে আলেপ্পো
২০০১ সালে যখন এই ছবিটি তোলা হয়, তখনও কেউ জানত না, ঠিক কী হতে চলেছে এক দশক পরে৷ সোনালি সূর্যের আলোয় মোড়া আলেপ্পোর এই ছবিতে ঐতিহাসিক মসজিদটির মিনার দেখা যাচ্ছে, যা সেই সময় সংস্কার করা হচ্ছিল৷
ছবি: Peter Heiske
যুদ্ধবিধ্বস্ত আলেপ্পো
গত কয়েক বছরে সিরিয়ায় যুদ্ধের প্রতীক হয়ে উঠেছে আলেপ্পো৷ অতীতের এই বর্ধিষ্ণু শহর যুদ্ধের ফলে এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷ উপরের ছবিতে রয়েছে আবশির পাশা মসজিদ ও বেহরামিয়াহ মসজিদ চত্বরের ধ্বংসাবশেষের চিত্র৷ যুদ্ধের ফলে সিরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এই ছবি থেকে কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়৷
ছবি: Nabil Kasbo
8 ছবি1 | 8
অন্য দিকে, ইরান পাল্টা হামলা চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্মতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েল প্রশাসন৷ তেল আবিব মিউজ়িয়াম অব আর্ট তাদের সমস্ত সংগ্রহ মাটির নিচের ঘরগুলিতে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়৷ বন্ধ হয়ে যায় সংগ্রহশালা৷ জানা গেছে, আগামী ৩ জুলাই সর্বসাধারণের জন্য ফের খুলছে সংগ্রহশালার দরজা৷ জেরুসালেমের ইসরায়েল মিউজ়িয়ামে ইতিমধ্যেই জমছে ভিড়৷ পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম এই সংগ্রহশালায় প্রায় প্রায় পাঁচ লক্ষ প্রত্ন-নিদর্শন রয়েছে৷ ইসরায়েলে বর্তমানে ন'টি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে৷ প্রশাসনের দাবি, কোনো সংগ্রহশালা, প্রত্নবস্তু বা প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রের ক্ষতি হয়নি৷
বারবারা হেলউইং অবশ্য মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধে প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন৷ তার কথায়, ‘‘রক্ষা করা কার্যত অসম্ভব৷ ক্ষেপণাস্ত্র এসে আছড়ে পড়বে না, শুধু এই আশাটুকুই করা চলে৷''
আপাতত সেই আশাতেই রয়েছেন সারা বিশ্বের ইতিহাসপ্রেমী ও বিশেষজ্ঞরা৷