পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অভিযানে ১১ জন নিহত
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩এর জবাবে ফিলিস্তিনি জঙ্গিরা বৃহস্পতিবার ভোরে গাজা থেকে ইসরায়েলে ছয়টি রকেট নিক্ষেপ করে৷ ফিলিস্তিনের জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ রকেট হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এর আগে নাবলুসে ‘বড় অপরাধের' জবাব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল তারা৷
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, তারা গাজা থেকে ছোঁড়া ছয়টি রকেটের মধ্যে পাঁচটি ধরতে সমর্থ হয়েছে৷ বাকি রকেটটি একটি নির্জন জায়গায় পড়েছে৷
রকেট হামলার দুই ঘণ্টা পর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার কয়েকটি স্থান লক্ষ্য করে আকাশ থেকে হামলা চালায়৷ হামাস পরিচালিত একটি ‘অস্ত্র তৈরির কারখানা' ও ‘সামরিক শিবির' হামলার লক্ষ্য ছিল বলে পরে এক বিবৃতিতে জানায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী৷
এদিকে, জেরুসালেম, পশ্চিম তীর ও গাজার ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীরা বৃহস্পতিবার সাধারণ অবরোধ ডেকেছে৷ সে কারণে গাজায় স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক বন্ধ আছে৷
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, বুধবারের অভিযানে তারা সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ‘লুকিয়ে থাকা অ্যাপার্টমেন্ট' টার্গেট করেছিলেন৷ ঐ জঙ্গিরা একটি হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে জানায় তারা৷ এই সময় ইসরায়েলি বাহিনীর দিকে পাথর, বিস্ফোরক ও মলটভ ককটেল ছোঁড়া হলেও তাদের কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী৷
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বুধবার মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বয়স ১৬ থেকে ৭২ বছরের মধ্যে৷
২০০৫ সালে দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার পর এটিই পশ্চিম তীরে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা৷
ইসলামিক জিহাদ বলছে, হামলায় তাদের একজন কম্যান্ডার নিহত হয়েছেন৷
দ্য লায়ন্স ডেন নামে নাবলুসের স্থানীয় এক জঙ্গি গোষ্ঠী বলছে, নিহত ছয়জন বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন৷
ইসরায়েলের কয়েকটি শহরে ফিলিস্তিনিদের কয়েকবার হামলার পর গত একবছরে পশ্চিম তীরের নাবলুস ও পার্শ্ববর্তী জেনিনে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল৷
চলতি মাসে পূর্ব জেরুসালেমের এক বাসস্টপে এক ফিলিস্তিনি তার গাড়ি তুলে দিলে তিনজন মারা যান৷ গতমাসে একটি সিনাগগের বাইরে গুলিতে প্রাণ হারান সাতজন৷
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে পশ্চিম তীরে উত্তেজনা অনেক বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ ‘‘আমাদের প্রথম কাজ হবে, উত্তেজনা যেন আর না বাড়ে সেই উদ্যোগ নেয়া,'' বলেন গুতেরেস৷
এদিকে, মিশর ও জাতিসংঘের উদ্যোগে মধ্যস্থতার চেষ্টা চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ‘সংঘাতের মাত্রা দেখে ওয়াশিংটন খুব উদ্বিগ্ন'৷
ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, পশ্চিম তীরে সংঘাত বাড়ার ঘটনায় ইইউ গভীরভাবে শঙ্কিত৷
সাধারণ নাগরিকদের উপর সংঘাতের নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্স ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা ও আনুপাতিক হারে শক্তি প্রয়োগের বাধ্যবাধকতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে৷
পরিসংখ্যান
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৬০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন৷ এদের মধ্যে শিশু ও জঙ্গিও রয়েছেন৷
এই সময়ে তিন শিশুসহ ইসরায়েলের নয়জন, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও ইউক্রেনের একজন সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান বলে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে৷
১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েলের দখলে আছে পশ্চিম তীর৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)