গত ২০ বছরেরও বেশি সময় পর ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার দখলকৃত পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে৷ ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনায় ক্রুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ঊর্ধ্বতন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা হানান আশরাউয়ি বলছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ ‘‘ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা' প্রদর্শন৷ ‘‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখার শর্ত মানার চেয়ে অবৈধ বাসিন্দাদের সন্তুষ্ট রাখতেই ব্যস্ত ইসরায়েল'', বলেন তিনি৷
উল্লেখ্য, নতুন বসতিটি স্থাপিত হবে আমোনায়, যেখান থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল৷ ঐ ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আমোনার বাসিন্দাদের জন্য নতুন সম্প্রদায় সৃষ্টি করার অঙ্গীকার করেছিলেন৷ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে সদস্যদের তাঁর এই অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন নেতানিয়াহু৷
Hanan Ashrawi on Conflict Zone
26:00
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দখলকৃত এলাকায় বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিল ইসরায়েল৷ কারণ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের মতো ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপের কড়া সমালোচক নয়৷ গত ডিসেম্বরে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে বসতি স্থাপন অবৈধ ঘোষণা করে জাতিসংঘ একটি রেজোলিউশন পাস করে৷ বারাক ওবামা প্রশাসন এই রেজোলিউশন পাসে কোনো ভেটো দেয়নি৷ সেই সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
এদিকে, ইসরায়েলের নতুন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোরালো সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া জানায়নি হোয়াইট হাউস৷ তারা শুধু বলেছে, ইসরায়েলের পদক্ষেপ ‘শান্তি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়'৷ হোয়াইট হাউস আশা করছে, ইসরায়েল ভবিষ্যতে সংযম দেখাবে৷
প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কিছু ছবি
১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে জয়ের পর, তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের কাছে জড়ো হয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা৷ ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন ফটো সাংবাদিক ডেভিড রুবিংগার৷ দেখুন সদ্য প্রয়াত সেই ফটোগ্রাফারের কিছু বিখ্যাত ছবি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
১৯৬৭ সাল: গাজা স্ট্রিপ
১৯২৪ সালে ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড রুবিংগার৷ কিন্তু নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে প্যালেস্টাইনে পালিয়ে গিয়েছিলেন৷ নিজে বাঁচলেও, মা মারা যান হলোকস্টে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলন, সে সময়ই তাঁর মধ্যে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়, পরবর্তীতে ফটোসাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছ’দিনের সেই যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারা কীভাবে মিশরের সেনা ও ফিলিস্তিনিদের আটক করছে৷
ছবি: Getty Images/GPO/David Rubinger
ওয়েস্টার্ন ওয়ালে একত্রিত প্যারাট্রুপাররা
ডেভিড রুবিংগারের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ এটি৷ এখানে ইসরায়েলি সেনাদের জেরুজালেমের তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের ওপর দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপ দখল করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল৷ রুবিংগার এই ছবিটি তোলেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে৷ ইসরায়েলি সরকার খুব কম দামে সকলের কাছে এই ছবিটি বিক্রি করে৷ ফলে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় ছবিটি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
যুদ্ধের সময় আরিয়েল শারন
এই ছবিটি সাবেক ইসরায়েলি সেনা প্রধান আরিয়েল শারনকে (মাঝে) দেখা যাচ্ছে অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে, ১৯৬৭ সালের ১ জুন ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে৷ ছ’দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন চারেক আগে তোলা এই ছবিটি৷ শারন পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০১৪ সালে মারা যান তিনি৷
ছবি: Getty Images/GPO/Newsmakers/David Rubinger
দ্বন্দ্ব সংঘাতের ইতিহাসের প্রামাণ্যচিত্র
এ ছবিতে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তের দিকে চলেছে ইসরায়েলি সেনারা৷ ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে সিরিয়া যখন গোলান উপত্যকায় হামলা চালায়৷ রুবিংগার সেসময় জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ১০টি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে গিয়ে ছবি তোলেন৷ ২০০৭ সালে নিজের বইটিতে তিনি লেখেন, ‘‘এই ছবিগুলোর দিকে তাকালে মনে হয়, আমি সত্যিই ভাগ্যবান ছিলাম৷ তাই বেঁচে ফিরতে পেরেছি৷’’ তাঁর বইটির নাম ‘ইসরায়েল থ্রু মাই লেন্স: একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে ৬০ বছর’৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধ
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধে সিরিয়ার সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ইসরায়েল৷ এ যুদ্ধ অক্টোবর যুদ্ধ নামেও পরিচিত৷ রুবিংগারের এই ছবিতে গোলান উপত্যকায় ইসরায়েলি ট্যাংকের বহর আর সিরীয় সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিও ফুটে উঠেছে ছবিতে৷ আশির দশকেও এ অঞ্চলে উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলি সেনা আর বিষাদগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের ছবি তুলেছিলেন রুবিংগার৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
জাতি নিমার্ণের আলোকচিত্রী
ডেভিড রুবিংগার তাঁর জীবনের দীর্ঘ ৫০ বছর ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন৷ ইসরায়েলের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস ডেভিডকে রুবিংগারকে ‘একটি জাতি তৈরির আলোকচিত্রী’ হিসেবে গণ্য করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/G. Cattermole
6 ছবি1 | 6
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের দাবি ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয়৷ ইসরায়েলের মানবাধিকার সংস্থা বি'টিসেলেম এর হিসেবে, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ ইহুদি বাস করছেন৷
১৯৯৩ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তিতে যে পরিমাণ বসতি থাকার কথা বলা হয়েছিল এখন সেখানে তার প্রায় তিনগুন বসতি আছে৷
ইসরায়েল বলে থাকে, ভবিষ্যেত শান্তিচুক্তি হলে এই বসতিগুলো ইসরায়েল রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে৷ বিনিময়ে, ফিলিস্তিনকে সমসংখ্যক ও একই গুনসম্পন্ন জমি দেয়া হবে৷