1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন এশিয়া কাপে পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে ভারত?

গৌতম হোড় দিল্লি | শময়িতা চক্রবর্তী কলকাতা
২৯ জুলাই ২০২৫

ঢাকায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)-র বৈঠকের পর ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে, আমিরাতে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ হবে ১৪ সেপ্টেম্বর।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চার মারছেন বিরাট কোহলি।
আমিরাতে আবার দেখা যাবে ক্রিকেটের মাঠে ভারত ও পাকিস্তানের মহারণ। ছবি: Altaf Qadri/AP/picture alliance

শুধু এই একটি ম্যাচই নয়, ওই প্রতিযোগিতায় আরো দুইবার ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের মুখোমুখি হতে পারে। অর্থাৎ, এশিয়া কাপে তিনবার ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।

এর আগে ভারত একাধিকবার জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায়  বসতে রাজি নয়। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়, ভারতে যে সন্ত্রাসীরা হামলা করে, তাদের মদতদাতা পাকিস্তান। পহেলগামের পরেও ভারত বলেছে, রক্তস্রোত ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। এই একই যুক্তিতে পাকিস্তানকে সিন্ধুর জল দেওয়াও বন্ধ করেছে ভারত। কিছুদিন আগে মাস্টার্স ক্রিকেট টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ খেলেনি ভারত।

সেই ভারতই এশিয়ান কাপ ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে রাজি হলো কেন? পহেলগামকাণ্ড এবং তারপর অপারেশন সিন্দুরের স্মৃতি এখনো টাটকা। এখনো পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ, তাদের বিমানকে ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না, সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি বাতিল করা হয়েছে, অন্য সব নিষেধাজ্ঞাও তোলা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ভারত কেন এশিয়া কাপে খেলতে রাজি হলো? বিশেষত, এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশে একটা বিশাল আলোড়ন উঠবে জানা সত্ত্বেও সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকায় এসিসি-র বৈঠক

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই আগেই বলেছিল, তাদের কোনো প্রতিনিধি ঢাকায় এসিসি-র বৈঠকে যোগ দেবেন না। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতকে সমর্থন করেছিল শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানসহ কয়েকটি দেশ। তারপরেও বৈঠক অন্য দেশে সরানো হয়নি। বরং একটা সমাধানসূত্র বের করা হয়। তা হলো, ভারত ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেবে।

বিসিসিআইয়ের তরফে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা। বৈঠকে আলোচনার পর এশিয়া কাপের সূচি ঘোষণা করা হয়। জানানো হয়, এশিয়া কাপ হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ হবে ১৪ সেপ্টেম্বর। সেটা গ্রুপ ম্যাচ। একেকটা গ্রুপ থেকে দুইটি টিম উঠবে। ভারত ও পাকিস্তান এক গ্রুপে আছে। সঙ্গে আছে ওমান ও আমিরাত। অন্য গ্রুপে আছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হংকং।

এরপর চার দলকে নিয়ে হবে সুপার ফোর। প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের খেলা হবে। ভারত ও পাকিস্তান দুইটি দলই সুপার ফোরে উঠবে বলে ধরে নেযা যায়। সেক্ষেত্রে আবার সেখানে তাদের খেলা হবে। এরপর দুইটি দল যদি ফাইনালে ওঠে, তাহলে আবার তারা মুখোমুখি হবে। এভাবেই অন্তত তিনবার ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হতে পারে।

বিসিসিআই ও সরকার চুপ

এসিসি-র ঘোষণার পর ভারত-জুড়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ প্রশ্ন করছেন, ভারত কী করে এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলবে, কেউ বলছেন, খেলার মধ্যে রাজনীতি ঢোকানো উচিত নয়।

সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল কতটা প্রভাব ফেলবে পাকিস্তানে?

11:56

This browser does not support the video element.

শুধু চুপ করে বসে আছে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিসিসিআই। এখন সংসদের বর্ষা অধিবেশন চলছে। রাজীব শুক্লা কংগ্রেস সাংসদ। এসিসি-র ঘোষণার পর সাংবাদিকরা রাজীব শুক্লকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দিলো বিসিসিআই? রাজীব শুক্লা একটা কথাও বলেননি।

কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের তরফে একটা কথাও বলা হয়নি। বিজেপির যে ছোট-বড় নেতা যারা পাকিস্তান নিয়ে সবসময় সোচ্চার থাকেন, তারাও চুপ।

বার্তাসংস্থা আইএএনএস-কে বিসিসিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ''এসিসি-র বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। ভারত হলো এশিয়া কাপের হোস্ট কান্ট্রি বা আয়োজক দেশ। এখন আর কোনো পরিবর্তন হবে না। সরকারিভাবে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে নির্ধারিত দিনে ম্যাচ হবে।''

জুনিয়র হকিতেও ভারত-পাকিস্তান এক গ্রুপে

জুনিয়র বিশ্বকাপ হকির আসর বসবে চেন্নাই ও মাদুরাইতে। ২৪টা দেশের দল অংশ নেবে। এখানেও ভারত ও পাকিস্তান এক গ্রুপে আছে। ২৮ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা চলবে।

জুনিয়র বিশ্বকাপের আসরেও পাকিস্তানকে ভারতে এসে খেলার অনুমতি দিতে দিল্লি বাধ্য হয়েছে।

ফলে দেখা যাচ্ছে, রক্ত ও জল, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে হতে না পারলেও, ক্রিকেট ও হকি খেলা হতে পারে।

বিরোধীদের সমালোচনা

বিরোধীরা ঠিক এই জায়গাটাই ধরেছে। সোমবার অপারেশন সিন্দুর নিয়ে আলোচনার সময় এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ''তোমরা বলছো, রক্ত ও জল একসঙ্গে বইতে পারে না, এখন তুমি ক্রিকেট ম্যাচ খেলবে? আমার বিবেক আমাকে এই ম্যাচ দেখার অনুমতি দেবে না। সরকার বলেছে, ২৫জনের মৃত্যুর বদলা নিতে তারা অপারেশন সিন্দুর করেছিল। এখন বলছে, তোমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ দেখো।''

উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেত্রী প্রিয়াংকা চতুর্বেদী বলেছেন, ''এটা ভারত সরকার ও বিসিসিআইয়ের ব্যর্থতা। যে সাংসদরা অপারেশন সিন্দুর নিয়ে আসল তথ্য জানানোর জন্য সরকারের অনুরোধে বিদেশে গেছিলেন, তার মধ্যে আমিও ছিলাম। আমরা একটা কথাই বলেছিলাম, সন্ত্রাসের মদতদাতার সঙ্গে আলোচনা সম্ভব নয়। ভারত সরকার বলেছে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না। সাংস্কৃতিক সব আদান-প্রদান বন্ধ। তারপর কী করে এই ম্যাচ হতে পারে? দেশের মানুষ একজোট হয়ে এর বিরোধিতা করবে।  পহেলগামের পর আগুন এখনো জ্বলছে।''

কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি বলেছেন, ''বুলেট ও বল একসঙ্গে চলতে পারে না। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচে ভারত কেন রাজি হলো?'' আবার কার্তি চিদম্বরমের মতো কংগ্রেস সাংসদ বলেছেন, ''পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ খেলাটা কোনো ভুল নয়।'' সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেছেন, ''দেশের স্বার্থ সর্বোচ্চ হওয়া উচিত।'' 

সাবেক ক্রিকেটাররা কী বলছেন?

ভারতের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায় ২০২২ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার বিরোধিতা করেছিলেন। এখন তিনি বলছেন, ''খেলাধুলা বিষয়টি আলাদা। আমি খুশি যে, তারা খেলছে। পহেলগাম হওয়া উচিত নয়, মৃত্যু হওয়া উচিত নয়। কিন্তু স্পোর্টস হলো স্পোর্টস। ঠিক আছে। খেলা হওয়া উচিত। সৌরভ বলেছেন, আগেও নিরপেক্ষ মাঠে খেলা হয়েছে।''

আরেক সাবেক অধিনায়ক আজহারউদ্দিন বলেছেন, ''আমি প্রথম থেকেই বলছি, দ্বিপাক্ষিক সিরিজে না খেললে, কোনো প্রতিযোগিতায় খেলার দরকার নেই। এসিসি বা আইসিসি প্রতিযোগিতায় ভারতের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা উচিত নয়।''

পশ্চিমবঙ্গের ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং ভারতের হয়ে খেলা মনোজ তিওয়ারি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''ক্রিকেটার হিসাবে আমার মনে হয়, আমাদের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা উচিত নয়। পহেলগামে কী ঘটনা ঘটেছে, আমরা জানি, পাকিস্তান এর সঙ্গে জড়িত। আমাদের জাতীয় স্বার্থের উপরে খেলা নয়।''

মনোজ বলেছেন, ''বিসিসিআই সরকারের অনুমতি পেলে তবেই এগোয় এবং দিনক্ষণ ঠিক করে। প্লেয়ারদের সঙ্গে বিসিসিআইয়ের চুক্তি আছে। বিসিসিআই যে নির্দেশ দেবে, তা তারা মানতে বাধ্য। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা উচিত নয়। ক্রিকেট বা যে কোনো খেলাই দেশের স্বার্থের উপরে নয়। টাকার কারণেও খেলা উচিত নয়।''

আগেও হয়েছে

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''ভারতীয় দল এর থেকে অনেক খারাপ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ খেলেছে। ১৯৯৯ সালে ম্যানচেস্টারে ভারত যখন পাকিস্তানের সঙ্গে খেলে তখন কার্গিল যুদ্ধ চলছিল। ম্যাচটা জেতার পর অধিনায়ক আজহারউদ্দিনের কাছে প্রথম শুভেচ্ছাবার্তা আসে সেনাপ্রধানের কাছ থেকে। তারপর থেকে এটা দস্তুর, এই ম্যাচটা জিতলে সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনীর প্রধানের বার্তা আসে।''

গৌতম ভট্টাচার্যের মতে, ''এটা নতুন কিছু নয়। অপারেশন সিন্দুর কিছুদিন আগে হয়ে গেছে। এবারের পরিস্থিতি আলাদা অন্য কারণে। করাচিতে বসে বসে কেউ কোনো পোস্ট করলে কলকাতায় বসে তা দেখা যাচ্ছে। এটা আগে ছিল না।  ধরা যাক শাহিদ আফ্রিদি, যার উপস্থিতির জন্য লেজেন্ডস ম্যাচ খেললো না ভারত, সেই আফ্রিদি ম্যাচের দিন বা আগের দিন যদি বলেন, হিন্দুস্তানকে হারিয়ে প্রমাণ কর, ওরা কাশ্মীরে ভুল করেছে, তখন কী হবে। এরকম বিবৃতি আসতেই পারে।''

গৌতম মনে করেন, ''এরপরেও খেলতে হবে, কারণ, এর সঙ্গে অর্থনীতিও জড়িত আছে।  সৌরভ যখন ভারতের অধিনায়ক হয়ে টিম নিয়ে পাকিস্তান গেছিলেন, তখন বাজপেয়ী বলেছিলেন, দিল জিতে এসো, বাকিটা আমি বুঝে নেবো। হয়ত মোদী বা অমিত শাহ এই কথাটাই বলছেন।''

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''খেলা সবসময় ট্র্যাক টু ডিপ্লোমেসি। ট্র্য়াক ওয়ান হলো, সরাসরি চুক্তি, যুদ্ধ, যুদ্ধবিরতির মতো বিষয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরির উদ্দেশ্যেই তো খেলার সূত্রপাত। গ্রিসে বহুদিন আগে অলিম্পিকের মধ্যে দিয়ে তার সূত্রপাত হয়। খেলাটাকে ট্র্যাক টু ডিপ্লোমেসির জন্য খুলে রাখা উচিত। খেলা তো খেলাই, তার কোনো জাতি,ধর্ম থাকা উচিত নয়।''

অলিম্পিকের জন্য?

ডিডাব্লিউকে সূত্র জানাচ্ছে, অপারেশন সিন্দুরের পর ভারত যে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলছে, জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে তামিলনাড়ুতে খেলার অনুমতি দিচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে খেলছে, তার প্রধান কারণ হলো তারা ২০৩৬ সালের অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করতে চায়।

অলিম্পিক চার্টারের ৪৪ নম্বর নিয়মে বলা হয়েছে, কোনো দেশ অন্য কোনো দেশকে জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বন্ধ করতে পারে না। অলিম্পিকের আয়োজনের ক্ষেত্রে অসম্ভব আগ্রহী ভারত চাইছে, তাদের অলিম্পিক আয়োজন করার পথে কোনো বাধা না আসুক। সেজন্যই ভারতে খেলার জন্য পাকিস্তানকে তাদের অনুমতি দিতে হচ্ছে। এশিয়া কাপেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলছে। এশিয়া কাপের আয়োজক দেশ হলো ভারত।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ