দুই দিনের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচির পর, বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ১৮ দল এবার সর্বাত্মক লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে৷ এই অবরোধ হবে ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা জানুয়ারি থেকে৷
বিজ্ঞাপন
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সোমবার রাতে তাঁর বসুন্ধরার বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যে কোনো মূল্যে ৫ই জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করা হবে৷ গণতন্ত্রকে বাঁচাতে এর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি জানান৷ তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে৷ নেতা-কর্মীদের ধরে ধরে জেলে ঢোকানো হচ্ছে৷ দেশ থেকে গণতন্ত্র মুছে দেয়ার সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে৷ কিন্তু দেশের মানুষ তা মানবে না৷ এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশের মানুষকে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে৷ তাই তিনি ১লা জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত লাগাতার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে দেশবাসীকে তা পালনের আহ্বান জানান৷ একই সঙ্গে মঙ্গলবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে৷ গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা এবং খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে বের হতে না দেয়ার প্রতিবাদেই এই বিক্ষোভ কর্মসূচি৷
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মনে করে, উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই ৫ থেকে সাড়ে ৫ ভাগের বেশি হবে না – বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যা হবে একটি বড় ধাক্কা৷
ছবি: DW/M.Mamun
অনিশ্চিত অপেক্ষা
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন এই মহিলা যাত্রী৷ অবরোধের কারণে ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয় ঘটায় কখন যে ট্রেন আসবে তার কোনো ঠিক নেই৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বিপর্যস্ত অর্থনীতি
অবরোধের কারণে সড়ক ও নৌপথের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে রেল যোগাযোগ৷ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘকালীন সংকটে পড়তে যাচ্ছে৷ তাই সহিংসতা বন্ধের দাবিতে ঢাকায় সম্প্রতি সাদা পতাকা মিছিল করেছেন সর্বস্তরের ব্যবসায়ী৷
ছবি: DW/M.Mamun
নীরব বাস টার্মিনাল
মহাখালী বাস টার্মিনালে থেমে আছে দূরপাল্লার বাস৷ বিরোধী জোটের চতুর্থ দফায় দেশব্যাপী টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের কারণে বাসগুলো টার্মিনাল ছেড়ে যেতে পারেনি৷ এতে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি তো হয়েছেই, ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতির হিসেব নেই৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
চারদিন ধরে কাজ নেই
আশি বছর বয়সি শুকুর আলীর উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন এই ঠেলাগাড়ি৷ গত চারদিন ধরে গাবতলীতে কোনো পণ্য না আসায় অলস বসে আছেন তিনি৷ এই কদিনে একটি পয়সাও হাতে না আসায় কিভাবে চলবে, তাই ভাবছেন এই বৃদ্ধ৷ আর ভাবছেন, নিজের প্রিয় দেশ আজ কোন পথে?
ছবি: DW/M.Mamun
ভোগান্তির শেষ কবে?
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে নিয়মিত জুতার পসরা সাজিয়ে বসেন শুভ৷ অন্য সময় টার্মিনালে বহু মানুষের আনাগোনা থাকায় ব্যবসা মন্দ চলে না৷ তবে অবরোধের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বন্ধ তার বিক্রিও৷ শুভ রাজনীতি বোঝে না, ওর মনে শুধু প্রশ্ন, ওদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের এই ভোগান্তির শেষ কবে?
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
মহিলা শ্রমিকদের কি হবে?
অবরোধের কারণে পরিবহণ সংকট ও সহিংসতার ভয়ে এই পোশাক শ্রমিকরা কাজে যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে৷ না গেলে চাকরির ভয় , তাছাড়া সংসার চলবে কি করে,আছে সেই চিন্তাও? ছবিটি ঢাকার কল্যাণপুরের৷ টানা অবরোধের কারণে পোশাক খাতে গড়ে প্রতিদিন ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷
ছবি: DW/M.Mamun
অলস সময়
অবরোধের কারণে ট্রাক শ্রমিকদের বেশিরভাগ সময় কাটে বসে থেকে৷ ঢাকার গাবতলীতে কাজের অপেক্ষায় আছেন এই শ্রমিকরা৷ দেশের রাজনীতিকরা কি চায় সেটা তারা জানতে চান না৷ তবে তাদের চাহিদা খুব বেশি নয় – শুধু পেট ভরে খাওয়া, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো আর নিশ্চিন্তে ঘুমানো৷
ছবি: DW/M.Mamun
আবারো শূন্য হাতে?
অবরোধের কারণে নৌকা চালকদের ব্যস্ততা নেই বললেই চলে৷ ঢাকার সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের এই নৌকা চালকদের মনে প্রশ্ন – কোনো যাত্রী আসবেন কি, নাকি শুধুই অপেক্ষা, অর্থাৎ আবারো খালি হাতে বাড়ি ফেরা?
ছবি: DW/M.Mamun
কাজ বন্ধ বলে তো আর খাওয়া বন্ধ নয়!
ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পণ্য কম আসায় কাজ নেই শ্রমিকদের৷ কাজ বন্ধ বলে তো আর খাওয়া দাওয়া বন্ধ থাকতে পারে না! দু’বেলা যে খাওয়া চাই৷ খেতে বসে কেউ কেউ ভাবছেন ঘরে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যরা কি কিছু খেতে পেল? কারণ গত কয়েকদিন ধরে যে কোনো রোজগার নেই৷
ছবি: DW/M.Mamun
সাধারণ মানুষেরই কষ্ট
কারওয়ান বাজারে ভ্যান শ্রমিকদেরও কাজ নেই৷ শুয়ে বসে কতক্ষণ? আর খিদে পেলে? অবরোধের কারণে যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের অবস্থা নিয়ে কি কেউ ভাবছেন?
ছবি: DW/M.Mamun
আড়ত শ্রমিকদেরও কাজ নেই
অবরোধের কারণে কারওয়ান বাজারের এই আড়ত শ্রমিকরা তাস খেলে সময় কাটাচ্ছেন৷ কিন্তু এভাবে ক’দিন চলে? সংসারের কথা মনে হলে তাস খেলে সময় কাটানোর সামান্য আনন্দটুকুও যে আর থাকে না!
ছবি: DW/M.Mamun
11 ছবি1 | 11
খালেদা জিয়ার আরেক উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে জানান, গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে৷ তিনি অভিযোগ করেন, রবি ও সোমবার খালেদা জিয়া কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাসার বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন৷ শুধু তাই নয়, যাঁরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷ এমনকি, যাঁরা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘেষণা করছেন তাঁদেরও একের পর এক গ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷ সরকার বিএনপির প্রায় সব নেতাকে এরই মধ্যে জেলে পাঠিয়েছে৷ তবে তিনি জানান, এসব করে খালেদা জিয়ার মনোবল ভাঙতে পারেনি সরকার৷ তিনি যে কোনো অবস্থায় নেতা-কর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷ আহমেদ আজম খান বলেন, দুই দিনের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' শেষ হওয়ার পর তারা এখন নির্বাচনের তফশিল বাতিল না হওয়া পর্যন্ত সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন৷
খালেদার বাসায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার
সোমবার সন্ধ্যায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় যান৷ এর কিছুক্ষণ পরই সেখানে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী ও খালেদা জিয়ার দুই উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহউদ্দিন আহমেদ৷ প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে চলে যান ব্রিটিশ হাই কমিশনার৷ তবে বের হওয়ার সময় তিনি বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করেননি৷ ব্রিটিশ হাই কমিশনার খালেদা জিয়ার বাসায় যাওয়ার আগে বালুর বস্তা ও ট্রাক সরিয়ে দিয়ে তাঁকে ঢোকার জয়াগা করে দেয় পুলিশ৷
রাত ৮টার দিকে খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বের হওয়ার পর পরই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরীকে আটক করে পুলিশ৷ খালেদা জিয়ার দুই উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহউদ্দিন আহমেদ খালেদার বাসা থেকে বের হওয়ার পর পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আবার ভিতরে ঢুকে পড়েন৷ গ্রেপ্তার করা হতে পারে আশঙ্কায় তাঁরা ভেতরেই অবস্থান করছেন৷ পুলিশ শমসের মুবিনকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেছে৷