বাংলাদেশে তুবা গ্রুপের ৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেয়ার পর আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা৷ বুধবার তাঁরা বাড্ডা এলাকায় মিছিল করতে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তা পণ্ড করে দেয়৷ আটক করে শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মোশরেফা মিশুকে৷
বিজ্ঞাপন
ঈদের আগে বেতন-বোনাস না পেয়ে তুবা গ্রুপের পাঁচটি পোশাক কারখানার ১,৬০০ জন শ্রমিক অনশন শুরু করেন৷ ১১ দিন অনশন করার পর ঈদ পার করে দুই কিসত্মিতে তাঁদের বেতন দেয় বিজিএমইএ৷ তবে তাঁদের বোনাস এবং ‘ওভারটাইম' ভাতা এখনো দেয়া হয়নি৷ ওদিকে এরই মধ্যে মালিক দেলোয়ার হোসেন জামিনে ছাড়া পান৷
কিন্তু পাওনা আদায়ে শ্রমিকরা অবৈধ ধর্মঘট করেছেন, এমন অজুহাত দেখিয়ে তুবা গ্রুপের পাঁচটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেন৷ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী, কারখানা বন্ধের এই ঘোষণা গত ১১ই জুন থেকে কার্যকর হবে৷ তুবা গ্রুপের শ্রমিকরা কারাখানা বন্ধের এই ঘোষণা পান সোমবার৷ ফলে পাঁচটি পোশাক কারখানার ১,৬০০ জন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন৷
এর প্রতিবাদে তুবা গ্রুপের শ্রমিকরা বুধবার বিকেলে ঢাকার গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে মিছিল-সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়৷ পুলিশের বাধা ও লাঠিপেটার মুখে শ্রমিকরা তাঁদের কর্মসূচি পালন করতে পারেননি৷
বুধবার দুপুরের পর থেকেই গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে তুবার শ্রমিকেরা জড়ো হতে শুরু করেন৷ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মিছিল শুরু করার আগ মুহূর্তে বাড্ডা থানা পুলিশ বাধা দেয়৷ পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নেয়৷ এক পর্যায়ে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয় এবং পুলিশ শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে৷ এরপর মিছিলে যোগ দিতে আসা তুবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মোশরেফা মিশুকে আটক করে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ৷
এদিকে আটকের আগে মোশরেফা মিশু সাংবাদিকদের কারখানা বন্ধের আইনি অবস্থা ব্যখ্যা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী কারখানা লে-অফ করলে শ্রমিকদের কয়েক কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ করতে হবে৷ সেই ভয়েই দেলোয়ার হোসেন অবৈধ ‘শ্রমিক ধর্মঘট' দেখিয়ে কারখানা বন্ধ করেছেন৷''
পোশাক শ্রমিকদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত
বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন সম্প্রতি গিয়েছিলেন একটি পোশাক কারখানায়৷ তাঁর অভিজ্ঞতা ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
ঢাকার পূর্ব রামপুরার টিএম গার্মেন্টস-এর এই কর্মীরা জানেন না তাঁদের ভবিষ্যত৷ কারণ তাঁদের এখানে শ্রম আইন এবং মজুরি বোর্ড পুরোপুরি কার্যকর নেই৷ তাঁদের অগ্নিনিরাপত্তাও পর্যাপ্ত নয়৷ এমনকি ভবনটিও পুরনো৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সংসার চালানো কষ্টকর
টিএম গার্মেন্টস-এর পোশাক কর্মী সুফিয়া বেগম যে বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালান কষ্টকর৷ তবুও তার এরচেয়ে বেশি কিছু করার সুযোগ নেই৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সর্বনিম্ন বেতনও পান না
সর্বনিম্ন বেতন ৩০০০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও রাহেলা আক্তার তা পান না৷ তাঁকে বেতন দেয়া হয় ২৫০০ টাকা৷ সে নতুন বলেই তাঁকে নাকি কম বেতন দেয়া হয়৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
নতুন, তাই বেতন কম
সুমি বেগমেরও বেতন অনেক কম৷ কারণ তিনিও নতুন৷ খরচে পোষায় না বলে তাঁরা পাঁচজন মিলে একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকেন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
গেটে তল্লাশি
এই পোশাক কর্মীদের গার্মেন্টস-এ প্রবেশ এবং বের হওয়ার আগে গেটে তল্লাশী চালানো হয়৷ আর ‘ফ্রেশ’ হতে গেলেও বলে যেতে হয়৷ আর ফিরতে যদি একটু দেরি হয়, তাহলে মেলে গালমন্দ৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ
ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেন এঁরা৷ তাপ ওপর মেশিনপত্রও পুরনো৷ কাজ করতে গিয়ে পুরনো মেশিনপত্রের কোনো ক্ষতি হলে কখনো কখনো জরিমানাও করা হয় তাঁদের৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
রঙিন স্বপ্ন
রঙিন পোশাক আর রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসেন কুড়িগ্রামের মৌসুমী৷ পোশাক কারখানায় কাজ নেয়ার পর ধীরে ধীরে তাঁর স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
শ্রমিকরা অপুষ্টির শিকার
আছিয়া বেগমকে দেখেই বোঝা যায় তিনি অপুষ্টির শিকার৷ সকাল-সন্ধ্যা গার্মেন্টস-এ কাজ করেও তিনি জোটাতে পারেন তাঁর প্রয়োজনীয় খাবার৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
8 ছবি1 | 8
মিশু বলেন, ‘‘তুবার মালিককে আমরা সহজে ছেড়ে দেব না৷ শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে শ্রম আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে৷ ইতিমধ্যে আইনজীবীর সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয়েছে৷ একই সঙ্গে তুবার শ্রমিকদের নিয়ে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে৷''
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা এখনো পরিশোধ করা হয়নি৷ পাওনা আদায়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম আমরা৷ কিন্তু পুলিশ স্বৈরাচারী কায়দায় আমাদের কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি৷''
মিশু আরও বলেন, ‘‘শ্রমিকরা যখন মজুরি পান না, তখন পুলিশ এগিয়ে আসে না৷ কিন্তু দাবি আদায়ে যখন তাঁরা রাস্তায় নামেন, তখন পুলিশ তাঁদের ওপর চড়াও হয়৷''
তবে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, ‘‘এটি খুবই ব্যস্ততম সড়ক৷ এখানে মিছিল-সমাবেশের পূর্ব অনুমতি না থাকায় তাঁদের বাধা দেওয়া হয়৷'' মোশারেফা মিশুকে আটকের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘‘তিনি আমাদের হেফাজতে আছেন৷'' তিন মাসের মজুরি, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাসের দাবিতে তুবা গ্রুপের পাঁচ কারখানার শ্রমিকরা ঈদের আগের দিন থেকেই শুরু করে টানা ১১ দিন উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায় কারখানায় অনশন করেন৷ শেষে বিজিএমইএ-র মধ্যস্থতায় ৬ এবং ৭ই আগস্ট দুই মাস এবং ১০ আগস্ট এক মাসের বকেয়া মজুরি ও ওভারটাইমের টাকা পান শ্রমিকরা৷ বিজিএমইএ-র সভাপতি তখন আশ্বাস দেন, শীঘ্রই শ্রমিকরা ঈদের বোনাস ও ওভারটাইম ভাতা পাবেন৷ কিন্তু তা এখনো দেয়া হয়নি৷ উল্টো দেয়া হয়েছে কারখানা বন্ধের নোটিস৷ সোমবার গ্রুপের তুবা টেক্সটাইল, তায়েব ডিজাইন, মিতা ডিজাইন, বুকশান গার্মেন্টস ও তুবা ফ্যাশনসের কারখানার ফটকে নোটিস লাগিয়ে দেন দেলোয়ারের লোকজন৷ তবে এর আগে বিজিএমইএ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরা আইন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাবেন৷
এদিকে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দেলোয়ারের এই সিদ্ধান্তকে ‘আইনসম্মত' বলে অভিহিত করেছেন৷ বিজিএমইএ-র সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘‘পাওনা আদায়ের জন্য উত্পাদন বন্ধ করা উচিত নয়৷ ফলে দেলোয়ার আইনসম্মতভাবেই কারখানা বন্ধ করেছেন৷'' তবে শ্রম বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘শ্রমিকরা বেআইনি ধর্মঘট করেননি৷ ফলে ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী, কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অবৈধ৷ মালিক এ ক্ষেত্রে লে-অফ বা শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারতেন৷''
পুরনো পোশাক কেটে নতুন ডিজাইন তৈরি
ডিজাইনার স্টেফেন ওয়েস্ট পুরনো সোয়েটার থেকে নতুন পোশাক তৈরি করে বেশ সাড়া ফেলেছেন৷
ছবি: Alexandra Feo
কাপড়ের আলমারি গুছিয়ে ফেলুন
আলমারি খুলে দেখুন তো পুরনো কয়েকটা শীতের সোয়েটার রয়েছে কিনা, যেগুলো আপনার আর একদমই পছন্দ হয় না৷ ভেবে দেখুন, সেগুলো কেটে খানিকটা ছোটবড় করে একটু অন্যভাবে সেলাই করে নতুন করে আবার পরার উপযোগী করা যায় কিনা৷
ছবি: Westknits
সোয়েটার কেটে ডিজাইন বদল
অ্যামেরিকান ডিজাইনার স্টেফেন ওয়েস্ট তিনবছর আগে হল্যান্ড যান কোরিওগ্রাফি সম্পর্কে পড়াশোনার জন্য৷ সেলাই নির্দেশনা সম্পর্কে তাঁর বই পোশাক জগতে তাঁকে পরিচিতি এনে দিয়েছে৷ একটি সোয়েটার কেটে কিভাবে অন্য এটি পোশাক তৈরি করা যায় তাঁর নিয়মকানুন ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়৷ সেটা পড়ে একদিনেই ১৪০ জন মন্তব্য করেন এবং এ সম্পর্কে তৈরি ভিডিওটি দেখেছেন ৪০,০০০ দর্শক৷
ছবি: Westknits
কাটাকটি শুরুর প্রথম পদক্ষেপ
সোয়েটারটি ভালোভাবে বিছিয়ে আপনার পছন্দের সাইজে যত্ন করে কেটে নিন৷ তারপর মনোযোগ দিয়ে ভালোভাবে সেলাই করে নিন৷ সেলাইয়ের মধ্য দিয়ে একটু ডিজাইনও করে নেওয়া যেতে পারে৷
ছবি: Westknits
ফিটেড ডিজাইন
সোয়েটারটি বেশি ঢিলেঢালা হয়ে গেলে একটি বেল্ট পরে নিলেই অনেক স্মার্ট দেখাবে৷ এই সোয়েটার পারফেক্ট পোশাক মনে না হলেও নতুন সোয়েটারটি অন্যদের মধ্যে হঠাৎ করেই আলোচনার একটি বিষয় হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Westknits
‘অন্যরকম’ সুন্দর
স্টেফেন ওয়েস্টের মতে, এই ধরণের সোয়েটার সবার জন্য নয়৷ যারা নতুন কিছু পছন্দ করেন এবং নিজেকে একটু অন্যভাবে দেখাতে বা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান তাদের জন্যই এই আইডিয়া – অর্থাৎ পুরনো পোশাক কেটে নতুন পোশাক তৈরি করা৷
ছবি: Westknits
মা, দাদি, নানিরাও এই কাজ করতেন
পাঁচ বছর বার্লিনে ছিলেন ইটালিয়ান ডিজাইনার কার্লা সিস্কি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মা, দাদি, নানিরাও লম্বা কোট বা লম্বা ড্রেস কেটে নতুন স্কার্ট তৈরি করতেন৷’’
ছবি: Westknits
বোতাম খুললেই শেষ?
আরেকজন ডিজাইনার সেসিলিয়া পালমার দুঃখ করে বলেন, আজকের যুগে কোনো পোশাকের বোতাম খুলে গেলে বা চেন নষ্ট হয়ে গেলেই পোশাকটি বাতিল হয়ে যায় বা ফেলে দেওয়া হয়৷
ছবি: Westknits
ক্রিয়েটিভ হলেই সম্ভব
কেউ একটুখানি ক্রিয়েটিভ হলেই পুরনো কাপড় অর্থাৎ লম্বা ঢিলেঢালা পোশাক কেটে ছোট করে একটি নতুন ডিজাইনের পোশাক তৈরি করা এমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয়৷ আর সেজন্য কোনো দর্জির কাছেও যেতে হয় না, চাইলে নিজেই করে ফেলা যায়৷ এসবের জন্য দরকার শুধু ইচ্ছে আর আগ্রহ৷ তাছাড়া নিজে করার মধ্যে রয়েছে আনন্দ!