মেয়েটির নাম জাদা৷ সে কাঁদো-কাঁদো গলায় মা-কে বলছে, সে মুরগির মাংস বা কোনো ধরনের মাংস খাবে না৷ ব্যাপারটা নিয়ে সে দৃশ্যত অনেক ভেবেছে এবং আমাদেরও ভাবাবে৷
বিজ্ঞাপন
জাদা তার মা-কে বলছে, সে আর জীবনে কোনোদিন মাংস খাবে না!
তাহলে কী খাবে? মা বলছেন৷
টেবিলে যা আছে, তার সব কিছু খাব, কিন্তু চিকেন বা মাংস খাব না - বলছে জাদা৷
কেন খাবে না? জিগ্যেস করছেন মা৷
‘কেননা ওরা জীবজন্তু আর আমার জীবজন্তু ভালো লাগে৷'
কিন্তু যদি আমরা চিকেন কি মাংস খাওয়া মিস করি?
‘আমি মিস করব না!'
মাছ খাবে?
‘মাছ কি জীবজন্তু?'
হ্যাঁ৷
‘তাহলে আমি সেটাও খাব না৷'
ও মাই গড! তাহলে...
‘আমি জীবজন্তু খাব না!'
ঠিক আছে৷ তাহলে তুমি কী ধরনের খাবার খাবে?
‘টেবিলে যা কিছু আছে, কিন্তু জীবজন্তু নয়৷'
জীবজন্তুদের জন্যে তোমার এত দুঃখ কেন?
‘কেননা ওরা খুব ভালো আর আমি জানি আমরা ওদের মাঝেমধ্যে রান্না করি, যেটা খুব ভালো নয়৷ আর আমি জানি আমরা রান্না করা জীবজন্তু খেতে ভালোবাসি৷ কিন্তু সেটা তো ওদের পক্ষে ভালো নয়৷'
ওরা কি কষ্ট পায় বলে তোমার ধারণা?
‘ওদের ওভেনে রান্না হতে ভালো লাগে না, বলে আমার মনে হয়৷'
ঠিক ধরেছে জাদা৷
যেমন ‘রেডিটে' এক বোদ্ধা মন্তব্য করেছেন, ছোটরা জীবজন্তুদের ব্যাপারে পাগল৷ আজকের সংস্কৃতিতে জীবজন্তু আর মাংস খাওয়ার মধ্যে ‘বিচ্ছিন্নতা' এত বেশি না হলে, বহু শিশুই মাংস খেতে আপত্তি করত, বলে মন্তব্যকারীর ধারণা৷
এসি/এসিবি
জার্মানিতে ভেগানদের জীবনযাত্রা
‘ভেগান’ আসলে ঠিক কি বা কারা, এ সম্পর্কে কয়েক বছর আগ পর্যন্তও মানুষ তেমন জানতো না৷ তবে এখন জার্মানিতে ভেগান বা উদ্ভিদভোজীদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে৷
ছবি: Fotolia/Gorilla
ভেগান বা উদ্ভিদভোজী
কয়েক বছর আগ পর্যন্ত যারা দুধ, ডিম, মাংস খেতেন না তাদের অন্য চোখে দেখা হতো৷ সময় বদলেছে এবং এরই মধ্যে ভেগানদের সংখ্যা বেড়েছে অনেক৷ ভেগানরা শুধু নিরামিষাশী নন, তাঁরা প্রাণিজাত কোনো কিছু খান না৷ ভেগানরা শুধু স্বাস্থ্যগত কারণেই উদ্ভিদভোজী হচ্ছেন তা নয়, পরিবেশ রক্ষায়ও তাঁরা অবদান রাখতে চান৷ ভেগানদের জন্য রেস্তোরাঁ, সুপার মার্কেট, রান্নার বই, রান্নার কোর্স এসব বর্তমানে খুবই চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাঁধুনি আটিলা হিল্ডমান
জার্মানির খ্যাতনামা ভেগান রাঁধুনি আটিলা হিল্ডমান (বাঁয়ে)৷ ভেগান রান্না সম্পর্কে লেখা তাঁর বই তিন লাখ কপি বিক্রি হয়েছে৷ ভেগানদের জীবনধারা মানে তাঁর কাছে প্রাণিজাত খাবার পুরোপুরি বাদ দিয়ে জীবনযাপন – অর্থাৎ তাজা, টগবগে থাকা এবং কোনো ধরণের সমস্যা ছাড়াই সহজে ওজন কমানো৷
ছবি: Jenny Hoff
সুস্থ, স্লিম এবং ফিট
‘ভেগান ফর ফিট’ আটিলা হিল্ডমানের এই বইটি বেস্ট সেলারের তালিকায় ছিলো৷ সহজে, সস্তায় এবং কম সময়ে কিভাবে স্বাস্থ্যকর রান্না করা যায়, স্লিম হওয়া যায় তারই কিছু নমুনা রয়েছে বইটিতে৷ যারা স্লিম হতে আগ্রহী তাঁদের মধ্যে বইটি দারুণ সাড়া ফেলেছে৷
ছবি: Fotolia/Gorilla
পশুপাখীদের বন্দি রাখার প্রতিবাদ
আজকাল ভেগান বা উদ্ভিদভোজী হওয়ার ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ বড় শহরগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মতো ভেগান রেস্তোরাঁ, সুপার মার্কেট গজিয়ে উঠছে৷ জার্মানির ভেজিটারিয়ান সমিতির হিসেব অনুযায়ী, জার্মানিতে বর্তমানে ভেগানের সংখ্যা আট লক্ষ এবং ক্রমেই তা আরো বাড়ছে৷
ছবি: picture alliance/Augenklick/Kunz
সুপার মার্কেটে সয়া মিল্ক
সয়ার তৈরি কাটলেট কিংবা দুধ ছাড়া পনির, এমনকি কুকুর বেড়ালের জন্যও ভেগান খাবার পাওয়া যাচ্ছে আজকাল৷ সাধারণ ডিসকাউন্ট শপগুলোতেও সয়া মিল্ক রাখা হয়৷ ভেগান জীবনধারা, মানে শুধু খাওয়া দাওয়ার দিক দিয়ে নয়, কাপড়-চোপড়ের ব্যাপারেও ভেগানদের জীবনদর্শন পুরোপুরি আলাদা৷ অর্থাৎ চামড়া বা প্রাণিজাত সবকিছুই পরিহার করা৷
ছবি: imago
বিশ্ব জুড়ে ভেগান আলোচনা
সারা বিশ্বেই রয়েছে অনেক ভেগান৷ অ্যামেরিকা এবং ইংল্যান্ডে ঐতিহ্যগতভাবেই ভেগানের প্রভাব অনেক বেশি৷ একথা বলেন জার্মানির ভেজিটারিয়ান সমিতির প্রধান সেবাস্টিয়ান৷ তাঁর মতে, জার্মানি ধীরে ধীরে ভেগানদের নেতৃত্ব দেওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া ইউরোপ এবং অ্যাংলোঅ্যামেরিকান দেশগুলোর বাইরে ব্রাজিল এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশগুলোতে ভেগান আন্দোলন বর্তমানে খুব শক্তিশালী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আদর্শ, তবে ধর্ম নয়
ভেগান জীবনধারা সত্যিই স্বাস্থ্যকর কিনা এনিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য৷ তবে ভেগানরা তুলনামূলকভাবে অসুস্থ হন কম – বিশেষ করে ডাযয়েবেটিস-২ এর মতো অসুখে৷ রাঁধুনি আটিলা হিল্ডমান বলেন, ভেগান জীবনধারা পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব নয়, যতটা সম্ভব ততটাই নেবো৷ তবে ভেগান জীবনযাপন করা মানে কিন্তু কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়৷ শুধু এটাই যে খাবারের বিকল্পধারাকে মানুষের সামনে তুলে ধরা৷
ছবি: Eilís O'Neill
ভেগান খাওয়াও উপভোগ করা যায়
মাছ, মাংস বাদ মানেই সবকিছু থেকে বঞ্চিত নয়, বরং বেগুন, শাক-সবজি বা ডালের মজার মজার খাবার এবং নানা ধরনের সালাদে মজাদার ড্রেসিং দিয়ে আরো মজা পাওয়া সম্ভব৷ গত কয়েক বছর ধরে খাবারকে একটু অন্যভাবে তৈরি করে আরো সুস্বাদু করা হয়েছে৷