1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাঁচ মাসে ফেরেনি এক টাকাও, তবু আশা নিয়ে অপেক্ষা

২৩ নভেম্বর ২০২২

বিদেশে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে পাচারকারীদের ৭ শতাংশের কর সুবিধা দেয়া হয়৷ কিন্তু গত ৫ মাসে এই সুবিধা নিয়ে কোনো পাচারকারী একটি টাকাও ফেরত আনেননি।

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ৷
প্রতীকী ছবিছবি: Stephan Jansen dpa/picture alliance

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা এখনো বিতর্কিত এ উদ্যোগের সুফল পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী৷ তারা মনে করছেন, বছরের বাকি সময়ে এই সুবিধা কেউ কেউ নিতে পারেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা শুরু থেকে বলেছি কেউ পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনবে না। যে পাখি খাঁচা থেকে উড়ে যায়, সে কি আর খাঁচায় ফিরে আসে? বিষয়টি এমনই। যে টাকা বের হয়ে যায় সে টাকা আর আসে না। এ সুযোগ দেওয়াটাই নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি। আবার এ সুযোগ থেকে আমরা যে কিছু পাবো, সে আশা করাটা ছিল দুরূহ। আমরা বলেছিলাম কোনো টাকা পাওয়া যাবে না, এতে আমাদের বদনাম হবে৷ সেটাই হয়েছে। আমরা নৈতিকতাবর্জিত সুযোগ দিয়েছি, তাতে কিছুই লাভ হয়নি।” 

বাজেটের সময়ও আমরা বলেছি, এটা ঠিক হয়নি: মোস্তাফিজুর রহমান

This browser does not support the audio element.

সরকার তাহলে এই সুযোগ কেন দিলো? ড. মনসুর বলেন, "আমরা তো ভেতরের অনেকই কিছু জানি না। এমনও হতে পারে কারো টাকা আইনি জটিলতায় বিদেশে আটকে গেছে, সেই টাকা সে ফেরত আনতে চায়। তাকে বিশেষ সুবিধা দিতে হয়ত এটা করা হয়েছে। কারণ, এই পাচারকারীরাও তো অত্যন্ত পাওয়ারফুল। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে তারা ভূমিকা রাখে। তবে যে কারণেই হোক সরকার যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে সেটা দুরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে আমার মনে হয়নি।” 

এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি। তবে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "মেয়াদের শেষ দিকে সাধারণত এ ধরনের সুযোগ করদাতারা বেশি নেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই আমাদের ধারণা। অর্থবছরের শুরু হয় ১ জুলাই আর শেষ হয় ৩০ জুন। ফলে এই অর্থবছরের আরো ৭ মাস আছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়। এখনই সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না।”

গত বাজেটে এক অর্থবছরের জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশ থেকে অর্থ আনলে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা কর নথিতে দেখালেই বৈধ হয়ে যাবে, এমন সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ নিলে এনবিআরসহ অন্য কোনো সংস্থা এই বিষয়ে প্রশ্ন করবে না। পাশাপাশি বিদেশে সম্পদ বা অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তি হিসেবে সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করার ক্ষমতা কর কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা তৈরি হয়। 

সুইস ব্যাংকে টাকা পাচারকারী কারা?

55:44

This browser does not support the video element.

এই বিধান চালুর এক মাস সাত দিন পর ৭ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বিদেশ থেকে অর্থ এনে কর নথিতে দেখানোর ব্যাখ্যা দেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, "কালো টাকা নয়, বিদেশে থাকা বৈধ টাকা দেশে এনে কর নথিতে দেখানো যাবে। এর এক দিন পরই বাংলাদেশ ব্যাংক একটি আদেশ জারি করে। ৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি লিখে জানায়, ৭ শতাংশ কর দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে যে কোনোরূপে গচ্ছিত ও অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা যাবে। যেহেতু ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশ থেকে ওই অর্থ দেশে আসবে, সেহেতু কোথাও প্রশ্ন করার সুযোগ নেই যে, ঐ অর্থ বিদেশে বৈধ, নাকি অবৈধভাবে গচ্ছিত ছিল।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর আবুল কাশেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এই সুবিধা কেউ নেবে না। এর অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত, বাজেটে যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেটা এক বছরের জন্য। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন স্থায়ী। ফলে পরের বছর যে তাকে ধরা হবে না, এই নিশ্চয়তা কে দেবে? দ্বিতীয়ত, বিদেশ থেকে কেউ টাকা পাঠালেই সেটা বৈধ না অবৈধ এই খোঁজ কেউ নেয় না। ফলে সেটা রেমিট্যান্স হিসেবে ধরা হয়। আর রেমিট্যান্স আনলেই আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যায়। তাহলে সে কেন ৭ শতাংশ কর দিয়ে এটা বৈধ করতে যাবে? উল্টো ঘোষণা না দিলেই সে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পাবে।”

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার হয়েছে। আর এ কারণেই তা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেক দেশ এমন উদ্যোগ নিয়ে সফলও হয়েছে। এসব অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। 

দুর্নীতি রুখতে কি দুদক ব্যর্থ?

46:20

This browser does not support the video element.

৬ বছরে দেশের ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা (৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। এ সময়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৮ শতাংশই ছিল ভুয়া। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)-র এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২টি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে আছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)। জিএফআইর তথ্য মতে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের চিত্র এটি। এর পরের তথ্য তারা সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে ২০১৫ সালের পরের চিত্র পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার চাইলেই এই টাকা ফেরত আনতে পারবে না। এর জন্য আন্তর্জাতিক আইন আছে, দেশেও আইন আছে। সেই আইনে অর্থ পাচার গুরুতর অপরাধ। সেই আইন মেনেই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে পাচারের অর্থ ফেরত আনতে হবে। বাংলাদেশেও এর উদাহরণ আছে। সিঙ্গাপুর থেকে আইন মেনেই পাচারের অর্থ ফেরত আনার নজির আছে। ক্যানাডায় কথিত বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় কথিত ‘সেকেন্ড হোম', সিঙ্গাপুরে কথিত তারকা হোটেল গড়ে তোলা, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের সম্পদ এখন বহুল আলোচিত বিষয়। 

যে টাকা বের হয়ে যায় সে টাকা আর আসে না: আহসান এইচ মনসুর

This browser does not support the audio element.

এভাবে পাচার করা টাকা ফেরত আনা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র সিনিয়র ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বাজেটের সময়ও আমরা বলেছি, এটা ঠিক হয়নি। এখনও বলছি। নৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক তিনভাবেই এটা অগ্রহণযোগ্য। প্রথমত, নৈতিকভাবে সরকার এই সুবিধা দিতে পারে না। দেশে তো আইন আছে। এই আইন ভেঙেই তো তারা এই টাকা পাচার করেছে। তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় না এনে উল্টো সুবিধা দেওয়া হলে সমাজে কী বার্তা যাবে? দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিকভাবেও এই সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। এখন তো প্রমান পাওয়া যাচ্ছে এভাবে টাকা ফিরবে না। সরকার কিছু টাকা উদ্ধারের জন্যই তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ সেটা যে সঠিক হয়নি তার প্রমান ৫ মাসে একটি টাকাও ফেরত না আসা। আর তৃতীয়ত, রাজনৈতিকভাবেও এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। কারণ, আপনি ঝুঁকি নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনা সহ্য করে এই সিদ্ধান্ত নিলেন। আপনাদের সিদ্ধান্ত যে সঠিক নয় এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা যে কথা বলেছিল, সেটা তো এখন সত্যি হলো। ফলে সরকারের এই সিদ্ধান্ত নৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক তিনভাবেই অগ্রহণযোগ্য প্রমানিত হয়েছে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ