1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাঁচ মাসে হেফাজতে মৃত্যু ১৭, সেনা আইনে বিচার নিয়ে সংশয়

২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ১৭ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে যৌথ বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছেন ১০ জন। হেফাজতে যারা মারা গেছেন তারা ক্রসফায়ার, নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন।

ঢাকার সড়কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি
সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভূক্ত করে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনীছবি: DW

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ তথ্য নিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। আসকের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে মারা গেছেন পাঁচ জন। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে তিনজনের বেশি মানুষের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

২০২৪ সালে ১২ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মোট ২১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে আসক।

পাঁচ মাসে যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছেন তার হলেন: গোপালগঞ্জের ইলাহি শিকদার , নারায়ণগঞ্জেক সৈয়দ নুরুল কবির, গাইবন্ধার শফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহের সহিদুল ইসলাম, সাভারের কাওসার হোসেন ও চম্পা খাতুন,  চট্টগ্রামের মো. শরীফ, কিশোরগঞ্জের হৃদয় রবি দাস, যশোরের আতিক হাসান সরদার,কক্সবাজারের মোসলেম উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের ইয়াসিন মিয়া, নোয়াখালীর আব্দুর রহমান, শরিয়তপুরের মিলন বেপারী এবং কুমিল্লার তৌহিদুল ইসলাম।

এদের মধ্যে একমাত্র যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনা নিয়েই ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বাকিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তেমন আলোচনায় আসেনি।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা থেকে যৌথ বাহিনী তৌহিদুল ইসলামকে আটক করে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর বলেছে, শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তৌহিদুল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা থাকার কথাও জানিয়েছে আইএসপিআর।

হতাশার কথা বললেই বলা হয় স্বৈরাচারের দোসর: অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না

This browser does not support the audio element.

কিন্তু নিহতের ভাই আবুল কালাম জানান, "আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নাই। গত রবিবার আমার বাবা মারা যান। শুক্রবার ছিলো কুলখানি। আমার ভাই চট্টগ্রামে চাকরি করেন। তিনি বাবার মৃত্যুর পর বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ধরে নিয়ে যায়।”

তিনি বলেন, "হাসপাতালে নেয়ার আগেই যৌথবাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় আমরা ভাই মারা যান। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যাওয়ার কথা অসত্য। নির্মম নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের অনেক চিহ্ন আছে।”

এই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। সেনা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে আইএসপিআর। তবে তার ভাই বলেন, "আমরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করবো।”

তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর পর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, "নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে কুমিল্লায় যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনার দ্রত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।"

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, "অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে যেকোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দা জানায়। জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, যেখানে দেশের শীর্ষ মানবাধিকার কর্মীরা সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন।”

আইএসপিআরও এই ইস্যুতে এক বিবৃতি দিয়েছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "এই ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। ওই সেনাক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।"

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, "ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক। বিচারবহির্ভূত এমন হত্যার ঘটনায় দেশবাসী হতবাক হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জনমনে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।”

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, "কুমিল্লার যুবদল নেতার প্রতি এই নির্মমতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলকেই মনে করিয়ে দেয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার হলো গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে জাতিকে মুক্তি দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ভয়ভীতি থেকে দেশবাসীকে নিরাপদ রাখা। কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে আবারও দেশে নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে আসবে। মানুষ এক অজানা আশঙ্কায় দিনাতিপাত করবে।”

সামরিক আদালতে বিচারের নামে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হতে পারে: নূর খান

This browser does not support the audio element.

সেনা আইনে কি ন্যায়বিচার হবে?

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, "এবার যুবদল নেতা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর, আইএসপিআর বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু এই সরকারের আমলে আরো হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো নিয়ে সরকার কোনো কথা বলেনি। আমরা এখন পর্যন্ত এইসব ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার বা আইনের আওতায় আনতে দেখিনি। আর গত ১৮ বছরে তো আরো অনেক হত্যা হয়েছে। সেগুলোও বিচারের আওতায় আনা হয়নি।”

তিনি বলেন, "এই সরকার যদি হেফাজতে মৃত্যু বন্ধ এবং আইন শৃঙ্খলার উন্নতি না করতে পারে তাহলে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা আরো কমবে। এখন পর্যন্ত যা দেখছি তা হতাশাজনক।  আর এসব কথা বললেই বলা হয় স্বৈরাচারের দোসর।”

"সরকারের কাজ শুধু বিবৃতি বা নিন্দা জানানো নয়, তাদের কাজ ব্যবস্থা নেয়া । আমরা সেই ব্যবস্থা দেখতে চাই,” বলেন তিনি।

মানবাধিকার কর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, "তথ্য উপাত্ত যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাড়ছে। এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই সরকারের আমলে আমরা এটা আশা করিনি। প্রতিটি ঘটনার দ্রত তদন্ত ও বিচার করতে হবে।”

তিনি মনে করেন, পুলিশের কাজ সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানোতে সংকট আরো বাড়ছে।

নূর খান বলেন, "পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পুলিশকে কার্যকর করতে হবে। সাধারণ মানুষকে হ্যান্ডেল করতে হলে পুলিশ লাগবে। সেনাবাহিনী দিয়ে কাজ হবে না। তারা সিভিলিয়ানদের কীভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় সেই সম্পর্কে অভিজ্ঞ নয়।  তারা যে শুধু বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িয়েছে, তা নয়। তাদের বিরুদ্ধে এখন ডাকাতি, ছিনতাই, বাড়ি দখল করা, মানুষ পাচার করার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠছে।”

কুমিল্লায় যুবদল নেতা নিহতের ঘটনায় সেনা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার বিরোধিতা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, "ওই ঘটনায় যে শুধু সেনা সদস্যরাই জড়িত তা তারা নিশ্চিত হলেন কীভাবে? আইনেই বলা আছে যেকোনো বাহিনীই জড়িত থাকুক না কেন, হত্যা বা ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচার প্রচলিত আইনে সিভিল কোর্টে হতে হবে। তা না হলে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ আছে।”

ইশরাত হাসান নিজেই তাই ওই ঘটনায় কুমিল্লার এসপি বরাবর হেফাজকে মুত্যু নিবারণ আইনে মামলা করার আবেদন করেছেন। তিনি জানান, "ওই আইনেই তৃতীয় পক্ষের মামলা সুযোগ আছে। আর দ্রুত মামলা করতে হয়। তাই আমি মামলার আবেদন করেছি।”

নূর খানও সেনা আইনে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "তারা অপরাধ করেছে সিভিল দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এবং সিভিলিয়ানদের ওপরে। তাই সামরিক আদালতে বিচারের নামে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হতে পারে। আর যে ধরনের অপরাধ তা সিভিল আদালতেই বিচারের বিধান আছে।  তা না করলে ঘটনাটা আমরা জানতে পারব না।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ