ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া বই প্রদর্শন করা যাবে না
হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ জানুয়ারি ২০২০
এবারের বইমেলা হবে মুজিবশতবর্ষ কেন্দ্রিক৷ পাইরেটেড, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে এ ধরনের বই যাতে বই মেলায় প্রদর্শিত ও বিক্রি না হয় সেদিকে নজর রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী৷
বিজ্ঞাপন
এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে৷ আর মেলায় আসছে বঙ্গন্ধুর নিজের লেখা বই ‘আমার দেখা নয়া চীন'৷
ডয়চে ভেলে: এবার কত প্রকাশক মেলায় অংশ নেবেন? স্টল কতগুলো?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী: এবার সাড়ে চারশর মত প্রকাশত মেলায় অংশ নিচ্ছেন৷ এক ইউনিটের স্টল নয়শোর মতো৷ আর প্যাভিলিয়ন ৩০টি৷
স্টল বরাদ্দের নীতিমালা কী?
বাংলা একাডেমির নিজস্ব নীতিমালা আছে৷ এটাই বরাবারের মত অনুসরণ করা হয়েছে৷
বইমেলার আকার কত হবে এবার?
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে সাড়ে সাত লাখ বর্গফুট৷
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
বইমেলায় এবার কত নতুন বই প্রকাশ হতে পারে?
গতবার সাড়ে চার হাজার নতুন বই প্রকাশ হয়েছে বই মেলায়৷ তবে এবার আশা করি ছয় হাজার ছাড়িয়ে যাবে৷
প্রতিবছর কোন ধরনের বই মেলায় বেশি আসে?
প্রতিবছর আসা আর এবারের আসার মধ্যে তফাত আছে৷ যেহেতু আগামী ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ পালিত হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে, দেশে এবং বিদেশে৷ সেই প্রেক্ষিতে এবার বইমেলায় প্রচুর বই আসবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপরে৷ এবং বাংলা একাডেমির একটা নিজস্ব কার্যক্রম আছে৷ বাংলা একাডেমি মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে একটি গ্রন্থমালা সিরিজ করছে৷ মুজিবশতবর্ষ গ্রন্থমালা সিরিজ৷ তারও ২৬ খানা বই এই বই মেলায় আসবে৷ এই সিরিজের প্রথম বই ‘আমার দেখা নয়া চীন'- এটি রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বয়ং৷ এই বইটির প্রকাশনা উৎসব হবে ২ ফেব্রুয়ারি বইমেলার মূল মঞ্চে৷ মূল মঞ্চে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বইমেলার উদ্বোধন করার এই বইয়ের উদ্বোধন করবেন৷
এই বই মেলায় প্রাধন্য পাচ্ছে মুজিবশতর্ষ?
প্রাধান্য পাওয়া মানে এবারের বইমেলা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে৷
বই মেলায় বইয়ের ওপর কিভাবে নজরদারী করা হবে?
আমাদের তদরাকি কমিটি আছে৷ আমরা চেষ্টা করি পাইরেটেড বই, নকল বই, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে এধরণের বই যাতে বই মেলায় প্রদর্শিত না হয়, বিক্রি না হয়৷
শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা কেমন?
গতবারের চেয়ে এবার অনেক ভালো৷ যেহেতু এবার মেলার পরিসর বেড়েছে তাই সার্বক্ষণিকভাবে দেড় হাজার পুলিশ, দুই শতাধিক আনসার এবং আমাদের নিজস্ব কর্মী বাহিনী এবং নিরপত্তা বাহিনী থাকবে৷
এবার অমর একুশে গ্রন্থ মেলার অনুষ্ঠানে বিদেশি কোনো কবি সাহিত্যিক আসবেন কিনা?
কোনে কোনো বছর আমরা বিদেশি লেখক, প্রকাশক, গুণি ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাই৷ তাদের দিয়ে শুরু করি৷ যেহেতু এবছর আমরা বইমেলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করেছি৷ ২৬ দিন ব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠান হবে মূল মঞ্চে৷ আমরা যে বইগুলো প্রকাশ করছি মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে৷ এই বইগুলোরই মূলত প্রকাশনা অনুষ্ঠান৷ সেই কারণে এবার আমরা বিদেশি কাউকে আমন্ত্রণ জানাইনি৷
বিশ্বের কয়েকটি বিতর্কিত বই
ধর্ম, রাজনীতি, অশ্লীলতা ইত্যাদি নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷ ছবিঘরে এমনই কয়েকটি বইয়ের কথা থাকছে৷
ছবি: Random House
১৯৮৪
সেই ১৯৪৯ সালেই ব্রিটিশ লেখক জর্জ অরওয়েল লিখে গিয়েছিলেন ভবিষ্যতে এমন ‘বিগ ব্রাদার’রা পৃথিবী শাসন করবেন, যারা ‘থট পুলিশ’ বা চিন্তার পুলিশ দিয়ে মানুষের ইচ্ছা আর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কেড়ে নেবেন৷ একই লেখকের রাশিয়ার স্টালিন যুগের ভয়াবহতাকে তুলে ধরা বই ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
ইউলিসিস
১৯০৪ সালের ১৬ জুন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে লেওপোল্ড ব্লুমের কাটানো একটি দিন নিয়ে ইউলিসিস লিখেছেন জেমস জয়েস (ছবি)৷ বইটি প্রথম সিরিজ আকারে প্রকাশিত হয়েছিল৷ এরপর ১৯২২ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়৷ বইটির বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি ও যৌনতার অভিযোগ উঠেছিল৷ এমনকি সিরিজ আকারে প্রকাশের সময় অশ্লীলতার মামলাও হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Caffrey
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস
ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সালমান রুশদির এই বইটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়৷ বইটি লেখার সময় মহানবি (সাঃ) এর জীবন থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু বইটির বিভিন্ন অংশ অনেক মুসলমানের কাছে অবমাননাকর ঠেকেছে৷ ফলে বিভিন্ন দিক থেকে হুমকি পেয়েছিলেন রুশদি৷ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি তাঁকে হত্যার ফতোয়াও দিয়েছিলেন৷ এছাড়া এই বই বিক্রি করায় বিভিন্ন দোকানে বোমা হামলাও হয়েছে৷
ছবি: Random House
দ্য হিন্দুজ: অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি
মার্কিন ভারততত্ত্ববিদ উইন্ডি ডোনিগারের লেখা ‘দ্য হিন্দুজ: অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি’ বইটি (হাতে ধরা) ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়৷ এরপর ২০১৪ সালে ভারতে এটি নিয়ে বিতর্ক হয়৷ বইটিতে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করা হয়েছে এবং ভুলভাবে হিন্দু ধর্মের ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ ফলে ভারতের বাজার থেকে বইটি তুলে নেয়া হয়েছিল৷ অবশ্য ২০ মাস পর আবারও ভারতের বাজারে ফিরে এসেছিল বইটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Mukherjee
দ্যা দা ভিঞ্চি কোড
মার্কিন লেখক ড্যান ব্রাউনের এই বই সারা বিশ্বের রোমান ক্যাথলিকদের সমালোচনা কুড়িয়েছিল৷ কারণ বইতে তিনি যিশু খ্রিস্ট আর ইহুদি নারী ম্যারি মাগডালেনের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেছেন৷ ২০০৩ সালে এটি প্রকাশিত হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance / Photoshot
অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস
ড্যান ব্রাউনের এই বইটি প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে৷ এটি একটি ধর্মীয় থ্রিলার৷ এতে প্রাচীন যুগের ‘ইলুমিনাটি’ নামের সিক্রেট সোসাইটির কথা যেমন আছে, তেমন ভ্যাটিকান ধ্বংস করে দেয়ার হুমকিও রয়েছে৷ ফলে এই বইয়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত মুভিটি (ছবি) ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মের নেতা ও অনুসারীদের তোপের মুখে পড়েছিল৷
ছবি: Imago/Unimedia Images
লোলিতা
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জন্ম নেয়া ভ্লাদিমির নাবোকফের লেখা বইটি ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল৷ মাঝবয়সি এক সাহিত্যের অধ্যাপকের ১২ বছরের লোলিতাকে ভালো লাগা এবং তার প্রতি আবেশ তৈরি হওয়া নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে৷
ছবি: Penguin
সোফি-স চয়েস
মার্কিন লেখক উইলিয়াম স্টাইরন ১৯৭৯ সালে বইটি লিখেছিলেন৷ হলোকস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া এক নারীর কথা এতে তুলে ধরা হয়েছে৷ সোফি নামের সেই নারী নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে গিয়ে নাথানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান৷ এরপর স্টিঙ্গো নামের আরেকজন তাদের দুজনের বন্ধু হন৷ এক পর্যায়ে সোফি আর স্টিঙ্গোর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে৷ তবে লেখক স্টাইরন হলোকস্টের বিষয়টি যেভাবে তুলে ধরেছেন তা বিতর্কিত হয়েছিল৷
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ হাকলবেরি ফিন
শ্বেতাঙ্গ কিশোর হাকলবেরি ফিন ও তার কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধু জিমের (যে একসময় দাস ছিল) দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে বইটি লিখেছেন মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন৷ ১৮৮৪ সালে যুক্তরাজ্যে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল৷ সেই সময় বইয়ে বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল৷ বিশেষ করে ‘নিগার’ শব্দটি বেশ কয়েকবার ব্যবহার করেছেন লেখক৷ যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের এই নামে ডাকা হতো৷
ছবি: Gemeinfrei
দ্য ক্যাচার ইন দ্যা রাই
মূল চরিত্র ১৭ বছরের হোল্ডেন কোলফিল্ডের অবাধ্যতা আর উদ্বেগ নিয়ে কাহিনি গড়ে উঠেছে৷ উপন্যাস হিসেবে ১৯৫১ সালে প্রকাশিত বইটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখা হলেও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এটি৷ বিটলস তারকা জন লেননের হত্যাকারী মার্ক চ্যাপম্যান যেদিন লেননকে হত্যা করেন সেদিনই তিনি বইটি কিনেছিলেন৷ মার্কিন লেখক জে ডি সালিঞ্জার বইটি লিখেছেন৷
ট্রপিক অফ ক্যানসার
হেনরি মিলারের বইটি ১৯৩৪ সালে ফ্রান্সে প্রকাশিত হয়েছিল৷ তবে সেই সময় বইটির বিরুদ্ধে মিসোজিনি অর্থাৎ নারীর প্রতি বিদ্বেষ, এবং যৌনতা বিষয়ক উপাদান বেশি থাকার অভিযোগ উঠেছিল৷ এরপর ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বইটি প্রকাশের সময়ও অশ্লীলতার অভিযোগে কয়েকটি মামলা হয়৷ পরে অবশ্য সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন একটি আদালত৷
দ্য চকলেট ওয়ার
ক্যাথলিক স্কুলে জেরি নামে এক কিশোরের উপর চালানো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন নিয়ে বইটি লিখেছেন রবার্ট কর্মিয়ার৷ ফলে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই বিতর্ক শুরু হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
12 ছবি1 | 12
এবারো কি বই মেলায় স্পন্সর থাকছে?
হ্যাঁ৷ এবার মূল স্পন্সর বিকাশ৷
নারীদের জন্য বিশেষ কী ব্যবস্থা থাকছে?
নারী ও শিশুদের আলাদা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ শিশু প্রহরের সময় ও পরিসর বাড়ানো হয়েছে৷ ব্রেস্টফিডিং, নারীদের নামাজের আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ বইমেলায় নারীদের প্রবেশের জন্যও আলাদা প্রবেশ পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যাতে তারা নিরাপত্তার সংকটে না পড়েন৷ তাদের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় তার সবধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যে পর্যন্ত গাড়ি আসবে তারপর থেকে বইমেলায় আসতে প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার থাকবে৷ তাদের হুইল চেয়ারে নিয়ে আসা হবে৷