তালেবান গোষ্ঠীদের প্রতি পাকিস্তানের প্রচ্ছন্ন সমর্থনকে সন্দেহের চোখে দেখছে আফগান সংবাদমাধ্যম৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে কোথায় দাঁড়িয়ে এই সমীকরণ?
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানের বর্তমান অস্থিরতার জন্য আফগান সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ দায়ী করছে পাকিস্তানকে৷ তাদের মত, পাকিস্তানের প্রচ্ছন্ন তালেবান সমর্থন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আবহে অস্থিরতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে৷
অবশ্য এই অভিযোগ নতুন নয়৷ আফগান সরকারের পক্ষেও শোনা গেছে এই অভিযোগ যে পাকিস্তান তালেবান গোষ্ঠীদের আশ্রয় ও সামরিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ দুই দশক দীর্ঘ মার্কিন সেনা অবস্থানের শেষে নতুন করে আলোচনায় এই বিষয়টি৷
এক আফগান রাজনীতিক আবদুল সাত্তার হুসেইনি সম্প্রতি একটি টিভি শোতে বলেন, ‘‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে আমরা পাকিস্তানের হাতে আক্রান্ত৷ আমরা শুধু তালেবানের বিরুদ্ধে লড়ছি না, আমরা পাকিস্তানের সাথে এই মেকি যুদ্ধেও জড়িত৷ তালেবানদের আফগানিস্তানের জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই, আর আমরাও পাকিস্তানের উদ্দেশ্য মেনে নিতে নারাজ৷’’
আফগানিস্তানের দায়িত্ব অ্যামেরিকার নয়: বাইডেন
আফগানিস্তানের দায়িত্ব নিতে হবে আফগান নেতাদেরই। অ্যামেরিকা আর সাহায্য করতে পারবে না। জানিয়ে দিলেন জো বাইডেন।
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
অগাস্টেই শেষ
আফগানিস্তান থেকে অগাস্টের মধ্যেই সমস্ত সেনা অ্যামেরিকায় ফিরে যাবে। হোয়াইট হাউসে জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
ছবি: John Moore/Getty Images
আফগানিস্তানকেই দায়িত্ব নিতে হবে
আফগানিস্তানের দায়িত্ব নিতে হবে সে দেশের নেতাদেরই। সমস্ত নেতার একসঙ্গে আলোচনা করে নতুন আফগানিস্তানের রূপরেখা তৈরি করতে হবে। এমনটাই মনে করেন বাইডেন।
ছবি: Andrew Harnik/Getty Images
তালেবান নিয়ে মতামত
বাইডেনের বক্তব্য, তিনি তালেবানকে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু কাবুলের সরকার এবং প্রশাসনকেই তার মোকাবিলা করতে হবে। মার্কিন সাহায্যে তৈরি কাবুলের সরকারের হাতে এখন সে ক্ষমতা আছে বলে তিনি মনে করেন।
ছবি: DW/M. Mojtaba
তালেবানই ভবিতব্য নয়
মার্কিন সেনা চলে গেলে তালেবান আফগানিস্তান দখল করবে, এমনটা অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করেন না বাইডেন।
ছবি: DW/Omid Deedar
কোনো দেশ আফগানিস্তানকে এক করতে পারেনি
বাইডেনের বক্তব্য, এর আগে কোনো দেশ দেশ আফগান নেতাদের এক করতে পারেনি। সকলকে একসঙ্গে বসিয়ে ঐক্যবদ্ধ আফগানিস্তান তৈরি করতে পারেনি।
ছবি: Saul Loeb/Getty Images/AFP
আর কত প্রাণ যাবে
বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি চান না, আর একটিও মার্কিন প্রাণ আফগানিস্তানে নষ্ট হোক। বহু মার্কিন পুরুষ এবং নারীর প্রাণ গিয়েছে আফগানিস্তানের যুদ্ধে। আর প্রাণ তিনি যেতে দেবেন না।
ছবি: Josh Smith/REUTERS
যুক্তরাজ্যের বক্তব্য
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে অধিকাংশ সেনা দেশে ফিরে এসেছে। বাকিরাও দ্রুত ফিরে আসবে।
ছবি: AFP/Getty Images
ইরান সীমান্তে তালেবান
এদিকে ইরান-আফগান সীমান্ত দখল করেছে তালেবান। আফগানিস্তানের সঙ্গে ইরানের বর্ডার এখন তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের ভিতর পঞ্চাশেরও বেশি অঞ্চল তারা দখল করেছে। ঘিরে ফেলেছে আঞ্চলিক রাজধানীগুলি।
ছবি: PPI/Zuma/picture alliance
রাশিয়ার আশ্বাস
রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে তালেবান প্রতিনিধিদের কথা হয়েছে। তালেবান আশ্বস্ত করেছে, দেশের ভিতর বিদেশি দূতাবাসগুলি যাতে সুরক্ষিত থাকে, তারা তা দেখবে। আফগান রীতি এবং ইসলামিক নীতি মেনে তারা মানবাধিকার রক্ষা করবে।
গত মাসে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি একটি আফগান টিভি শোতে উপস্থিত হন এই অস্বস্তির সম্পর্কে কিছুটা স্বস্তি আনতে৷ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সেখানে প্রশ্ন করেন পাকিস্তানে কিছু তালেবান নেতাদের অবস্তান করা প্রসঙ্গে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে তিনি এবিষয়ে অবগত নন৷
মন্ত্রী বারবার উপস্থাপককে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, কিন্তু উপস্থাপকের সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অনুষ্ঠানে প্রায়ই পাকিস্তানের একটি নেতিবাচক রূপ তুলে ধরা হয়৷
কাবুলের সাংবাদিক শারিফ হাসানিয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আফগান-পাক সম্পর্ক চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এমন থেকেছে৷ বেশিরভাগ আফগানরাই পাকিস্তানকে নেতিবাচকভাবে দেখে কারণ নব্বইয়ের দশকে ইসলামাবাদ তালেবান ও মুজাহিদিনকে সমর্থন করেছিল৷’’
আফগানিস্তানে লড়াই কি তবে শেষ?
06:47
কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাজিবুল্লাহ আজাদ মনে করেন যে আফগান ধারণা সত্যের ওপর ভিত্তি করেই গড়া৷
তিনি বলেন, ‘‘পাক কর্তৃপক্ষ আফগান বিশেষজ্ঞদের কিছু অভিযোগ স্বীকার করেছে৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তারা তালেবানকে সমর্থন করেন৷ ২০১৫ সালে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যিনি সেই সময় বিরোধী দলে ছিলেন, বলেন যে তার হাসপাতালে এক আহত তালেবান যোদ্ধার চিকিৎসা হয়েছিল৷ সম্প্রতি পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রাশিদ বলেন যে তালেবান সদস্যদের পরিবার পাকিস্তানে রয়েছে৷’’
উন্নত সম্পর্কের সম্ভাবনা
যেহেতু এই দুই দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার প্রভাব দুই দেশের মধ্যে বড় ভূমিকা রাখে, সেক্ষেত্রে মার্কিন সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের ফলাফলও এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে৷
হাসানিয়ার এবিষয়ে বলেন, ‘‘সুশীল সমাজের সদস্যরা ও সাংবাদিকরা যতই চেষ্টা করুন না কেন দুই দেশের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে, এই কাজ আসলে সরকারের৷ গত কয়েক মাসে উচ্চপদস্থ আফগান কর্তারা পাকিস্তানে গিয়েছেন, কিন্তু মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি৷ যদি এই অবস্থা বদলাতে হয় তাহলে পাকিস্তানকে সশস্ত্র গোষ্ঠীদের মদত দেওয়া বন্ধ করতে হবে৷’’
এদিকে পাক কর্মকর্তাদের মত, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতি করতে হলে কাবুলকে এই ধরনের অভিযোগ আনা বন্ধ করতে হবে৷
শামিল শামস, মাসুদ সাইফুল্লাহ/এসএস
আফগানিস্তান ছাড়ছে মার্কিন সেনারা, রেখে যাচ্ছে আবর্জনা
গত দুই দশক ধরে বাগরাম বিমানঘাঁটি ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সদরদপ্তর৷ এরমধ্যে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে ওয়াশিংটন৷ সেখানে এখন পড়ে আছে মার্কিন সেনাদের টনকে টন আবর্জনার স্তূপ৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
যত দূর চোখ যাবে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের রাজনীতির জন্য কী ধরনের ভবিষ্যত রেখে যাচ্ছে সেটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে৷ তবে দেশটি ছাড়ার আগে সেনারা যে তাদের ব্যবহৃত বিশাল আবজর্নার স্তূপ রেখে যাচ্ছে এই ছবি সেই কথাই জানাচ্ছে৷ বাইডেনের ঘোষিত সময়সীমার ১১ সপ্তাহ আগেই বাগরাম বিমানঘাঁটি থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এখন সেখানে শুধুই ময়লার স্তূপ৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
এত জঞ্জালের কী হবে
২০০১ সাল থেকে বাগরামে যুক্তরাষ্ট্রের এক লাখের বেশি সেনা দায়িত্ব পালন করেছেন৷ কাবুল থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকাটি রীতিমত একটি ছোটখাটো অ্যামেরিকান শহরে পরিণত হয়েছিল৷ গড়ে উঠেছিল শপিং সেন্টার, ফাস্টফুডের দোকানও৷ যাওয়ার সময় মার্কিন সেনারা দরকারি সরঞ্জামগুলো সাথে নিয়ে যাচ্ছে অথবা স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করছে৷ কিন্তু ফেলে যাচ্ছে বিপুল আবর্জনা, প্যাকেজিং ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
কারো ফেলনা কারো সম্পদ
ঘাঁটির বাইরে ফেলনার এই ভাগাড় অবশ্য স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিপুল কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে৷ তাদের চোখ তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে যদি মূল্যবান কিছু মিলে৷ যেমন এক জোড়া সামরিক বুট খুঁজে পেয়েছেন একজন৷ আবর্জনা থেকে খুঁজে পাওয়া উপকরণ বিক্রি করে অনেকে অর্থ আয়েরও চেষ্টা করছেন৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
ইলেকট্রনিকের খোঁজে
এই স্তূপের একটি বড় অংশই ইলেকট্রনিক বর্জ্য৷ সেখানে সার্কিট বোর্ড, স্ক্রু থেকে শুরু করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্থানীয়রা৷ এগুলোর কোনো কোনোটিতে এমনকি তামা, সোনার মতো মূল্যবান ধাতুও রয়েছে৷ এখান থেকে যদি ৫০০ ডলার আয়ের ব্যবস্থাও হয় তাও রীতিমত সম্পদের খনি আফগানদের জন্য৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
বাগরামের ভবিষ্যত
হিন্দুকুশ পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত বাগরামের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে রয়েছে দীর্ঘ এতিহ্য৷ ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখলের পর সোভিয়েত সেনারাও সেটিকে ব্যবহার করেছিল৷ অনেকেরই এখন আশঙ্কা ঘাঁটিটি তালেবানরা দখল করে নিলে সেটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিজয় হিসেবে বিবেচিত হবে৷
ছবি: imago images
আফগানিস্তান ত্যাগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি বছর ‘নাইন ইলেভেনের’ আগেই সেখান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন৷ আনুষ্ঠানিকভাবে ১ মে থেকে আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করেছে মার্কিন সেনারা৷ তবে তালেবানদের সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় ভারি অস্ত্রসহ একটি বাড়তি দলকে সেখানে মজুদ রাখা হয়েছে৷ ন্যাটো ও অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর ৩৬টি মিশন এখনও সেখানে আছে৷ অ্যামেরিকার অবশিষ্ট সৈন্য আছে আড়াই হাজার আর জার্মানির এগারশো৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
নারীদের অবস্থান
ভাগাড় থেকে দরকারি ধাতব বস্তু খুঁজে পেয়েছে এই মেয়েটি৷ বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে আফগান নারীদের জীবনে৷ তারা স্কুলে যেতে পারছে, এমন কিছু জায়গায় কাজ করতে পারছে, যা আগে নিষিদ্ধ ছিল৷ আদালত থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নারীরা জায়গা করে নিয়েছে৷ তাদের এই পরিবর্তন কি সামনের দিনেও বজায় থাকবে?
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা
মার্কিন বাহিনীর আগমনের পর বাগরাম ঘাঁটি নির্ভর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছিল আশেপাশে৷ জীবিকার তাগিদে অনেক আফগান সেখানে এসে বসবাস শুরু করেন৷ তবে মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ায় পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷
ছবি: Adek Berry/Getty Images/AFP
যা পড়ে থাকছে
নিজেদের ব্যবহৃত বুট আর আবর্জনা ছাড়া আফগানিস্তানকে আর কী দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে আশ্বাস দিয়েছেন টেকসই সম্পর্ক গড়ে তেলার৷ তার রূপরেখা কী হবে কিংবা কতটা কার্যকর থাকবে তাই এখন দেখার বিষয়৷