আর্থিক সংকটের হাত থেকে পাকিস্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো চীন। চীনের একাধিক ব্যাংকের কনসর্টিয়াম পাকিস্তানকে ২৩০ কোটি ডলার দিচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ের অবস্থা খুবই খারাপ জায়গায় এসে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের মুদ্রার মূল্যও ভয়ংকরভাবে কমে গেছে। এই সংকট থেকে ইসলামাবাদকে উদ্ধার করতে চীনের একাধিক ব্যাংকের কনর্সটিয়াম ২৩০ কোটি ডলার দিচ্ছে।
পাক অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল চীনকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, আর দিন দুই-তিনের মধ্যেই অর্থ হাতে এসে যাবে। এর ফলে দেশের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে কিছু অর্থ জমা পড়বে এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নও ঠেকানো যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। বর্তমান আর্থিক বছরে পাকিস্তানে রুপির দাম ডলারের তুলনায় ৩৪ শতাংশ কমেছে।
গত ১০ জুনের হিসাব হলো, পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের কাছে নয়শ কোটি ডলার আছে, তা দিয়ে মাত্র ছয় সপ্তাহের আমদানির খরচ মেটানো সম্ভব। তাই পাকিস্তানের কাছে চীনের থেকে পাওয়া ২৩০ কোটি ডলারের খুবই প্রয়োজন ছিল।
পাকিস্তানের অর্থনীতি যেভাবে দখল করছে চীন
নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং স্থানীয়দের আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তানে চীনের বিনিয়োগ বেড়ে চলেছে৷ কেবল অবকাঠামো নয়, বিভিন্ন খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ধীরে ধীরে কব্জায় নিচ্ছে দেশটির অর্থনীতি৷ এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কও রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/Pakistan Prime Ministry Office
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর
২০১৫ সালে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানের অবকাঠামোর উন্নয়নে এগিয়ে আসে চীন৷ পশ্চিম চীনের সঙ্গে দক্ষিণ পাকিস্তানের গদারকে যুক্ত করে মহাসড়ক নির্মাণ করে৷ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর বা সিপিইসির অধীনে প্রাথমিকভাবে ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা থাকলেও এখন তা ৬৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/A. Kamal
দুই ধাপে সিপিইসি
সিপিইসির প্রথম ধাপে চীনা অর্থায়নে বিদ্যুৎ ও পরিবহণ অবকাঠামো খাতে কয়েক ডজন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়৷ গত বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এর দ্বিতীয় ধাপ৷ এই ধাপে উৎপাদনক্ষমতা ও চাকরির বাজার তৈরির দিকে মনোযোগ দেয়া হয়েছে৷
নতুন চাকরির বাজার
এমনিতেই দেশটির অর্থনীতি ধুঁকছিল, তার ওপর করোনা মহামারিতে হাজার হাজার ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, চাকরি খুঁইয়েছেন দুই কোটির বেশি মানুষ৷ চীনের বিনিয়োগকে এক্ষেত্রে অনেকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন৷ চীনা বিনিয়োগে নতুন নতুন প্রকল্প চালু হতে থাকায় অনেকেই অর্থনীতি চাঙা হওয়ার আশা করছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
খাইবার পাখতুনখোয়া
প্রদেশটিতে ২০০৪ ও ২০০৫ সালে ইসলামি সন্ত্রাসীদের বাড়বাড়ন্ত ছিল৷ বেশ কয়েটি গোষ্ঠীর সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কেরও সংযোগ ছিল৷ এসব কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখায়নি৷ সেই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে এসেছে চীন৷ কেবল বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো নয়, স্যানিটেশনসহ অন্য নানা প্রকল্পেও অর্থায়ন করছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. F. Röhrs
সিন্ধ
দক্ষিণের এই প্রদেশে চীন কেবল সিপিইসি-এর অধীনে নানা প্রকল্প বাস্তবায়নই করেনি, পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের ৪০ শতাংশ কিনে নিয়েছে৷ স্টক এক্সচেঞ্জ পাকিস্তানের হলেও সেটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা এবং প্রধান নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা রাখে চীন৷ গত জুনে চীনা বিনিয়োগের বিরোধিতা করা বালোচ বিদ্রোহীদের কিছু সদস্য পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
করাচি
ডয়চে ভেলেকে বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, করাচিতে অবস্থিত পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর একটি কিনে নেয়ার পরিকল্পনা করছে চীন৷ পাঁচটি জেলায় পয়ঃনিষ্কাষণ প্রকল্পের চুক্তি পেয়েছে চীন৷ এসব বিনিয়োগে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত বোধ করছেন৷ আওয়ামী ওয়ার্কার্স পার্টির করাচির শাখার মহাসচিব খুররাম আলী জানিয়েছেন, সিন্ধের কয়েকটি তেলক্ষেত্রে অনুসন্ধান কাজও চীনকে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/Xinhua/A. Kama
বালোচিস্তান
আকারের দিক থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বালোচিস্তান৷ স্বাধীনতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে বালোচ বিদ্রোহীদের একটি দল৷ বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হলেও চীন তাতে দমেনি৷ গদার বন্দরের পাশেই একটি বিমানবন্দর বানাচ্ছে তারা৷ বন্দরের পাশে চীনা অর্থায়নে তিনটি কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে৷ স্থানীয়দের বঞ্চিত করে চীনা ব্যবসায়ীরা মাছ ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Ghani Kakar
সস্তা শ্রম এবং উচ্চ মুনাফা
গত বছর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শতাধিক চীনা বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এরপর পাকিস্তানে বিনিয়োগের ব্যাপারে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো আরো উৎসাহী হয়ে উঠেছে৷ একদিকে সস্তা শ্রম এবং অন্যদিকে পশ্চিমা বিনিয়োগের অভাবে তেমন একটা প্রতিযোগিতার মুখে না পড়ায় মুনাফাও বেশি করতে পারছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো৷ তবে চীনা বিনিয়োগকারীদের বিশেষ কোনো সুবিধা দেয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ দেশটির কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/AA/Pakistan Prime Ministry Office
8 ছবি1 | 8
বিলাওয়ালের প্রতিক্রিয়া
বিলাওয়াল ভুট্টোও চীনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টুইট করে বলেছেন, ''চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং এবং চীনের মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। চীন হলো আমাদের সব সময়ের বন্ধু।''
আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা
আইএমএফের সঙ্গেও পাকিস্তানের আলোচনা চলছে। তারা যাতে আগের মতো এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফেসিলিটি দেয় তা নিয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। গতরাতে আইএমএফ ও পাকিস্তান ২০২২-২৩-এর বাজেট নিয়ে একটা সমঝোতায় পৌঁছেছে। সেখানে কীভাবে খরচ কমানো হবে এবং আয় বাড়ানো হবে, তা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে দুই পক্ষ।
দ্য ডন জানিয়েছে, সমঝোতা অনুযায়ী প্রতি মাসে পাঁচ টাকা করে পেট্রোলিয়াম লেভি বসানো হবে। ১০ মাস লেভি বসবে। কর আদায়ের টার্গেট করা হয়েছে ৪২ হাজার দুইশ কোটি টাকা। সংস্থাগুলিকে পভার্টি ট্যাক্স দিতে হবে। অতিরিক্ত বেতন ও পেনশনের জন্য যে তহবিল রাখা হয়েছিল, সেটাও বন্ধ করা হবে।