মাদ্রাসা থেকে পড়া বেশ কয়েকজন ছাত্র পরবর্তীতে তালেবান নেতা হয়েছেন৷ আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানদের চলমান শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ মাদ্রাসার কয়েকজন সাবেক৷ এখান থেকে পড়ুয়াদের অনেকেই সরাসরি অংশ নিয়েছেন রাশিয়া-আফগান যুদ্ধে৷
সাবেকদের জঙ্গিগোষ্ঠীতে অংশগ্রহণে লজ্জিত নয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, বরং গর্বিত তারা৷
সাবেকদের অনেকে জিহাদি কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘জিহাদ বিশ্ববিদ্যালয়' নামে ডাকে কর্তৃপক্ষ৷
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক নেতা সামি-উল-হক তালেবানগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের গুরু হিসেবে পরিচিত৷ অভিযোগ আছে যে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যাকান্ডের সাথে মাদ্রাসাটির সাবেক কিছু ছাত্র জড়িত৷
মাদ্রাসাটিতে সরাসরি সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া না হলেও এখানকার ছাত্ররা চাইলে ছুটির সময়ে জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য যেতে পারে বলে জানা গেছে৷
‘‘আমরা গর্বিত৷ আফগান যুদ্ধে এ মাদ্রাসার ছাত্ররা রাশিয়াকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে৷ অ্যামেরিকাকেও ফেরত পাঠানো হয়েছে,'' বললেন মাদ্রাসার একজন প্রভাবশালী শিক্ষক মাওলানা ইউসাফ শাহ ৷
মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে প্রায় চার হাজার ছাত্র পড়াশোনা করে৷ মাদ্রাসা থেকেই শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া ও পোশাক-আশাকের খরচ দেওয়া হয়৷
জিহাদি তৈরি করে এমন কুখ্যাতি থাকার পরও মাদ্রাসাটি পাকিস্তান সরকার কিংবা দেশটির অনেক রাজনৈতিক দলের সমর্থন পায় এমন অভিযোগ আছে৷
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-এ-ইনসাফও রাজনৈতিক সমর্থনে পেতে মাদ্রাসাটিকে অর্থায়ন করেছে বলে অভিযোগ৷
মাদ্রাসাটির এমন কর্মকান্ডে তীব্র আপত্তি আফগান সরকারের৷ আফগান সরকারের মুখপাত্র সেদিক সেদ্দিকি মাদ্রাসাটি বন্ধের দাবি জানিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘হাক্কানিয়া মাদ্রাসা উগ্রপন্থী আর তালেবানের জন্ম দেয় যা আমাদের দেশের জন্য হুমকি৷''
আফগান নেতাদের অভিযোগ, এ ধরনের মাদ্রাসাকে পৃষ্ঠপোষকতা করার মানে হলো পাকিস্তান তালেবানদের সমর্থন দিচ্ছে৷
সহিংস কর্মকাণ্ড উস্কে দিচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ৷ বিদেশি সৈন্যদের টার্গেট করার বিষয়টি সমর্থন করে শাহ বলেন, ‘‘কেউ যদি অস্ত্র নিয়ে আপনার ঘরে প্রবেশ করে তাহলে আপনি অবশ্যই বন্দুক তাক করবেন৷’’
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা এ প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কোন মিলিটারি প্রশিক্ষণ পায় না কিংবা জিহাদে যেতে বাধ্যও নয়৷ তবে জিহাদ বিষয়ে এখানে খোলাখোলি আলোচনা চলে৷
আরআর/কেএম (এএফপি)
ধর্ম, বর্ণ, স্বাধীনতা নানা নামে উগ্রবাদ ছড়ায় বিশ্বে৷ বিভিন্ন মতাদর্শের উপর ভর করে গড়ে ওঠে জঙ্গি সংগঠন কিংবা সশস্ত্র বাহিনীও, যা অনেক সময় রূপ নেয় সন্ত্রাসে৷
ছবি: Reutersএকসময় পোশাকি নাম ছিল ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লিভ্যান্ট’৷ সংক্ষেপে আইএসআইএল কিংবা আইএসআইএস৷ তবে বেশি পরিচিত আইএস বা দায়েশ নামে৷ বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা আত্মপ্রকাশ করে৷ ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে যোগ দেয়৷ সিরিয়া, ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছিল তারা৷ তবে সম্প্রতি শেষ ঘাঁটিটিও হারিয়েছে আইএস৷
ছবি: Reutersজর্ডান-প্যালেস্টেনিয়ান মুসলিম ধর্মীয় গুরু আব্দুল্লাহ আজম৷ একটি জিহাদি জার্নালে আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য মুজাহিদিন বা বিদেশি যোদ্ধাদের বাহিনী গড়ার ধারণা দেন তিনি৷ ১৯৮৯ সালে মারা গেলেও তাঁর মতবাদই বৈশ্বিক জিহাদি ধারণার জন্ম দেয়৷ যার উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন ওসামা বিন লাদেন৷ আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল-কায়দার শাখা ছড়িয়ে পড়ে অনেক মুসলিম দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausafবিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামেও আল-কায়দার জিহাদি মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে৷ তারই একটি আল শাবাব৷ সোমালিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশটিতে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী তারা৷ আফ্রিকার এমন আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৪ সালে ৩০০ স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters/J. Penneyবর্ণবাদী মতবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে৷ বিংশ শতকে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা সাদাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠে ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের কট্টর বর্ণবাদী গোষ্ঠী৷ বর্ণবাদের উপর ভর করে ইউরোপে উত্থান হয় ফ্যাসিবাদের৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.comসাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে পশ্চিমা দুনিয়ায় উগ্র ডানপন্থার প্রকটতা বাড়ছে৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এই মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে৷ ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এর অনুসারীরা রক্ষণশীল৷ সবশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলা করে ৫০ জনকে হত্যায় অভিযুক্তও তেমনই একজন৷
ছবি: Reuters/M. Mitchellসমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কিংবা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয় বিশ্বের অনেক উগ্র বামপন্থি সংগঠন৷ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, সম্পদশালী মানুষদের তারা শত্রু বিবেচনা করে৷ ফিলিপিন্সের কমিউনিস্ট পার্টি নিও পিপলস আর্মি বা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তারই উদাহরণ - যাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশগুলোর সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Quraishiইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে ফিলিস্তিনিরা৷ এজন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে হামাস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ উগ্রতার কারণে এই দলগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন স্বাধিনতাকামী সংগঠন আছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে৷
ছবি: picture-alliance