বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে জয় দেখতে শুক্রবার ক্রিকেটের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত লর্ডসে হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার টাইগার সমর্থক৷ কিন্তু পাকিস্তানের কাছে ৯৪ রানে হেরে যাওয়ায় তাঁদের অধিকাংশ হতাশা প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: DW/A. Islam
বিজ্ঞাপন
তবে পরাজয়ের চেয়েও হারের ধরনে তাঁরা বেশি হতাশ হয়েছেন৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা দাবি করেন, শুক্রবারের ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মনোযোগ কম দেখা গেছে৷ তাঁদের শারীরিক ভাষায় জেতার মানসিকতা ছিল না বলে মনে করছেন লর্ডসে উপস্থিত কয়েকজন দর্শক৷ দুটি ক্যাচ মিস ছাড়াও বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে কয়েকটি বাউন্ডারি হয়েছে বলে জানান সমর্থকরা৷
লর্ডসে হতাশ টাইগারভক্তরা
35:33
This browser does not support the video element.
এছাড়া সেমিফাইনালে উঠতে না পারার কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেন সমর্থকরা৷ তাঁরা বলছেন, পেস বোলাররা এবার ভালো করতে পারেননি৷ ভবিষ্যতের জন্য পেসার খোঁজায় আরও মনোযোগ দিতে ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন কয়েকজন সমর্থক৷
এছাড়া উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ও সৌম্যর বড় স্কোর না করতে পারা, অতিরিক্ত সাকিব নির্ভরতা, প্রয়োজনের সময় বড় জুটি গড়ে না ওঠা, আট ম্যাচে মাশরাফির মাত্র এক উইকেট পাওয়া ইত্যাদিও সেমিফাইনালে যেতে না পারার কারণ বলে মনে করছেন সমর্থকরা৷
অনার্স বোর্ডে মুস্তাফিজ
লর্ডসে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল পাকিস্তান৷ সেমিফাইনালে যেতে তাদের বাংলাদেশকে কমপক্ষে ৩১৬ রানের ব্যবধানে হারাতে হতো৷ তবে ইমামের ১০০ ও দু'বার প্রাণ পাওয়া বাবর আজমের ৯৬ রানের সুবাদে পাকিস্তান ৩১৫ রান সংগ্রহ করে৷
মুস্তাফিজ পাঁচ উইকেট নেন৷ ফলে লর্ডসের সম্মানজনক অনার্স বোর্ডে নাম উঠে গেছে তাঁর৷ এর আগে ২০১০ সালে এক টেস্টে শতক করায় তামিম ও পাঁচ উইকেট পাওয়ায় শাহাদাতের নাম ঐ বোর্ডে উঠেছিল৷
সাকিবের বিশ্বকাপ
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ ২২১ রানে অলআউট হয়ে যায়৷ সাকিব সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন৷ ফলে সবমিলিয়ে আট ম্যাচে ৬০৬ রান করেন তিনি৷ এর মধ্যে সাত ইনিংসেই ৫০-এর বেশি রান করেছেন তিনি৷ এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার সাত ইনিংসে ৫০-এর বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন৷ এবার সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন সাকিব৷ তাও আবার শচীনের চেয়ে তিন ম্যাচ কম খেলে!
এছাড়া বিশ্বকাপের সর্বকালের সর্বোচ্চ রান করা শীর্ষ দশ ব্যাটসম্যানের তালিকায়ও সাকিব ঢুকে পড়েছেন৷ চার বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলে তিনি মোট ১,১৪৬ রান করেছেন৷ ফলে তালিকায় সাকিবের নাম থাকছে নয় নম্বরে৷ এই তালিকায় শীর্ষে আছেন শচীন৷ তিনি মোট ৪৫ ম্যাচ খেলে ২,২৭৮ রান সংগ্রহ করেছেন৷
ধরাছোঁয়ার বাইরে সাকিব
ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত তিন ফরম্যাটে একই সময়ে সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার কীর্তি গড়েছেন সাকিব আল হাসান৷৷ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও তৈরি করেছেন এমন রাজত্ব, যেখানে সিংহাসনের অন্য সব দাবিদার পিছিয়ে যোজন যোজন৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
মুকুটবিহীন রাজা
বিশ্বকাপে মোট আট ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ৷ দুই সেঞ্চুরিসহ সাকিব করেছেন ৬০৬ রান৷ এর মধ্যে সাত ইনিংসেই ৫০-এর বেশি রান করেছেন তিনি৷ এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার সাত ইনিংসে ৫০-এর বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন৷ এবার সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন সাকিব৷ তাও আবার শচীনের চেয়ে তিন ম্যাচ কম খেলে! বোলিংয়েও সমান ভূমিকা রেখেছেন তিনি৷ নিয়েছেন ১১ উইকেট৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
আফগানিস্তান
টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় আফগানিস্তান৷ আশা ছিল, স্পিন ঘূর্ণিতে কাবু করে বাংলাদেশকে কম রানে বেঁধে ফেলা৷ কিন্তু সাকিবের কথা হয়তো ভুলেই গিয়েছিল আফগানরা৷ বাংলাদেশের ২৬২ রানের সংগ্রহে সাকিব করেন ৫১৷ এরপর বল হাতে তার নেতৃত্বেই আফগানদের ৬২ রানে হারায় বাংলাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Davy
রেকর্ডের ম্যাচ
আফগানদের বিরুদ্ধে বল হাতে সাকিব করেন একাধিক রেকর্ড৷ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি৷ যুবরাজ সিংয়ের পর কেবল দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে একই ম্যাচে অর্ধশত ও ৫ উইকেট এখন সাকিবের৷ সেই সঙ্গে কপিল দেব ও যুবরাজ সিংয়ের পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে একই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট পাওয়া খেলোয়াড় সাকিব৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
ভারত
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ২৮ রানে পরাজয়ের দিনে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছিল ৬৬ রান, যা অন্য সবার চেয়ে বেশি৷ বল হাতে সবচেয়ে কম ৪.১০ ইকোনমিতে উইকেট নিয়েছেন একটি৷
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
অস্ট্রেলিয়া
টসে জিতে ব্যাটিং নেয় অস্ট্রেলিয়া৷ ডেভিড ওয়ার্নারের বিধ্বংসী ব্য়াটিংয়ে ৩৮২ রানের লক্ষ্য দেয় অজিরা৷ ওয়ার্নার করেন ১৬৬ রান৷ সাকিব বল হাতে খুব ভালে করেননি৷ উইকেটবিহীন থেকে ৬ ওভারে দেন ৫০ রান৷ ব্যাটিংয়ে এবার টিমওয়ার্ক দেখায় টাইগাররা৷ মুশফিক শতরান করেন, অর্ধশত করেন তামিম-মাহমুদুল্লাহ৷ সাকিবও সে ম্যাচে করেন ৪১ রান৷ তবে বাংলাদেশ ম্যাচ হারে ৪৮ রানে৷
ছবি: Getty Images/M. Steele
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় বাংলাদেশ৷ লিউয়িস আর পুরানের উইকেট নেন সাকিব৷ তবে লিউয়িস-হোপের নৈপূণ্যে ক্য়ারিবীয়রা ৩২২ রানের টার্গেট দেয়৷ বল হাতে অসাধারণ সাকিব ব্যাট হাতেও কান্ডারীর ভূমিকা নেন৷ দুর্দান্ত লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে অপরাজিত ১২৪ রানে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
ইংল্যান্ড
টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠান টাইগার অধিনায়ক৷ শুধু সাকিব কেনো, বোলিংয়ে সুবিধা করতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো বোলার৷ ৩৮৭ রানের টার্গেটে চাপা পড়ে বাংলাদেশ৷ তবে ব্যাটিংয়ে এসে বরাবরের মতোই নেতৃত্বে সাকিব আল হাসান৷ দলকে জেতাতে না পারলেও নিজে করেন ১২১ রান৷
ছবি: Getty Images/H. Trump
নিউজিল্যান্ড
টসে হেরে ব্যাটিং করতে হয় বাংলাদেশকে৷ আগের ম্যাচের দুর্দান্ত বাংলাদেশ এই ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়ে৷ সাকিব ৬৪ রান করলেও বাকিরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি৷ ৪ বল বাকি থাকতেই টাইগাররা অলআউট হয়৷ ২৪৫ রানের টার্গেটেও বিপদে পড়ে কিউইরা৷ গাপটিল ও মুনরোকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে মাঠে রাখেন সাকিব৷ আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে হারে বাংলাদেশ৷
ছবি: Getty Images/D. Rogers
সাউথ আফ্রিকা
২ জুন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে৷ টস জিতে বাংলাদেশকে ফিল্ডিংয়ে পাঠায় সাউথ আফ্রিকা৷ মুশফিকের সঙ্গে মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪২ রানের পার্টনারশিপ করেন সাকিব৷ তাঁর ব্যক্তিগত ৭৫ রান দলকে এনে দেয় ৩৩০ রানের বিশাল সংগ্রহ৷ বোলিংয়ে এসে প্রোটিয়া ওপেনার মারক্রামকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তিনি৷ ম্যাচটি ২১ রানে জেতে বাংলাদেশ৷