পাকিস্তানের তালেবান অধ্যুষিত সোয়াত উপত্যকায় বিচারব্যবস্থা চলে অনানুষ্ঠানিকভাবে৷ পুরুষরা সিদ্ধান্ত দেয় এবং এ কারণে নারীদের নৃশংসতার শিকার হতে হয়৷ তবে অনেক নারীই এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
সোয়াত উপত্যকায় যে কোনো অপরাধের বিচার করে জিরগা৷ স্থানীয় আদালতের কাজ করে এটি৷ এই জিরগার সিদ্ধান্তই সেখানে চূড়ান্ত৷ আর সেই জিরগা পরিচালিত হয় পুরুষদের দ্বারা৷ কিন্তু ২০১৩ সালে নারী জিরগা গঠনের মাধ্যমে এই অবস্থার পরিবর্তন এনেছেন তাবাসসুম আদনান৷ বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ২৫৷ সোয়াত হলো সেই জায়গা, যেখানে ২০১২ সালে নোবেল জয়ী মালালাকে গুলি করা হয়েছে নারী শিক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে৷ ডয়চে ভেলেকে তাবাসসুম বললেন, ‘‘একটি মেয়ে অ্যাসিড আক্রান্ত হয়েছিল৷ যখন পুরুষ জিরগায় সেই মামলাটি উপস্থাপন করা হলো, তারা মেয়েটিকে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা হয়নি৷ '' কিশোরীটি মৃত্যুর আগে তার উপর অন্যায়ের বিচার দেখে যেতে পারেনি৷
অনানুষ্ঠানিক বিচার:
৫ বছর আগে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত জিরগাকে নিষিদ্ধ করলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো এই বিচারব্যবস্থা বহাল আছে৷ নারী জিরগায় পারিবারিক নির্যাতন, স্বাস্থ্যসেবা, বাল্যবিবাহরোধসহ অনেক সামাজিক বিষয় নিয়ে আইনি সহায়তা দেয়া হয়৷ তাবাসসুম জানালেন, পুরুষদের জিরগায় নারীর পরিবর্তে পুরুষদের পক্ষেই সব রায় যায়৷ তবে এখন বিশেষ করে বাল্যবিবাহ রোধে শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে নারীদের জিরগা৷
সোয়াত উপত্যকায় প্রায়ই কিশোরীদের সঙ্গে তাদের চেয়ে ২০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বড় পুরুষের বিয়ে দেয়া হয় জোর করে৷ তাবাসসুমের জীবনেও এই তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে৷ তাঁর পরিবারও সেই সময় পাশে দাঁড়ায়নি৷ তাই অন্য নারীদের জীবনেও যেন এমনটা না ঘটে, সেজন্য এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি৷
ভাইয়ের হাতে খুন হওয়া পাকিস্তানের সেই বিতর্কিত মডেল
পাকিস্তানে নিজের ভাইয়ের হাতে খুন হয়েছেন বিতর্কিত মডেল কন্যা কান্দিল বেলুচ৷ ‘অনার কিলিং’ এর শিকার এই নারী সেদেশের ইন্টারনেট জগতে আলোড়ন তুলেছিলেন খোলামেলা ছবি প্রকাশ করে৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
ফেসবুকে ‘লজ্জাজনক’ ছবি দেয়ায় খুন!
পাকিস্তানের মুলতানে নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় মডেল কান্দিল বেলুচকে৷ তাঁর ভাই ওয়াসিম আজিম দাবি করেছে, ফেসবুকে ‘লজ্জাজনক’ ছবি প্রকাশ করায় পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য বোনকে খুন করেছেন তিনি৷
ছবি: Facebook/Qandeel Baloch via Reuters
ইন্টারনেটে আলোচিত কান্দিল বেলুচ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত ছিলেন কান্দিল বেলুচ৷ রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা এই মডেলের টুইটার অনুসারীর সংখ্যা পয়তাল্লিশ হাজারের বেশি এবং ফেসবুকে তা প্রায় আট লাখ৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
পাকিস্তানের ‘কিম কার্দাশিয়ান’
বেলুচকে অনেকে তুলনা করতেন মার্কিন টিভি অভিনেত্রী কিম কার্দাশিয়ানের সঙ্গে৷ ছবি শেয়ার করার ওয়েবসাইট ইন্সটাগ্রামে কার্দাশিয়ানের মতো করে তোলা বেশ কিছু ছবি, ভিডিও শেয়ার করেছিলেন তিনি৷ ছবিগুলো বেশ খোলামেলা৷ এর আগে পাকিস্তানের কোনো মডেলকে এভাবে ছবি পোস্ট করতে দেখা যায়নি৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
‘নগ্ন’ হওয়ার ঘোষণা
চলতি বছর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে পাকিস্তান ভারতকে হারালে নগ্ন হয়ে নাচবেন বলে ঘোষণা দিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন বেলুচ৷ পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে হেরে যাওয়ায় নগ্ন না হতে পারার দুঃখে কাঁদার একটি ভিডিও প্রকাশ করেন ইউটিউবে৷ পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা এই মডেল৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
ইসলামের ‘কলঙ্ক’
তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সকল পদ হারান পাকিস্তানের মুফতি আবদুল কাভি৷ পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা এবং ধর্মগুরু হিসেবে পরিচিত কাভি-কে ইসলামের ‘কলঙ্ক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন বেলুচ, কেননা, তাঁর দাবি ছিল, টিভিতে ধর্মের কথা বললেও আড়ালে তাঁর সঙ্গে অনৈতিক কিছু করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কাভি৷
ইন্টারনেটে সাহসিকতার নানা নমুনা রাখলেও ক্রমাগত বিতর্কের মাঝেই এক পর্যায়ে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যান কান্দিল বেলুচ৷ খুন হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে তাই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজনের কাছেই নিজের নিরাপত্তা দাবি করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/R.S. Hussain
শাস্তি হবে কি?
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে প্রতিবছর গড়ে এক হাজারের মতো ‘অনার কিলিং’ এর ঘটনা ঘটে৷ এগুলোকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই বিবেচনা করে বিচারের ব্যবস্থা থাকলেও পাকিস্তানের আইনে পরিবার চাইলে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ আর এই সুযোগ নিয়ে অনেক সময় হত্যাকারী পার পেয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.S. Mirza
7 ছবি1 | 7
স্থানীয় পুরুষরা অবশ্য নারী জিরগাকে ‘নকল জিরগা' বলে থাকে৷ তাদের মতে বিদেশি ত্রাণ পাওয়ার জন্য এই জিরগার সৃষ্টি৷ তবে, পুরুষ জিরগার সাবেক প্রধান ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘নারীদের এই জিরগার প্রতি তাঁর আস্থা রয়েছে৷''
সাফল্যের গল্প:
নারী জিরগার সাফল্যের বেশ কিছু কাহিনি রয়েছে৷ একটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে৷ এক পুরুষ এক নারীর বাড়ি ভেঙে ডাকাতি করে এবং ছুরি দিয়ে ঐ নারীর সব দাঁত তুলে ফেলে৷ নারী জিরগার সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত নারীটি সুবিচার পায়৷ নারী জিরগা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনিকে ঘটনাটা জানানোর পর ঐ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং চার বছরের কারাদণ্ড হয় তার৷ তবে প্রায়ই তাবাসসুমকে নানা হুমকি ধামকি দেয়া হয় বলে জানালেন তিনি৷ তাই তাদের বৈঠক চলে গোপনে৷