পাকিস্তানের দিকে বয়ে চলা নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেবে ভারত৷ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার জের ধরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি এই তথ্য জানিয়েছেন৷ বেশ কয়েকটি টুইটে নীতিন উল্লেখ করেন, ‘‘আমাদের সরকার পাকিস্তানের দিকে যাওয়া নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলো থেকে পানির প্রবাহ ঘুরিয়ে নিয়ে তা জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে৷''
পানিসম্পদমন্ত্রী আরো বলেন, ইরাবতী, বিপাশা এবং শতদ্রু নদীর পানির প্রবাহ মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া হবে৷ টুইটে তিনি উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যেই ইরাবতী নদীর উপর বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ ‘‘আমাদের ভাগের বাকি দুটি নদীর উপরও বাঁধ দিয়ে অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হবে৷ সবকটি প্রকল্পকে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷''
১৯৬০ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান মোট ছয়টি নদীর পানি ভাগাভাগি করে৷ এর মধ্যে তিনটি নদীর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে ভারতের হাতে৷ সেই তিনটি নদী ইরাবতী, বিপাশা এবং শতদ্রু৷ অন্য দুই নদী ঝিলম ও চন্দ্রভাগা পাকিস্তানের দিকে৷ এছাড়া সিন্ধু নদের পানির সম্পূর্ণ অধিকারও পাকিস্তানের৷
কাশ্মীর ইস্যুতে বিস্ফোরক সব মন্তব্য
কাশ্মীর বরাবরই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের কারণ৷ পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় ৪২ সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু এ বিতর্কে এনেছে নতুন মোড়৷ খোদ ভারতের মধ্যেই এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা৷ দেখুন কিছু মন্তব্য৷
ছবি: Getty Images/R. Bakshi
আলোচনার সময় শেষ: মোদী
পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার সময় শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ কাশ্মীরে আক্রমণের পেছনে পাকিস্তানের মদদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, জঙ্গি ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া মানে তাদের উসাহিত করা৷
ছবি: Reuters/India's Press Information Bureau
ভারতকে প্রতিহত করা হবে: ইমরান খান
কোনো প্রমাণ ছাড়াই পুলওয়ামার ঘটনায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হচ্ছে বলে মনে করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান৷ ঘটনার তদন্তে পাকিস্তান সহায়তা ও আলোচনা করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু ভারত কোনোভাবে আক্রমণ করে বসলে, সাথে সাথে তার কড়া জবাব দেয়া হবে বলেও জানান ইমরান খান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.K. Bangash
নির্বাচনের আগেই কেন: মমতা
লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে কেন এতো বড় হামলার ঘটনা ঘটলো, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ এর আগে ‘তদন্ত না করে’ পাকিস্তানের ওপর ‘দোষ চাপানো’ উচিত নয় মন্তব্য করেও বিতর্কের জন্ম দেন মমতা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পাকিস্তানের ধ্বংস জরুরি: কঙ্গনা রানাউত
বলিউডের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা আজমিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বলিউডের বর্তমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত৷ পাশাপাশি আহ্বান জানিয়েছেন চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়ার৷ বলছেন, শুধু পাকিস্তানের শিল্পীদের ভারতে নিষিদ্ধ করলেই হবে না, পাকিস্তানকেই ধ্বংস করতে হবে৷
ছবি: AP
বন্দুক হাতে থাকলেই হত্যা: লে. জে. ঢিলন
কাশ্মীরে কেউ বন্দুক হাতে নিলেই তাকে হত্যা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের চিনার কর্পসের কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জেনারেল কে জে এস ঢিলন৷ বন্দুক হাতে নিলে তা কেবল আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Imago/Zuma Press
কাশ্মীরকে বর্জন করুন: তথাগত রায়
‘কাশ্মীরে যাবেন না, কাশ্মীরী পণ্য কিনবেন না’, সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে চলা এমন বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেছেন মেঘালয় রাজ্যের গভর্নর তথাগত রায়৷ কিন্তু অনেকেই অবশ্য এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, বলছেন, কাশ্মীর ভারতের অংশ, কাশ্মীরীরা ভারতের নাগরিক৷ ফলে নিজের দেশের একটা অঞ্চলের সব মানুষকে শত্রু বানিয়ে দেয়া উচিত নয়৷
ছবি: Reuters
পুরো দেশকে দোষ দেয়া যায় না: নভজ্যোত সিং সিধু
‘কিছু হাতে গোণা মানুষের জন্য পুরো দেশকে দায় দেয়া উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন সাবেক ক্রিকেট খেলোয়াড় খেলোয়াড় ও পাঞ্জাবের পর্যটনমন্ত্রী নভজ্যোত সিং সিধু৷ এমন মন্তব্যের কারণে তাঁকে জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য কপিল শর্মা শো’ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে বর্জন করুন: হরভজন সিং
আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ না খেলতে ভারতের ক্রিকেট দলকে আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ভারতীয় অফস্পিনার হরভজন সিং৷ প্রয়োজনে ম্যাচটি ওয়াকওভার দিয়ে দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷ হরভজন মনে করেন, ভারতের যে শক্তি, তাতে একটি ম্যাচ না খেললেও তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শক্তি রাখে৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
এদিকে পাকিস্তানের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পানি প্রবাহের বন্ধের সিদ্ধান্ত পুরোপুরিই ভারতের৷ পানিসম্পদমন্ত্রী খাজা সুমাইল বলেছেন, ‘‘তাদের দিককার তিন নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই৷ এতে সিন্ধু চুক্তিও ভঙ্গ হবে না৷'' তিনি আরও বলেন, গড়কড়ির টুইটে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই৷
তবে ২০ কোটি জনগোষ্ঠীর কৃষিভিত্তিক এই দেশে পানি প্রবাহ বন্ধ হলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞরা৷ উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর ভারত-পাকিস্তানে তিনটি বড় যুদ্ধ হলেও সিন্ধু পানিচুক্তি অব্যাহত ছিল৷
এদিকে ভারতীয় গোয়েন্দারা দাবি করছেন, কাশ্মীরে ফের বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে পাকিস্তান ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী জৈশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গিরা৷ তাই সতর্কতা ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷