1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানের ‘দুই কান’ কাটা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ নভেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়াসহ বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত হয়েছেন বাংলাদেশে পাকিস্তানি কূটনীতিকরা৷ আর তাদের এই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷ কিন্তু কেন?

ছবি: bdnews24.com

বাংলাদেশে পাকিস্তানি দূতাবাস সর্বশেষ তাদের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করা নিয়ে আবারো বিতর্কে জড়িয়েছে৷ আর ওই ভিডিও’র কথা হলো, ‘‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নন, জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক৷ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি শুধু স্বায়ত্বশাসন চেয়েছিলেন৷’’

পাকিস্তান অ্যাফেয়ার্স নামে একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ওই ১৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়৷

সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনার রাফিউজ্জামান সিদ্দিকিকে তলব করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়৷ পাকিস্তানি হাইকমিশনারের কাছে আনুষ্ঠানিক কড়া প্রতিবাদপত্রও দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কামরুল আহসান৷ এরপর পাকিস্তান দূতাবাসের ফেসবুক পেজ থেকে ওই ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়৷ কিন্তু পাকিস্তান অ্যাফেয়ার্স নামের ফেসবুক পেজে এখনো ভিডিওটি আছে৷

ভারপ্রাপ্ত সচিব মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘শেয়ার করা ভিডিও লিঙ্কটি দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে৷ ইতিহাস পরিবর্তনশীল নয়৷ যেটা বাস্তবতা, সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে৷ তারা যদি ইতিহাস বিকৃতি অব্যাহত রাখে, সেটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হবে৷’’

কামরুল আহসান বলেন, ‘‘যে লিঙ্কটি তারা শেয়ার করেছে, সেটি তারা ডিলিট করে দিয়েছে এবং লিঙ্কটি শেয়ার করার জন্য তারা দুঃখপ্রকাশ করেছে৷ তারা বলেছে, এটা ইচ্ছাকৃত কোনও ঘটনা ছিল না৷ আমরা তাদের বলেছি, তারা যেন ওয়েবসাইটে দুঃখপ্রকাশ করে৷ দেখা যাক, কী হয়৷’’ তবে বুধবার পর্যন্ত তারা ওয়েবসাইটে দুঃখ প্রকাশ করেনি৷

পাকিস্তান, পাকিস্তানের দূতাবাস ও কূটনীতিকদের নিন্দিত অতীত

১. কূটনীতিক বহিষ্কার

২০০০ সালে পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার ইরফান-উর রাজাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এক সভায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে চরম অবমাননাকর মন্তব্য করার কারণে৷

২. যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখনই জামায়াতের কোনো নেতা একাত্তরের অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়েছেন, তখনই পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে জামায়াত, মুসলিম লীগ ও ইমরান খানের দল তেহরিক-ই ইনসাফ, তার প্রতিবাদ করেছে৷ জামায়াত নেতাদের ফাঁসির নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবও পাস হয়েছে৷

৩. জঙ্গিদের মদতদাতা পাক কূটনীতিক

২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় পাকিস্তানি দূতাবাসের কনস্যুলার কর্মকর্তা মাজহার খানকে বহিস্কার করা হয়৷ তিনি জঙ্গিদের কাছে জাল টাকা হস্তান্তর করার সময় গুলশানের এক হোটেলে গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েন৷

৪. বহিষ্কৃত আরেক ‘জঙ্গিবান্ধব’ কূটনীতিক

২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঢাকা থেকে বহিস্কার করা হয় আরেক পাকিস্তনি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে৷ ওই ঘটনার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তানও বাংলাদেশের এক নারী কূটনীতিককে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করেছিল৷

পাকিস্তান এবং পাকিস্তান দূতাবাস বারবার এমন করলেও বাংলাদেশ কেন তা মেনে নিচ্ছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘‘আমরা মেনে নেইনি৷ এ ধরনের কাজ তারা আগেও করেছে৷ সেটি আজকেও আমরা তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷’’

দুই কান কাটা যার সে রাস্তার মধ্য খান দিয়া হাঁটে: মোহাম্মদ জমির

This browser does not support the audio element.

তিনি আরও বলেন, ‘‘তারা এমন ঘটনার পর প্রতিবারই দুঃখপ্রকাশ করে৷ কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করে, সে কি আপনার কথা শুনবে? তবে আমাদের দরকার কূটনৈতিক প্রতিবাদ, সেটিই আমরা করেছি৷ এবং তারা যদি সীমার বাইরে চলে যায়, তাহলে তার জন্যও অনেক পথ রয়েছে৷’’

এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কুটনীতিক মোহাম্মদ জমির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাকিস্তান আবারো ঔদ্ধত্ব দেখিয়েছে৷ তারা ইচ্ছা করেই বঙ্গবন্ধুকে হেয় করতে ওই ভিডিও ছড়িয়েছে৷’’ বাংলাদেশ প্রতিবাদ যেভাবে জানাচ্ছে তা যে ফলদায়ক হচ্ছে না এ বিষয়টি তুলে ধরায় অভিজ্ঞ কূটনীতিক বলেন, ‘‘হ্যাঁ, জানি এ ধরণের কাজ পাকিস্তান বার বার করছে৷ কারণ, যার এক কান কাটা সে রাস্তার কিনার দিয়া হাঁটে, দুই কান কাটা যার সে রাস্তার মধ্যখান দিয়া হাঁটে৷’’

তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করার দাবি করছি: মুনতাসির মামুন

This browser does not support the audio element.

আর ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাকিস্তান সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে৷ আর এটা তারা দীর্ঘদিন ধরেই করছে৷ তাদের এই অপতৎপরতা নিয়ে আমাদের পার্লামেন্টেও আলোচনা হয়েছে৷ আর আমরা ২৫ মার্চকে এখন গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছি৷ কিন্তু এবার যে কাজটি করল তা জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন৷ কূটনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী৷ আমাদের প্রতিবাদে তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে৷ কিন্তু তাদের এটা একটা কৌশল৷ তারা বারবার একই কাজ করে৷ আবার দুঃখ প্রকাশ করে৷ তাই বাংলাদেশের উচিত হবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বসেই পাকিস্তানি কুটনীতিকরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়৷ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷ তাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করার দাবি করছি৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ