পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসছে৷
বিজ্ঞাপন
১১ এপ্রিল স্থানীয় সময় বেলা দুইটায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হবে৷ কাল বিকেল তিনটায় জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে৷
ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যার নাম সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে, তিনি পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ৷
শাহবাজ শরীফ এবং পিটিআইয়ের শাহ মাহমুদ কোরেশি প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন৷ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাহবাজ শরীফ বলেন, জাতীয় সম্প্রীতিই হবে তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার৷ পিএমএল-এন নেতা বলেন, ‘‘তিনি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে পরামর্শের পরে একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন৷ তারা একটি নতুন যুগের সূচনা করবেন৷’’
শনিবার মধ্যরাতে দিকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হন ইমরান খান৷ জাতীয় পরিষদের ১৭৪ জন সদস্য তার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিরোধীদের প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোট।
পাকিস্তানে অনাস্থা ভোটে কারও প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর এটাই প্রথম ঘটনা৷ আগে কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হলেও তারা টিকে গিয়েছিলেন৷
প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে 'বিদেশি ষড়যন্ত্রে' অংশ নিতে পারবেন না জানিয়ে মধ্যরাতে পদত্যাগ করেন স্পিকার আসাদ কায়সার। রাত বারোটার পর প্যানেল স্পিকার পিএমএল-এন নেতা আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে নতুন অধিবেশনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফলাফলে নিশ্চিত হয় ইমরান খানের বিদায়।
ইমরান খান: জানা-অজানা কিছু তথ্য
ইমরান খান পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলের একসময়ের অধিনায়ক আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁর সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Rousseau
পুরো নাম
ইমরান খান নামেই সবার কাছে পরিচিত তিনি৷ কিন্তু তাঁর পুরো নাম কি জানেন? আহমেদ খান নিয়াজী ইমরান হচ্ছে তাঁর পারিবারিক নাম৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
খেলা শুরু
১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন ইমরান খান৷ ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন ইমরান৷ ১৯৬৮ সালে ষোল বছর বয়সে লাহোরের হয়ে সারগোরার বিরুদ্ধে প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo Library
জাতীয় দলে ডাক
ক্রিকেটের প্রতি ইমরান খানের আগ্রহ এবং লেগে থাকাই তাঁকে দ্রুত স্থান করে দেয় পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলে৷ ১৯৭০ সালে যখন দলে ডাক পান, তখনও তাঁর পড়াশোনাই শেষ হয়নি৷
ছবি: Getty Images
পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন বলা হয় তাঁকে৷ তাঁর অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Holland
রাজনীতি
১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন ইমরান৷ গঠন করেন তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি৷ গত নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এবার অন্যদের পেছনে ফেলে তাঁর দল উঠে এসেছে শীর্ষে৷
ছবি: Aamir QureshiAFP/Getty Images
ব্যক্তিগত জীবন
শুধু খেলা বা রাজনীতি নয়, ব্যক্তি জীবনের নানা খবর দিয়েও বরাবরই সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ইমরান খান৷ ৬৫ বছর বয়সে তৃতীয়বার বিয়ে করেন ইমরান৷ ভবিষ্যতবক্তা বুসরা মানেকার আগে ব্রিটিশ সেলিব্রেটি জেমিমা গোল্ডস্মিথ এবং পাকিস্তানি টিভি অ্যাংকর রেহাম খান ইমরানের স্ত্রী ছিলেন৷
ছবি: PIT
অভিযোগের পাহাড়
নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান তাঁর আত্মজীবনীতে ইমরানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনেন৷ রেহামের অভিযোগ, ইমরানের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ালেই কেবল নারীরা দলে বড় পদ পেতে পারেন৷
ছবি: Facebook/Imran Khan Official
পাকিস্তানের ট্রাম্প!
ইমরান খানকে অনেকেই পপুলিস্ট বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন৷ জঙ্গিবাদের প্রতি তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গীরও সমালোচনা করেন অনেকে৷ ধারণা করা হয় তালেবানের মতো বেশকিছু উগ্রপন্থি দলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেন ইমরান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.K. Bangash
অ্যামেরিকার সমালোচক
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অ্যামেরিকার ভূমিকা এবং তাতে পাকিস্তানের অংশগ্রহণের বড় সমালোচক ইমরান৷ পাকিস্তানের অনেক সমস্যার পেছনে দেশটির অ্যামেরিকাপ্রীতিই বড় কারণ বলে একাধিক বক্তব্যে বলেছেন তিনি৷
ছবি: YouTube/PTI Scotland
দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব ইমরান খান৷ বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ছিলেন তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্য৷ লন্ডনে বাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার সাজায় নওয়াজ শরীফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ এখন পাকিস্তানের কারাগারে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Mughal
তরুণদের মন জয়
পাকিস্তানের তরুণদের মন দ্রুতই জয় করে নিয়েছেন ইমরান খান৷ তাঁর ‘নতুন পাকিস্তান’ স্লোগান তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে৷ ২০১২ সালে এশিয়া সোসাইটির জরিপে ‘এশিয়া’স পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন ইমরান৷
ছবি: AP
11 ছবি1 | 11
দেশের ধসে পড়া অর্থনীতি এবং ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো৷ গত ৭ মার্চ জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় তারা৷ ‘অসাংবিধানিক' আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল এই অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি৷ পরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট৷
বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক রায় দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট৷ ডেপুটি স্পিকারের রুলিং অসাংবিধানিক উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, অনাস্থা ভোটপর্ব নিয়ে বেশি দেরি করা চলবে না৷ আর অনাস্থা ভোটের ফলাফল ঘোষণা না করে অধিবেশন শেষ করা যাবে না৷
রায়ে বলা হয়, এই অবস্থায় সংবিধান অনুসারে ইমরান খান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করতেই পারেন না৷ তার সুপারিশের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তও তাই অসাংবিধানিক৷ এর ফলে প্রধানমন্ত্রী, সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, পরামর্শদাতারা তাদের পদ ফিরে পাবেন বলে রায়ে বলা হয়৷