পাকিস্তানের পাঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রীর দলকে বড় ধাক্কা দিয়ে বিধানসভা উপনির্বাচনে ২০টির মধ্যে ১৫টি আসনে জিততে চলেছে ইমরানের দল। তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার পাঞ্জাবে ২০টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ফলঘোষণা না হলেও বলা হচ্ছে, ২০টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে জিতেছে ইমরানের দল এবং শাহবাজ শরীফের পিএমএল-এন জিতেছে মাত্র চারটি আসনে। এই ফলাফল ইমরানের পিটিআই এবং শাহবাজ শরীফের পিএমএল-এন মেনে নিয়েছে। ইমরান খান এরপরই দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি করেছেন। আর পিএমএল-এনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আত্মসমীক্ষা করবেন।
এই ফলের পর পাঞ্জাবে বিধানসভায় ইমরানের দলই সবচেয়ে বড় দলে পরিণত হলো। তারা এবার শাহবাজের ছেলে ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হামজা শরীফকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজেদের সরকার গঠনের জায়গায় পৌঁছে গেল। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে হামজা শরীফকে সমর্থন করার জন্য ২০ জন এলএলএ-র সদস্যপদ খারিজ হয়। সেখানেই উপনির্বাচন হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯টি পাঞ্জাবে এবং একটি লাহোরে।
ইমরান খান: জানা-অজানা কিছু তথ্য
ইমরান খান পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলের একসময়ের অধিনায়ক আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁর সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Rousseau
পুরো নাম
ইমরান খান নামেই সবার কাছে পরিচিত তিনি৷ কিন্তু তাঁর পুরো নাম কি জানেন? আহমেদ খান নিয়াজী ইমরান হচ্ছে তাঁর পারিবারিক নাম৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
খেলা শুরু
১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন ইমরান খান৷ ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন ইমরান৷ ১৯৬৮ সালে ষোল বছর বয়সে লাহোরের হয়ে সারগোরার বিরুদ্ধে প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo Library
জাতীয় দলে ডাক
ক্রিকেটের প্রতি ইমরান খানের আগ্রহ এবং লেগে থাকাই তাঁকে দ্রুত স্থান করে দেয় পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলে৷ ১৯৭০ সালে যখন দলে ডাক পান, তখনও তাঁর পড়াশোনাই শেষ হয়নি৷
ছবি: Getty Images
পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন বলা হয় তাঁকে৷ তাঁর অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Holland
রাজনীতি
১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন ইমরান৷ গঠন করেন তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি৷ গত নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এবার অন্যদের পেছনে ফেলে তাঁর দল উঠে এসেছে শীর্ষে৷
ছবি: Aamir QureshiAFP/Getty Images
ব্যক্তিগত জীবন
শুধু খেলা বা রাজনীতি নয়, ব্যক্তি জীবনের নানা খবর দিয়েও বরাবরই সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ইমরান খান৷ ৬৫ বছর বয়সে তৃতীয়বার বিয়ে করেন ইমরান৷ ভবিষ্যতবক্তা বুসরা মানেকার আগে ব্রিটিশ সেলিব্রেটি জেমিমা গোল্ডস্মিথ এবং পাকিস্তানি টিভি অ্যাংকর রেহাম খান ইমরানের স্ত্রী ছিলেন৷
ছবি: PIT
অভিযোগের পাহাড়
নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান তাঁর আত্মজীবনীতে ইমরানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনেন৷ রেহামের অভিযোগ, ইমরানের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ালেই কেবল নারীরা দলে বড় পদ পেতে পারেন৷
ছবি: Facebook/Imran Khan Official
পাকিস্তানের ট্রাম্প!
ইমরান খানকে অনেকেই পপুলিস্ট বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন৷ জঙ্গিবাদের প্রতি তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গীরও সমালোচনা করেন অনেকে৷ ধারণা করা হয় তালেবানের মতো বেশকিছু উগ্রপন্থি দলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেন ইমরান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.K. Bangash
অ্যামেরিকার সমালোচক
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অ্যামেরিকার ভূমিকা এবং তাতে পাকিস্তানের অংশগ্রহণের বড় সমালোচক ইমরান৷ পাকিস্তানের অনেক সমস্যার পেছনে দেশটির অ্যামেরিকাপ্রীতিই বড় কারণ বলে একাধিক বক্তব্যে বলেছেন তিনি৷
ছবি: YouTube/PTI Scotland
দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব ইমরান খান৷ বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ছিলেন তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্য৷ লন্ডনে বাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার সাজায় নওয়াজ শরীফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ এখন পাকিস্তানের কারাগারে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Mughal
তরুণদের মন জয়
পাকিস্তানের তরুণদের মন দ্রুতই জয় করে নিয়েছেন ইমরান খান৷ তাঁর ‘নতুন পাকিস্তান’ স্লোগান তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে৷ ২০১২ সালে এশিয়া সোসাইটির জরিপে ‘এশিয়া’স পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন ইমরান৷
ছবি: AP
11 ছবি1 | 11
প্রতিক্রিয়া
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের মেয়ে এবং পিএমএল-এনের সহ সভাপতি মরিয়ম নওয়াজ শরীফ টুইট করে বলেছেন, ''আমরা মানুষের রায় মাথা নত করে গ্রহণ করছি।''
ইমরানের দল পিটিআইয়ের তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, ''এই ঐতিহাসিক ফলের পর আমরা গোটা বিশ্বকে জানাতে চাই, আমরা আমাদের দেশকে সম্মান করি। এখন পাকিস্তানি জনগণ যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটই হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ কোনো বিদেশি শক্তি নির্ধারণ করতে পারবে না।''
ইমরান খান টুইট করে দলের সব কর্মীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ শুধু পিএমএল-এল প্রার্থীদের হারায়নি, তারা পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে হারিয়েছে। তিনি শরিক পিএমএলকিউ, এমডাব্লিউএম ও সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
পাঞ্জাবে ইমরানের দলের সদস্যসংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ১৭৮, শরিক পিএমএলকিউয়ের আছে ১০ জন সদস্য। শাহবাজ শরীফের দলের সঙ্গে আছে ১৬৭ জন সদস্য।