ফের বিতর্কিত মানচিত্র পেশ করল পাকিস্তান। মস্কোর বৈঠকে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ ভারতের। মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন অজিত ডোভাল।
ছবি: UNI
বিজ্ঞাপন
মস্কোয় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সাংহাই কো-অপারেশনের বৈঠক চলছে। যেখানে ভারত, পাকিস্তান, চীন সকলেই প্রতিনিধিত্ব করছে। মঙ্গলবার সেই বৈঠকে ভার্চুয়ালি মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা । অভিযোগ, সেখানে পাকিস্তানের বিতর্কিত মানচিত্র পেশ করেন পাক নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তা দেখে বেজায় চটে যান ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বৈঠকের সভাপতিত্বকারী দেশ রাশিয়াকে প্রতিবাদের কথা জানিয়ে আলোচনাসভা ত্যাগ করেন ডোভাল।
গত ৪ জুন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেন। সেখানে কাশ্মীর, লাদাখের একাংশ এবং গুজরাটের একাংশ পাকিস্তানের বলে দাবি করা হয়। ইমরান ওই ম্যাপ প্রকাশ করার পরেই নিজেদের চরম আপত্তির কথা জানায় ভারত। বস্তুত, এর পর ওই মানচিত্র নিয়ে পাকিস্তান আর কোনও কথা বলেনি। মস্কোয় চলতি বৈঠকে সেই ম্যাপই ফের ব্যবহার করেছে পাকিস্তান। বৈঠক শুরুর পরেই ভারতের চোখে পড়ে বিতর্কিত মানচিত্রটি। সঙ্গে সঙ্গে ভারতের তরফে নিজেদের আপত্তির কথা জানানো হয়। ভারত জানায়, রাশিয়া বৈঠকের যে অ্যাডভাইসারি জারি করেছে, পাকিস্তান তা মানেনি। নিজেদের প্রোপাগান্ডার জন্য বিতর্কিত ম্যাপ বৈঠকে নিয়ে এসেছে তারা। রাশিয়াকে সমস্ত আপত্তি জানিয়ে প্রতিবাদ হিসেবে বৈঠক ত্যাগ করেন ডোভাল।
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এই ঘটনার পরেই ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব একটি কড়া বিবৃতি জারি করেন। সেখানে বলা হয়, ‘‘পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইচ্ছাকৃত ভাবে একটি কাল্পনিক মানচিত্র বৈঠকে দেখায়। গত কিছুদিন ধরেই ওই মানচিত্র নিয়ে পাকিস্তান প্রোপাগান্ডা চালানোর চেষ্টা করছে। রাশিয়ার জারি করা অ্যাডভাইসরি এবং বৈঠকের নিয়ম না মেনে কাজ করেছে পাকিস্তান।’’ পরে আরো একটি বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠক নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের আগে নেপাল ভারতের তিনটি এলাকা নিজেদের মানচিত্রে দেখিয়েছিল। যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলির তীব্র বাদানুবাদ হয়। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নতুন ম্যাপ পেশ করার পরে বহু বিশেষজ্ঞই মনে করেছিলেন এই বিতর্ক বহু দূর যাবে। মঙ্গলবারের ঘটনা প্রমাণ করে দিল, পাকিস্তান নতুন মানচিত্র থেকে সরে আসবে না। ভারতও যে তার জবাব দিতে থাকবে, তাও স্পষ্ট। ফলে ভারত-পাকিস্তান বিতর্কে আরও নতুন মাত্রা যোগ হলো বলেই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। এমনিতেই ভারত-পাকিস্তান এবং ভারত-চীন সীমান্তে যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে। মানচিত্র বিতর্ক সেই উত্তেজনা আরও উস্কে দিতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।