পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া টেস্ট জয়
এম এম কায়সার ঢাকা
২৫ আগস্ট ২০২৪
সকালের সেশনেই বাংলাদেশের টেস্ট জয়ের স্বপ্ন আরো উজ্জ্বল হয়ে যায়। ততক্ষণে পাঁচ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
বিজ্ঞাপন
তখনো বাংলাদেশের করা প্রথম ইনিংসের রানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে তারা। পাকিস্তানের খুঁড়িয়ে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইনিংস অবশেষে শেষ মাত্র ১৪৬ রানে।
রিজওয়ানের ৫১ রান ছাড়া এই সঞ্চয়ে বাকিদের জোগাড় ভীষণ মামুলি। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৩০ রানের। সামান্য সেই টার্গেট বাংলাদেশ টপকে যায় দাপুটে মেজাজে। ম্যাচ জেতে ১০ উইকেটে। সেই সঙ্গে গড়া হয়ে গেল ইতিহাস। অনন্য এক কীর্তি। টেস্টে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হারানোর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখালো বাংলাদেশ। টেস্টে পাকিস্তানকে আগে কখনোই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এবারের সফরে সেই ব্যর্থতা ছাপিয়ে গড়লো নতুন ইতিহাস। নিজের জন্মদিনে পাকিস্তানকে টেস্টে হারানোর কৃতিত্ব দেখলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। জন্মদিনে এরচেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে!
ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবোয়ে, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের পর এবার পাকিস্তানের মাটিতেও টেস্ট ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশ টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। বৃষ্টিস্নাত ও মেঘলা আকাশ কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের পেসাররা পাকিস্তানের শুরুর ব্যাটিংকে সমস্যায় ফেলেন। ১৬ রানে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তানের শুরুটা ভালো না হলেও তারা ঠিকই সেই সংকট কাটিয়ে ওঠে। ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে তারা। জবাবে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানের বড় সংগ্রহ তোলে। এগিয়ে থাকে পাকিস্তানের চেয়ে ১১৭ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের ব্যাটিং হলো ভয়ানক ভঙ্গুর। পঞ্চম এবং শেষদিনের উইকেটে পাকিস্তানের ব্যাটিংলাইন ভেঙ্গে চুরমার। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় তারা। ১০৫ রানে শুরুর ৬ উইকেট হারায় পাকিস্তান। রিজওয়ান একপ্রান্ত আঁকড়ে ব্যাটিং ধস থামানোর চেষ্টা চালান। করেন হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু তাকেও থামতে হলো ৫১ রানে। মিরাজের স্পিনে বোল্ড হন রিজওয়ান। পাকিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে। বাংলাদেশের সামনে টেস্ট ম্যাচ জয়ের জন্য প্রয়োজন দাঁড়ায় মাত্র ৩০ রানের। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ দল।
প্রথম ইনিংসে দাপুটে ব্যাটিং, বিশেষ করে মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বড় সাহস জোগায়। আর পঞ্চমদিন বোলাররা উইকেট থেকে পাওয়া সুবিধা কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ধস নামান। দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। এই স্পিন জুটিতে বাংলাদেশ শিকার করে ৭ উইকেট। দলের তিন পেসারও ছিলেন শেষদিনের খেলায় দারুণ আক্রমণাত্মক মেজাজে।
ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, গেম প্ল্যানিং- সববিভাগেই এই ম্যাচে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ- যাকে বলে টপে থেকেই ম্যাচ জয়! সেই কীর্তি গড়েই রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট জিতলো বাংলাদেশ।
দুই টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের লিড এখন ১-০। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজের এই ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের আরো উঁচুতে তুললো বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্ট ম্যাচও হবে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামেই। ম্যাচটি শুরু হবে ৩০ আগস্ট।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের ১০টি স্মরণীয় ঘটনা
১৯৯৭ সালে ওডিআই স্ট্যাটাস ও ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ ছবিঘরে গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্মরণীয় ১০ ঘটনার উল্লেখ থাকছে৷
ছবি: AFP/M. Spatari
বিশ্বকে জানান দেয়া
আইসিসি ট্রফি হাতে আকরাম খান৷ এর মাধ্যমে বিশ্বকে নিজেদের কথা জানান দিয়েছিল বাংলাদেশ৷ ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল কুয়ালালামপুরের কিলাত ক্লাব মাঠে ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে এই শিরোপা জিতেছিল টাইগাররা৷ সেমিফাইনালে জয়ের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ৷ তারপরও ফাইনালে জিততে মরিয়া ছিলেন আকরামরা৷ এই জয়ে পুরো দেশ উৎসবে মেতে উঠেছিল৷ ১৯৯৭ সালেই ওডিআই স্ট্যাটাস পেয়েছিল বাংলাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Bernama
প্রথম ওডিআই জয়
১৯৯৮ সালের ১৭ মে ভারতে অনুষ্ঠিত কোকাকোলা ত্রিদেশীয় সিরিজের খেলায় কেনিয়াকে ছয় উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ৷ এটিই ছিল টাইগারদের প্রথম ওডিআই জয়৷ ২২ ম্যাচ পর এই জয় পায় বাংলাদেশ৷ কেনিয়ার ২৩৬ রানের জবাবে চার উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ৷ ব্যাট হাতে ৭৭ রান আর বোলিংয়ে তিন উইকেট নিয়ে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন রফিক৷ ছবিতে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ-কেনিয়া ম্যাচের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Farjana K. Godhuly/AFP
প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়
১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো একদিনের বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ৷ তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিলেন আকরাম খানরা৷ বাংলাদেশের ২২৩ রানের জবাব দিতে গিয়ে ১৬১ রানে থেমে গিয়েছিল পাকিস্তানের ইনিংস৷ ২৭ রানের পাশাপাশি তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hayhow
টেস্ট স্ট্যাটাস ও প্রথম টেস্টে প্রথম শতক
২০০০ সালে টেস্ট খেলার অনুমতি পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ এরপর নভেম্বরে ঢাকায় ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলেছিল টাইগাররা৷ ভারত টেস্টটি ৯ উইকেটে জিতেছিল৷ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে আমিনুল ইসলাম বুলবুল করেছিলেন ১৪৫ রান৷ ছবিতে বুলবুলকে শতক উদযাপন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP
প্রথম টেস্ট জয়
৩৫তম টেস্টে গিয়ে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ৷ ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা৷ প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান করেছিল বাংলাদেশ৷ হাবিবুল বাশার ৯৪, রাজিন সালেহ ৮৯ ও রফিক ৬৯ রান করেছিলেন৷ জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ৩১২ রান করেছিল৷ দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগাররা ২০৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে৷ জবাবে মাত্র ১৫৪ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. K. Godhuly
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন
২০১১ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্বের ছয়টি খেলার মধ্যে আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিলেন টাইগাররা৷ অবশ্য তাতে পরের রাউন্ডে যাওয়া সম্ভব হয়নি৷ ছবিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টাইগার অধিনায়ক সাকিবকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Prakash Singh/AFP
প্রথমবার এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা ও হারা
২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ৷ প্রথমবারের মতো ঐ প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা৷ প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান৷ ম্যাচটি মাত্র দুই রানে হেরে গেয়েছিল বাংলাদেশ৷ এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সাকিব, মুশফিকরা৷ ছবিতে ম্যাচ শেষে পাকিস্তানিদের জয় উদযাপন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
সেরা বিশ্বকাপ
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে (কোয়ার্টার ফাইনাল) উঠেছিল বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা৷ রিয়াদের ১০৩ রানের সুবাদে বাংলাদেশ করেছিল ২৭৫ রান৷ ছবিতে ইংলিশ ব্যাটসম্যান জেমস টেলরকে আউট করার পর টাইগারদের উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে৷ নকআউট পর্বে ভারতের কাছে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ৷
ছবি: Saeed Khan/AFP
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়
২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ৷ সেটিই ছিল প্রথমবারের মতো আইসিসির বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের কোনো শিরোপা জয়৷ ফাইনালে ভারতের যুবাদের হারিয়েছিলেন আকবর আলীরা৷
ছবি: AFP/M. Spatari
মেয়েদের প্রথম এশিয়া কাপ জয়
২০১৮ সালে মেয়েদের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ৷ ভারতকে ফাইনালে তিন উইকেটে হারিয়েছিলেন সালমারা৷ ভারত প্রথমে ব্যাট করে ১১২ রান তুলেছিল৷ এরপর শেষ বলে জয় নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ৷ ছবিতে এ বছরের বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Michael Bradly/AFP
10 ছবি1 | 10
সংক্ষিপ্ত স্কোর:পাকিস্তান ৪৪৮/৬ ডিক্লেয়ার্ড ও ১৪৬। বাংলাদেশ ৫৬৫ ও ৩০/০।