রিচির অভিযোগ, ২০১১ সালে রেহমান মালিক তাকে ধর্ষণ করেন৷
গিলানি ও মালিক প্রয়াত নেতা বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সদস্য৷ ২০০৭ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে বোমা হামলায় নিহত হন বেনজির৷
জুনের শুরুতে রিচির এই বিস্ফোরক অভিযোগের পর পাকিস্তানে হইচই পড়ে যায়৷ যদিও উভয় নেতা রিচির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ এ নিয়ে রিচির বিরুদ্ধে আদালতে এফআইআর হয়েছে৷
ডয়চে ভেলেকে রিচি বলেন, তিনি আদালতে নিজের অভিযোগ প্রমাণ করতে প্রস্তুত আছেন৷
মার্কিন ফ্রিল্যান্স পরিচালক, প্রযোজক এবং লেখক রিচি ২০১০ সালে প্রথম পাকিস্তানে যান৷ তারপর থেকে তিনি বেশিরভাগ সময় সে দেশেই বসবাস করছেন৷
এতদিন পর যৌন নিপীড়ন নিয়ে মুখ খোলার কারণ জানতে চাইলে রিচি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে আমি ফেসবুকে আমার জীবনের গল্প বলা শুরু করি৷’’
এক মাস আগে বেনজির ভুট্টোকে নিয়ে টুইটারে আক্রমণাত্মক পোস্ট দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন রিচি৷ ফেসবুক লাইভে এসে তিনি পিপিপি সদস্যদের হাতে অসম্মানিত হওয়ার কথাও বলেন৷
রিচি বলেন, ফেসবুকে একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে তার সৎ ভাই (তার বাবার প্রথম পক্ষের সন্তান) সেজে কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে৷ ‘‘পরে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি পিপিপি ও পশতুন তাহাফুজ মুভমেন্ট বা পিটিএম-এর সঙ্গে ওই ব্যক্তির যোগাযোগ আছে এবং সেখান থেকে আমার ও আমার পরিবারের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তা অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে৷ আমাকে হেনস্তা করা এক কথা৷ কিন্তু আমার পরিবারের হেনস্তা আমি মেন নেব না,’’ বলেন তিনি৷
পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টি এবং সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাদের ইন্ধনে রিচি পিপিপি নেতাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এই লেখিকা বলেন, ‘‘তারা তো এ কথা বলবেই, এটাই তো স্বাভাবিক৷ পিপিপি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে, নিজেদের কর্মফলে দল শেষ হতে বসেছে৷ তারা এখন যে-কোনো বাহানায় আলোচনায় থাকতে চায়৷ অতীতে তারা ‘গণতন্ত্রপন্থি ও নারীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে’ এমন ভাব দেখাতো৷ তাদের সেই মুখোশ খুলে গেছে বা যাচ্ছে৷
বাস্তবতা হচ্ছে, পিপিপি নেতারা জনগণের জন্য কিছুই করেনি৷ দলের বেশিরভাগ বৃদ্ধ নেতাদের এখন অবসরে যাওয়া উচিত এবং তাদের জায়গায় নতুনদের আনা উচিত, যারা সত্যি সত্যি পাকিস্তানের উন্নতি চায়৷’’
যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নেওয়া কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার যত অনুসারী এখন আছেন সেটা ২০১১ সালে ছিল না৷ আমার মনে হয়েছে নিজের জীবনের গল্প বলার জন্য এটাই সবচেয়ে সেরা জায়গা৷’’
আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবেন কিনা, এই প্রশ্নের জাবাবে রিচি বলেন, ‘‘আশা করি ভাগ্য আমার সহায় হবে৷ তবে যদি আমি এখানে বিচার না পাই তবে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে যাব৷ কারণ, সেখানেও পিপিপি কর্মীরা অনলাইন ও অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে আমাকে হেনস্তা করছে৷ প্রয়োজনে আমি অনলাইনে প্রচার চালিয়ে যাব৷’’
হারুন জানজুয়া/এসএনএল
২০১৯ সালের অক্টোবরের ছবিঘর দেখুন...
বিশ্বের ৩৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন৷ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হলেও চুপ থাকেন, ১০ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেন৷ এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে কোন দেশে কতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregorদেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৩২ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের জরিপ অনুসারে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ধর্ষণ করে সেই কথা স্বীকারও করেন৷
ছবি: Reutersদক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ দেশটির প্রতি এক লাখ নারীরর মধ্যে ৯৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture alliance/AA/K. Mathe দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক দেশ লেসোথোয় ২০১৯ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানকার এক লাখ নারীর মধ্যে ৮৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ জন৷
ছবি: Imago/F. Starkসোয়াজিল্যান্ডে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৭৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩০ জন৷ সেই হিসেবে ২০১৯ সালে এ দেশে ৮৯৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaeneদেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৭ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ অনেক দেশেই যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতারিবোধী আইন থাকলেও নানান অসঙ্গতিতে তা ঠিকমতো প্রয়োগ হয় না৷
ছবি: pictureäalliance/dpa/A. Simmonsইউরোপের এই দেশটিতে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৩ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিত হন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও বিশ্বজুড়ে পুরুষরাও প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Tambolyদক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ সরিনামের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৪৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়৷ দেশটিতে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করে৷ গত বছর দেশটিতে ২৬২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/E.Troonমধ্য অ্যামেরিকার দেশ কোস্টা রিকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩৭ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ গবেষণা বলছে, ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের নারীদের ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Reuters/J.C. Ulateমধ্য অ্যামেরিকার এই দেশটির প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ন৩২ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০২ জন৷ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ডটকম বলছে, অনেক নারী যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে অভিযোগই করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Oconক্যারিবীয় এই দেশটির প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৩১ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার তিনজন৷ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি কলেজ ছাত্রীরাও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Camara১১৮টি দেশের মধ্যে চালানো এই জরিপে ১৪তম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৪০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ ৪২তম অবস্থানে থাকা জার্মানিতে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৯ জনেরও বেশি ধর্ষিত হন৷ আর ভারতের প্রতি লাখ নারীর মধ্যে এক দশমিক ৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor